হৈ চৈ ও হচ্ছে অনেক। কিন্তু আমাদের ঠিকই মন খারাপ। গরুর জন্য।
পোস্ট ৫০
আস সালামু আলাইকুম।
আমি জেসমিন আক্তার জুঁই।
#CommunityVolunteer
🐂😙আজকে আমি হাজির হলাম আমার জীবনে দেখা ১ম কুরবানির অভিজ্ঞতা নিয়ে।
🌿আমি আমার পরিবারের ছোটো মেয়ে। 👩 আমার জন্ম রাজবাড়িতে। আমার বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরিজিবী। আমার খুব ছোট বেলায় গোয়ালে অনেক গরু এবং ছাগল থাকতে দেখেছি 🐂🐐 না, কোন রাখাল ছিল না। আমরা সবাই কম বেশী দেখাশুনা করতাম।
🌿আমরা অনেক ভাই - বোন ছিলাম। ৬ বোন ৩ ভাই। মার কাছে শুনেছি আমাদের নাকি আরো ৫ ভাই - বোন হওয়ার কিছুদিন পর পর মারা গেছেন 😥😥
🌿আমার মনে আছে। 🤔 আমি আর আমার ছোট ভাইয়া সকালে পড়াশোনা করার পর মাঝে মাঝেই গরু ছাগল মাঠে রেখে আসতাম, পানি খাওয়াতাম। বিকেল বেলা বাবা অফিস থেকে এসে ঘাস কাটতেন। গরু ছাগল কে খাওয়াতেন। আমরাও সাহায্য করতাম।
🌿 আসলে আমি তখন অনেক ছোট তাই অতো মনে পড়ে না। আরো মনে পড়ে, মাঠ থেকে ছাগল কোন এক ভাবে খুঁটি থেকে খুলে গিয়ে মানুষের গাছ খেলে বা খাওয়ার চেষ্টা করলে তখন ওরা খোয়ারে বন্দি করত এবং এক সময় আমরা ছাগল আনতে গিয়ে দেখি মাঠে নাই।
🌿খোঁজ, খোঁজ। এক সময় জানা গেল অমুকের খোয়ারে ছাগল আছে। 😆 আনতে গেলে বলে টাকা লাগবে, না হলে দিবে না। 😯 তখন আবার ভয়ে ভয়ে বাসায় বাবাকে বললে বাবা জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা না ছাগলের কাছে ছিলা তো ছাগল গাছ খেল কিভাবে?
🌿আমরা প্রথমে বলতে চাইনি পরে বাবা অনেক রাগ করবেন ভেবে বললাম যে, আমরা খেলছিলাম।
🌿তখন বাবা আর কিছু না বলে টাকা দিলেন 🤭 আর বললেন যে খুঁটিটা শক্ত করে মাটিতে পুঁতে দিলেই তো আর ছুটে পালাতে পারত না আর খোয়ারেও যেতে পারত না।
🌿তারপরে আমরা গেলাম ছাগল ছাড়াতে। সেই লোক আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের বাবার নাম কি?
আমরা বাবার নাম বলার পর তারা ছাগল ছেড়ে দিল কিন্তু কোনো টাকা নিল না। তারা শুধু এটাই বললেন যে, তোমাদের বাবা অনেক সৎ এবং ভাল মানুষ।
🌿 বাসায় এসে টাকা ফেরত দিলাম আর খোয়ার এর লোকের কথা বাবাকে বললাম। বাবা বললেন - ও, উনি, উনি অনেক সৎ ও ভাল মানুষ। এই কথাটি আমার তখনি ১ম শুনা। এ কথার সাথে পরিচিত হলাম।
🌿বাবা একদিন আলোচনা করছিলেন এবারের কুরবানির সাথে আকিকাও দিবেন আলোচনা হচ্ছে মায়ের সাথে। আমার ও আমার ইমিডিয়েট বড় বোন সহ দুজনের আকিকা দিবেন।
🌿আমরা তখন জানতে পারলাম যে ১ টা গরুতে ২ টা আকিকা ও ৫ টা নামের কুরবানি।
🌿সবই মা - বাবা ও বড় ভাই - বোনদের নামে, উনারা এমন বড়ও না কেও 9 এ, কেও 6 এ, কেও 3 তে পড়ে। আর আমি দুধ ভাত।😒😂 তখনো স্কুলে যাইনি মক্তবে পড়ি, কেবল হাতে - খড়ি ✍
🌿আমার মনে আছে বাবা তার পালিত একটা বড় লাল, খয়েড়ি রঙ এর ষাঁড় আছে ওটাকেই ঠিক করলেন কোরবানীর জন্য গলায় জরির মালা, মাথায় টায়রা, কি সুন্দর দেখাচ্ছে। 😍 চারদিকে কোরবানীর আয়োজন। সবার বাসার সামনেই কম-বেশী গরু।
🌿কিন্তুু আমাদের গরুটা বিশাল বড়, দেখতেও দারুণ। এজন্য অনেকেই দেখতে এসেছে। হাতে করে কাঠাঁল পাতা ওরাই খাওয়ানোর চেষ্টা করছে কেউ ভয় পাচ্ছে না কারণ সবাই ঘরের লোক। আর গরুও ভয় পাচ্ছে না। ও খুব মজা করে খাচ্ছে।
