আমি সেদিন যে সাহায্যের হাতটা আমার বন্ধু সামনে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম তা ছিলো মানবতার
নমস্কার
একদিন হঠাৎ আমার কলেজর সহপাঠী আমাকে ফোনে কল দিলো আমি কল টা দেখে খুশি হলাম কত দিন পর আমায়ই কল দিলো হাসি মুখে কলটা রিসিভ করলাম 😊
💁আমিঃ হেলো বন্ধু কেমন আছিস?
👱বন্ধুঃ হাই আমি মোটামুটি আছি আর কি, তুই কেমন আছিস?
💁আমিঃ হে রে আমি আছি ভালোই আছি 🙂 তা এতোদিন পর আমার কথা মনে পড়লো বুঝি! সেই যে অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার শেষে আমরা সবাই মিলে, মৌচাক মার্কেটে ঘুরলাম, অনেক আড্ডা দিলাম। তারপর থেকে তোর তো কোনো খোঁজ খরবই নেই। এতো দিন কোথায় হারিয়ে গিয়ে ছিলি আমাকে বলতো?
🙍বন্ধুঃ আমি কোথাও হারিয়ে যাইনি, ঢাকায় ছিলাম। পরীক্ষা পর একমাস হলো গ্রামের বাড়িতে চলে আসছি।
💁আমিঃ ও আচ্ছা তুই না, একটা চাকরি করিস তা, কতো দিনের ছুটি দিলো তোর অফিস থেকে!! 😱
🙍বন্ধুঃ আরে না ছুটি আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে আসছি, আর বাড়িতে চলে আসা ছাড়া আমার পক্ষে কিছুই করার ছিলো না।
💁আমিঃ কেনো কি হয়েছে? আমাকে একটু খুলে বল! না হলে আমি বুঝবো কি করে?
🙎বন্ধুঃ তোর কাছে আর কি লুকানোর আছে? বলছি শোন। কি কারণে বাড়িতে চলে এসেছি।
💁আমিঃ বল শুনি।
🙎বন্ধুঃ তুইতো জানিস, আমি ঢাকায় আমার
বোনের শশুর বাড়ি বোনের সাথে থাকি, বোনের বাসায় থেকে পড়াশোনা করি, আর একটা ছোটো লিফট তৈরি কম্পানিতে চাকরি করি আর চাকরি করে যে অর্থ উপার্জন করি, তা দিয়ে নিজের পড়াশোনা ও বাড়িতে কিছু টাকা দেই। আবার বোনকে মাস শেষে কিছু টাকা দেই। ৩ মাস হলো অফিস আমার বেতনটা ঠিক সময় মতো দিচ্ছিলো না। হাতে যা টাকা ছিলো ২ মাস ভালো চলছিলো, তারপর চারপাশে অন্ধকারের মতো হয়ে যায়। অন্য জায়গা গুলোতে চাকরির, জন্য চেষ্টা করলাম। কোনো জায়গায় চাকরি খোঁজ পেলাম না, চারিদিকে খুব অন্ধকার অন্ধকার লাগছিলো, হতাশায় যেনো আমি ডুবে যাচ্ছি, তাই কোনো পথ না পেয়ে, বাড়িতে আসছি। আমি তোর কাছেইতো শুনলাম, তুই নাকি একটা স্কুলে টিচার হিসাব যুক্ত আছিস। আর সেখানেতো আমাদের মতো কলেজে পড়ুরা ছাএ -ছাএী চাকরি করতে পারে, তাই একবার তোর সাথে যোগাযোগ করছি। দেখিস যদি আমার জন্যে কিছু একটা করতে পারিস কি না? আমি এখন সব দিকে কালো মেঘ দেখছি মনে হচ্ছে, এখনি ঝর আসবে, আর আমাকে ঝড়ে তাণ্ডবে ভেঙেচুরে দিয়ে যাবে।
💁আমিঃ ঠিক আছে তুই চিন্তা করিস না, আমি দেখি আমার স্কুলের এডমিন এবং আমার সিনিয়র স্যারদের সাথে কথা বলে। দেখি স্কুলের এখন টিচার লাগবে কিনা? আর লাগলে কি কি করতে হবে। (আমার বন্ধু কথা আমি চুপ করে, মন দিয়ে শুনছিলাম। যতটা মুখে হাসি নিয়ে কলটা রিসিভ করেছিলাম, এখন কথা গুলো শুনে সেই মুখ হাসিটা হারিয়ে ফেলেছি। মনে মনে কষ্ট হয়েছিলো, আমার বন্ধু এতোটা সমস্যায় জরজরিত হয়ে আছে, আমি কিছুই জানিনা)
