এই গ্রুপে যতো সময় দিচ্ছি, ততোই আমার মনোবল বেড়ে যাচ্ছে। আমি যেমন একজন উদ্যেক্তা হওয়ার
আস্সালামু আলাইকুম
আশা করি সকলেই ভালো আছেন।
আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
অনেকদিন ধরে লিখবো লিখবো ভাবছিলাম, সব সময় লিখেও যাই কিন্তু কেনো জানি লেখাগুলো অন্যরকম ভাবে প্রকাশ পায়।
তাই আজকে আবারও চেষ্টা করলাম নিজের জীবনের পথচলা নিয়ে লেখার।
"জীবন মানে বহতা নদী, চলতেই থাকে নিজের গতিতে"
কষ্ট হোক, ঝড় হোক ও তুফান হোক থেমে থাকে না, সুখের জোয়ারে ভরিয়ে নিয়ে আসে কখনো, কখনো বা ধুধু বালুচর।"
প্রত্যেকটা জীবনেরই পথচলায় নতুন নতুন সম্ভাবনা ও নতুন নতুন শিক্ষার বহিঃপ্রকাশ থাকে, সকলকে একটু ধৈর্য ধরে আমার লেখাটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
👇
আমি পরিবারে সবার বড় সন্তান ছিলাম। যার দরুন একপ্রকার সবার ভালোবাসায়ই পেয়েছি ছোটবেলায়। দাদার বাড়ি, নানা বাড়ি সব জায়গায় আমাকে নিয়ে কারো আনন্দের শেষ ছিলো না। সবাই চাইতো আমাকে তাদের কাছে রাখতে। এভাবেই সবার ভালোবাসায় বেড়ে উঠছিলাম আমি।
একদিন দাদার বাড়ি উঁঠানে খেলছিলাম আমি। তখন আমার বয়স ৫ বছর হবে হয়তো। দূর থেকে দেখলাম সেজো মামা বাড়িতে আসতেছে, হাতে ফলমূল। আমি একটা আপেল নিয়ে খাচ্ছি আর নিজের মতো খেলে যাচ্ছি।
হঠাৎ শুনলাম আম্মু আমাকে ডাকছে। আমি আজ নানা বাড়ি যাবো। তাই গোসল করতে হবে। তবে আম্মুর দেখছি আজ মন খারাপ।
তবে আমি খুশি, নানার বাড়ি যাবো বলে। কারণ আমি প্রায় একা যেতাম বেঁড়াতে। আমাদের বড় পরিবার হওয়ায় আম্মু বেশি বেঁড়াতে যেতে পারতেন না। বাড়িতে সব কাজ একাই করতে হতো তাকে।
দিন শেষে সবাই আমাকে বিদায় দিয়ে দিলো, তবে সবাই আজ বিষন্ন। তবে আমি খুশি, নানা বাড়ি যাচ্ছি আমি।
নানা, নানু, মামা, মামি সবাই আমাকে পেয়ে খুব খুশি।
পরদিন সকালে মামা আমাকে রেডি করছেন, আজ স্কুলে ভর্তি করবেন আমাকে। মামার সাথে চলে গেলাম স্কুলে ভর্তি হতে।
প্রধান শিক্ষক আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন, আমিও ঠিকঠাক সব উত্তর দিয়ে দিলাম।
স্যার খুশি হয়ে আমাকে ভর্তি করে নিলেন।
প্রথম দিন স্কুলে যাবো, কি খুশি কাজ করছে আমার। সকাল সকাল রেডি হয়ে বসে আছি। মামার সাইকেলে চড়ে স্কুলে যাচ্ছি আমি। ক্লাসে গিয়েই প্রথম সিটে বসে পড়লাম আমি। আমি বাকি সব বাচ্ছা দের মতো কান্না করছি না বরং আনন্দই হচ্ছে আমার। মামা চলে গেলেন বললেন ক্লাস শেষে এসে নিয়ে যাবেন।
ক্লাস শেষ হয়ে গেল, তবে মামা এখনো এলো না। সব বাচ্ছারা চলে যাচ্ছে। এবার আমি আর কান্না থামাতে পারছি না। হাউমাও করে সে কি কান্না। আমার কান্না দেখে এক বড় ভাই আমার কাছে আসলেন। বললেন
তুমি কান্না করছো কেনো?
বললাম আমার মামা আসেনি।
তিনি আমাকে বললেন তোমার বাড়ি কোথায়?