🌿আমি ও আপুরা মিলে ১ টি বড় করে গাঁদা ফুলের মালা গেঁথে গরুর গলায় পড়ালাম। দেখতে খুবি সুন্দর লাগছে। আমার মনে হয় গরুও খুশি হয়েছিল অনেক।
🌿যতই দিন যাচ্ছে কোরবানী এগিয়ে আসছে। আম্মা নিজ হাতে খড়কুটা কেটে খৈইল দিয়ে ও ভাতের মাড় মাখিয়ে সামনে দিলেন গরু পেট ভরে খেল। কিন্তু আম্মা কাঁদছিলেন গরুর মায়ায় ও চলে যাবে বলে। কোরবাণী হয়ে যেতে হবে।
🌿এত দিনের লালিত পালিত গরু। খুব মায়া হচ্ছিল। এক সময় মায়ের কান্না দেখে আমরাও কান্না শুরু করেছিলাম। কান্নার শব্দে বাবা এলেন। এসে জিজ্ঞাসা করলেন কি হল, কান্নাকাটি কিসের? তখন এই পরিবেশ দেখে শুনে বাবারো খুব মনটা খারাপ হয়ে গেল। চুপ হয়ে সরে গেলেন। পাছে তার চোখের পানি কেউ দেখে না নেয়।
🌿আমাদের মনের কথা বুঝতে পেরে বাবা বললেন আমরা নিয়ত করেছি আল্লাহ তায়ালার কাছে। আমাদের উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে আকিকা ও কোরবানী সুতরাং যতক্ষণ তোমার উদ্দ্যেশ্য সৎ থাকবে ততক্ষণ আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সহায় থাকবেন। মন খারাপ তে হবেই। কিছুই করার নাই। এরই নাম কোরবানী।
🌿বাবা, অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সৎ মানুষ ছিলেন। আমরা এতগুলো ভাইবোন। কত খরচ কিন্তু বাবা হতাশ হতেন না। তিনি বলতেন আল্লাহ যেহেতু মানুষ সৃষ্টি করেছেন সেহেতু রিজিকের ব্যাবস্থাও তিনিই করে দেবেন।
🌿আর তাই বাবাকে দেখতাম একটা মুহূর্তও বিশ্রাম নিতেন না। অফিস, বাসা, বাচ্চা - কাচ্চা এসব নিয়েই ব্যাস্ত থাকতেন। কখনো মন খারাপ করতে দেখিনি। অথচ সেই মানুষটা আজ একদমই চুপচাপ হয়ে গেলেন।
🌿আমরা আশ্চর্য হলাম। এটাই গরুর শেষ খাবার ভেবে সে আর খেল না হাতে যে ২ দিন ছিল সে সময়টার মধ্যে। সে প্রায় না খেয়েই ছিল। অনেক চেষ্টা করেও তাকে খাওয়ানো গেলো না।
🌿অবশেষে চলে এল সেই দিন। কোরবানীর দিন। সকালে বাবা Coxco সাবান দিয়ে গরুকে গোসল করালেন। গরু কান্না করছে সাথে বাবাও কান্না করছেন। তারপর তিনিও গোসল করলেন। নামাজে গেলেন।
🌿মা, বাবা কে সেমাই খাওয়ার জন্য দিলেন কিন্তু তিনি খেলেন না। বললেন গরুর কোরবানীর পরে খাবেন। সত্যিই তিনি অনেক্ষণ না খেয়ে ছিলেন।
🌿বাসায় তো আমরা অনেক ভাই - বোন। সাথে ফুফু - ফুফাও এসেছেন। দাদি এসেছেন আকিকা উপলক্ষে। হৈ চৈ ও হচ্ছে অনেক। কিন্তু আমাদের ঠিকই মন খারাপ। গরুর জন্য।
🌿যথারিতী নামাজে গেল সবাই এবং নামাজ পড়ে, হুজুর এলো গরু জবাই করতে। যখন নিয়ে যাবে গরুটাকে তখন আপুরা চিৎকার করে কান্না করছিল। আমিও বাদ ছিলাম না। কিন্তু কান্না করেও কোনো লাভ হল না।গরুর কোরবানী করা তো আর ঠেকানো গেল না। যা হবার তা হয়েই গেল। 😭😭 এর পরে আমার জীবনে,
🌿আরো অনেক কুরবানি দিয়েছি, দেখেছি, আমার সন্তান দের আকিকাও দিয়েছি। কিন্তু এটা আমার ১ম কুরবানি হওয়ার কারণে আমি এটা কোনো দিনও ভুলতে পারব না।
#শৈশবের১ম কেরবানী
আমি আজকে আপনাদের সাথে Share করলাম আমার জীবনে দেখা ১ম কোরবানীর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট সেকশনে লিখে জানাবেন।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৮৩
১৯-০৭-২০২০
আমি,
জেসমিন আক্তার জুই
#CommunityVolunteer
ব্যাচ - ১০ম।
রেজিঃ ১৫২৩৩.
গ্রামের বাড়ি - বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ।