আমি একটা প্রান্তিক কৃষকের [গরিব] ছেলে
আসসালামুআলাইকুম,
বিসমিল্লাহিররহমানিররহিম
শুরুতে মহান রবের নিকট লাখো শুকরিয়া জ্ঞাপন করি যিনি এখনোও আমাকে এই মহামারী করোনা থেকে মুক্ত রাখছেন,,
আলহামদুলিল্লাহ!!
আশা করি সকলে সুস্থ এবং নিরপদ আছেন!!
**আজ না হয় আমার জীবনের ব্যার্থ তার গল্প টা** বলি+++
শুরুতে ক্ষমা প্রার্থী লেখাটা একটু বড় হয়ে গেছে!!
আমাদের প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার স্যার গত ১৭ তারিখে যদি এই https://m.facebook.com/groups/368460136958682?view=permalink&id=908327956305228
শেসন টা না দিতেন তবে কখনো আমি এটা লিখতাম না,,
সব কিছু বাদ দিয়া এবার শুরু করা যাক!!
আমি একটা প্রান্তিক কৃষকের [গরিব] ছেলে!
গ্রামেই বড় হওয়া,,আমরা দুই ভাই কোন বোন নেই,,আমি ছোট এবং ভাই বড়!!
ভাই ঢাকা গাজিপুর চৌরাস্থায় অবস্থিত সুইটার ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে,,
2012সাল-তখন ক্লাস নাইনে পড়ি[মাদ্রাসা]
তো এক মেয়ের সাথে পরিচয়[ক্লাসমেট]
তার সাথে খুব ভালো একটা রিলেশন হয় যেটাকে প্রেম বা ভালোবাসা বলতে পারেন,,
যাই হোক,,
2013 সাল sscপরিক্ষা দিলাম এবং খুব ভালো ফলাফল নিয়া পাশ করলাম,,
পাশ করার পরে গ্রাম ছেড়ে জেলা শহরে ইন্টারে ভর্তি হলাম,,
পড়াশুনার পাশাপাশি রিলেশন টাও চলছে,,
এরি মধ্যে সেই মেয়ের বাড়িতে আমাদের সব কথা জানাজানি হয়ে গেলো,,
তো মেয়ের পরিবার মেয়েকে খুবই প্রসার দিতে থাকে,,
এক পর্যায়ে মেয়ের মা আমাকে তাদের বাড়িতে ডাকে,
আমিও বান্দা হাজির,
মেয়ের মা সরাসরি আমাকে বলে তুমি বেকার এবং তুমি স্টুডেন্ট,তোমার সাথে আমার মেয়ে বিয়া দিবো না!!
তো আমি অনেক ভাবে তাহাকে[মেয়ের মা কে]
বুঝানোর চেষ্টা করলাম,কোন আশানুরুপ ফল হইলো না!!
তো ওখান থেকে চলে আসলাম,,রিলেশন চলছে,,
2015 সাল,,HSC পাশ করলাম,রেজাল্ট মুটামুটি ভালোই ছিলো,,
তো এবার কলেজে ভর্তি হবার সময়,,
গরিব ফ্যামিলি হবার কারনে কোন কচিং না করেই SSC এবংHSC রেজাল্টের উপর ভিত্তি করেই ঢাকা সরকারি তিতুমির কলেজে অর্থনীতি তে ভর্তি হয়ে গেলাম,,
এরই ফাকে ভাইয়ের সাথে সুইটার ফ্যাক্টরিতে কাজ শিখতে শুরু করলাম,,যেহেতু ঢাকা গাজিপুরেই আছি!
2015 সালের লাষ্টের দিকে আমার অজান্তেই আমার ভালোবাসার মেয়েকে তার ফ্যামিলি জোর করে বিয়া দিয়ে দিলো,,
এটা শুনার পর আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়লো!! প্রেমে ব্যার্থ হলাম!!!
এখানেই ব্যার্থ তা শুরু!!
কাজ শিখাও ভালো লাগে না পড়াশুনাও আর ভালো লাগে না!!
এভাবে আর কত দিন??
ভাই বকাবকি করে বাড়িতে নিয়া গিয়া মাকে বললো ওকে বুঝাও ও কি করবে??
