7 টাকা দিয়ে শুরু যে ছেলেটির ব্যবসা
নিজের বলার মতো একটা গল্প
7 টাকা দিয়ে শুরু যে ছেলেটির ব্যবসা
করোনা পরিস্থিতি তাকে কখনো হতাশ করতে পারবে না !
1994 সাল যখন ক্লাস ফোরে পড়ি" তখন প্রথম মায়ের থেকে 7 টাকা নিয়ে " পাইকারি দোকান থেকে এক প্যাকেট বার্মিজ আচার কিনে নিয়ে আসি। বার্মিজ আচার তখন এক প্যাকেট 24 টি থাকতো"
এক টাকায় দুটি করে বিক্রি করে প্রথম দিন 12 টাকা বিক্রি করেছিল কি যে খুশি প্রথম দিন 5 টাকা লাভ করে" তারপর থেকে শুরু হল " শিশু শ্রেণি থেকে ক্লাস টু পর্যন্ত দশটা থেকে 12 টায় ক্লাস হত" আর আমাদের 12 টা থেকে 4 টা পর্যন্ত " প্রতিদিন সকাল 9 টায় গিয়ে আচার চকলেটের দোকান সাজিয়ে বসতাম বারোটা পর্যন্ত " তারপর আমার নিজের ক্লাসে চলে যেতাম প্রতিদিন 150 ও 200 টাকা বিক্রি করে অনেক খুশি লাগছে নিজের কাছে" এভাবেই চলছিল প্রাইমারি জীবন ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত " তারপর ঈদের সময় বাচ্চাদের খেলনা নিয়ে ঈদগাহে বিক্রি" যে সময় যেটাই পেরেছি ওটার ব্যবসা করতাম। এই ভাবেই চলছিল আমার শিক্ষাজীবন দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে কখনো লজিন থেকেছি " দাদা-দাদী সহ ফুফু কাকা যৌথ পরিবারের প্রায় 10 জন সদস্য ছিল আমাদের " একমাত্র রোজগারের উপায় ছিল বাবা পাকিস্তান থেকে 2-3 হাজার টাকা পাঠাতে সেটা দিয়ে অনেক কষ্ট করে চলত পরিবার 1998 যৌথ পরিবার থেকে আমাদের আলাদা হয়ে গেল" দাদা ছোট একটি দিয়েছিল রুম আমরা ভাই-বোন তিনজন আমি পরিবারের সবার বড় ছোট একটি ছকি ছিল মা ছোট দুই ভাই বোন নিয়ে ছকির উপর থাকতো আর আমি নিচে একটি বিছানা করে থাকতাম " সকাল 9 টায় দিকে মাদ্রাসা রাওয়ানা হতাম বিকেল চারটায় ফিরতাম বিরতির সময় অনেক ছেলেদের টিফিন করতে দেখতাম কিন্তু টাকা না থাকার কারণে আমার কপালে জুটত না " এভাবে চলতে লাগল 2000 সাল এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট আসে মনের ভিতর একটি চিন্তা শুধু কাজ করতেই থাকে এভাবে মায়ের দুঃখ কষ্ট আর দেখতে নিজের কাছে ভালই লাগতেছিলো না " এদিকে ভাই বোন বড় হচ্ছিল তাদের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নিলাম বিদেশ চলে যাব তখন মামারা সৌদি আরব মক্কায় থাকতো উনাদের ওখানে ব্যবসা-বাণিজ্য আছে মাকে আর মামা দেরকে বলতে থাকলাম আমার জন্য ভিসার ব্যবস্থা করতে এরই মধ্যে ভর্তি হলাম ফেনী আলিয়া মাদ্রাসার আলিমে "
আলিম পরীক্ষা দেওয়া কালীন সময়ে ভিসা হয়ে গেল
চলে আসলাম সৌদিতে মামাদের দুটো কাপড়ের দোকান ছিল একটি রিটেল অন্যটি পাইকারি আমাকে পাইকারি দোকানের সেলসম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিল মার্কেট এর দোকানে দোকানে গিয়ে অর্ডার নিয়ে মাল সাপ্লাই দেওয়ার দায়িত্ব" ডিউটি সকাল 9 টা থেকে দুপুর 1 টা বিকাল 4 টা থেকে রাত বারোটা ! বেতন 700 রিয়াল চলছিল এভাবে কিছুদিন "
এদিকে ভিসার জন্য আব্বু কষ্ট করে যোগাড় 80 হাজার টাকা জোগাড় করে দিয়ে বাকি টাকা বাকি ছিল"
