আমি পড়ালেখা বেশি দূর করতে পারিনি
আসসালামু আলাইকুম
প্রথমে স্মরণ করি আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামিন, যিনি এখনো আমাদের পরিবারবর্গ সহ সুস্থ রেখেছেন।
কেমন আছেন এই প্রশ্ন করব না কারণ আমরা জানি বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা মনের দিক থেকে ভালো নেই। আজ করোনা রিপোর্ট দেখে মনের দিক থেকে অনেক ভেঙ্গে পড়েছি। জানি না আল্লাহ কপালে কী রেখেছেন। তারপরও সবাই সাবধানে থাকবেন।
আমি পড়ালেখা বেশি দূর করতে পারিনি। পারিবারিক সমস্যা কিছুটা থাকলেও নিজের ইচ্ছা শক্তিটা ছিল দুর্বল। নিজের ইচ্ছা থাকলে হয়তো পড়ালেখা করে গ্রাজুয়েট হতে পারতাম। আমি ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করি। পরবর্তীতে এইচএসসি পরীক্ষায় দুই সাবজেক্ট এ ফেল করি। তখন পড়ালেখার প্রতি আর মনোযোগ দিতে পারলাম না। তখন ২০০২ সাল, আমি ঢাকায় চলে যাই। আমার বড় ভাই তখন ঢাকায় মাস্টার্স পড়ালেখা করে।
বড় ভাই তখন গার্মেন্টসের একজন ফ্যাক্টরি ম্যানেজারের বাচ্চাকে টিউশনি করাইতো।তখন ভাইয়া আমাকে ঐ গার্মেন্টসে একজন কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর হিসেবে চাকরি দেয়। আমি খুব নরম স্বভাবের ছিলাম। সবাই বলতো আমার দারা গার্মেন্টসে চাকরি করা সম্ভব হবে না। কিন্তু আমি লেগে থাকি । তখন আমি লাইন কোয়ালিটি ছিলাম।কাজ শিখার প্রতি আমার প্রচুর আগ্রহ ছিল। বড় ছোট সবাইকে খুব বিরক্ত করতাম। প্রতিটা ইস্টাইলের ফাইল আমি পড়তাম। ইংলিশ বলতে না পারলেও ভালো পড়তে পাড়তাম। এবং ভালো বুঝতে পারতাম।
হটাৎ দুই মাসের মাথায় আমাকে ফাইনাল কোয়ালিটি করে ফিনিশিং সেকশনে দিয়া হলো। নতুন কিছু শিখার সুযোগ পেলাম। আসল কথা গার্মেন্টসে কেউ কাউকে কাজ শেখায় না। তাই প্রচন্ড ভাবে লেগে থাকলাম, সব সময় ফিনিশিং ইনচার্জকে ফলো করতাম। ওখানে এক মাস পরেই সুপারভাইজারের পদ পেয়ে যাই। চাকরির তিন মাসের মাথায় আমি সুপারভাইজার হয়ে যাই। কিছুদিন পরেই আমার ইনচার্জ তিনি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে তার গ্রামের বাড়ি চলে যান। অনেক বড় একটা দায়িত্ব পড়ে যায় আমার উপর। দুটি মাস আমার নেতৃত্বে এই সেকশনটি চালাই। এই দুটি মাসে আমার জীবনে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলাম। প্রচুর কষ্ট করেছিলাম কোন কোন দিন না খেয়ে ও কাজ করেছি। কারণ যাতে আমার সেকশনের কোন দুর্নাম না হয়। কাজের কোনো ক্ষতি না হয়।
কিন্তু হঠাৎ আমার মনে হলো, এখানে আমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল নয়। তখন আমার মাথায় আসলো আমি সুইং শিখব। আমাদের সেকশন এর ভিতরে স্যাম্পল সেকশন ছিল। তখন আমি সময় পেলেই স্যাম্পল সেকশনে সময় দিতাম। অফিস ছুটি হলে বাসায় যেতাম না। স্যাম্পলে সময় দিতাম ওখানে কাজ শিখতাম। অনেক পরিশ্রম করে ওটাও আয়ত্ত করলাম।
পরবর্তীতে ওখান থেকে চাকরি ছেড়ে দিলাম। সুইং সেকশনের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ শুরু করলাম। আস্তে আস্তে করে অনেক ক্রিটিক্যাল কাজ শিখে ফেললাম। আনুমানিক 2005 অথবা 2006 সাল হবে। আমার একজন ভালো বন্ধু মিরপুর এক নাম্বার একটি নতুন ফ্যাক্টরিতে জব শুরু করলো। ও আমাকে সুপারভাইজারের অফার করলো। ওখানে আমি গেলাম। ওখানের চেয়ারম্যান স্যার আমার ইন্টারভিউ নিলেন। আমাকে তারা পছন্দ করলেন।
ঐ ফ্যাক্টরির মালিক ছয় বন্ধু ছিলেন। তারা ত্রিশটা মেশিন, দুটি ফ্লোর দিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। তখন এমডি স্যার এবং চেয়ারম্যান স্যার দুজনই বাইং হাউসে চাকরি করতেন। আর বাকি চারজন গ্রাম থেকে এসেছিলেন। আমি যখন জয়েন করি তখন ফ্যাক্টরির বয়স ছয় থেকে সাত মাস। তখন ফ্যাক্টরিতে সাব-কন্ট্রাক্ট কাজ হয়। কোন মাস কাজ হতো কোন মাস বসে থাকতে হতো। এভাবেই চলল একটি বছর। সবাই ফ্যাক্টরির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করত। আমাকে প্রত্যেক স্যার খুব ভালোবাসতেন এবং বিশ্বাস করতেন। অনেক রাত জেগেছি শুধু স্যাম্পল করতে গিয়ে।