🙎বন্ধুঃ ঠিক আছে। আমি আমার মনের কথা তোকে বলতে পেরে এখন কিছুটা ভালো লাগছে, আচ্ছা কি কি লাগবে? চাকরির জন্য আমাকে একটু বল।
💁আমিঃ তেমন কিছুই লাগবেনা, তুই আপাতত
তোর গুলো সার্টিফিকেট আর সুন্দর মতো একটি একটি সিভি তৈরি করে রাখ, ১ কপি ছবি রেডি রাখ। আজ কথা শেষ হলে আমি স্কুলে খবর নিয়ে তোকে কল দিবো কেমন? ভালো থাকিস।
🙎বন্ধুঃ ওকে আমি সব রেডি রাখবো আবার কথা হবে বাই।
ও যখন বলছিলো তখন ও কিছুটা নিশ্চুপ হয়েছিলাম। এখন রেখে দিলো কিন্তু মনটা খুবই খারাপ লাগলো। কিভাবে মানুষের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে এবং সেখান থেকে পরিত্রান পায়, সেই উপায়ের সন্ধানে সকলেই থাকে। লেগে থাকাটাই বড় জিনিস। অন্ধকার শেষে আলো আসবে এর প্রতীক্ষায় আমরা সকলেই। দিন শেষে রাত আসে, রাত শেষে দিন আসে কিন্তু ধৈর্য হারানোর চলবে না এইটাই নিয়তির খেলা।
বিশ্বাস করেন আমি যখন লিখতে বসলাম, আমার বন্ধুদের ও নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া অজানা এইসব ঘটনা মনে পড়ে। তাইতো লিখার মায়ায় লিখছি, তবে হ্যাঁ এই যে এতো সব ঘটনা যে, আজ চোখের সামনে ভাসছে- এর মূল কারণ আমাদের এই প্রাণপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। এই প্লাটফর্মে যুক্ত হতে না পারলে হয়তো আজকের আমার মানবিক কাজের ঘটনাটা মনেই আসতো না। এটাও যে অনুপ্রেরণা হতে পারে এ প্ল্যাটফর্ম থেকে শিখতে পারলাম।
যাই হোক
আমি কিছু দিন পর আমার স্কুলে আমার বন্ধুর চাকরির কথা বলাম, এডমিন বললো কোনো সমস্যা নেই আপনার বন্ধু হলে আমি ব্যাপারটা দেখছি, আপনি আপনার বন্ধুকে সবটা বুঝিয়ে বলেন, আমাদের স্কুলের স্পেশাল বাচ্চাদের কিভাবে পড়াতে হয়, আর এক বরিবার করে স্কুলে সিভিটা অফিসে জমা দিতে। আমি বললাম ঠিক আছে মেডাম। আমি সব বুঝিয়ে দিবো, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জেনারেলি কাজটা এগুচ্ছিলো মানসিকভাবে তৃপ্তি কাজ করছিলো আমার মাঝে।
আমি আমার বন্ধুকে আবার ফোন করলাম -
বন্ধুঃ হেলো নন্দিতা বল কিছু করতে পারলি আমার জন্যে? আর আমি গত কাল ঢাকায় চলে এসেছি। বোনের বাসায় আছি এখন।
আমিঃ বাহ্ ভালোই হয়েছে! এখন শোন সামনের রবিবার সকাল ৮টায় আমার স্কুলে চলে আসিস, সাথে সিভি ও ছবি নিয়ে আসতে ভুলিস না কিন্তুু। ফর্মাল পোশাক পড়ে আসিস, প্লিজ আর কিছুনা - কথা বলছি মন দিয়ে শোন।
বন্ধুঃ ঠিক আছে আমি সেই ভাবে আসবো আচ্ছা বল তো কি বলবি?