তো আমি বল্লাম পড়াশুনাও করবো আর কাজও করবো!!
তো কাজ করতে করতে পড়াশুনা টা আর শেষ পর্যন্ত করা হয়নি!!
পড়াশুনা না করাটাই আরেক টা ব্যার্থতা!!
এভাবে চলতে চলতে বাড়ির সবাই বলতে লাগলো ও তো ছোট ওকে বিদেশে পাঠাও!!
তো যোগাযোগ কার মাধ্যমে??
মাধ্যম আমার আপন মামাতো ভাই!!
তো 2018 সালের প্রথম মাসে মামাতো ভাই বাড়ি আসার পর মা বাবা সবাই ওর সাথে কথা বলে ঠিক হইলো ৬ লাখ টাকা নগত দিয়া বিদেশে যেতে পারবে!!
অনেক বলাবলির পরে নগতে সাড়ে ৫ লাখে [বাকি ৫০ হাজার] রাজি হইলো!!
টাকা মেনেজ করলাম মায়ের বাবার বাড়ির জমি বিক্রয় করে তাতেও সংকুলান না হওয়াতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলাম তাতেও হইলো না,
পরে বাবার জমি বন্ধক রাখা হইলো,,
একটু বলে নেই এই মামাতো ভাই যে কি পরিমান হারামি তো এখন বুঝতাছি!!
আগে বুঝতে পারনি!
সব কিছু ঠিক ঠাক করে 2018 সালের জুলাই মাসের আট তারিখে আমার ফ্লাইট হইলো,,
তো সৌদিতে আসলাম ভালো কথা এক দালাল আল কাসিম বিমান বন্দর থেকে আমাকে নিয়া তার কাছে রাখলো,,
এই প্রবাসী হওয়াটাই আমার জীবনে সব থেকে বড় ভুল যা হয়তো বাকি জীবন এর মাসুল দিতে দিতে যাবে,
তো সেই দালাল ৪/৫ দিন তার কাছে রাখার পরে এক কেরালার কাছে আমাকে দিয়ে দিলো!!
কেরালার বিজনেস হচ্ছে nadec [যাহারা সৌদিআরব আছেন তাহারা চিনবেন] এর আল কাসিম সেন্টারের মানুষদের কে মাস চুক্তিতে খাওয়ানো,,
তো সেখানে আমাকে নিয়া প্রথমে ক্লিনারের কাজ দিলো,,
পরে অবশ্যই কাজ পরিবর্তন করে দিয়াছে!!
তো কাজে যোগ দেওয়া পরে মেডিকেল করার কথা বললে আজ না কাল করতে করতে তিন মাস হয়ে গেলো মেডিকেল করেও না কাগজ পত্রও ঠিক করে দেয়না,,
তো আমি একদিন রাগারাগি করার পর হঠাৎ করে এসে বলে তোমার পাসপোর্টে তোমার মালিক হুরুব[[মালিকের কোন দায় দায়িত্ব নেই এই মর্মে একটা কেচ দিয়া দিছে]]
পুলিশ ধরলে কোন কৈফিয়ত ছাড়াই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবে,,হয়তো কয়েকদিন জেলে রাখার পর,,
এখন কেমন লাগে!??
তো মামাতো ভাইকে বলি এটা এমন হইলো কেন আমিতো টাকা কম দেয়নি!?
ও তখন আর কিছু বলেনা!
আমি তখন যে দালাল আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়া আসছিলো তার সাথে যোগাযোগ করলে সে বলে যে, তোমার মালিক তোমার ভিসার পরিবর্তে কোন টাকা পায়নি এই কারনে তোমাকে হুরুব মারছে!!
তো আমি বললাম আমি এখন কি করতে পারি?
ও কোন কথা বলেনা!
শেষে বলে যতদিন পারো থাকো তারে দেশে চলে যাও!
তো এত টাকা ঋণ করে আসার পরে যেনো মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো!!
যাইহোক সব কিছু সহ্য করতে হইলো কেননা এখন সব কিছুই শেষ!!
আর বাহিরে কোথাও যেতে পারিনা শুধু কাজ আর রুম
এভাবে থাকতে থাকতে একেবার বোরিং হয়ে গেছি!