বললাম টুন্নাপুকুর।
তিনি আমাকে টুন্নাপুকুর যায় এমন একটা স্কুল ব্যানে তুলে দিলেন। আমিও কিছু না ভেবে উঠে পড়লাম। সবার সাথে মজা করতে করতে একসময় মামার কথাই ভুলে গেলাম।
হঠাৎ দূর থেকে দেখলাম মামা খুব দ্রুতই সাইকেল চালিয়ে আসছেন। আমি মামা কে দেখে চিৎকার করা শুরু করে ডাকতে লাগলাম। মামা ড্রাইবার কে কিছু টাকা দিয়ে আমাকে সাইকেলে তুলে নিলেন।
আমি মামা কে বললাম,
মামা আমি আজ একটা গান শিখলাম।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
মামা আমাকে জানালেন, এটা আমাদের জাতীয় সংগীত। এভাবেই আমার স্কুল জীবনের শুরু। এক এক করে আমার স্কুল জীবন ভালোই যাচ্ছিলো। প্লে শেষ করে নার্সারি তে আসলাম। বয়সের তারতম্য আমি একটু বড়ই ছিলাম ছয় বছর বয়সে যেহেতু ভর্তি হলাম যাইহোক, নার্সারি ফাইনাল পরিক্ষার সময় এসে গেলো, তখন আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা ঘটে গেলো। আমার নানু মারা গেলেন। নানার বাড়িতে এক প্রকার অন্ধকারে ডেকে গেলো।
নানু আমাকে খুব ভালোবাসতেন। প্রতিদিন আমি স্কুল থেকে এসে খেতে দেরি যেনো না হয়, তাই নানু খাবার প্লেটে বেড়ে রাখতেন।
আমি আবার নানুকে খুব ভয় পেতাম।
একদিন স্কুল থেকে এসে দেখি আমার জন্য আম, দুধ মাখা ভাত ডেকে রেখেছেন নানু।
তা দেখে আমি খেতে বসে গেলাম। নানু আমাকে উঠিয়ে বললো যা গোসল করে আয়। আমি গোসল করবো না, বলে দিলাম। আমার অনিহা দেখে নানুও আমাকে আর জোর করলো না। বললো যা হাত মুখ দুয়ে আস।
আমিও নানুর জুতা পড়ে পুকুরে গেলাম হাত মুখ ধোয়ার জন্য। হঠ্যৎ পা দুতে গিয়ে নানুর জুতা গেলো পানিতে পড়ে।
হায় নানু যদি জানতে পারে! তবে আমাকে যদি মাইর দেয়।!!! আর সাত-পাঁচ না ভেবে নেমে পড়লাম পুকুরে জুতা খুজতে। অনেক খুজে বের করলাম নানুর জুতা। যখন নানুর সামনে গেলাম, নানু আমায় ভেঁজা দেখে বললেন, তুই না গোসল করবি না বললি।
আমি হেসে বললাম, আপনি গোসল করতে বলেছেন তাই করেছি। এখন সেই পুরোনো ঘটনা গুলো ভেবে খুব কষ্ট লাগে, কতো প্রিয় ছিলাম আমি সকলের।
নানু মারা যাওয়া পরপর আমার দাদার বাড়ি থেকে তোড়জোড় শুরু করলো আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাদের যুক্তি আমাকে দেখার মতো কেউ নেয় আর। আমার পরিক্ষাও দেওয়া লাগবে না। মামা এক প্রকার জোর করে পরিক্ষা দেওয়ালেন।
তারপর আমার পড়ালেখার ২য় পর্ব শুরু আমার দাদার বাড়িতে। ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হলাম। গ্রামে বাড়ি হওয়ায় সেখান থেকে এককিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাজারে যেতাম। সেখান থেকে স্কুল ব্যানে করে স্কুলে যেতাম। দেখার কেউ না থাকায় আমি আস্তে আস্তে স্কুল পালাতে শুরু করলাম। সময় মতো বাজারে পৌছাতে পারতাম না বলে স্কুল ব্যান মিস হতো। সে জন্য স্কুলে আর যাওয়া লাগতো না। অনেক সময় ইচ্ছে করে দেরি করে যেতাম। এভাবে আমার স্কুল জীবন যাচ্ছিলো। পরিক্ষার রেজাল্ট পাবলিশ হলে আমার নাম আসতো না। আমি তা বাড়িতেও জানাতাম না। এভাবে আমার ৩টি বছর কাটিয়ে দিলাম। প্রতি বছর আমাকে দুই - তিন সাবজেক্ট ফেল করে উঠতে হতো আমাকে।
