আমাদের একান্নবর্তী সংসারে সুখ কি সেটা আমার মা বলতে ও পারবে না
আমার জন্ম হয়েছিলো নানার বাড়ি। কারন মেয়ের প্রথম সন্তান বাপের বাড়ি হলে মেয়ের জন্য সুবিধা হয় । মা ও বোনেরা সবাই সেবা যত্ন ইচ্ছে মত করতে পারেন। যদি ও শশুর বাড়িতে সেই সেবাটা পায় না।
বিষয়টা অনেক কষ্টের তার পর বলছি আমার জন্ম হওয়ার দিনই আমার নানার মৃত্যু দিন।
নানাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার। নানার আদর কেমন সেটা আমি বুঝিনি,,, অনেক দূর্ভাগ্য আমার। নানা নাকি অনেক সুন্দর ছিলেন। এক মায়ের এক ছেলে ছিলেন, নানার কোন ভাই বোন নেই। নানা একজন কারী সাহেব ছিলেন। তবে নানাকে সবায় এক নামে এখনো চিনে মানুষ,
আমার নানার নাম ছিলো কারী আব্দুল মজিদ সাহেব, ভালো একজন মাওলানা ছিলেন। সবায় আমার নানাকে এখনো ভালোবাসেন। নানিকে দেখেছি, নানির মৃত্যুর কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। অনেক আদর করতেন। তবে অনেক পর্দা মেইনটেইন করে চলতেন।
আগের দিনে নানার বাড়িতে যেতে কোন রাস্তা ছিলো না। পায়ে হেটে যেতেন। যাতায়াতের এক মাএ ব্যবস্থা ছিলো নৌকা, আর শুকনা মৌসমে পায়ে হেটে যাওয়া হতো। নৌকা দিয়ে নানির বাড়িতে যেতে অনেক ভালো লাগতো। সেই সময়টা এখন অনেক মিস করি।
আম কাঠালের সিজন আসলে নানী আমাকে নিয়ে নিজের গাছের আম নিয়ে আন্টির বাসায় বেড়াতে যেতেন। তখন দেখতাম অনেক দুরে যদি কোন এক পুরুষ লোক আসতো দেখতেন। ছাতিটা মেলে ধরে রাস্তার নামায় গিয়ে বসে থাকতেন। যতক্ষণ ঐ ব্যক্তি নানিকে অভারটেক না করতেন। নানি ততক্ষণ বসে থাকতেন।
কারন আমার নানি ছিলেন একজন কারী সাহেবের বউ । শিক্ষিত ছিলেন মাঝে মাঝে আমাকে লেখা পড়ার জন্য শাসন ও করতেন।
নানির শাসন এখন অনেক মিস করি। নানাকে তো দেখিনি আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন
আমার কোন মামা নেই, আমার মা + আন্টিরা ৫ জন ছিলেন।
আমার বড় আন্টি জমজ বাচ্চা ডেলিভারি করার পর পরই মৃত্যু বরন করেন । তখন সিজার করার কোন পদ্ধতি মানুষ জানতোই না। সেই আন্টির ৩ টা ছেলে আছে সবায় অনেক করুন অবস্থা আছেন । ছোট বেলা মা না থাকলে যেমনটা হয় আর কি ----
আমার মেজ আন্টি কোড়পাই এক বড় ধরনের রোড এক্সিডেন্ট এ মৃত্যু বরন করেন ,সেখানে আমার দুইজন খালাতো বোন সহ ৩ জন মৃত্যু বরন করেন, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, আমিন,,,,,৷ সেই এক্সিডেন্টে আমার ছোট একটা খালাতো ভাই ও গাড়ি চাপা খেয়ে মাথায় বড় ধরনের আঘাত পায়। এখন পাগলের মত জীবন যাপন করছে।
বাকী ছিলো আমার আম্মু সহ তিন জন। সেজ আন্টি মানসিক ভারসম্য হাড়িয়ে কয়েক বছর অসুস্থ্য অবস্থায় ছিলেন পরে মারা যান। সেই আন্টির কোন বাচ্চা ছিলো না।
বাকী ছিলো আমার আম্মু সহ আর একজন আন্টি । সেই আন্টিটা আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন, আমার জন্মের পর আমার গায়ে প্রথম এই আন্টি নতুন পোশাক পড়িয়ে ছিলেন। আমাকে এক নজর দেখার জন্য পাগল হয়ে থাকতেন। আমার জন্য অনেক মায়া ছিলো। সারাক্ষণ মুখের দিকে এতিমের মত তাকাইয়া থাকতো। তখন অনেক মায়া হতো। এই আন্টির ইচ্ছায় ওনার বাড়ির পাশে আমি বিয়ে করিছি । আমার আঙ্কেলর আত্মীয়ার মেয়ে। তাদের ইচ্ছা ছিলো শশুর বাড়িতে গেলে তো আন্টির বাসায় যাওয়া হবে। ছোট ছোট ভাই বোনদের সাথে দেখা হবে আসা যাওয়া থাকবে। সেই জন্য তাদের আত্মীয়র মেয়ে আমাকে বিয়ে করিয়েছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় গত বছর ২০১৯ সালের এই রমাজান মাসে সেহেরীর সময় আন্টি মৃত্যু হয় ।
সব শেষ, ৫ বোনের মধ্যে এখন বাকী আছেন আমার আম্মু। আমার নানার বংশের প্রদীপ মিট মিট করে জ্বলছে কখন নিভে যায়, সেই টেনশনে রাত দিন অনেক পেরেশানে থাকি। আমি আমার মাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আমার জন্য আমার মা জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। সব কিছু সহ্য করেছেন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
আমাদের একান্নবর্তী সংসারে সুখ কি সেটা আমার মা বলতে ও পারবে না। ঘরের সব নির্যাতন চোঁখ বন্ধ করে সহ্য করেছেন শুধু মাএ এই আসায়, একদিন আমার ছেলে বড় হবে সবার মুখ উজ্জ্বল করবে আমার আর কষ্ট থাকবে না। তখন সব কষ্ট মুছে যাবে। মায়ে আশা আমি বিফলে যেতে দেইনি
ইনশাআল্লাহ। আমার মা আমার জন্য মন থেকে অনেক দোয়া করেছন। সেই জন্য হয়তো এতো দূর আসতে পেরেছি আর না হয় সম্ভব হতো না।
আল্লাহ আমার "মা" কে সব সময় সুস্থ্য রাখুন, ভালো রাখুন, সুখ ও শান্তিতে রাখুন, আমার হায়াত টুকু আমার "মা" কে দিন,
বন্ধরা মা যেমনই হোক,, মা,, তো মা ই
ময়ের মতো আপন আর কেউ হয় না,,,
আপনার কখনো মাকে কষ্ট দিবেন না, মায়ের প্রতি সম্মানের সহিত কথা বলবেন। মায়ের যত্ন নিবেন। "মা" হচ্ছে এই পৃথিবীর জন্য জান্নাত। যার মা নেই সে বুঝে মা হাড়ানো কতটা কষ্টের কতটা বেদনার ।।।।।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনারা সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ্য ও নিরাপদে থাকবেন, সেই কামনা করছি।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 206
Date:- 26/04/2020
আমি মাহবুব হাছান
"নিজের বলার মত একটা গল্প" গ্রুপের কোর ভলান্টিয়ার
রেমিট্যান্স যুদ্ধা সৌদি আরব প্রবাসী
জেলা - কুমিল্লা
ব্লাড গ্রুপ - ০+
ব্যাচ নাম্বার - (২য়)
রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার - ২৪৪০