সবাইকে বলি ঠিক তারপরও মন বলে কথা, সমাজের উচ্চবর্গের কথা শুনে মাঝে হাতাশ হয়ে
নমস্কার
পৃথিবীতে মানুষের যখন জন্ম হয়, এই পৃথিবীর আলো দেখে আসে, তার কিছু কয়েক ঘন্টাপর নাকি তার ভাগ্যের জন্ম-বিয়ে -মৃত্যু বিধাতা দেবতা একসাথে লিখে দেন। এটা আমাদের নিয়তি আর মানতেই হবে। আমিও মন থেকে খুব বিশ্বাস করি। কিন্তু একটা বিষয় আমার ক্ষেত্রে উল্টো হয়ে যাচ্ছে। উল্টো হয়ে গেছে, এই উল্টো হওয়ার গল্পটাই সবার সাথে আজকে শেয়ার করবো।
আমার দাদু অর্থাৎ আমার মার বাবা তার পরিবারের সব মিলিয়ে ১২ জন মানুষ ছিলো। ৯টা মেয়ে একটা ছেলে ছিলো, নয় মেয়ের বিয়ে অনেক আয়োজন করে দিয়েছেন, কোনো দিক থেকে কমতি রাখেননি, আমার ভাগ্য সুবাদে, আমি আমার ছয়টা মাসির বিয়ে আমি নিজে দেখেছি এবং বিয়েতে অনেক উপভোগ করেছি। হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ের বিয়ে বাড়িতে অনেক আনন্দ হয়, যারা হিন্দু বিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা এই আনন্দটা উপভোগ করেছেন। আমার দাদু এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে ১০বছর হবে। দাদুর সাথে কাটা অনেক স্মৃতি এখনো মনের মধ্যে দাগ কেটে আছে। দাদু দেখতে অনেক লম্বা ছিলেন প্রায় ৬ফিট ২ ইঞ্চি, মাথায় বাংলার বাউলদের মত ককরানো ককরানো চুল ছিলো। দাদুর মতো চুল, আমার মাথার চুলে সাথে মিল পাই, এমন চুল মাথায় দেখে ছোটো বেলাই আমাকে সবাই বলতো (কাজী নজরুল করিয়াছো ভুল, দাড়ি না রাখিয়া, মাথায় রাখিয়াছো বাউল মতো চুল। সবাই এই বলে আমাকে খেপাতো, আমি এটাই রাগটা কোনো দিন করতাম না। কারণ দাদুর মতো চুলের অধিকারী হয়েছিলাম তাই, দাদু দেখতে কিছুটা পান্ডব পুত্র ভীম এর মতো দেখতে ছিলেন। আমরা যখন সব মাসাতো ভাই বোনরা, মামা বাড়ি যেতাম, তখন বাড়িটা মনে হতো এই বুঝি দুর্গাপূজা লেগে গেলো, এতো গুলো নাতিন দেখে, বলতো কই আমার ৭ রানী সবাই আমার চার পাশ দিয়ে বসো, আজ মজার গল্প বলবো। আমরাও বৃত্তের মতো গোল হয়ে দাদুর সাথে বসতাম। সেই দিন গুলো কোথায় গেলো! এখন মামা বাড়ি গেলে, সেই আনন্দ মোহলটা জমে উঠে না। যদিও আগের থেকে অনেক মানুষ হয়, অনেক মনে পড়ে দাদুর সাথে কাটানো ছোট বেলার কথা, এখনো মনে পড়লে ভাবি যদি দাদু বেঁচে থাকতো অনেক আনন্দ করতে পারতাম, সত্যি বলতে এই অভাবটা কোনো দিন কেউ পূরণ করতে পারবে না, হারানো দিন কখনো ফিরে আসে না।