আমিঃ স্কুলে আমারদের বাচ্চারা সবাই স্পেশাল বাচ্চাতো! অনেক যত্ন ও ভালোবাসার সাথে শিক্ষা প্রদান করা হয়, আর আমার একটা ভালো, সুনাম ও পরিচিতি আছে সবার কাছে, তাই আমি চাই তুইও আমার মতো ভালো কাজ করে, সুনাম অর্জন করবি। ঠিক আছে রবিবার দেখা হচ্ছে, আর আমিতো স্কুলে থাকবো, নীর্ভয়ে থাক ভালো কিছু হবে।
যথারীতি রবিবার আমার কথা মতো, সকালে আমার বন্ধু স্কুলে হাজির হলো, সিভি জমা দিলো, আর ওকে অফিস থেকে জানালো, পরের রবিবার থেকে আপনার পাঁচদিনের ট্রায়াল শুরু হবে। সময় মতো স্কুলে চলে আসবেন। যথাসময়ে পরের রবিবার আমার বন্ধু স্কুলের কার্যক্রম শুরু করলো।
আমিও সবটা বুঝয়ে বললাম কি কি করতে হবে। একদিন দুদিন করে, তিন-চার দিন হলো শেষ হলো, পাঁচ দিনের দিন ডিউটি শেষে অফিস থেকে আমার বন্ধুকে জানালো তার চাকরি কনফার্ম করা হয়েছে। সামনের মাসের ১তারিখ থেকে চাকরিতে জয়েন করতে পারবে।
বিশ্বাস করেন মনের ভিতর অগত্যা একটা খুশি আমার ভিতর কাজ করতে শুরু করলো, কারণ একটা কাজ হাতে নিয়েছিলাম- সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত টেনশন কাজ করছিলো কি হতে যাচ্ছে? কি হচ্ছে? আমি কি পারছি তার পাশে দাঁড়াতে? তবে হাল ছাড়িনি লেগেছিলাম। স্বস্তির নিঃশ্বাস যেনো নাক দিয়ে বের হচ্ছিলো পাশাপাশি মুখ থেকেও। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
যাইহোক অফিস রুম থেকে বেরিয়ে আমার বন্ধুর মুখে চমৎকার একটি স্বস্তির হাসি দেখতে পেলাম, হাসি মুখে আমাকে বলো নন্দিতা আমি অনেক টাই চিন্তা মুক্ত হলামরে চাকরি টা হয়ে গেলো। তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ, তোর জন্যই আমি এখন চিন্তা থেকে মুক্তি পেলাম। সেদিন দু'জনে খুব খুশি হয়ে ছিলাম একসাথে চায়ের দোকানে চা খেলাম- অনেক আড্ডা দিলাম।
যথারীতি যথাসময়ে ১ তারিখে বন্ধু আমার চাকরিতে জয়েন করলো এবং ধীরে ধীরে নিজের চাকরি নিয়ে গুছিয়ে নিয়ে ভালো কাজ করছিলো এবং আমার যতোটা সুনাম ছিলো, স্কুলের ততটাই সুনাম অর্জন করে নিজের ভালো কাজের মাধ্যমে, বছরখানেক পর একটা টিউশনি হয়। এখন খুব ভালো আছে এখন আর চিন্তার ভাঁজ ওর মুখে আমি দেখিনা। সর্ব সময় হাসিখুশি থাকে। আমরা দুজন খুব আনন্দে স্কুলের ডিউটি করি সারা দিনের মধ্যে দুই-তিনবার দুজনের দেখা হয়। একসাথে বসে লাঞ্চ করি, বিশেষ করে অফিস শেষে স্কুল থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ আনন্দ মামার চায়ের দোকানে বসে চা খাই, আর আড্ডা দেই। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম যে, আমার এক সহপাঠী আমার সাথে চাকরি করছে, আমি তো কলেজে সময় দিতে পারি নাই, আমার বন্ধু কম কিন্তু যখন এই বন্ধু আমার সাথে চাকরিতে আসার পর, আমি আমার সেই কলেজের হারানো দিনগুলোর কথা ভুলে থাকি। ওর সাথে থাকলে মনে হয় কলেজের পুরোনো দুঃখের কথা ভুলেই যাই। আমি নিজেকে বলি আমার বন্ধুতো আমার সাথেই আছে।
