প্রায় ১০বছর পর নিজ বাড়িতে বাবা মা ভাই সবাইকে নিয়েসাহরী ও ইফতার করছি
আমি আমার স্ত্রী এক সন্তান সহ তিন জনের
পরিবার নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ্ ভালোই যাচ্ছে আমার দিনকাল,
আমার ছেলের বয়স এখন তিন বছর ছুঁই ছুঁই,
শুকরিয়া
আল্লাহ আমায় প্রথিবীর সেরা সুখ সন্তানের বাবা হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন,
মাসা-আল্লাহ
★এই তিন বছর বয়সে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা
★সারাদিন বাবা বাবা বলে বাবাকে সারাক্ষণ
বাবার জন্য অস্থির করে রাখা,
★বাবার সাথে বাবা পাগল ছেলের মান অভিমানের দুষ্টু খেলা,
★বাবার হাতের উপর রাতে ঘুমাতে হবে মায়ের সাথে আড়ি দেওয়া,
★বাবার সাথে বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার বায়না ধরা,
★নিজের ছোট্র বাইকে বাবাকে নিয়ে একসাথে উঠতে হবে জিদ করা,
★অভিবাবকের ন্যায় নাম ধরে ডেকে আদেশ করা,
এমন অসংখ্য দুরন্তপনা এবং লক্ষ্মী ছেলে আমার সুখের উৎস নাম ফারাবি
জি আমি আমার ছেলে ফারাবির কথাই বলছি এই রমাদান সহ তিন রমাদান উনি পেয়েছেন
প্রথম রোজায় উনার সাথে ইফতার নেওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে
তখন উনার বয়স ছিলো একবছরেরও কম
তেমন কথা বলতে পারতো না, নতুন নতুন হাঠতে শিখছে তাই ইফতারের সময় শান্ত ছিলো,
যাই হোক ২য় রোজার আগে উনি বেশ দুষ্টু এবং পণ্ডিত হয়েছেন ভেবে ভালোই লাগতো
মনে মনে এবার রোজায় ইফতার ও সাহরী সময় কি আনন্দ হবে ভাবতাম,
যেমন
*ইফতারের সময় মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে,
*হাজারটা প্রশ্ন করবে,
*মাথায় টুপি দিয়ে পাশে বসবে,
*টিভিতে মোনাজাত দেখে নিজেও মোনাজাত ধরবে,
*সরবত তৈরির সময় চিনি খাওয়ার বায়না ধরবে,
*ইফতারের পর মাগরিবের নামাজে বাবার আগে
সেজদা দিবে,
এমন দুরন্তপনায় ঘরটা মাতিয়ে রাখবে কত আশা
কিন্তু না তা আর কিছুই হলনা আমার ঘরে
বিশেষ প্রয়োজনে রোজার কয়েকদিন আগেই
চলে গেলো নানাবাড়ি,
আমার সব আশা আশাই রইলো
আমি ভবঘুরে আজ অফিসে ষ্টাফদের সাথে কাল ঘরে বসে পরেরদিন মসজিদে কত ভাবে
বিষন্ন মন নিয়ে একটা মাস পার করেছি আল্লাহ জানে,
যদিও ফোনে ইফতারের আগে পরে কথা হত কি করছে কি খাচ্ছে
কি বলছে সব জানার চেস্টা চলতো,
অতপর মনে মনে শপথ করে নিয়েছি আল্লাহ চাহে আগামী রোজায় যাই হোক একসাথে থাকবো
এবং এই আনন্দ কিছুতেই মিস করবো না,
চলছি এমন ভাবে যাতে রোজার আগে কোথাও যাওয়ার ডাক না আসে
হঠাৎ গত ১০-০২-২০২০ইং ফোন আসলো শশুড় বাড়ি থেকে
খালা শাশুড়ি খুব অসুস্থ তিনি আমার বাচ্চার মাকে দেখতে চায়
অসুস্থ মানুষের এই আবেদন আমার ঘরে পৌঁছানোর পরে একটা শংকা কাজ করতে শুরু হল,
