যাই হোক সুখ-দুঃখ হাসি কান্নার মাঝে, ছোট ছোট
আসসালামু আলাইকুম।
সবাই কেমন আছেন?
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি ভালো আছি।
মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রত্যেককে ভালো রাখুক সেই কামনা করি।
আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও প্রিয় মেন্টর 💐💐 💐 ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি, যিনি আমাদের এতো সুন্দর একটা প্লাটফর্ম উপহার দিয়েছেন।
অনেক দিনের স্বপ্ন আমি, জীবনের ঘটে যাওয়া শিক্ষনীয় গল্প লিখবো। কিছু লিখার সাহস পাই না। ধন্যবাদ প্রিয় স্যার, গ্রুপের ভাইয়া ও আপুদের অনুপ্রেরণায় গল্প লিখতে বসে গেলাম।
স্নেহ আদরে বড় হওয়া মেয়েটি আজও যেনো কিছু খুজছে! এই খোঁজার মাঝে অনেক বড় একটা কিছু পেয়ে গেছে, তাইতো নিজেকে আজ গর্বিত মনে করছে।
আমি আকলিমা আক্তার নিপু। আমি ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করি। পরিবারের আমি সবার ছোট রাজকন্যা। পরিবারে কাজিন ১৪ জনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলাম আমি। সেই সুবাধে সবার আদর স্নেহ, ভালোবাসায় আমি বড় হই।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ছোটবেলা ছিলো আনন্দে ভরপুর। যখন আমার তেমন কিছুর প্রয়োজন ছিল না, তখন আমি না চাইতেই অনেক কিছু পেয়েছি।
হ্যাঁ তবে 👰 ছোটবেলায় আমি একটু দুষ্ট ছিলাম। যদি একবার আমায় বলতো আজকে পড়া না পারলে, তোমার ........... আর মায়ের কাছে ঠিক তখনি কান্না জুড়িয়ে দিতাম, আর বাবা এসে আমায় নিয়ে যেতো আর পড়তে হবে না তোমার ''ছুটি"।
* খুবই মজা লাগতো *
বড় হতে লাগলাম আর স্কুলেও ভর্তি হতে হবে। আমাদের বাড়ি থেকে স্কুল ছিলো ১ কি.মি. পথ। এতো দূরে আমায় ভর্তি করাবে না। দাদা স্কুলের জন্য সম্পদ দান করেন। আমায় খুবই ভালোবাতো। তাই তিনি বাড়ির পাশে ২০০২ সালে স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।(বর্তমানে সরকারি)। আমি খুবই ভাগ্যাবান, কারণ আমাকে দিয়েই প্রথম ক্লাস উদ্বোধন করা হয়েছিলো।
যাই হোক সেখানেই পড়ার হাত হাতখড়ি।
আমি এতোটা মেধাবী ছিলাম না। তবে ১ম সারির ৫ জনের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। প্রথম -দশম পর্যন্ত ক্লাস ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে ছিলাম।
🖤
এই পড়ালেখার চলাকালীন সময়ে বরজৈষ্ঠদের হারিয়ে ফেললাম, সেতো গেলোই। কিন্তু যা কল্পনা করিনি সাথে আমার অবিশ্বাস্য প্রিয় মানুষটির অসুস্থতা, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো নেমে আসে, আমাদের পরিবারের এক মহাদূর্রদিন। চোখমুখে অন্ধকার আর অন্ধকার। আলোর কোন দিশা নেই। সেই প্রিয় মানুষটি আর কেউ নয়, আমার প্রিয় বাবা! বাবা মৃত্যুশষ্যায় ঢাকা হসপিটালের ভর্তি ১ মাস হয়ে গেলো। বাবার অবস্থা দিন দিন অবনতি কমার দিকে চলে গেছে। বাবার চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছিলো, চেষ্টার কোন ক্রটি ছিলো না। নলের মধ্যমে খাবার দেওয়া হতো ২ ঘন্টা পর পর, নতুন নতুন জুস তৈরি করে খাওয়াতাম। আব্বুর পাশে আমরা ৩/৪ জন সব সময় পাশে থাকতাম। আমার বোনের একটা কোম্পানিতে ভালো চাকরি হয়েছিলো। পরিবারের এই দূর্রদিনে এই চাকরিটার খুবই সাপোর্ট হচ্ছিলো, আসলেই প্রয়োজনও ছিলো। কিন্তু সারাদিন -রাত এক করে অসুস্থ বাবার সেবা করে সুস্থ করে তুলবোই, তাই আপু সেই চাকরিটাও ছেড়ে দেয়। আর আমাদের স্বপ্ন ছিলো আব্বু তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।
"কিন্তু সেটাতো স্বপ্ন ই রয়ে গেলো
আর পূরণ হলো না।""
ওই তো সেদিন
🖤
তখন আমার H.S.C পরিক্ষা চলছিলো। সারা রাত আব্বুর সেবা করতাম, আর সকালে যেতাম পরীক্ষা দিতে। পরীক্ষা নিয়ে, রেজাল্ট নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো। ঠিক ঔ সময়টাতে সব মূহুর্তে শেষ হয়ে গেলো একটা ঝড়ের সাথে।