আমি সেদিন যে সাহায্যের হাতটা আমার বন্ধু সামনে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম তা ছিলো মানবতার, আর এক বন্ধু প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসা থেকে। আমি এটাও জানি, আমি সেদিন সাহায্য না করলেও- অন্য কোনো ভাবে সে চাকরি খোঁজে নিতো বা অন্যকেও আমার মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতো। আমার আমার সৌভাগ্য যে সঠিক সময়ে, ওর মতো বন্ধুর পাশে আমি থাকতে পেরেছিলাম। এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে, যে সেই মানবতার সেবা আমার মধ্যে দিয়েছিলো।
আমি সব সময় চেষ্টা করে যাই আমাকে আমার দিদি যে আমার বিপদের সময় মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো, আমিও যেনো সেইভাবে সবার সাহায্য নিজেকে কাজে লাগাতে পারি।
স্যালুট স্যার, এই গ্রুপে বিশাল বড় গ্রুপে ঢোকার পর আমাদের প্রিয় ইকবাল বাহারের জাহিদ স্যারের প্রতিটি সেশন ও প্রতিটি স্ট্যাটাস অন্তরে লালন করার চেষ্টা করি, উনার একেকটি লাইন যেনো, এক একটি বাণী।
"মানুষের জন্য কাজ করলে, জীবিকার জন্য কাজের অভাব হয় না" এই লাইনটি আমাকে মনে করিয়ে দেয় ভুলে যাওয়া অতীতে ও বর্তমানে মানবতার কল্যাণে নিজেকে উজাড় করে দেয়ার দিনগুলির কথা এবং এক অজানা শক্তি নিজের মাঝে কাজ করা শুরু করে।
আমি হয়তো জানতামই না এই গ্রুপে যুক্ত না হলে মানবতার একটি প্রান্তে আমি নিজেও এবং আমার এই স্মৃতিবিজড়িত ঘটনাগুলো অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে সকলের জন্য।
স্যারের কথাটা আমি মন থেকে বিশ্বাস করি এবং সব সময় অন্যের বিপদ আপদে সাহায্য করার চেষ্টা করি, আর সাহায্য করতে পারলে, নিজের কাছেই আনন্দ লাগে, চলে আসে অজানা এক প্রশান্তি।। সবাই আমার জন্যে আশীর্বাদ করবেন, যেনো মানবতার কাজে আমি যেনো নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি সাধ্য অনুযায়ী।.
আমাদের প্রাণ প্রিয় স্যার নয়নের মনি চোখের খনি শত কোটি প্রণাম যে এতো সুন্দর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন, যেখানে সবাই একে অপরকে সাহায্য করে, সবার এতো সুন্দর ব্যবহার আমাকে দিনদিন মুগ্ধ করে। আমি মাঝে মাঝে সেই বন্ধুকে বলি, যে বন্ধু আমাকে গ্রুপের সাথে যুক্ত করেছেন সেই বন্ধু কে বলি সখা, তুমি আমার গলায় একটা সুন্দর মালা পড়িয়ে দিয়েছো, যেই মালা পড়ে আমাকে বেশ সুন্দরী লাগছে, দিন দিন মালার ফুলের সুগন্ধে আমার চারপাশের পরিবেশ মধুময় হয়ে উঠছে। আচ্ছা সবাই বলুন তো এই মালাটি মালিক কে? আমার সুন্দর ফুল গুলোও বা কে?
👇
মালার মালিক হলো আমার প্রাণ প্রিয় স্যার জনাব Iqbal Bahar Zahid স্যার। যে এই ফুল বাগানের মতো এতো সুন্দর প্ল্যাটফর্ম নিজে হাতে তৈরি করেছেন, আর প্ল্যাটফর্মে প্রতিটি ভাই বোন হলো -সুন্দর সুন্দর ফুল এবং সেই মালার প্রতিটি ফুল হলো আমাদের প্রাণপ্রিয় ভাই ও বোনেরা। -with Iqbal Bahar Zahid
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন,
ভালোবাসায় আগলে রাখবেন,
ভুল হলে ক্ষমা করবেন 🙏
সারাটি জীবন দোয়া করবেন।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -২৯১
৩০-০৭-২০২০
ধন্যবাদ,
🙋 নন্দিতা বাড়ৈই
🌹গুলশান জোন, ঢাকা
💐কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
🍀ব্যাচঃ১০ তম
🍀রেজিষ্ট্রেশন নংঃ২১৮৫৭
🌴জেলাঃ মুন্সিগঞ্জ
📌রক্তের গ্রুপঃএ+