আমি ছোট এ কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করতেছি।
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ
দেখতে দেখতে দশম ব্যাচ শেষ হয়ে যাচ্ছে সকলের সাথে শেয়ার করার মতো এমন কিছু নাম এখনো তৈরি করতে পারেনি তবে চেষ্টা করছে কিছু রেখে যাওয়ার। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবো সকলের অন্তরে ভালোবাসার গন্ধ ছড়িয়ে।
আসলে এই প্লাটফর্মে থাকতে থাকতে এমনই এডিক্টেড হয়ে গেছি, আর বুক ফুলিয়ে পরিচয় দিতে গিয়ে বিন্দুমাত্র পেছনে না তাকিয়ে, এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় বলতে চাই আমি এই প্ল্যাটফর্মের একজন সম্মানিত ভলান্টিয়ার। নিজেকে আজ মনে হয় মানবতার ফেরিওয়ালা এবং কমিটমেন্ট এবং সততার জন্য এক নিদর্শন। হয়তো বলবেন নিজের গান নিজেই গাইছি, আসলে এই গানটাই সকলের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, এ আশায় আপনাদের সাথে শেয়ার করা। এইটা স্যারের প্রকৃত শিক্ষা এই প্ল্যাটফর্মের।
দেখুন না, জানুয়ারি মাঝামাঝি আমাদের নিজের বলার মতো একট গল্প কাতার এক ভাই পোস্ট দেখলাম তার কিছু টিশার্ট লাগবে কাতার নিয়ে আনার জন্য। টিশার্ট নিয়ে কাতার আসার কোন ভাই আসার আছে কিনা বা কার্গো কিভাবে আনতে হয়! জানার জন্য উনার নিজের আইডি এবং আমাদের প্লাটফর্ম পোস্ট দিয়েছে। গ্রুপে একটিভ থাকার কারণে আমার চোখ এড়ায়নি। ওই সময়টাতে আমি বাংলাদেশি ছিলাম, টিশার্ট যখন লাগবে আমার কাতার আসার সময় সাথে একেবারে মিলে গিয়েছে। শুধু ঐ ভাই না তার বন্ধু এবং আরো কয়েকজন এ একই টিশার্ট নিয়ে আসার ব্যাপারে পোস্ট দিয়েছে। আমি দুইতিন ঐপোস্টগুলো শুধু দেখে গেলাম কোন কমেন্ট করি নাই। আর উনারাও আমাকে নক করে নাই, টিশার্ট নিয়ে আসার ব্যাপারে। আমার ছোটবেলা থেকে অভ্যাস কারো উপকার নিজে থেকে করা যতটুকু সম্ভব হয় নিজের লস করে হলেও। আর এখন তো আমি নিজের বলার মত একটা গল্প গ্রুপের পরিচিত মুখ। মানবতা কাজ করব না এটা কি হয়? ওনাদের পোস্ট গুলা এবং টি-শার্ট নিয়ে আসা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তারপরও মনে মনে স্থির করে ফেললাম উপকার করবো। তাই দুইদিন পরে আমি নিজে থেকে ঐ ভাইকে নক করলাম ইমুতে। ভাই আপনারা দেখলাম টিশার্ট লাগবে কাতার বলে পোস্ট দিলেন! কতগুলো টিশার্ট লাগবে? বলেন আমি সহযোগিতা করবো। উনি বললো আমারতো অনেক টিশার্ট কতটুকু আপনি পারবেন। আমি বললাম ১৫ কেজি পারবো নিয়ে আসতে অসুবিধা নাই। আপনি রেডি করে রাখেন।
আমি নিবো বলে কমিটমেন্ট করলাম। এ কথা শুনে উনি গতকয়েকদিন চিন্তা থেকে মুক্তি পেলো। আমার ফ্লাইট ২৮ জানুয়ারি তার আগে সপ্তাহ টি-শার্ট ফেনীতে আসলো, বলেছে রিসিভ করতে। টিশার্ট রিসিভ করতে গিয়ে দেখি একটা বড় প্লাস্টিক বস্তা অনেক টিশার্ট। এতগুলো টিশার্ট এবং ভালো প্যাকেজ না দেখে মেজাজটা ঝট করে গরম হয়ে গেলো। তারপরেও নিজেকে ধৈর্যের সেশনটা মনে করিয়ে রাখলাম। দুই মিনিট পর মাথাটা ঠান্ডা করে মনোনিবেশ করলাম কাজের প্রতি। যাক বলা হলো সেখান থেকে ৮০ টা টিশার্ট দেওয়া হবে। আমার সাথে এক ছোট ভাই ছিলো ঐদিন গিয়েছে টিশার্ট রিসিভ করতে। টিশার্ট ৮০ টা গননা করে, এবার এ টিশার্ট ওজন করার জন্য রিকশা