হঠাৎ ৩১ তারিখ সোমবার রাত ১ঃ৩০ মিনিটে কালিমা শাহাদাত পড়তে পড়তে, আমাদের সবার চোখের সামনেই হাসিমুখে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলো না ফেরার দেশে। কিছুই করতে পারলাম না। মাথার ওপর থেকে ছাদটা যেনো সরে গেলো। ঠিক সেইদিন ও আমার ফাইনাল পরিক্ষা ছিলো। পরীক্ষা দেওয়ার মতো আমার মানসিক অবস্থা ছিলো না। জীবনে এমন কঠিন পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হবে কল্পনাও করিনি।
কান্নাকাটি করে আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। ১ বছর পিছিয়ে পড়ে যাবো তাই, ফুফু আমায় নিয়ে গেলো পরীক্ষার হলে। শুধু পরিক্ষায় অংশগ্রহন কর, তোমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। আমি শুধু কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষার খাতাও ভিজে যায়। কোন ভাবে কলম চলে না। যদিও আমি পরীক্ষার হলে উপস্থিত ছিলাম, মনটা ছিলো বাড়িতে। কোন ভাবে ১ ঘন্টা পরিক্ষা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলাম।
আমার কান্না দেখে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদেরও চোখে জল চলে আসে। সবাই আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলো। সেদিন থেকে মনটাকে শক্ত করে ফেলি হয়তো, মুখে বলছি জানিনা শক্ত করতে পেরেছে কিনা? এখনো কান্না আসে। জানেন বাবার মৃত্যুর পর পর আরো কত রকম যে সমস্যা এসে দাঁড়ালো, তা শুধু হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ছাড়া লেখা সম্ভব নয়, হয়তো আরেকদিন আপনাদের লিখে জানান দেবার চেষ্টায় করবো। এতো কিছুর পরও পরিবার শক্ত করে লেগেছিলো, নিজেদের টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে। সমস্যা থাকবেই কিন্তু লেগে থেকে এগিয়ে যেতে হবে, এটাই পরিবার থেকে শিখেছি। সেই অজ্ঞান হয়ে যাওয়া আমি বাবার স্বপ্ন পূরণে লেগে থেকে ও পুরো কনফিডেন্সের সাথে, নিজেকে তৈরি করতে করতে, আলহামদুলিল্লাহ স্নার্তকে এসে Group Leader.
বর্তমানে আমি National University
B.S.S 3rd year Student.
ভাগছি নিজের স্বপ্ন পূরণে! ইনশাআল্লাহ স্বপ্ন পূরণ হবেই।
💜💜💜
হ্যাঁ এরই মাঝে একটি মজার কথা হলো💞 নিজের পরিবারের থেকে যা শিখলাম, এই নিজের বলার মতো একটা গল্প পরিবারে এসেও ঠিক এমনই কিছু দেখতে পেলাম। শ্রদ্ধা, ভালোলাগা এবং আকর্ষণ দুইটাই আরো বেড়ে গেলো এই প্ল্যাটফর্মের প্রতি, স্যারের প্রতি।
যাই হোক সুখ-দুঃখ হাসি কান্নার মাঝে, ছোট ছোট সফলতা নিয়ে চলমান জীবনের সেইদিন থেকে আজ অব্দি চলছি আমাদের পরিবারের সবাই, তবে খুব একটা খারাপ আছি বলবো না, আলহামদুলিল্লাহ। পরিবারের সকলের নিজের পায়ে নিজে দাঁড়ানোর সকল ব্যবস্থা করা আছে। তার পরেও বড় বড় স্বপ্ন সকলের মাঝে থেকে যায়, ঠিক তেমনি বড় না হলেও, আকাশচুম্বী নয়, ছোট আকারে আমার একটাই স্বপ্ন ছিলো, শুধু আমার নিজের একটা পরিচয় হবে। হবে নিজেকে ব্র্যান্ড বানানোর এক মহা-পরিক্রমা।
💜💜💜
হ্যাঁ এই প্লাটফর্মেই দেখতে পেলাম, এখানেই সম্ভব। আর অন্য কোথাও নয়, এ যেনো আমার জন্য, মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। ভালো মানুষদের পরিবারের সদস্য হতে পেরে সত্যিই আমি খুবই গর্বিত। প্রিয় গ্রুপের আপু ও ভাইয়াদের আচার -ব্যাবহার এতো সুন্দর মার্জিত, সবসময় সহযোগী মনেভাব দেখে আমি মুগ্ধ। আমি এক রাশ হাসি নিয়ে বলতে পারি, আমি মনে হয় আমার স্বপ্ন বোনা রাজত্ব পেয়ে গেছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় প্রিয় শিক্ষক ও স্বপ্নের দিশারী, আপনার অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমার স্বপ্ন গুলোকে সফল করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলার প্রচেষ্টা। বার বার আমার কানে বেঁজে ওঠে আপনার বলার সেই কথা গুলো
"স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন
শুরু করুন, লেগে থাকুন
সাফল্য আসবেই।
=====================================
নিজের মনের ভাবটুকু দিয়ে, জীবন থেকে নেয়া, লেগে থাকার ও চলমান যুদ্ধে থেমে না যাওয়ার গল্প লেখার চেষ্টা করেছি।
লেখায় যদি ভুল থাকে ক্ষমা করবেন।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৮৬
২২-০৭-২০২০
ধন্যবাদান্তে,
নামঃ আকলিমা আক্তার নিপু
জেলাঃ ফেনী
ব্যাচঃ দশম
রেজিঃ১২৯৩৯