অনুপ্রেরনায় আমার মা-বাবা
আসসালামু আলাইকুম
[ পুরো না পড়ে কেউ কমেন্ট করবেননা প্লিজ ]
আমার বেড়ে উঠা মধ্যবিত্ত পরিবার বললে ভুল হবে মনে হয় সংক্ষেপে বললে বলা যায় দিনে আনে দিনে খাওয়া পরিবার থেকে আমার বেড়ে উঠার গল্প----
অনুপ্রেরনায় আমার মা-বাবা
প্রথম ধাপ
আমার বাবা ছিলেন একজন দিন মজুর,সহজ সরল মানুষ ছিলেন৷অভাবের কারনে বাবার পড়ালেখা করা হয়নি বাবা প্রায় আমাদের ভাই বোন সবাইকে বলতো আমার পড়ালেখা করার ইচ্ছা ছিল শুধু অভাবের কারনে পারিনি৷ছোট বেলা থেকে বাবা দাদার সাথে পরিবারের হাল ধরেছে যে এখনো ছাড়েননি, আমরা চার ভাই বোনের পরিবার৷ চার ভাই বোনের মধ্যে সব চেয়ে বড় আমার বোন,তারপর ভাইদের মধ্যে আমি বড় আমার ছোট দুই ভাই,আমাদের পরিবারের আয়ে উৎস ছিল একমাএ আমার বাবা।মানুষের বাড়ি বাড়ি বদলা দিয়ে আমাদের পরিবার খরচ আর আমাদের পড়ালেখার খরচ চালাতো। বড় আপুর তেমন পড়ালেখা করেনি মাএ অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়েছে। বড় আপুর পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার কারন আমার বড় আপু অষ্টম শ্রেণী উর্ত্তীন হয়ে নবম শ্রেণিতে উঠে তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে উর্ত্তীন হয়ে সপ্তম শ্রেনীতে উঠি।
তখন এক সাথে দুই জনের খরচ চালাতে পারতেছেনা বাবা তাই বড় আপু পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়।
আমার পড়ার জন্য বড় আপুর ত্যাগের বিনিময় আমি 2014 সালে এসএস সি পরীক্ষায় উর্ওীন হয়ে ফেনী প্রাইভেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (C.P.I) থেকে ইলেক্টিক্যাল উপর ডিপ্লোমা ইনঞ্জিনিয়ারিং শেষ করি 2018 সালে।ডিপ্লোমা শেষ করে কাতারে চলে আসি৷মেজো ভাই এসএসসি তে এক বিষয় ফেল করাতেই আর পড়ালেখা করে নাই অনেক বুঝিয়েছি পরীক্ষাটা দেওয়ার জন্য দেয়নি। কাজ শিখতে দিয়েছি তাও ও শিখেনি সমাজের খারাপ ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতো দেখে তাই আমি তাকে ওমান দোকানে ভিসা নিয়ে পাঠিয়ে দিই।
এখন সবার ছোট ভাইটা পড়ালেখা করতেছে৷
দ্বিতীয় ধাপ
আমি আমার পরিবারের খুব কাছ থেকেই কষ্ট গুলো দেখেছি একটা কথা আজ আমি এখানে শেয়ার করবো আমি যখন তৃতীয় শ্রেণী পড়ি তখন ক্লাসের স্যার স্কুল ড্রেসের জন্য চাপ দেয় তখন আমি স্কুল থেকে এসে মাকে বললাম মা কাল স্কুল ড্রেস নিয়ে না গেলে পিটাবে মা ড্রেস না নিলে কাল থেকে স্কুলে যাবো না। মা বলে ঠিক আছে স্কুল ড্রেস বানিয়ে দিবে বলে আমায় শান্তনা দেয় পরে বাবা বদলা দিয়ে বাড়ি যখন ফিরলো তখন মা বাবা কে বললো আমার ড্রেস লাগবে বাবা কিছুই বললো না।
বাবা কি বা বলবে যে পুরো দিন বদলা দিয়ে মাএ ৬০ টাকা আয় করতো সে কোথায় থেকে ২৫০ টাকার ড্রেস কিনে দিবে৷ রাতে বাবা মাকে ডেকে নিয়ে বললো কাল রাসেল স্কুলে না যেতে চাইলে বলবে ড্রেস বানানোর জন্য দোকানে দিয়েছে তোর বাবা আমি কিন্তু সব শুনেছি মাকে বাবা শিখিয়ে দিয়েছে পরের দিন আমি নিজ থেকেই স্কুলে চলে গেলাম ঐ দিন টা ছিলো বৃহস্পতিবার মা বিকালে নানার বাড়িতে আমাকে সহ নিয়ে গেল তখন আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেই সব চেয়ে খারাপ অবস্থান ছিলো আমাদের।
