মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু সে নিজেই
এম এম মাহবুবুল হাসান, গাজীপুর।
রেজি ১২৪৮৭, নবম ব্যাচ, O+, সৌদি আরব থেকে।
সকল প্রশংসা সেই মহা সত্বার যার হাতে সবার প্রান, যার অনুগ্রহে আমরা এখনো বেচে আছি ও সুস্থ আছি এবং যার অসংখ্য নেয়ামত আমরা ভোগ করতেছি প্রতিনিয়ত এবং বেশিরভাগ খেত্রেই আমরা শুক্রিয়া ও করি না।
অগণিত সালাম ও দুরুদ বর্ষিত হোক প্রিয় নাবী (সঃ) এর উপর।
প্রশ্ন -মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু কে?
উত্তর - মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু সে নিজেই!!!
বিস্তারিত বলার আগে জেনে নেই শত্রু কি বা কাকে বলে?
আমরা জানি শত্রু হচ্ছে এমন কেও যার দ্বারা আমার বা আমাদের বা দেশের ক্ষতি হতে পারে, যার থেকে আমরা সাবধানতা অবলম্বন করি বিভিন্ন পন্থায় এবং মোকাবেলা করার বহু রাস্তা খুজে বের করি।
ক্ষেত্র বিশেষে মানুষ বা কোন হিংস্র জন্তু জানোয়ার বা জীন সয়তান বা অন্য কোন জাতি বা দেশ, অথবা আমি নিজেই।।।
তবে আজকে আলোচনার বিষয় হচ্ছে আমার সবচেয়ে বড় শত্রু কে? কে আমার ব্যক্তি জীবনে উন্নতি কামিয়াবি সাফল্য যাই বলি, কে সবচেয়ে বড় বাধা সৃষ্টিকারি,কে সবচেয়ে বড় শত্রু???
আমরা কি জানি নিজের অজান্তেই আমরা নিজেরাই নিজেদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে যাচ্ছি এই দুনিয়ার ও পরকালের জন্যেও।
কিভাবে করছি? এক মিনিট বলছি-
ধরেন আমাকে আমার আব্বু আম্মু স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন যাতে ভালো করে লেখাপড়া করে বড় হয়ে নিজের পায়ে নিজে দাড়াতে পারি এবং সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়ে বাবা মার মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। সে জন্য যা যা লাগে যত টাকা পয়সা লাগে আমার পিছনে ব্যায় করা হচ্ছে।
কিন্তু আমি ঠিক মত স্কুলে যাই না, গেলেও ক্লাস ফাকি দিয়ে এদিক সেদিক আড্ডা দেই। দুস্ট ছেলেদের সাথে খারাপ সবাবে অভ্যস্ত হয়ে পরেছি। বাসা থেকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে টাকা নিয়ে বাজে রাস্তায় খরচ করি। আমি আমার ভবিষ্যৎ নিজের হাতে নস্ট করেছি। কে আমার শত্রু? আমি নিজেই!
আবার,ধরেন আমাকে কোন একটা প্রতিষ্ঠানে ভালো একটা পোস্টে চাকরি দিয়ে একটা বড় দায়িত্ব দেয়া হলো। এর জন্য প্রতিষ্ঠানটি আমাকে ভালো সেলারি দিয়ে যাচ্ছে, তার পাশাপাশি আরো অনেক সুবিধা আমাকে ও আমার পরিবারকে দিচ্ছে।
কিন্তু আমি করি কি, ঠিক মত ডিউটি তে যাই না। যাই দেড়ি করে চলে আসি তারাতারি। সপ্তাহে দুএক দিন এমনই ছুটি নিচ্ছি, আমাকে যা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা সময় মত বুঝিয়ে দেই না। আবার সুজোগ পেলে এধারকা উধার করি। এমতাবস্থায় বস আমাকে কয়েকবার সাবধান করার পরও আমি যেই সেই। কয়েকদিন পর আমাকে বস ডেকে বল্লো আপনি ফায়ারড। আমার শত্রু কে? আমি নিজেই।
আবার ধরেন আমাকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে অনেক টাক খরচ করে যেহেতু আমি ভালো করে লিখা পড়া করি নি তাই তেমন কোন ভালো ভিসায়ও আসতে পারিনি এবং আসার সময় কোন কাজ ও ভাষা (যে কোন একটি কাজে দক্ষতা এবং ইংরেজি কমছে কম) শিখে আসি নি। যাই হোক এসে যখন পরেছি বস আমাকে একটা কাজ দিল কাজটা হলো অন্য কারো হেল্পারি করা, যে কিনা কোন কাজে দক্ষ যাকে আমরা বলি এক্সপার্ট (ট্রেড বা টেক্নিশিয়ান) বস বলল তুমি ওর সাথে কাজ কর এবং কাজ শিখ, কাজটা ভালো করে শিখলে পরে তোমার বেতন বাড়িয়ে দেয়া হবে। আমি করলাম কি, কাজের উপর আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই, ( যেহেতু দেশে সারাদিন ঘুরাঘুরি করতাম, বাপের পয়সা খরচ করতাম তাই কাজ কাম ভাল্লাগে না) আমাকে যা বলে তাই এগিয়ে দেই, নিজে থেকে যেয়ে কিছুই শিখি না, আমাকে যদি বলে এই কাজটা কর ভাবি এইটা আমার কাজ না আমার কাজ হলো টুলস বা যন্ত্রপাতি এগিয়ে দেয়া হেল্প করা আমি কেন উনার কাজ করবো, আমাকে সেলারি দেয়া হয় উনার আধা আর উনি শুধু বসে বসে হুকুম করে আমি এত কাজ করি কেন। কয়েক বছর পর আমি যেই সেই রয়ে গেলাম আর আমার সাথের লোকজন এখন টেকনিশিয়ান সেলারিও বেড়েছে দ্বিগুণ। এখন আমি ভাবি যদি প্রথম থেকে ভাল করে কাজটা শিখতাম তাহলে ওদের মত আমিও আজ...।
আমার শত্রু কে? আমি নিজেই!!!
