আমাদের প্রাণের প্ল্যাটফর্ম নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপে যুক্ত হবার পরে, নতুন অনেক কিছু শিখছি
আসসালামু আলাইকুম,
"জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো" এই লাইনটার অর্থ তখনো বুঝতে পারিনি, কিন্তু আমার অনেক পছন্দের একটা লাইন ছিলো এটি। আর যখন বুঝেছি কি অসাধারণ এইটুকু লাইনের মর্মার্থ; তারপর থেকে তো ভেবেই নিয়েছি, জন্মেছিই তো সৃষ্টির জন্য। আর তারপর...
আমি মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়ে। আমরা ছয় ভাই-বোন। বাবা ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিনী। আমি আমার পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে ছোটবেলা থেকেই অনেকটা দ্বায়িত্ববোধ নিয়ে বড় হয়েছি। যা সবসময়ই আমার ভেতর কাজ করে। বাবার সংসারে কখনো দারিদ্রতার সম্মুখীন হতে হয়নি, তারপরও বাবার কাছ থেকে পাওয়া দায়িত্ববোধ থেকেই ইচ্ছে ছিলো নিজে কিছু করার। আর ব্যবসায়ী ঘরের মেয়ে হিসেবে আমার প্রথম পছন্দই ছিলো কারো অধীনস্থ না হয়ে স্বনির্ভর হওয়া।
তবে একজন মেয়ে হিসেবে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখা যতটা সহজ ছিলো, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা ছিলো সবচেয়ে কঠিন। এই একটি ক্ষেত্রে বরাবর ছায়া হয়ে থাকা বাবাও যেন বিপক্ষে চলে গিয়েছিলেন!! আসলে তিনি হয়তো বুঝেছিলেন আমাকে কি কি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। হয়তো ভয় পেয়েছিলেন, আমি না আবার ভেঙ্গে পড়ি!!
আমার সুঁই সুতার কাজ শেখার যে আগ্রহ ছিলো তা প্রথমেই ধাক্কা খায়, যখন কেউ আমাকে শেখানোয় আগ্রহী ছিলো না!! কতজনকেই না বলেছি একটু শিখিয়ে দিতে, কেউ দেয়নি। নিজেরা কাজ করেছে এমনভাবে আড়াল করে যেন আমি দেখতে না পারি!! শেষে, আমার একজন পরিচিত আন্টিকে আমিই অফার করি; ওনার সব কাজ আমি ফ্রীতে করে দেবো যদি তিনি আমাকে শিখিয়ে দেন। এবং এবার তিনি রাজি হোন, আর তখন থেকেই পূর্ণতা পাওয়া শুরু আমার এখনকার পথচলার।
কোথায় না গিয়েছি, কত ট্রেনিং না করেছি; কিন্তু সত্যিই বলছি, বিন্দুমাত্র খারাপ লাগে না। বরং মন চায় শিখতেই থাকি; এই শেখার যে শেষ নেই। এই শেখার ভেতরই যে আমি আমার আমিকে খুঁজে পাই বারবার। আর এই কারনেই তো আমার সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় হওয়া এসএমই ফাউন্ডেশনের ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্স করেছি। আমার প্রেগন্যান্সির একেবারে শেষ সময়েও আমি কোন ক্লাস মিস করিনি। পায়ে পানি জমে যাওয়ায় পায়ের নিচে রাখার জন্য প্লাস্টিক টুল কিনে নিয়েছিলাম পর্যন্ত। সেসময় আমার সাথে ক্লাস করা সব ভাইয়া এবং আপুরা আমাকে সাহায্য করেছেন বিভিন্নভাবে। বাসার জন্য দেওয়া কাজগুলো পেটের সমান বালিশ নিয়ে কমপ্লিট করে পরের ক্লাসে জমা দিয়েছি। আমি ডিজাইনগুলো ড্রইং করে দিতাম আর আমার হাসব্যান্ড সেগুলোতে রং করে দিতো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থেকে ক্লাস করতে কষ্ট হয়েছে অনেক, কিন্তু শেখার প্রতি ভাল লাগার কাছে তা ছিল অতি নগন্য। আর এভাবেই সেই অবস্থাতেও আমি কোর্স সফলভাবে শেষ করে সার্টিফিকেট পাই!!