যাই হোক, বড় হলাম, আর আমি বাড়ির বড় মেয়ে, বিয়ের চিন্তা আমার পরিবারে মাথায় ঘুরছে, আর আমি এই কাজটা পরিবারের উপর ছেড়ে দিয়ে ছিলাম, শুরু দিক থেকেই। কারণ সম্বন্ধ করে বিয়ে হবে, বাড়িতে ছেলে আসবে, মেয়ে দেখবে এগুলো আমার কাছে সম্মানের। যাক এখন মূল ঘটনাই আসি, আমি যখন মেট্রিক পরীক্ষা দিলাম, তখন থেকে এই পাএ-পাএি দেখা শুরু হয়েছিলো। একটা ঘটনার পর, এই প্রথার প্রতি অসন্তুষ্টি তৈরি হয়, মনের মধ্যে কারণে-> একদিন আমার এক বড় দাদা, তার এক বন্ধু জন্য আমার একটা বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে বাড়িতে বলে, কিন্তুু কোন দিন আসবে তা বলেনি, দাদা না বলেই তার লোকজন নিয়ে বাড়িতে হাজির মেয়ে দেখাবে বলে, সে দিন বাবা বাসায় ছিলো না, ছেলে পক্ষ আমাকে দেখে বেশ পছন্দ হয়েছে, সেই দিনই বলে গিয়েছিলো। তো আমার বাবা তাদের বললো যে ছেলের বাবা মা ও আরো মানুষ নিয়ে যেনো সে দেখে আসে, একথায় তারাও রাজি হলো একদিন আসবে।
পাএের কথা একটু বলি পাএ সরকারি চাকরি করতে প্রায় ছেলের বাড়ি সবাই সরকারি চাকরি করে, আর ছেলে দেখতে কালো এবং মুটামুটি ভালো। এক শনিবার করে চলে আসে আমাদের বাড়িতে ছেলের পরিবার। আমার বাড়িতে বেশ ভালো আয়োজন করা হয়েছিলো সে দিন, প্রথম বার আমি এমন ভাবে সবার সাথে যাচ্ছি, মনে মনে অনেক ভয় কাজ করছিলো। আমি কোনো দিন এমন ভাবে শাড়ি ও অনেক সেজেগুজে সবার সামনে যাইনি আর জানিও না, কিভাবে গুরু জনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় ->
আমাকে বলছিলো মা তোমার নাম কি? আমিও না বুঝেই ভয়ের সাথে উওর দিয়ে ছিলাম। পরের প্রশ্নছিলো মা তোমার বাবার নাম কি? আমি সরল ভাবে বলেছিলাম অনিল সরকার, আবার আমায় জিজ্ঞাসা করে তোমার বাবার নাম! আমিও অপেক্ষা না করেই বলেছিলাম অনিল সরকার। ছেলে বাবা এমন একটা কথা বললে ছিলো, যা শুনে আমার কান্না চলে এসে ছিলো, ওনি বলে ছিলো তোমার বাবা কি মারা গেছেন নাকি? অথচ আমার বাবা আমার পাসেই বসে ছিলো। এটা সবাই অবগত ছিলো। আমাদের হিন্দু সম্প্রদায় জীবিত ছেলে মানুষের নাম বলার আগের শ্রী যুক্ত করতে হয়, আমি এটা বলিনি। তাই এমন কথাটা ঘর ভর্তি মানুষ সামনে বলে উঠলো। আমি তখন কলেজে পড়েতাম। এতো কিছু ভালো করে যানতাম না, আর এই দিনটার অভিজ্ঞতা আমি কোনো দিন ভুলবো না। মানুষ মেয়ে দেখতে এসে এমন ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে, ছেলে বাবার এমন কথা আমার বাসার সবার মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। এমন একটা কথা বলতে পারলো লোকটা? ছেলের বাবা নিজের ভুলটা একটু বুঝতে পেরেছিলো, যাবার আগে সবার থেকে সরিও বলে যায়। কিন্তুু কথাটা তো ভুলার মতোনা, সেই সব কথা শেষ হয়ে গেলো ছেলে পক্ষ আমাদের বাড়ি ত্যাগ করে চলে যায়। পরের দিন একটা কল আসে