এরই মধ্যে আমাদের পাসের এলাকার ছেলে Md Asaduzzamanহঠাৎ একদিন **নিজের বলার গল্প গ্রুপ**এর লিংক দিয়া বলে এড হয়ে যাও,,
তো আমি তাকে বললাম এটা কিসের কি গ্রুপ,,
ও বলে এড হয়ে যাও তারপর বুঝবে,,
তো আমি এড হয়ে গেলাম,,সপ্তম ব্যাচে এড হয়ে গেলাম,,
এড হবার পর থেকে আমার মনোবল আস্থে আস্থে বাড়তে লাগলো!!
একটা মানসিক ভাবে ভেংগে পড়া ছেলেকে মানসিক ভাবে শক্ত ও দৃড় হতে থাকে!!
স্যারের প্রতিটা কথা এবং সেষন গুলা যেনো রিদয়ে এসে ধাক্কা দেয়!!
আর শুধু আফসোছ করতে থাকি কেন বাংলা দেশে থাকর সময়ে এই গ্রুপটা চোখে পড়েনি!
যদি প্রবাসী হবার আগেই এই গ্রুপে এড হতে পারতাম তবে আমার এই প্রবাস জীবন গ্রহন করতে হতো না!!
তো এরই মাঝে দিন যেতে যেতে Md Abdullah Al Mamun ভাইয়ের সাথে পরিচয় হই তিনি আমাকে অনেক কিছু বুঝাতে থাকেন!!
এক পর্যায়ে Alamgir Hossain Fakir ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়ে কথা বলা শুরু করতে থাকি!!
তো সবাই আমাকে অনেক ভাবে বুজাতো!!
এরই মাঝে স্বপ্ন বাজ আল মানুন ভাই আমাকে তাদের একটা ব্যাক্তিগত গ্রুপে এড করলো!!
সেখানে হাঁস ও মুরগির বিষয়ে অনেক আলোআনা হয়!
সেখানে এড হতে পেরেছি শুধুমাত্র এই নিজের বলার মত একটা গ্রুপের কারনে!!
সেখানে এড হয়ে আরও কিছু স্বপ্নবাজদের সাথে নিয়মিত কথা হয়!! এর ভিতরে Faruk Hossain ভাইও আছেন!!
তো Dewan Jabed ভাইয়ের কথা না বললে নয়!!
তিনি প্রতিদিন আমাকে খোজ খবর নেন!!
আর বর্তমানে কত ভালো মানুষের সাথে নিয়মিত কোজ খবর আলাপ চারতা চলছে তার কোন হিসাব নেই!
এবাবেই আমি নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি!!
স্বপ্ন যখন দেখেছি সে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ!!
তো এখন শুধু দিন গুনতেছি কবে করোনা নামক মহামারী শেষ হবে এবং দেশে ফিরতে পারবো আউট পাশ নিয়া!!
দেশে গিয়া আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে!!
এভাবে চুরি করে থাকতে প্রবাস জীবন আর ভালো লাগছে না!!!
এভাবেই এখন দিন কাটছে!!
আর গ্রুপের নিয়মিত আপডেট দেখছি আর নিজেকে আরো গর্বিত অনুভব করছি এবং দিন দিন নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখছি!!
যদি এই গ্রুপে এড না হতাম তবে হয়তো আমি কবেই হারিয়ে যেতাম!
পরিশেষে আমাদের সবার অতিপ্রিয় শিক্ষক **ইকবাল বাহার জাহিদ**স্যারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা এবং শশ্রদ্ধা সালাম,,
যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের এমন একটা সুন্দর প্লাটফর্ম উপহার দিয়েছেন!!
এবং লাখো ভালো মানুষের সাথে ভালবাসার একটা বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়েছেন!!
যেটা আজীবন থেকে যাবে!!
স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 199
Date:- 19/04/2020
টিএম রফিকুল ইসলাম বাবু
জেলা-সাতক্ষীরা,
ব্যাচ নং-সপ্তম,
রেজি নং-5108,
বর্তমান-সৌদিআরব প্রবাসী,
আল কাসিম বুরাইদাহ,,