প্রতি সপ্তাহেই মিট আপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে কর্মশালার মাধ্যমে । ইতিমধ্যেই অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা কেউ
আসসালামু আলাইকুম।
সবাই কেমন আছেন?আশা করি আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভাল আছি। প্রথমেই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞ্যাপন করছি এই মহামারির সময়েও তিনি আমাদের সুস্থ রেখেছেন। ধন্যবাদ জানাই প্রিয় মেন্টর জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যারকে। যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা পেয়েছি এত বড় প্লাটফর্ম এবং যেখানে প্রত্যেকেই ভাল মানুষ।
আমি সানজানা বিনতে শাহজাহান ।নিজের বলার মত একটি গল্প প্লাটফর্মের প্রথম ব্যচের এক গর্বিত সদস্য ।জন্ম আমার চট্টগ্রাম শহরে ।বাবার চাকুরি সূত্রে চট্টগ্রাম পোর্ট এ বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাসায় আমার শৈশব ,কৈশোর কাটে,শহরে মধ্যে এক স্নিগ্দ কোমল পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগ পাই।ছোট বেলায় ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলাম, বাবা,চাচা,মামা,ভাই সবাই ইঞ্জিনিয়ার তাই আমি ও হবো এই ভাবনাটাই সবসময় মাথায় কাজ করতো। কিন্তু পরবত্তীতে ক্লাস নাইনে উঠে বায়োলজি বই দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই ,তখন সিন্ধান্ত নেই কমার্স নিয়ে পড়ার। স্কুল ,কলেজ ভার্সিটি আন্ডারগ্র্যাডের গন্ডি শেষ করে দেশের বাহিরে মাস্টার্স পড়তে যাওয়ার সিন্ধান্ত নেই এ্যপ্লাইও করতে থাকি অফার লেটার ও আসে কিন্তু শেষ মুহূর্তে একটা সমস্যা কারণে আমার যাওয়া আর হয়ে উঠেনি। তখন আমার মন অনেক খারাপ হয়ে যায় এবং অনেকটাই ভেঙ্গে পড়ি আমি, ফেইসবুক, ইউটিউবে অনেক লার্নেড পারসন কে ফলো করতে শুরু করলাম নিজেকে অন্য দিকে মুভ করার জন্য নতুন ভাবে নিজেকে তৈরি করার জন্য । ঠিক তখনই প্রিয় মেন্টর ও শিক্ষক জনাবIqbal Bahar Zahid স্যার এর পোস্ট চোখে পড়ে। স্যার এর পোস্ট থেকেই "নিজের বলার মতো একটা গল্প"প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানা।পরবর্তীতে গ্রপে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাই এবং আলহামদুলিল্লাহ এগিয়ে চলছি সব দুঃখ ভুলে ।
"নিজের বলার মতো একটা গল্প" ও আমি :
মনে পড়ে আমার প্রথম দিনটির কথা।২০১৭সালের ডিসেম্বর মাসের
১৫/১৭ তারিখ ৯0 দিন সেশন এর ঘোষণা দিয়ে সে সময় স্যার যে স্ট্যাটাস টি দিয়েছিলো সেটি এখন ও চোখে ভাসে। স্যার ঐ পোস্ট এ ৬৪ জেলা হতে ১২৮ জন কে নিয়ে" নিজের বলার মতো একটা গল্প" ৯০ দিন সেশন এর প্রথম ঘোষণা দেন । আমি পোস্ট টি দেখা মাত্রই ইমেইল এর মাধমে এ্যপ্লাই করি আর দোয়া করছিলাম,আমি যেন চট্টগ্রাম থেকে যে ২ জন সিলেক্ট করবে তার মধ্যে থাকি।পরবত্তিতে আল্লাহর রহমতে সিলেক্ট হই ।আমরা প্রথম ব্যচে ছিলাম ৫ জন মেয়ে । গ্রুপের প্রতি প্রথম দিন থেকে যে ভালো লাগা শুরু করেছিল আশা করি জীবনে শেষ সময় পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।একবার ও মনের মধ্যে কখনো কাজ করেনি স্যার যা বলছেন,শিখাচ্ছেন এগুলোর পিছনে কোন উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা। স্যারের সম্পর্কে যত পড়তে শুরু করলাম তত আরো বেশি ধারণা পেতে থাকলাম,মুগ্ধ হতে লাগলাম একজন মানুষ কতোটা বড় মনের ও উদার হলে এই কার্যক্রম করতে পারেন।তারপর শুরু করি প্রতিদিন একটা সময় এসে পোস্ট পড়া,ভিডিও দেখা,এভাবে দিন যায়,মাস যায়, দেখতে দেখতে আমাদের সমাপনী সময় চলে আসে। সেটি অনুষ্ঠিত হয় বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ।আমদের ব্যচে পরবর্তীতে আর ও ৩৬ জন কে যুক্ত করা হয় ।টোটাল ১৬৪ জন কে নিয়ে স্যার কি এক অসাধারন অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছিলেন। ঢাকা শহরে আমার প্রথম কোন প্রোগ্রামের সমাপনী পর্বে অংশ নেওয়া। সেদিন স্যার ৯০ দিন সেশন এর উপর বিভিন্ন ক্যটিগরিতে পুরুষ্কৃত করেন। যখন পুরষ্কার ঘোষণা শুরু হয় তখন আমি ভাবছিলাম গ্রুপে ৩মাস আমার পারফরমেন্স কেমন ছিল,যথেস্ট সময় কি দিয়েছি, নানাধরনের কিছু চিন্তা কাজ করছিল মাথায়,প্রথমে স্যার ১৪জন কে পুরুষ্কৃত করেন। এরপর স্যার আবার ঘোষণা দেন আজকে অনুষ্ঠানে ৩ টি বিশেষ পুরষ্কার দেওয়া হবে ।তখন আমি জোহরা আপুকে বলছিলাম আপনি এর মধ্যে একজন।৩ টি ক্যটিগরিতে পুরষ্কার দেওয়া হয়।মাসুদুর রাহমান ভাই বেস্ট বিসনেস আইডিয়া তে, ওয়াসিম ভাই বেস্ট প্রমিসিং এণ্টাপ্রিনর এবং আমি বেস্ট লার্নার ক্যটিগরিতে পুরষ্কার পাই।যখন মঞ্চ হতে আমার নামে ডাক আসে তখন আমি খুব চমৎৃকৃত হই। মেয়র আতিকুল ইসলাম মহোদয়ের হাতে বেস্ট লার্নার অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করি। আমার জীবনের সেরা একটি দিন ছিল সেদিন। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ সব সময় জানাই স্যারকে এরপর গ্রপের টানা ৯0 দিনের সেশন অবিরত চলতে থাকল। আলহামদুলিল্লাহ সব সেশন দেখার এবং জানার সুযোগ হয়েছিল । স্যার অবিরত কস্ট করে যাচ্ছেন।শীত,বর্ষা ,ঈদ,কুরবান কোন ছুটি তিনি একদিন ও নেননি। ৩য় ব্যাচ হতে শুরু হলো রেগুলার গেস্ট স্পিকার এনে তাদের বিভিন্ন ব্যবসায়িক গল্প তুলে ধরা হচ্ছে যা আমদের আগানোর পথকে আরও সহজ করে দিচ্ছে । এছাড়া ১০ম ব্যাচ থেকে শুরু হল স্কিল ভিওিক ট্রেনিং ,যেটি আমাদের ইংরেজী,আইসিটি সহ বিভিন্ন মৌলিক বিষয় গুলো আর ও ভালো ভাবে আয়ত্ত করার এক অসাধারণ সুযোগ করে দিয়েছে। স্যারের প্রতিটি সেশনে কিভাবে একজন উদ্যোক্তা চিন্তা ধারা বিকাশ থেকে বিস্তৃত, করতে হয়,কিভাবে নিজের জীবনের প্রতিটি ধাপে সৎ এবং সর্বোপরি ভালো মানুষ হওয়া যায় তা শিখিয়ে যাচ্ছেন, গ্রুপে স্যার থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেক ভাইবোন ব্যবসা শুরু করেছেন এবং অনেকের ব্যবসা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা আবার শুর করেছেন,তারা আবার সাহস ফিরে পেয়েছেন। এই গ্রুপে ৬৪ জেলা ও প্রবাসের ৫৫টি দেশের ভাইবোন আমাদের সাথে যুক্ত আছেন । এই প্লাটফর্মের কল্যাণে প্রতিটি জেলার কিছু ভাইবোনের সাথে পরিচয় হতে পেরেছি।
বর্তমানে আমি গুলশানে অবস্থান করায় গুলশান জোনের মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হয়েছি। করোনা পরিস্থিতিতেও গুলশান জোনের কার্যক্রম চমৎকারভাবে চলমান রয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই মিট আপ প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে কর্মশালার মাধ্যমে । ইতিমধ্যেই অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা কেউ কারো সাথে দেখা না হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড সমাপ্তি করতে পেরেছি সফলতার সাথে সবার ভালবাসা ও সহযোগিতায়। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং আমরা আরো বেশি বেশি ভলেন্টিয়ারিং কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রিয় স্যারের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করব। আমার কাছে ভালো লাগে প্রোগ্রামগুলোতে যখন অংশ নেই যেখানে আমি আগে কথা বলতে পারতাম না এখন অনর্গল বক্তব্য দিয়ে যাই। কর্মশালায় নতুনদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আমরা আলোচনা রাখি নিজের মধ্যেও অসম্ভব ভালোলাগা কাজ করে।