আমার এরকম অধপতন দেখে মামা আবার আমাকে নিয়ে যেতে চাপ দিলেন।
একটা সময় আমি আবার আমার নানার বাড়িতে চলে আসলাম। সেখানে ক্লাস ফোরে ভর্তি হলাম আমি। তবে কিছুই পারছি না আমি। সবার থেকে পিছিয়ে পড়ছি। সময় মতো স্কুলের পড়া শেষ করতে পারি না। তাই মামা এই নিয়ে, পড়া না পারলে খুব মারতেন। যেটা হয়তো আমার ভালোর জন্য। তবে একটা সময় নিজেকে খু্ব অসহায় মনে হচ্ছিলো। স্কুল যেতে চাইতাম না আমি। জোর করে পাঠাতো।
আস্তে আস্তে আমার আনন্দ যেনো শেষ হতে লাগলো। সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। মনে হচ্ছিলো আমার আপন কেউ নেই।
আবার বাবার সাথে আমার বেশি কথা হতো না। তিনি কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। আমি তাকে ভয়ও পেতাম বেশ। একদিন তিনি আমাকে দেখতে এলেন নানার বাড়ি। আমি তার সাথে দেখা করবো না বলো, মামির খাঁটের নিছে লুকিয়ে আছি। সবাই তো আমাকে খুজে অস্তির। পরে যখন সবাই আমাকে দেখলো, সবাই তো দেখে অবাক। ছেলে কেনো বাবার সাথে দেখা করতে চাইছে না। একটা সময় সবাই দেখলো আমি খুব চুপচাপ হয়ে যাচ্ছি। আমার সেই আগের দুরন্তপনা নেয়। আমার আচরণ অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে।
তাই নতুন সিদ্ধান্ত হলো আমার পরিবার বসুরহাট বাসা নিবে। আমরা একসাথে থাকবো।
তবে তাতে সমস্যা দেখা দিলো, আমার দাদার বাড়ির লোক জন। তাদের অবিমত আমাকে আবার বাড়িতে নিয়ে আসুক তবে বাসায় যাওয়া যাবে না। কিন্তু আব্বা আর কারো কথা শুনলেন না। তিনি আমাদের নিয়ে ঠিক বাসায় উঠলেন। সবই নিয়তির খেলা। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে আমার শুরু হলো নতুন ভাবে যাত্রা আলহামদুলিল্লাহ। বাসায় থাকছি, পরিবারের সাথে আছি। আমি আবার নিজের মতো মেতে উঠলাম। হাইস্কুল জীবন সত্যিই অসাধরণ কেঁটেছে আমার। পড়াশুনাও হয়েছে ভালোমতো। এসএসসি পরিক্ষার জন্য দিন রাত পড়েছি। ইনশাআল্লাহ আশা অনুযায়ী রেজাল্ট আসলো। আব্বু প্রচুর মিষ্টি বিতরণ করলো। সবার খুশি দেখে মন ভরে গেলো। ভর্তি হয়ে গেলাম বসুরহাটেই একটা সরকারি কলেজে। কিন্তু কলেজে উঠে আমি পড়ালেখায় আবার অবিরত হয়ে পড়লাম। ঠিকঠাক কলেজ করতাম না। যার ফল আমি এইচএসসি তে পেলাম। আমার আশা অনুযায়ী রেজাল্ট আসলো না।
তবুও এইচএসসি শেষ করে ভার্সিটি এডমিশনের জন্য চেষ্টা করলাম, তবে হলো না। আমি প্রায় হতাশ হয়ে পড়লাম। ভর্তি হলাম ফেনী সরকারি কলেজে। কোন রকম পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে নোয়াখালী থেকে ফেনীতে এসে পড়াশুনা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না আমার জন্য। তাই ঠিক করলাম ফেনীতে থাকতে হবে আমাকে। কিছু বন্ধুর সহয়তায় উঠে পড়লাম একটা মেসে, কোন কিছু না ভেবেই। আমার আবার একা থাকার যাত্রা শুরু হয়ে গেলো। কিছু দিন ভালোভাবে গেলেও আমি কোন ভাবে এডজাষ্টমেন্ট করতে পারছিলাম না। খাওয়া দাওয়া, পড়াশুনা নানা বিধ সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে কলেজ থেকে এসে টায়ার্ড হয়ে যেতাম। তাই ঠিক করলাম আমাকে কলেজ হোস্টেলে থাকতে হবে। কিন্তু কলেজ হোস্টেলে সিট ম্যানেজ করা এতোটা সহজ না। তবুও আমি উঠেপড়ে লাগলাম, একটা সিটের জন্য। বন্ধু, বড় ভাই দের বলে নানা ঝামেলা শেষে ম্যানেজ হয়ে গেলো আমার হোস্টেলের সিট। মাশাআল্লাহ একা থাকার শিক্ষা আমি ছোট থেকেই পেয়েছি। যার ফলে আমি খুব সহজেই হোস্টেলের পরিবেশের সাথে এডজাষ্ট করে নিয়েছি।