আবার ভাবলাম এখনো রোজার অনেক সময় বাকি তাই গেলেও কিছুদিন থেকে রোজার অনেক আগেই চলে আসতে পারবে,
এদিকে ছেলেও নানাবাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির ছিলো
বাচ্চার মার যাওয়ার ইচ্ছা অনেক
অবশেষে ১২-০২-২০২০ইং শশুড় মশাই এসে নিয়ে গেলেন,
আমিও মনে মনে ভেবেছি ১৫/২০দিন থেকে
আবার চলে আসবে,
এর মধ্যে নানা নানুর পরামর্শে খাৎনা দেওয়া হয়েছে (প্রস্রাবে কিছুটা সমস্যা থাকায় ডাক্তার দেখানো হয় এবং ডাক্তারের পরামর্শে খাৎনার দেওয়ার হয়)
এদিকে চিন থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে আতংক সৃষ্টি হতে শুরু করেছে
এবং রোগী সনাক্ত হচ্চে,
এই সময়ে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না
একবার ভাবি দেখি কি হয়, আবার ভাবি নিয়ে আসি
এবং জনসমাগম এরিয়ে চলার পরামর্শ সরকারের
তাই ভাবলাম পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হোক তারপর নিয়ে আসবো,
রোজার এখনো একমাস বাকি ইনশাআল্লাহ
সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে,
আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু দিন সেচ্ছায় হোম কোয়ারান্টাইনে থাকবো,
গত ২১-০৩-২০২০ইং শনিবার দুপুরের দিকে কুমিল্লা থেকে ফোন এসেছে আমার চাচা স্ট্রোক করে এ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে
হঠাৎ এমন খবরে বুজে উঠতে পারছিলামনা কি করবো (চাচার ছেলে নেই আমরা ভাতিজারা না গেলে কেমন হবে?)
এই ভেবে এককাপড়ে কোনো প্রস্তুতি ছাড়া কিভাবে ছুটে এলাম
সেই গাজীপুর মাওনা থেকে রাত ৮.৩০মিনিটের মধ্যে আল্লাহ'ই ভালো জানে,
উদ্দেশ্য শেষ বারের মত চাচাকে একবার দেখা এবং খাঠ কাদে নেওয়া,
আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত দান করুক-আমিন,
তারপর এই আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতেই শুনি ২৫-০৩-২০২০ইং থেকে ০৪-০৪-২০২০ইং পযন্ত
সাধারণ ছুটি ও গনপরিবহন বন্ধ,
বাবা মা ভাই দাদি সবাই বুঝাইলেন এখন ঝুঁকি নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই
গাড়ি চলাচল শুরু করলে গাজীপুর যাওয়া যাবে,
এদিকে ছেলে আমায় অনেক দিন না দেখে প্রতিদিন আমায় ফোন দিয়ে জানতে চাইতো আমি কোথায় তার কাছে যাইনা কেনো?
যেমন...
ছেলে -বাবা....তুমি কোথায়?
আমি-বাবা আমি তোমার দাদুরবাড়ি
ছেলে -আমিও যাবো দাদুরবাড়ি
আমি-আচ্ছা তুমি এখন নানাবাড়ি আছো
পরে আসবে কেমন..
ছেলে - না তুমি আস আমার কাছে
কোথায় থাক তুমি?
এই বলে কান্নাকাটি,
এভাবে দিন যাচ্ছে আর করোনাভাইরাস করুনা না করে ছুটির মেয়াদ বাড়াচ্ছে,
দেখতে দেখতে রোজা চলে আসছে
মনটা কেমন অস্থির হয়ে উঠছে
কিভাবে আমার ছেলেকে ছাড়া এবারো রোজা অতিবাহিত করবো?