দুটি বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর, আমাদের এমডি স্যার ফ্যাক্টরির এলসি খুললেন। এবং প্রথম একটি বাইয়ার ধরলেন। কিডস আইটেম প্রচুর কাজ পেলেন। টানা একটি বছর সকল স্যার সহ আমরা সকল শ্রমিক মিলে প্রচুর পরিশ্রম করে ওই মালগুলো শিপমেন্ট দেই। কিন্তু ওই ফ্যাক্টরি দাঁড় করাতে সবচাইতে বড় ভূমিকা ছিল এমডি স্যারের। হঠাৎ স্যারদের মাঝে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়। তারপর চেয়ারম্যান স্যার ও এমডি স্যারের আর একজন বন্ধু তারা পার্টনার ছেড়ে দেয়। তারপর থেকেই ফ্যাক্টরি চারজন স্যার চালাতে থাকে। এরপর থেকে তাদেরকে আর পিছু পরতে হয়নি। একের পরে এক অর্ডার আসতে থাকে। ছয় বছরের মাথায় কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরলেও আমাদের ভাগ্যের চাকাটা অতটা ঘুরেনি। শুধু পদ-পদবি পেয়েছি। আর্থিকভাবে আমাদেরকে সচ্ছল করতে পারেনি। আবার তাদের চার বন্ধুর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হল। এমডি স্যারের দুই বন্ধু পার্টনার ছেড়ে দিল। তখন তাদের হিসেব অনুযায়ী প্রত্যেক বন্ধু সোয়া কোটি টাকা ভাগে পেয়েছিল। তারপর থেকে এমডি স্যার এবং তার এক বন্ধু ফ্যাক্টরি চালাতে থাকে। আজ প্রচুর টাকার মালিক তারা। তারপর থেকে প্রচুর জনবল নিয়েছে। ফ্যাক্টরি বড় করেছে। নতুন আরেকটি ফ্যাক্টরি করেছে। কিন্তু দুর্ভাগা হচ্ছি আমরা । শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেগে থেকেও আর্থিকভাবে আমাদেরকে দুর্বল করে রেখেছিল। নতুন নতুন ম্যানপাওয়ার নিত আমাদের চাইতে বেতন বেশি দিয়ে। দীর্ঘ দশটি বছর এই ফ্যাক্টরিতে কাটিয়েছিলাম। নিজের মনের ভেতর অন্যরকম একটি কষ্ট মনে হল। অর্থ-সম্পদ হয়ে গেল হয়তো পিছনের কথা ভুলে যায়। অনেক দুঃখ মনে নিয়ে ২০১৬ সালের শেষের দিকে চলে আসি নিজ এলাকায়। দলিল লেখক লাইসেন্স করি। যদিও কর্ম টা অতটা পছন্দ না। তারপরও সৎ ভাবে লেগে থাকি। যাই হোক এখানে এসে যতটুক ইনকাম করতে পেরেছি বউ-বাচ্চা বাবা-মাকে নিয়ে সুখেই আছি। এরই মাঝে যে কোন কারনে আমার অনেক টাকা নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে একটু আর্থিক সংকটের ভেতর পড়েছি। আমার ব্যবসা করার খুব ইচ্ছা। কিন্তু কারো কাছ থেকে সাহস পায়না। কেউ শক্তি যোগায় না। আমি সপ্তাহে প্রায় চার দিন ফ্রি থাকি।
আমাদের প্রিয় স্যার জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার যখন ২০১৮ সালে নিজের বলার মত গল্প প্ল্যাটফর্ম করার উদ্যোগ নিলেন, তার আগে থেকেই আমি তাকে ফলো করি। ফেসবুকে তার প্রতিটি বিষয় আমার ভালো লাগতো। তিনি ৬৪ জেলার ১৬৪ জন নিয়ে প্ল্যাটফর্ম শুরু করবেন। আমি ভেবেছিলাম স্যার হয়তো ভালো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট দের কে নিয়ে প্ল্যাটফর্ম শুরু করবে। তাই আমি আর গুরুত্ব দিলাম না। কিন্তু যখন গুরুত্ব দিলাম। তখন জীবনের অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি। তারপরে নিজের মনকে শক্ত রেখেছি। আমি এই প্ল্যাটফর্মের যুক্ত হয়েছি। আমার মনে অনেক শক্তি পেয়েছি, আমি আবার ঘুরে দাঁড়াবো। সম্পূর্ণ শক্তি পেয়েছি আমার প্রিয় স্যার এর মাধ্যমে এবং স্যারের এই বিশাল ভালো মানুষের একটি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে পেরে।
বর্তমানে করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীতক থমকে দিয়েছে। তাই চিন্তা করেছি আল্লাহ বিপদ থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিলে। যদি বেঁচে থাকি আমি মেন্স আইটেম ও কিডস আইটেম দিয়ে একটি ব্যবসা শুরু করতে চাই। আমি সবার পরামর্শ ও দোয়া চাই। পৃথিবীর এই সংকটময় পরিস্থিতির পরবর্তীতে আমার ব্যবসা করটা ঠিক হবে কিনা। সবার উপদেশ আশা করছি। সবাই সাবধানে থাকবেন ভালো থাকবেন। ঘরে থাকুন।
ভুলত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 195-15/04/2020
কামরুল ইসলাম মিয়া
নবম ব্যাচ
রেজিস্ট্রেশন ১২৭৬৫
রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ
মুকসুদপুর গোপালগঞ্জ