ওই বাড়ি থেকে, যে মেয়ে আমাদের ভালো লাগেছে এখন একদিন ছেলেকে দেখে যান, বাবা বলো ওকে একদিন আমরা আসছি। ছেলের বাড়ি চট্টগ্রামে আগেতো ওই ছেলেকে দেখেনি। অনেক টাকা খরচ করে একদিন গেলো সেই বাড়ি৷ বাবার ছেলে দেখে এতটা ভালো লাগেনি, এটা বাবা ওই বাড়িতে জানাইনি, তো পরের দিন একটা আমাদের বাড়ি ফোন আসে, ফোন করে বলে যে, এখন মেয়ের বাবা কি দিতে পারবে? বাবা বললো আপনারা বলেন, ছেলের বাবা বলে ২ লক্ষ টাকা, ৬ ভরি সোনা দিয়ে মেয়ে সাজিয়ে দিতে হবে। বাবা কোনো উত্তরই দেইনি - আমার ছেলের সাথে কথা হয়ে ছিলো ফোনে। ৩ থেকে ৪ দিন ছেলে কথার জালে জড়িয়ে, অনেক সুন্দর সপ্ন দেখিয়ে ছিলো একটা কথা অনেক মনে পড়ে, তোমার সাথে আমার বিয়েটা না হলে, আমি আর বিয়েই করবোনা। হা হা হা ছেলেটা এতোই চালাক ছিলো যে, সে ভুলেই গেছিলো ভাগ্য বলে একটা কথা আছে। আমার সাথে বিয়েতো হয়নি বরং ওই বছরে ছেলের ২ টা বিয়ে হয়েছিলো। ভাগ্য দোষে ১ম বউ মারা যায় এবং এই ঘটনার ৬ মাস পর আবার বিয়ে করে এবং ১ম বিয়ে মেয়ের বাড়ি থেকে নিয়ে ছিলো ২ লক্ষ টাকা আর ৬ ভরি সোনা নিয়ে। বাহ বাহ যৌতুক চাইবে আর না দিলে বিয়ের কথা শেষ। সত্যি যদি আমি আইন মন্ত্রী হতাম, আগে এই যৌতুক প্রথা সমাজ থেকে মুছে দিলাম। আমি ঈশ্বর কে অনেক বিশ্বাস করি।বিধাতা আমার বিয়ের জন্যে যে তারিখ টা ঠিক করে রেখেছেন সেই দিনই হবে। আমি সব সময় নিজের কাজ প্রতি মনোযোগ দিয়েছি, এসব ভাবার সময় আমার হাতে নাই। এই বিধি বিধানটাই আমার চারপাশে মানুষ বুঝে না, কথায় আছে যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়াপরশির ঘুম নেই। আমার অবস্থা ঠিক এমন হয়ে গেছে। এমনো অনেক কথা শুনতে হয়, যে বাবা মাকে মুক্তি দাও। তোমরা তিন বোন, তোমার বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে, আর আমি সব সময় বলি পরিবারকে আমার কিছু আসে যায় না, সব মেনে নিয়েছি, সব মানবো কিন্তুু এমন একজনের সাথে বিয়ে দিও, যেনো সে শিক্ষিত হয়, বর্তমানে এই জিনিসটার খুব প্রয়োজন, কারণ একজন পড়াশোনা জানা ছেলে কোনো দিন, এই যৌতুক প্রথার সমর্থন বা সহমত প্রকাশ করবে না। এখনো বলে আমার চারপাশের মানুষ চাকরী করে কি হবে? বাবার বোঝা হয়ে বাড়িতে বসে থেকো না। আগে অনেক এই ধরনের কথা শুনতে হতো, এখন কম শুনতে হয়। কারণ এখন চাকরী করি তাই, এমনো কিছু আপন মানুষ ফোন করে আমাকে বলে, তোমার বাবারতো টাকা পয়সা নাই, তো দেমাগ দেখিয়ে লাভ কি? তোমার মতো কত শিক্ষিত মেয়ে, অশিক্ষিত ছেলের বউ আছে দেখ গিয়ে। এই সব কথায় কোনো কান দেইনি কারন আমার বাবা-মা আমাকে সব সময় একটা