আপনি যে ব্যবসাই করেন না কেন, পণ্য বা সেবা আপনাকে বিক্রি করতে হবে আর এটাই মূলত একজন ব্যবসায়ীর হাতিয়ার,
প্রিয় গ্রুপ থেকে ব্যবসা সম্পর্কে কি শিখলাম ও কিভাবে উদ্যোক্তা হলাম
আস সালামু আলাইকুম
অশেষ মেহেরবাণী মহান সৃস্টিকর্তার প্রতি যিনি পরিবার, বন্ধবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও আপনাদেরসহ সবাইকে ভাল ও সুস্থ রেখেছেন আর যারা অসুস্থ বা সমস্যায় আছেন আল্লাহ তাদেরসহ আমাদের সবাইর সহায় হোন আমিন।
কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই আমাদের সবার প্রিয় মেন্টর, তরুন স্বপ্নবাজ যার যাদুর ছোয়ায় লাখো মানুষ নতুন দিগন্তের আলোর দিশা পেল, সেই স্বপ্নদ্রস্টা জনাব ইবাল বাহার জাহিদ স্যারকে অকৃত্রিম ভালবাসা ও শুভেচ্ছা।
প্রিয় গ্রুপের সকল ভাল মানুষদের প্রতি রইল লাল গোলাপের শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।
মূলত ব্যবসার হাতেখড়ি হয় শৈশবেই খেলাচ্ছলে, ৬/৭ বছর হবে তখন আমার, কাকার মুদি দোকান ছিল, উনার দোকান থেকে চকলেট/বেলুন/ইত্যাদি পণ্য এনে কেরান ডাইল/কলমী ডাইলা (নোয়াখালী ভাষায় এমনই বলে, জানি না কে কি বলেন), দিয়ে দোকান ঘর করি। এরপর জীবনে অনেক ব্যবসাই করলাম। কি কি ব্যবসা করেছি তা আরেক দিন বলবো আপনাদের। তবে এখন জীবনে লেগে থেকে বাস্তাবায়ন করার লক্ষ্য নিয়ে অর্গানিক খাদ্য ও মসল্লা নিয়ে কাজ শুরু করলাম।
আমার নতুন অনলাইন শপ Juhana’s Organic Food বিজ্ঞাপণ আমাদের “ঢাকা কলেজ” মেসেন্জার গ্রুপে পরিচিতি পোস্ট হিসেবে দিয়েছিলাম কিছু দিন পূর্বে, তো একজনের মন্তব্যে একটু অবাক হলাম (স্কীনশট ছবিতে), নিজের ৪২ বছর বয়স কি বেশী হয়ে গেছে নতুন কিছু করার জন্য? অথচ আমার মনের মাঝে এখনও কলেজ জীবনের স্মৃতি উঁকিঝুঁকি মারে, মনের দিক থেকে কখনো মনেই হয় না যে কোন কিছু করার জন্য আমার এই বয়স কোন ফ্যাক্টর। আপনার লক্ষ্য যদি অটুট থাকে, চিন্তা যদি পজিটিভ থাকে তাহলে যে কোন বাধার সম্মুখীন হয়ে আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন।
👉কারণ স্যার বলেছেন, “স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন- সাফল্য আসবেই।” তাই জীবনের ৪২ বছর বয়সেও নতুন ব্যবসা করার সাহস করতে পারলাম।
আমি মূলত সৌদি প্রবাসী, আমার অনলাইন শপের বিভিন্ন পোস্ট দেখে দীর্ঘ ১৮ বছর পর আমার এক ক্লাস মেটের বড় ভাই মেসেন্জারে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি দেশে কি না। যখন উনি জানলেন আমি সৌদিতে অবস্থান করে দেশে ব্যবসা শুরু করেছি তখন উনি অনেকটা অবাক কিন্তু আনন্দিতও হলেন বটে। বর্তমান সময়ে কোন কিছু করার জন্য নির্দিস্ট স্থানে অবস্থানের আবশ্যকতা আছে কি? মোবাইল ফোনের এক ক্লিকেই যেখানে কোটি কোটি টাকার কাজ কারবার সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে।
👉স্যার বলেছেন, “জীবনে বলার মতো এটা গল্প থাকা দরকার”। আর সেই গল্প সৃস্টি করার লক্ষ্যে আমার অর্গানিক ফুড নিয়ে পথ চলা।
আসলে যা বলতে চাচ্ছি, কোন কিছু করার জন্য আপনার ইচ্ছা শক্তিই যথেস্ঠ, সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, ধৈর্য্যশীল হওয়া এবং সততা বজায় রাখা। সততাই আপনার ব্যবসার সফলতার বা সুপরিচিতির মূল স্তম্ভ। কোন কাজে যদি আপনার মানসিক তৃপ্তি না থাকে বা ঐ কাজকে আপনি যদি ভালবাসতে না পারেন তাহলে ঐ কাজ টিকিয়ে রাখা বড়ই দুস্কর।
👉স্যার বলেছেন, “কাজ করে যেতে হবে সমস্ত ভালবাসা দিয়ে, ছাড়তে হবে শেষ দেখে। আপাতত ফলাফল যদি নাও আসে শেখা হয়ে যাবে অনেক কিছু।”
পণ্য বা সেবার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই উৎপাদকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ থাকতে হবে অর্থাৎ আপনি যেন উৎপাদক থেকে সরাসরি পণ্যটি ক্রয় করতে পারেন সে ব্যবস্থা করতে হবে, তাতে আপনি কম মূল্যে পণ্য পেতে পারেন এবং কাস্টমারকেও তুলনামূলক কম মূল্যে দিতে পারবেন। মধ্যস্বতভোগী যেন পণ্যক্রয়ের ক্ষেত্রে না থাকে সে ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে কারণ এতে আপনার পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়ে যাবে এবং বাজারের প্রতিযোগীতায় আপনি টিকে থাকতে পারবেন না।
ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জন ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য খুবই জরুরী, ব্যয় নির্বাহের পর আপনার কাছে যদি ব্যবসা টিকিয়ে রাখার মত পর্যাপ্ত মুনাফা না থাকে তা হলে ব্যবসায়ে সফলতা লাভ করা বড়ই কঠিন হয়ে যায় তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে, প্রয়োজনে বাড়তি মূলধন যোগাতে হবে তবে তা অবশ্যই সার্বিক বিবেচনা করে, এমন না হয় যেন আপনি লস প্রজেক্ট চালাচ্ছেন।
ব্যবসায়ের মুনাফা শুধু যে আর্থিক ভাবে নিরুপণ করবেন তা কিন্তু নয়, ব্যবসায়ের সুনাম এবং রিপিট কাস্টমারও কিন্তু আপনার ব্যবসায়ের বড় মুনাফা হিসেবে কাজ করে। ব্যবসার শুরু দিকে তাই শুধু আর্থিক মুনাফা বৃদ্ধির চিন্তা না করে ব্যবসায়ের সুনাম অর্জন এবং রিপিট কাস্টমার তৈরী হয় তার ব্যবস্থা করা উচিত। এক্ষেত্রে Cost to Cost পলিসি এপ্লাই করতে পারেন, কাস্টমারের সুবিধার দিকে মনোযোগ দেওয়া খুবই জরুরী, কাস্টমারের সন্তুস্ঠী অর্জন করতে না পারলে ব্যবসা দীর্ঘস্থায়ী করা মুসকিল হয়ে যায় কারণ ঐ কাস্টমারই আপনার পণ্য বিজ্ঞাপণ ও মার্কেটিং এর কাজ করবে।
আমাদের জীবনে সর্বক্ষেত্রে সততা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, একজন সৎ ব্যক্তির কথা মানুষ সহজে বিশ্বাস করে, আপনার সামাজিক মূল্যায়ণ বৃদ্ধি করে, আপনার উপর আস্থাশীল হয়। তাই আপনি যখন একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিস্ঠিত করবেন তখন সততা আপনার ব্যবসায়ীক জীবনে টনিকের মতো কাজ করে আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে।
আপনি যে ব্যবসাই করেন না কেন, পণ্য বা সেবা আপনাকে বিক্রি করতে হবে আর এটাই মূলত একজন ব্যবসায়ীর হাতিয়ার, তাই পণ্য বা সেবা নির্বাচনে আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে, পণ্য বা সেবার সর্বোচ্চ কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। আজকাল মানুষ ভালো পণ্য বা সেবা পাবার জন্য তার মূল্য কত তা কমই বিবেচনা করে, সে দেখে পণ্য বা সেবাটি মানসম্মত কি না এবং এর জন্য যদি তাকে কিছু বেশী মূল্যও দিতে হয় তাতেও সে কার্পণ্য করে না। তাই কোন মতেই পণ্য বা সেবার কোয়ালিটির সাথে কোন ভাবেই কম্প্রমাইজ করা যাবে না। তাহলে কিন্তু আপনি ব্যাবসায়ী যুদ্ধে প্রথম ধাপে হেরে গেলেন।
আজকে আমার এক আত্মীয় আপু ফোন করে আমার অর্গানিক ফুডের ব্যাপারে আলাপ কালে অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের অনেক সমস্যার কথা বললেন। অনলাইনে বিক্রেতা খুব জাকজমক বিজ্ঞাপণ বা চাকচিক্য ছবি দিয়ে ক্রেতাকে ঠকায় বলে অভিমত প্রকাশ করলেন। আমি উনার সাথে সহমত প্রকাশ করলাম কারণ ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে এবং আমার স্ত্রীও যে ঠকি নাই তা মিথ্যে নয়। তবে আমি উনাকে আমার ব্যবসার মূলনীতি যা বললাম তা হলো, “আমার কাছে পণ্যের কোয়ালিটি ১০০% থাকবে, কোন কাস্টমার যদি অভিযোগ করে ও সঠিক প্রমাণ দেয় তাহলে আমি ঐ কাস্টমারকে আবার পণ্য সরবরাহ করব বলে নিশ্চিত করলাম, সত্যি বলতে এটা শুধু কথার কথা না, বাস্তবেই এটা আমার ব্যবসার প্রধান পলিসি, কারণ আমি বিশ্বাস করি “ কাস্টমারের সন্তুস্ঠীই আমার ব্যাবসায়ীক মুনাফা”।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৮৪
২০-০৭-২০২০
জাবেদ মোহাম্মদ
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার
৪র্থ ব্যাচ, রেজি: নং ৭৪১
এন আর বি - সৌদি আরব, দাম্মাম
সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী
ওনার অব Juhana’s Organic Food