আমার বাবা অনেক বকা দিয়েছেন। শুনিনি। কারন মনে ছিলো শুধু কাজ শেখার আকাঙ্খা। যদিও বাবা চাইতেন আমি নিজের পরিচয়ে পরিচিত হই। ছাত্রজীবনের শেষ দিকে ওনার উৎসাহেই একটা চাকুরীতে যোগ দিই। যদিও, বিয়ের পর আর কন্টিনিউ করতে পারিনি সংসার গোছানোতে সময় দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমার শখের সুঁই সুতা আর রং নিয়ে কাজ করা এক মুহুর্তের জন্যও বন্ধ রাখিনি। বলাই বাহুল্য, এক্ষেত্রে আমার হাসব্যান্ড বরাবরই উৎসাহ দিয়েছে। যদিও, আমার সন্তান জন্মের পর থেকে আগের মত কাজ করতে পারিনা। তবে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সুঁই সুতা আর রংয়ের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি অবিরাম।
ছোটবেলার আগ্রহ এবং ভালো লাগার কারনেই ইন্টারমিডিয়েট থেকেই আমি হোম ইকনোমিক্স কলেজে ভর্তি হই, এবং সেখান থেকেই ইন্টার শেষ করে শিল্পকলা সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স করেছি। ওকালতির লাইসেন্সধারি কিন্তু আপাদমস্তক চাকুরিজীবী স্বামীর সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ের পরে এখন আমি বৈবাহিক সূত্রে বগুড়ার বউ। সংসার জীবনে এক সন্তানের মা।
এভাবেই যাচ্ছিলো আমার দিন,সংসার। হঠাৎ করেই করোনাভাইরাস বিরূপ প্রভাবে স্থবির হয়ে গেল সারা বিশ্ব। পড়ে গেলাম একঘেয়ে জীবনে। হতাশা আর বিষন্নতায় অনেকটাই ভেঙ্গে পড়ি আমি। সারাক্ষণ অনলাইন নির্ভর জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। সাংসারিক কাজের ফাঁকে মাকে ফেসবুক এবং ইউটিউবে বেশি বিচরণ শুরু করি নিজেকে হতাশা থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য। এর মধ্যেই একদিন ইউটিউবে চোখ পরল ইকবাল বাহার স্যারের "নিজের বলার মত একটা গল্প" নিয়ে ভিডিও। এই লাইনটা কেন যেন আমাকে অনেক বেশি টানতে লাগল। মনে হল যেন আমি যেমন আমার জীবন একটা পরিচিতি বা গল্প তৈরি করতে চাই তারই একটা রাস্তা মনে হয় দেখতে লাগলাম। একদিনে এই আমি স্যারের বেশ কয়েকটা ভিডিও দেখে নিলাম। প্রতিটা ভিডিওতে ভালো মানুষী চর্চাও উদ্যোক্তা হওয়ার হওয়ার বিষয়ে অসাধারণ কিছু শিক্ষা, অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ আমি দারুন ভাবে উদ্বুদ্ধ হলাম এবং মুগ্ধ হয়ে শুনলাম এবং নিজেকে আরো বেশি একটিভ করে নিলাম।ইউটিউব এর সূত্র ও স্যারের ভিডিও থেকে নিজের বলার মত একটা গল্প প্ল্যাটফর্মের সম্পর্কে জেনে ওই মুহূর্তে চলমান দশম ব্যাচে অন্তর্ভুক্ত হলাম। নিয়ম করে স্যারের প্রতিটি সেশন এবং লাইভ প্রোগ্রাম ও প্ল্যাটফর্মের সকল কার্যক্রম মনোযোগ দিয়ে প্রত্যক্ষ করতে লাগলাম। এবং অনুভব করলাম নিজের ব্যাপক পরিবর্তন।
"স্বপ্ন দেখুন, সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন সফলতা আসবেই"স্যারের এই যুগান্তকারী শিক্ষাকে নিজের জীবনের ব্রত করে নিলাম এবং সিদ্ধান্ত নিলাম যে কোনো মূল্যে আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। যেই চিন্তা সেই কাজ আমি প্লাটফর্মে সময় দিতে শুরু করলাম। তারই ধারাবাহিকতায় গুলশান জোনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় গুলশান জোনের মেসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত হলাম।এবং এখানে আমাদের নারী উদ্যোক্তা আপুদের দেখে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হলাম এখন নিয়মিত সময় দিচ্ছি ইনশাল্লাহ ভালো কিছু হবেই, সবাই দোয়া করবেন।