কথা বলে, কেউ বলে যায়, কেউ সহ্যে যায়। জীবনে একটা জিনিসকে খুব ভালোবাসি তা হলো ঠিক সময় ভাগ্যরেখা। কারণ সময় ও ভাগ্য বলে দিবে কার জীবনে কি ঘটবে? আমিও সেই অপেক্ষাই আছি। সবাই মানতে চায় না যে, বিধাতা কার কি লিখে রেখেছে? কেও জানে না, সবাই ভাবে যে নিজের কথা সব বুঝি ঘটে যাবে। আমি মনে করে, আমার জীবনে ঘটনা থেকে, আমি ছোট বোনদের বুঝাই, এই যৌতুক প্রথা বন্ধ হক, সমাজের মেয়েরা পড়াশোনা করুক, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যেনো বলতে পারি, আমি যেনো যোগ্য পাএি, তেমনি একটা যোগ্য পাএ বিয়ে জন্যে নিয়ে আসোতো দেখি।
আমি আমার মাকে বলি, যে তোমরা চিন্তা করোনা, আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে, সমাজের উচ্চবর্গের মুখের কথা নিজেদের মন খারাপ করো না।
সবাইকে বলি ঠিক তারপরও মন বলে কথা, সমাজের উচ্চবর্গের কথা শুনে মাঝে হাতাশ হয়ে চুপ করে থাকি। ঢেউ ভোরা নদীতে, মাঝি হীন নৌকা, আমি চলছি লাগামহীন🏃।
তাইতো নতুন স্লোগানে আমি।
👇
আবার জেগে উঠবো , আমি হয়ত অন্য কোনো নতুন সাজে 💁।
আমাদের আমাদের প্রাণের প্ল্যাটফর্ম নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপে যুক্ত হবার পরে, নতুন অনেক কিছু শিখছি, আমাদের প্রাণপ্রিয় নয়নের মনি আমাদের প্রানপ্রিয় শিক্ষক ও কিছু বড় ভাই থেকে নিজের প্রতি, কাজের প্রতি, কিভাবে ধৈর্য্য ধরে রাখতে হবে, নিজেকে কিভাবে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কিভাবে গড়ে তুলতে হবে, সবার সামনে নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করতে হয়, সমাজের ভয়ে নয়, নিজের কাজের মাধ্যমে, নিজের পরিচয় তৈরি করতে হয় সব কিছু জানতে পেরেছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ এবং অনেক অনেক ভালোবাসা ও শত কোটি প্রণাম প্রান প্রিয় Iqbal Bahar Zahid স্যার, এতো সুন্দর একটি প্লাটফর্ম তৈরি করছেন আমাদের জন্য, এই ভাবেই এগিয়ে যাবো। আমি যেনো নিজের জয়যাত্রায় সাফল্য লাভ পারি ধৈর্যের সাথে। সে জন্যে সবাই পাশে থাকবেন, দোয়া করবেন আর সব সময় যেনো আমার এই মনোবল ধরে রাখতে পারি, তার জন্য আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবেন।
লেখাটা বড় হয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখিত।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৮৬
২২-০৭-২০২০
ধন্যবাদ
নন্দিতা বাড়ৈই
কমিনিউটি ভলেন্টিয়ার
ঢাকা, গুলশান জোন
ব্যাচঃ১০
রেজিষ্ট্রেশন নংঃ ২১৮৫৭
জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ
রক্তের গ্রুপঃA+