একদিন সন্ধায় ফেসবুকিং করছি, হঠাৎ দেখি এক পরিচিত বন্ধু একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজের ছবি দিলো। বিষয় টা আমার খুবই ভালো লাগলো। তখনই ঠিক করে পেললাম, আমাকেও কিছু করতে হবে। আমি কেন সমাজের জন্য কিছু করছি না। আমাকে তো কেউই চিনে না। এবার আমাকে ঘর ছেড়ে বের হতে হবে। কাজ করতে হবে মানুষের জন্য, কাজ করতে হবে মানবতার জন্য। তারপর থেকে যখন যেকোন সামাজিক কাজ হয়েছে, আমি চেষ্টা করেছি তাতে অংশ নিতে। আমার পরিচিত সব সংগঠনের সদস্য হয়েছি আমি। এখন পর্যন্ত কাজ করছি, যতটুকু সম্ভব।
পাশাপাশি নিজে কিছু করার তাড়না থেকে প্রথমে শুরু করি বিভিন্ন কোম্পানীর রিসেলিং। যার মাধ্যমে ব্যবসা শিক্ষাই ছিলো মূল লক্ষ্য। কিন্তু কোম্পানী গুলো খারাপ সার্ভিসের কারনে ক্রেতারা অসন্তুষ্ট হচ্ছিলো প্রায়। তাই ভালো লাভের পরও একসময় রিসেলিং করার বন্ধ করে দিতে হয়।
তারপরও নিয়মিত চেষ্টা করতাম নতুন কিছু করার। কিন্তু কোথাও থেকে ভালো কোন পথ পাচ্ছিলাম না। একদিন আড্ডার মাঝে এক পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে খোজ পায় "নিজের বলার মতো একটা গল্প" প্লাটফর্মের।
এই গ্রুপে যতো সময় দিচ্ছি, ততোই আমার মনোবল বেড়ে যাচ্ছে। আমি যেমন একজন উদ্যেক্তা হওয়ার সাহস পাচ্ছি, তেমনি উদ্যেক্তা হওয়ার সব শিক্ষা পাচ্ছি এক মূহুত্বে। স্যালুট স্যার অন্তরের অন্তস্থল থেকে এতো সুন্দর প্ল্যাটফর্ম আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। এ প্লাটফর্ম যেন আমার স্বপ্নের একটি প্লাটফর্ম যেখানে আছে স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন বোনার অফুরন্ত সুযোগ। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েই ইনশাআল্লাহ আমি স্বপ্নবাজ স্বপ্নপূরণে থাকবো এক ধাপ এগিয়ে।
তাইতো অন্তরে লালন করে ফিরছি আমি, ---
স্বপ্ন দেখুন,
সাহস করুন,
শুরু করুন এবং
লেগে থাকুন
সাফল্য আসবেই।
এরই ধারাবাহিকতায় সেই সাহস এবং শিক্ষাকে পুঁজি করে আমি এখন কাজ শুরু করেছি গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে।
আমরা তিন বন্ধু শুরু করেছি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান Brand ExPo নিয়ে নিজেদের স্বপ্ন যাত্রা।
ইনশাআল্লাহ সেই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আপন মহিমায়।
অপেক্ষায় আছি, আমিও একদিন গল্প বলবো, আমার সফলতার। আমারও হবে নিজের বলার মতো একটা গল্প ইনশাআল্লাহ।
ধন্যবাদ সকলকে কষ্ট করে আপনাদের মূল্যবান সময় গুলো ব্যয় করে, মনোযোগ সহকারে গল্পটি পড়ার জন্য।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৮৮
২৫-০৭-২০২০
আমি,
জাহিদ শুভ
ফেনী সরকারি কলেজ
ব্যাচ: দশম
রেজি: ১৭৮১৯
জেলা: ফেনী