আমাদের প্রাণের প্ল্যাটফর্ম নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপে যুক্ত হবার পরে, নতুন অনেক কিছু শিখছি, আমাদের প্রানপ্রিয় শিক্ষক ও অগ্রজদের কাছ থেকে শিখছি একজন উদ্দোক্তা হতে হলে নিজেকে কিভাবে সকলের সামনে উপস্থাপন করতে হবে, কিভাবে নিজের এবং কাজের প্রতি ধৈর্য্য রাখতে হবে, কিভাবে নিজের সৃষ্টি দিয়ে নিজেকে সমাজের কাছে তুলে ধরতে হবে।
অসংখ্য ধন্যবাদ এবং শ্রদ্ধা প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার, এতো সুন্দর একটি প্লাটফর্ম তৈরি করছেন আমাদের জন্য, এই ভাবেই এগিয়ে যাবো। ভালো মানুষী চর্চার বিষয়ে যে শিক্ষা প্রিয় স্যারের কাছ থেকে এই প্লাটফর্মে এসে পেয়েছি তা আর কোথাও পাইনি। প্রতিটি মানবিক ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার ব্যাপারে প্রিয় স্যার যেভাবে সবাইকে আহবান ও উদ্বুদ্ধ করেন এবং নিজেও সবার সাথে অংশ নিয়ে যেভাবে সবাইকে অনুপ্রাণিত করেন সত্যিই বিষয়গুলো অসাধারণ এবং দারুণভাবে আমাদের ব্যাপক পরিবর্তন করে ফেলে। এ প্লাটফর্মে আসার পর থেকে যে কোন ভাল কাজের সাথে নিজেকে জড়ানোর জন্য এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি আগ্রহ কাজ করতে থাকে। প্লাটফর্মে রক্তদান কর্মসূচি, বন্যার্তদের সাহায্যের আসা, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য প্রদান, অসহায় দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ এই কার্যক্রম গুলো আসলেই আমাদের ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আলাদা করে গার্লস গ্রুপ, নারী উদ্যোক্তাদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা, ইংলিশ কোর্স ওয়েডিং ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা আমাদের জন্য বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করছে প্রতিনিয়তই।প্রিয় স্যারের পক্ষ থেকে নারীদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স এই বিষয়টি ঘোষণা আরো বেশি এই প্ল্যাটফর্মের প্রতি আগ্রহ ও শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেলুট প্রিয় স্যার আপনাকে। আপনি আসলেই বদলে দিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ বদলে যাবে সারা বাংলাদেশ। এই শুভ কামনা করছি।সাময়িক
পরিস্থিতির কারনে কচ্ছপ গতিতে এগোলেও ইচ্ছে আছে আমার শখটাকে পূর্ণতা দেওয়ার। এবং আমি দিবোই ইনশাআল্লাহ। পরিবার আমাকে সাপোর্ট দিবে, আমি জানি। সকলের দোয়া, সহযোগিতা এবং আমার একাগ্রতা নিয়েই আমি দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আর সব সময় যেনো আমার এই মনোবল ধরে রাখতে পারি, তার জন্য আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবেন।
লেখাটা বড় হয়ে যাওয়ার জন্য দুঃখিত। সবাই আমার লেখাটা পড়বেন প্লিজ।
দোয়া করি সবার জীবনে বলার মত একটা গল্প তৈরি হোক। সবাই কে অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৯১
৩০-০৭-২০২০
ধন্যবাদ
পারভীন আক্তার নদী
ব্যাচঃ ১০
রেজিষ্ট্রেশন নং- ২০১৩৬
নিজ জেলাঃ বগুড়া
বর্তমান অবস্থানঃ উত্তর বাড্ডা
রক্তের গ্রুপঃ O+