করে নিয়ে গেলাম আর একজায়গায় ওজন হলো ২১ কেজি। ওজন করার উদ্দেশ্য হলো আমি দেশের যাওয়া সময় ফ্লাইট টিকেট হলো কাতার এয়ারওয়েজ এ ফ্লাইট ৪০ কেজি ব্যাগ নেওয়া যায় ফ্রি । কিন্তু যাওয়ার সময় আমার ওজন ছিলো ৪২ কেজি আমার মালামাল। রুমে অনেকে বলছে ২ কেজি ব্যাপার না কাতার প্লেন ছেড়ে দিবে। কিন্তু এয়ারপোর্টে ওজন পর কাউন্টার বললো ২ কেজি বেশি পে করে আসেন, না হয় কার্টুন খুলে হ্যান্ড ব্যাক নেন। তাই বাধ্য হয়ে ১৩০ রিয়াল জরিমানা দিলাম। এসব বিষয় সব মানুষের কথা শুনলে এমন জরিমানা দিতে হয়, তা পরিস্থিতি পড়ে উপলব্ধি করলাম। তাই টিশার্ট আনার ক্ষেএে ভয়ে ওজন করা।
টিশার্টগুলো ওজন করে আমরা এনে রাখলাম, ঐ অফিসে। এবার এ বস্তা যে করুন অবস্থা, এটা দিয়েতো আর কাতার নিয়ে আসা যাবে না। এখানে অনেকগুলো প্যারাময় লাগছে টিশার্ট এর জন্য সহযোগিতা করতে গিয়ে, নিজের বারোটা বেজে যাচ্ছে। এইদিকে আবার কমিটমেন্টের কথাটা ভুলতেই পারতেছিনা, কমিটমেন্ট যে করেছি তা রক্ষা করার আমার জন্য অপরিহার্য।
এখন এ টিশার্ট গুলো একটা ব্যাগ নিতে হবে। তাই ব্যাগ কিনার জন্য ঐ ছোট ভাইকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে ভেতরে বাজারে গিয়ে ব্যাগ একটা রশি এবং একটা তালা কিনে নিয়ে আসলাম। ব্যাগ নিয়ে আসলাম এখন এসব টিশার্ট ব্যাগ সেটিং করা এবং রশি দিয়ে বাঁধা কাজ আমি এ বয়সেও করি নাই। মনে মনে ভাবলাম কি কাজ হাতে নিলাম!🤔 শুধু প্যারা আবার ভাবি আমিতো কমিটমেন্ট করেছি। ঐ ছোট ভাইটা আমাকে সব টি-শার্ট ব্যাগ ঢুকিয়ে রশি দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে দেয়। এতো টিশার্ট ব্যাগেও যাচ্ছে না এ অবস্থা। ঐ ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ, ঐদিন আমাকে হেলপ করার জন্য। তারপর এই ব্যাগ নিয়ে রিকশা নিয়ে চলে গেলাম সিএনজি স্টেশান।সেখানে গিয়ে এতো বড় ব্যাগ, সিএনজি সীটেও বসানো যায় না সেখানেও একপ্যারা। পরে বাধ্য হয়ে সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম।
বাড়ি গিয়ে পরিবার এত বড় ব্যাগ দেখে রাগ। বলে মাশাআল্লাহ কি এক গ্রুপ জয়েন্ট করলে, আর মানুষ কাজ খুঁজে খুঁজে নিজের কাঁধে নাও। এমন এত বড় ব্যাগ বা এতো মালামাল তোমার কেউ নিয়ে দিবে তোমার গ্রুপে কেউ? আমি দেখবো এসব বলে পরিবার।আমি সব শুনে চুপ ছিলাম, আমি যে কমিটমেন্ট করেছি ঐ ভাইয়ের সাথে, যে যত কথা বলুক তা শুনে যাবো আর কমিটমেন্ট রক্ষা করবো। কারণ আমি ওদেরকে যে কথা দিয়েছি আমার অপেক্ষায় থাকবে তারা এবং যে নিশ্চিন্তে উনারা রয়েছেন আমার একটু কথাতে উনারা আবার টেনশনে পড়ে যাবেন এইসব কথা চিন্তা করে শুধু চুপচাপ সহ্য করে রইলাম।। এবার বিকালে ঐ অফিসের এক ভাই বললো দুঃখিত ভাই আপনার টি-শার্ট সাথে ভুলে অন্য ৬ টা টিশার্ট চলে গিয়েছে সে টি-শার্ট গুলো দিয়ে দেন। এবার মেজাজ কেমন লাগে বলেন? একবার এতো কস্ট করে অন্যের সাহায্য নিয়ে ব্যাগটা বেঁধে দেওয়ার পরে, এটা আবার খুলে টিশার্ট বের করে আবার প্যাকেট করলাম। এ যেনো প্যারার ওপর আবার প্যারা যাকে বলে। পরে আবার ঐ ৬টা টি-শার্ট ঐ অফিসে পৌঁছে দিই আমি। এ টিশার্ট আবার বাড়ি থেকে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে ফেনী এবং ফেনী থেকে বাসে করে ঢাকা নিয়ে আসলাম কাতার নিয়ে আসার উদ্দেশ্য। বাসে নামার সময় কন্ডাকটর এতো বড় ব্যাগ দেখে বলে বকশিশ দেন ভাই। এ ব্যাগ নিয়ে পরে রিকশা করে বাসা নিলাম ঢাকায় বনশ্রীতে মামার বাসায়। রিকশায় এ ব্যাগ রাখলে আর কেউ বসতে পারে না, এটা একটা প্যারা। আমি আর আমার পরিবার দুইজন মানুষ, কিন্তু ব্যাগ বড় হওয়াতে দুই রিকশা নেওয়া লাগছে। সবকিছু ধাপ শেষ করে ফাইনালি এয়ারপোর্টে আসলাম। এয়ারপোর্টে এসে আবার ওজন চেক করলাম, ভয়ে ছিলাম যদি আমার মাল সহ আনার ওজন বেশি হয়ে যায়! ।কারন একবার জরিমানা দিয়ে আসছিলাম দেশে। যাই হোক আলহামদুলিল্লাহ প্লেনে বসে গেলাম বডিংয়ে লাগেজ গুলো দিয়ে। শেষমেষ এই ব্যক্তি নিয়ে পৌছে গেলাম নিজের কর্ম স্থল কাতারে।
অবশেষে এ টিশার্টগুলো প্রিয় ভাইয়ের হাতে কাতার পৌঁছে দিলাম। প্রিয় ভাই আমার মাধ্যমে টি-শার্ট পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। উনার কৃতজ্ঞতার হাসিমুখটা দেখে আমি ধন্য।
স্যার যে বলে আপনি যদি মানুষকে একটু সহযোগিতা করতে পারেন, জীবনে এটা আপনার জীবনে নিজের বলার মতো গল্প। আমার কাছে ঐ একটু সহযোগিতা করে নিজের কাছে ভালো লেগেছে এবং এখানে সহযোগিতা করতে গিয়ে প্যারাগুলো কিছুই মনে হয় নাই।
এ ঘটনা বলার উদ্দেশ্য হলো, স্যার বলে কমিটমেন্ট একটা বিশাল ব্যাপার, এটা রাখতে বুকে সাহস লাগে ও মনে জোর লাগে!
সাধারনরা তো বটে অনেক বড় বড় মানুষ অনেক বড় বড় কথা বলেন,উপদেশ দেন কিন্তু নিজে কতটা কমিটমেন্ট রাখেন ও তা মানেন।
আমি ছোট এ কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করতেছি।
তবে এ কমিটমেন্ট রক্ষা এ অভ্যাসটা আগে থেকেই থাকলেও চর্চাটা কিন্তু এ প্লাটফর্ম প্রিয় স্যার শিখিয়েছে। আমি এ প্লাটফর্ম জয়েন্ট না হলে এ কমিটমেন্ট রক্ষা অভ্যাসটা চর্চা করা আসলেই হতো না। এইখানে এমন ইচ্ছে করলেও কমিটমেন্ট ভাঙতে পারি না, শুধু স্যারের ক্লাস গুলো আর এত বড় প্ল্যাটফর্মের মানুষগুলোর কথা মনে পড়ে যায় আমরা যেখানে পজিটিভ মানুষ ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছি। স্যার বলে আপনি কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে পারলে, চাকরি বা ব্যবসা যাই করবেন এটা আপনাকে এগিয়ে নিবে।
কমিটমেন্ট করার ভয়কে জয় করতে হবে। নিজের সাথে নিজে প্রকৃত ওয়াদা করবেন। দেখবেন এর প্রতি আপনার একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়ে গেছে।
শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার আপনার এতো সুন্দর প্লাটফর্ম জন্য আমরা নিজেকে পরিবর্তন করতে শিখতেছি। নিজের অভ্যাস গুলো কে প্রতিনিয়ত চর্চা করে অন্তরে লালন করার চেষ্টা করছি।
সব সময় যেন ভালো ভালো কাজগুলো করে যেতে পারি স্মৃতি রেখে যেতে পারি নিজের মরনের পর অন্তত একজন বলবে আবদুল মোতালেব নিজের বলার মতো একটা গল্প প্ল্যাটফর্মের একজন সৎ ভালো মানুষ। ও মানবতার ফেরিওয়ালা, বলবে কঠোর পরিশ্রমী একজন নির্ভীক ভলান্টিয়ার।
ভুল হলে ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৮১
১৭-০৭-২০২০
ধন্যবাদ।
👱আবদুল মোতালেব (রুমন)
🇶🇦 কান্ট্রি এম্বাসেডর -কাতার
👨🎓 ষষ্ঠ ব্যাচ
🖋️রেজি.নং: ৬৪৭
🇧🇩 ফেনী জেলা