আরেকটা উদাহরণ দেই যদিও এই উদাহরণে আমরা প্রায় সবাই পরে যাব।
আমাদের সবাইকে জন্ম নিয়ে এই পৃথিবীতে আসতে হয়েছে আবার চলেও যাব একদিন মৃত্যুকে আলিংগন করে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।।।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের সৃস্টিকর্তা কেন এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন? কেনই বা একটা বয়স সীমা দিয়ে দিয়েছেন? কেন আবার যুগে যুগে সতর্ককারি পাঠিয়েছেন নির্দেশনা দিয়ে।
কেনই বা সঠিক পথ দেখিয়েছেন সেই সকল সতর্ককারিরা? সব কিছুই আমাদের সামনে পরিস্কার করে তুলে ধরেছেন উনারা, সত্য মিথ্যা, হালাল হারাম, ঠিক বেঠিক ভালো মন্দ। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমানো যাওয়া অবধি সব কিছু শিক্ষা দিয়েছেন প্রেক্টিকেলি। শিক্ষা দিয়েছেন কল্যাণের রাস্তা, শিক্ষা দিয়েছেন ব্যক্তি জীবন পারিবারিক জীবন সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন ব্যবসায়ীক লেনদেন সব কিছু।
আবার ভয়ও দেখিয়েছেন সমানভাবে, দেখানো পথে না চললে আখেরাতের শাস্তির ব্যপারে।
এখন আমরা কি করলাম? এই সব কিছুর তোয়াক্কা না করে মন খুশি মত যা ইচ্ছা যেমনে ইচ্ছা জীবনকে উপভোগ করলাম। একপর্যায়ে মৃত্য এসে উপস্তিত। এখন আমি ভাবি কি করলাম সারা জীবন।
কে আমার শত্রু? আমি ই আমার সবচে বড় শত্রু।।।
আমরা সবাই আমাদের নিত্যকার জীবন চিরত্রে কাওকে না কাওকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি। প্রতিটি কাজে আমার থেকে কেও ভালো করলেই তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রু মনে করি। আসলে কেও কারো থেকে ভালো কিছু করছে তার মানে সে তার শত্রু বা প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। সে তার কর্মের ফল ভোগ করছে আর আমি আমারটা। আমি যদি আমার কর্মকে ঠিক করে নেই তবে আমিও তার মত সুফল ভোগ করতে পারবো।
মূল কথা হচ্ছে সাবাইকে সর্বস্তরে নিজের কাজটাকে প্রধান্য দেয়া উচিত, সময় কে মুল্য দেয়া উচিত, নিজের দায়িত্ব কে যথাসম্ভব পালন করা উচিত। তাহলেই জীবন কে পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবো যা অন্য দশজন সাকসেস লোকেরা করছে। এবং দিন শেষে আফসোস থাকবে না। মনকে সান্ত্বনা দেয়ার মত জবাব থাকবে।
যদি একবার নিজের শত্রুকে চিনতে পারি তবে অনেক ভুল শত্রুকে চেনা যাবে যদিও তারা আমাদের শত্রু নয়।।।
ভুল বলে থাকলে ক্ষমা প্রার্থী।
শেষ করবো প্রিয় স্যার কে হাজার কোটি স্যলুট ও ভালবাসা দিয়ে যিনি এই গ্রুপের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ কে আলোর পথ দেখিয়েছেন এবং ভালবাসার বন্ধনে বেধে দিয়েছেন। অগনিত ভাই বোনেরা পেয়েছেন অনুপ্রেরণা জীবনে বলার মত একটা গল্প তৈরি করতে।
সবার সুস্থতার দোয়া চেয়ে বিদায় নিচ্ছি,
এই মহামারীর কবল থেকে আমাদের মালিক যেন আমাদের অতি তারাতাড়ি উদ্ধার করে নেন। যারা খাবারের অভাবে আছেন তাদের যেন খাবারের ব্যবস্থা করে দেন যারা অসুস্থ আছেন তাদের যেন সুস্থতা দেন। আমিন সুম্মা আমিন।
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 196-16/04/2020