যদিও গত প্রায় ১০বছর পর নিজ বাড়িতে বাবা মা ভাই সবাইকে নিয়ে সাহরী ও ইফতার করছি
তবুও আমার সুখের উৎস কলিজাকে অনেক বেশি মিস করছি,
গত প্রায় আড়াই মাস ছেলে আমার দেখা না পেয়ে এখন সে আমার সাথে অভিমানী কথা বলে
এখন ফোন দিয়ে কেমন আছো জানতে চাইলে
>বলে আমি ভালো নেই
জানতে চাই কি হয়েছে তোমার?
>বলে আমি তোমায় ভুলে গেছি
এই কথা শুনে বুকটা কেঁপে উঠে আমার
আমি যদি বলি বাবায় আসবো?
>সে বলে আস
তুমি নানুরবাড়ি আস এলে তোমার সাথে চলে যাবো,
আজ প্রথম রোজায় ইফতারের আগে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছি বাবা তুমি রোজা রেখেছো?
সে জানালো প্রথমে দুইটা রেখেছে পরে যদি আবার জানিয়েছে একটা রেখেছে,
আজ যখন ইফতার সামনে নিয়ে বসেছিলাম
তখন জেনো বারবার আমার কলিজাটা চোখের সামনে ভেসে উঠেছে
অনেক বেশি মনে পড়েছে,
আজ কত খুশির দিন অথচ এই খুশি অখুশিতে রুপ নিয়েছে,
তখন মনে পড়েছে আমাদেরও তো এমন আদর যত্ন করে বড় করেছে বাবা মা
বাবা হয়ে আজ বুঝছি বাবা মা আসলে কি
ভালোবাসি তোমায় কলিজা(ফারাবি)
আমি ভুলিনি তোমায়।
আল্লাহ তোমায় বাঁচিয়ে রাখুক
দেখা হবে
আল্লাহ জেনো ঈদের আগে সবকিছু ঠিক করে দেন,
ভাবলেই কষ্ট হয়
এই করোনাভাইরাস কত ভাবে আমাদের পরীক্ষায় ফেলেছে
কল্পনার কত সুন্দর মুহূর্ত গুলো বাস্তবায়ন করতে বাধা দিচ্ছে,
আমায় রেখেছে ত্রিমুখী সংকটে
আমি কুমিল্লা
বউ বাচ্চা বরিশাল
ব্যবসা+ বাসা গাজীপুর।
এই রোজার মাস শেষে ঈদ আসে আনন্দ খুশি নিয়ে
অথচ আগামীতে কি আছে আমাদের ভাগ্যে আল্লাহ'ই ভালো জানে,
>>কত বাবা সন্তানের আবদার রাখতে পারবেনা বলে চোখের জ্বলে বুক ভাসাবে,
>>কত মা সন্তানের মুখ দেখতে পারবেনা বলে অশ্রুজলে আচল ভিজাবে,
>>কত পরিবার হাসি মুখে নিজের কষ্ট লুকাবে,
>>কত স্ত্রী স্বামীর কাছে গুছিয়ে মিথ্যে বলবে
তুমি আমাদের নিয়ে ভেবোনা
আমরা ভালো আছি
তুমি নিজের খেয়াল রেখো,
>>কত স্বামী পরিবার সন্তানের জন্য কিছু করতে না পারায় না খেয়ে নিজেকে শান্তি দিবে,
আসুন আমরা বেশি বেশি তওবা করি
এবং আল্লাহ দরবারে ক্ষমা চাই
মহান আল্লাহ আমাদের পবিত্র মাসের উচিলায়
এই মহামারি থেকে হেফাজত করুক-আমিন,
সবাই আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন
আল্লাহ জেনো তাকে সকল প্রকার বিপদ থেকে রক্ষা করে।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 206
Date:- 26/04/2020
মো: ইউসুফ হোসেন তন্ময়
কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার
৭তম ব্যাচ
রেজিস্ট্রেশন নং২৯৫৫
নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্ম
বসবাস :-গাজীপুর,
জন্মস্থান :-কুমিল্লা।