এই টাকা আমার বেতন থেকে কাটবে তখন মোবাইল ফোন ছিল না মাঝে মাঝে মায়ের কাছে চিঠি লিখতাম
মা আমার চিঠি পেয়ে অনেক আনন্দ পেত আমিও মায়ের হাতের চিঠি পেলে অনেক খুশি হতাম " এক বছর পরে মামা দেশে আসতে ছিল আমাকে জিজ্ঞেস করল বাড়িতে কিছু দিবি আমি বললাম আমার কাছে তো টাকা নেই আমাকে হিসাব-নিকাশ দিয়ে বলল এই নেয়1000 রিয়াল।তোর টাকা কাটা শেষ" আমি প্রথম আমার জীবনের বেতনের টাকা দিয়ে মায়ের জন্য এক জোড়া ছুডি কিনে নিয়ে আসি সেদিন কি যে আনন্দ লাগছিলো জীবনে মনে হয় এত আনন্দ আর কোনদিন পাইনি "
পাশাপাশি চিন্তা করলাম এভাবে তো আর চলে না কিছুই আমাকে করতে হবে "
একদিন দোকান বন্ধ করে যাচ্ছিলাম বাসায়" এক সৌদি জিজ্ঞাসা করলো চাউলের বস্তা বাসায় নিয়ে যেতে পারবে আমি বললাম পারবো তখন আমাকে 10 রিয়াল দিয়েছিল "আমার মনে আছে সেদিন থেকে চিন্তা করে চাকরির পাশাপাশি আমাকে কিছু বাড়তি আয়ের সুযোগ খুঁজতে হবে "
তারপর থেকে শুরু হল মক্কায় থাকার কারণে প্রতিদিন সকাল ভোরে ফজরের আগে উঠে যেতাম না ঘুমিয়ে উদ্দেশ্য হারামের পাশে গিয়ে জায়নামায বিক্রি করতাম। কখনো কখনো পুলিশের দৌড়ানি খেতাম
তারপর 9 টায় এসে দোকান খুলতাম ডিউটিতে এভাবেই চলছিল জীবন মায়ের কাছে মাসে মাসে টাকা পাঠাতাম" সংসারের সচ্ছলতা ফিরে আসতে শুরু করল এভাবে কাটতে লাগল প্রবাস জীবনের তিনটি বছর চিন্তা করতে থাকলাম আমার 700 রিয়েল বেতন দিয়ে কি হবে " আমাকে আরও বেশি রোজগার করতে হবে " পাশাপাশি চিন্তা করতে থাকতাম ।আমি যদি ব্যবসা করতে পারতাম " কিন্তু পুজি পাব কোথায়" সিদ্ধান্ত নিলাম চাকরির পাশাপাশি সব টাকা বাড়িতে না দিয়ে কিছু টাকা জোগাড় করবো " ইতিমধ্যে এক বন্ধুর মাধ্যমে খবর পেলাম সৌদি আল নাহাদি ফার্মেসিতে লোক নেবে বেতন অনেক ভালো তাই ইন্টারভিউ দিতে চলে এলাম জেদ্দায়" ইন্টারভিউ তে পাশ করলাম এবং নিয়োগ পেলাম বেতন 2000 রিয়েল 1000 বাড়িতে দিতাম আর 500 রিয়েল নিজের খরচ হত আর500 রিয়েল নিজের কাছে জমা রাখতাম "উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে ব্যবসা করব !
এক বছর পার করলাম এক বন্ধুর সাথে পরামর্শ করলে সে বলে তুই তো ব্যবসা জানিস তোর কাছে কত টাকা আছে আমি তোকে কিছু ধার দেবো তুই ব্যবসা শুরু কর ।
সাহস করে চাকরি ছেড়ে দিলাম!
সেই থেকে শুরু হলো সৌদিতে আমার ব্যবসায়ী জীবন
আর পিছনে তাকাতে হয়নি আল্লাহপাক অনেক উন্নতি দান করেছিল বন্ধুদের সব ঋণ শোধ করে ফেলি বাবা পাকিস্থানে একটু অসুস্থতার কারণে বাবাকে বলি দেশে চলে যেতে ।
মা বলল বাবা এবার একটা ঘর কর " কারণ বোনটি বড় হতে চলেছে" বোনটিকে বিয়ে দিতে হবে" একটি ঘর অবশ্যই দরকার !
ঘর হয়ে গেল " আমাকে বলে বাড়িতে এসে একবার ঘুরে যা বোনটি কে বিয়ে দিয়ে যা" সেই প্রথম সাত বছর পরে দেশে আসি " বোনটি কে বিয়ে দিয়ে তারপর আবার চলে আসি " বাড়ি থেকে আসার দুই মাস পরে আগুন লেগে পুরো মার্কেট সব দোকান পুড়ে ছাই!
হঠাৎ চোখে মুখে সবকিছু অন্ধকার যেন আকাশটা মাথায় চেপে বসলো !