এত বিশাল এক নেটওয়ার্ক যে পাব তা স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।এখন বাংলাদেশের যে কোন শহরে গেলে একা মনে হয় না কারণ প্ল্যাটফর্মের ভাই বোনেরা তো আছেন যা আমাদের দ্বিতীয় পরিবার। স্যার সেশন থেকে শিক্ষা নিয়েছি কিন্তু এখন ও ব্যবসা শুরু করিনি , কারণ আমি পড়াশোনায় ছিলাম এখন তা আলহামদুলিল্লাহ শেষ করেছি।আশা করছি খুব শিঘ্যই শুরু করব।কিন্তু মানুষ হিসেবে একজন ভালমানুষ তা নির্দ্বিধায় বলতে পারব।আসলে স্যার প্রতিনিয়ত যে পজিটিভ ভাইব দিচ্ছেন তা আমাদের প্রতিদিনের কাজকে আর ও ত্বরান্বিত করছে। স্যারের কাছ থেকে আমরা যা শিখতে পারছি তা আমাদের প্রত্যেকের কাজে লাগানো উচিৎ,আমরা জানিনা আগামীকাল আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে ,তাই যে দিনটি পাচ্ছি তা কাজে লাগাতে হবে।
মার্টিন লুথার কিং এর একটি কথা আমার খুব প্রিয়,প্রত্যেক মানুষ চাইলেই বিখ্যাত হতে পারে না,কিন্তু মহৎ হতে পারে ।শুধু মানুষকে ভালবাসতে হবে,এক সাথে এগিয়ে চলতে হবে।আমাদের মহত্ত বিকশিত হবে আমদের জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে।আমাদের হিংসা,পরনিন্দা,পরচর্চা থেকে বেরিয়ে যে যার জায়গা থেকে কাজ করে যেতে হবে,আমার কাজ দ্বারা একজন মানুষ ও যদি উপকৃত হয় সেটি আমার লাভ। ক্ষমতা,পদ,পদবি আজ আছে কাল নেই।আমরা যদি এভাবে চিন্তা করতে পারি তাহলে আমাদের জীবনে প্রতিঘাত গুলো আমাদের কাবু করতে পারবে না,ভিতর থেকে একটা আত্মতিপ্তি কাজ করবে। আমাদের প্রিয় শিক্ষক ও মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার স্যার আমাদের এই প্রিয় প্ল্যাটফর্মের সবগুলো মানুষকে ভালো মানুষদের ব্র্যান্ড হিসেবে ঘোষণা করেছেন আমরা আমাদের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে তা প্রস্ফুটিত করব এবং তাতেই প্রিয় স্যারের শিক্ষা ও স্বপ্ন সফল হবে। প্রিয় স্যারের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমরা চাই আমাদের সমাজকে বদলে দিতে সেই লক্ষ্যে আমরা নিজেরা নিজেদের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্যারের ভালোমানুষি চর্চার শিক্ষাকে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আমি মনে করি প্রিয় ফ্লাটফর্ম ও প্রিয় স্যার কে যদি কিছু দিতে চাই তাহলে এই পরিবর্তন করে দেখানো টাই হবে আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। হাটিঁ হাটিঁ পা পা করে এগিয়ে চলছে আমাদের প্রাণের প্ল্যাটফর্ম।,১০ম ব্যচ শেষ করে ১১তম ব্যচে পদাপর্ণের পথে,এই দীর্ঘ পথ যাত্রায় স্যার সমাজের জন্য,মানুষের জন্যে অনেক মহৎ কাজ করেছে এবং করে যাচ্ছে যা আমরা প্লাটফর্মে থাকার কারণে বিভিন্ন কাজে শরীক হতে পেরেছি,এবং মানবিকতাবোধ আর ও জাগ্রত হয়েছে। নতুন যারা আসছে তাদের জন্যে অনেক শুভকামনা রইল। আল্লাহ কাছে দোয়া করি আল্লাহ স্যার কে ভালো রাখুক সব সময় আপনি আমাদের যে গাইড করছেন আমি অবশ্যই তার সম্মান রাখবো,সবাই যেনো গর্ববোধ করতে পারে আমি আপনার ছাত্রী। স্যালুট প্রিয় স্যার আপনাকে। ভবিষ্যতে দেশের মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতকরণ নিয়ে কাজ করতে চাই।একই সাথে একজন নারী হিসাবে অন্য নারীরা যারা এখন ও সঠিক নির্দেশনা পাচ্ছে না তাদের সঠিক নির্দেশনা দিয়ে এগিয়ে নিতে চাই। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমাদের সবার পথচলা সুন্দর ও সার্থক হোক এই শুভ কামনায় আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৮৩
১৯-০৭-২০২০
সানজানা বিনতে শাহজাহান
প্রথম ব্যাচ
রেজিস্ট্রেশন নং ২৫৮৮
জেলাঃ চট্রগ্রাম
বর্তমানঃ গুলশান,ঢাকা।