আমাদের মামারা ছিলো গাড়ির কোম্পানীর মালিক মামারা চাইলে আমাদের পরিবারকে সাহায্য করতে পারতো কিন্তু করেনি,সাহায্য করেছে - তবে এটাকে সাহায্য বলবো না পারিশ্রমিক বলবো ভেবেই পাচ্ছিনা।মামারা ছিলো ছয় জন,সবাই আলাদা পরিবার ছিলো। মামাদের বাড়িতে যদি কোন কাজ আসতো তখন মাকে ডেকে নিয়ে কাজ করাতো এর বিনিময় মা কি পেতো কিছু চাল ড়াল সবজি কিছু নগদ টাকা আর দুই ঈদের ফিতরার টাকা আর একটা কাপড় দিতো এই হচ্ছে আমার মামার বাড়ির গল্প।
ড্রেসের জন্য ঠিকই মা মেজো মামীকে আমার সামনে বললো ভাবি আমার রাসেল পাশ করেছে ওর একটা স্কুল ড্রেস লাগবে যদি ভাইয়াকে বলেন একটা ড্রেস নিয়ে দিতেন মামী বলে ঠিক আছে বলবো, এক মাস পার হয়ে গেল এর মধ্যে স্কুলে প্রতিদিনই স্যারের মার খেতে হতো এক মাস পরে মামা মামীকে দিয়ে খবর পাঠালো তাদের জমিনের ধান বাড়িতে নিয়ে আসছে এগুলো মাড়াই করতে হবে মা আমার ড্রেসের লোভে চলে গেলো মামার বাড়িতে আমাকে নিয়ে গেলেন,পুরো দুই দিন মা ওনাদের সাথে ধান মাড়াইয়ের কাজ শেষ করেন পরেদিন আমাকে নিয়ে চলে আসবে মা তখন মামী মায়ের হাতে একটা স্কুল ড্রেস আর কিছু টাকা দিলো মা এটা নিয়েই খুশি-ঐ কথাটা আমার এখনো কানে বাজে ৷ আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বড় খালা ছোট খালা একটু হেল্প করতো যা পারতো এটাই৷
তৃতীয় ধাপ
বাবা প্রবাসে যাওয়ার জন্য বড় ফুফুকে ধরে বড় ফুফা ছিলো কুয়েতে। ফুফু ফুফাকে বলে ভিসা নিয়ে নিলো, বড় ফুফা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা ভিসার দাম বলে,বাবা নিজের নামের সম্পওি বিক্রি করে টাকা দিয়ে বাবা প্রবাসে পাড়ি দেয় আস্তে আস্তে পরিবারের উন্নতি ও হলো ৷
বাবা সব সময় আমাদের বলতো কারো কোন জিনিস চুরি করো না তোমাদের যা লাগবে আমায় বলো আমি নিয়ে দিব এটাই শান্তনা পেতাম ঠিক এখন না পারলে ও পরে নিয়ে দিত এই হলো আমাদের বাবা৷
ভালোবাসি তোমায় বাবা অনেক
পরিবার থেকে শিখেছিলাম কঠিন সময় কি ভাবে সৎভাবে থেকে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়৷বাবা মুখে একটা কথা প্রায় আমাদের বলতো পরিশ্রম কর আল্লাহ কিছু না কিছু দিবেই৷
আমার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে অনেকে বলে রাসেল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে চেঞ্জ হয়ে গেছে আসলে তা না আমি কখনো নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরতে পছন্দ করি না,সব সময় নিজেকে আড়াল রাখতে পছন্দ করি-
আর নতুন কিছু শিখতে পছন্দ করি,আমার একটা খারাপ অভ্যাস হচ্ছে আমি লেখা-লেখি আমার পছন্দ না৷
এটাই আমার প্রথম লেখা৷
আমি আমার বাড়িতে একটা দেশি হাঁসের ফার্ম করার জন্য চেষ্টা আছি সবাই দোয়া করবেন আমার পরিবারের জন্য৷
আমার লেখার মধ্যে ভুলত্রুটি হলে সকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ৷ ধন্যবাদ সবাইকে।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 195-15/04/2020
মোঃআবু তৈয়ব (রাসেল)
অষ্টম ব্যাচ
রেজি.নং: ১১২৫৭
ব্লাড গ্রুপ: O+
ফেনী জেলা
কাতার প্রবাসী
+0097470541125
Taiyabrasel71@gmail.com