বন্ধুবান্ধব সবাই আশ্বাস দিল আবার ঘুরে দাঁড়া এবং পাইকারি মার্কেট থেকে যাদের থেকে মাল নিতাম তারা অনেক আশ্বাস আশা-ভরসা দিল ( বলে রাখা ভালো আপনি জীবনের সৎ নিষ্ঠা এবং কমিটমেন্ট রক্ষা করবেন আপনার জীবনে আপনি কখনো ঠেকবেন না) আবার নতুন করে শুরু করলাম ব্যবসা 6 মাসের ভিতরে সবার দেনা পাওনা শোধ করে " অনেক বেশি শক্তি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালাম !
তারপর তিন বছর পরে আবার দেশে এসে নিজে বিয়ে করলাম "
আগের থেকে অনেক ভালো হচ্ছিল এবারে ব্যবসা উন্নতি একে একে দুটো দোকান করলাম "
কয়েক মাস পর পর দেশে ছুটিতে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম এভাবেই চলছিল আরো পাঁচটি বছর
কেন জানি মনের ভিতর একটি হতাশা কাজ করতো
আমি যদি দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতাম
এটি তো আমার দেশ নয় যারা মিডিলিস্ট এ থাকেন
তারা বুঝে কফিল কথাটা হচ্ছে সরকারি ডকুমেন্টে উনি মালিক আমি কর্মচারী
এরই মধ্যে ছোট ভাইকে নিয়ে যায় ওখানে
আর চিন্তা করতে থাকি আমি একবার এই দেশে চলে আসব ছোট ভাইকে দিয়ে প্রবাস জীবন আমার কাছে আর ভালো লাগতেছে না " আমার চিন্তা দেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়া !
কিন্তু ভয় হয় "পারব কি পারব না " দেশে বিদেশে যাদের সাথেই পরামর্শ করেই তারা সাহস দেইনা" বলে দেশে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অনেক কঠিন" ওখানে আরো কিছুদিন থাক কিন্তু আর কত 16 বছর তো হয়ে গেল।
সেই থেকে আইডিয়া খুঁজতে লাগলাম হঠাৎ করেই ইকবাল বাহার স্যারের একটি ভিডিও দেখতে পেলাম ইউটিউবে টেন মিনিট স্কুলের " এবং ভালো লাগতে শুরু করলো তার কথা গুলি " জানতে পারলাম নিজের বলার মত গল্প এর কথা" তখন প্রথম ব্যাচ চলছিল " অপেক্ষায় ছিলাম কখন দ্বিতীয় ব্যচ শুরু হবে!
এবং জয়েন করলাম "
সেই থেকে স্যারের প্রত্যেকটি সেশন ভিডিও ভালো করে ফলো করতে লাগলাম !
প্রত্যেকদিন অপেক্ষা করতাম স্যার কখন পোস্ট করবে " একে একে 45 দিন শেষ করলাম" দিন দিন নিজের ভিতর সাহস বেড়ে চলছিল " নিজেকে নিজে বলতে শুরু করলাম আমি দেশে গিয়ে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হতে পারব " এবং সিদ্ধান্ত নিলাম চলে আসব
2018 অবশেষে চলে আসলাম !
গত এক বছর আগে ফেনীতে স্মার্ট লুক নামে একটি কাপড়ের শোরুম দিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যাত্রা শুরু আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো চলছে!
ইচ্ছা এবং আশা ফেনীসহ পুরো দেশের 10 টি স্মার্ট লুকের শোরুমের মাধ্যমে 50 জন লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ।
আশা এবং বিশ্বাস করি আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব ।
কারণ যে ছেলেটির প্রথম পুঁজি7 টাকা দিয়ে শুরু
আজকের সে কোটি টাকার মালিক ।
পরামর্শ :: জীবনে কঠিন অবস্থায় কারো সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না! কখনো অসৎ উপায়ে উপার্জন করবেন না ! হারাম এবং সুদ উপায় থেকে বেঁচে থাকবেন ! কমিটমেন্ট রক্ষা করবেন! সৎ এবং নিষ্ঠার সাথে থাকবেন ! কিছু সময় কষ্ট করলেও সামনের দিনগুলি অনেক সুন্দর হবে! এবং এটি আপনাকে আনন্দ দেবে ! এটি আমাকে আনন্দ দেয় ।
পোস্টে অনেক লম্বা হয়ে গেছে" তাই যারা পড়তে বিরক্ত হয়েছেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি!
এবং যারা একটু হলেও অনুপ্রাণিত হয়েছেন তাদের জন্য অনেক বেশি দোয়া এবং শুভকামনা
নতুন উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের কে বলছি
করণা পরিস্থিতিতে কেউ ধৈর্য হারা এবং মানসিক টেনশন নিবেন না আপনার জন্য উত্তম দিন অপেক্ষা করতেছে
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 194
Date:- 14/04/2020
কামাল মজুমদার পারভেজ
স্বত্বাধিকারী স্মার্ট লুক
ডিসটিক অ্যাম্বাসেডর প্রাণপ্রিয় গ্রুপ
ফেনী
মোবাইল নাম্বার 01821594836
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার 1542