আসলে মানবিক কাজের যে এত মজার মজার অনুভূতি আছে।
আস্সালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।
মাহে রমজান
রমজান যখন আসে তখনই মনে পড়ে, সেই সোনালী দিনগুলোর কথা।।। চিন্তাই করতেই!! মনটা কেমন যেনো উতরে উঠে।
এইতো 2017 সালে আমার বাবা এসেছিলো ওমরা করতে, এর আগে তিনি হজ্ব করেছিলেন। ওইটাই ছিলো এই পর্যন্ত উনার শেষ সফর সৌদি আরবের। এর এক বছর আগে মাকে ও পরিবারের অন্যান্যদের রেখে দেশ থেকে এসেছি। সেই থেকে একটিবারের জন্যেও দেখতে পারিনি আর। পরিবার-পরিজনকে না দেখতে পারার যন্ত্রণা আমরা শুধু প্রবাসীরাই বলতে পারবো। (হয়তো পরিবার থেকে দূরে থাকা, অন্যরাও কিছুটা অনুভব করেন)। যা অন্যান্য ভাইরা সব সময় এই প্লাটফর্মে শেয়ার করে থাকেন।
কিন্তু দেখতে দেখতে তিনটা বছর কেটে গেলো, মনে হচ্ছে 30 বছর আমি পিছিয়ে আছি। গত বৎসর রোজার মাসে মসজিদে গেলাম নামাজ পড়তে, কিন্তু নামাজ রত অবস্থায় আমার চোখের পানি, ইমামের সুরার সাথে অনবরত পড়ছে নিজের অজান্তে কখন যে হু হু আওয়াজ বেরিয়ে যাচ্ছে মুখ থেকে বুঝতে পারিনি, আমার আওয়াজে আরো পাঁচ দশ জন কেঁদে উঠেছে, হয়তো তারা ভেবেছিল ইমাম ক্রন্দনরত অবস্থায়! এই অনুভূতি আমি আসলে বোঝাতে পারবো না। আমি কাঁদছিলাম আল্লাহর ভয় ও সাথে সেই দিনগুলোর কথা মনে করে (যা উচিত নয়)--- পরিবার পরিজন ছেড়ে দুইদিন পর দেশে যাওয়া লোকটি অপেক্ষমান, অদৃশ্য এক স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলা স্বপ্নবাজ, আজ একটা পেক্ষাপটে বন্ধী।
সেইবার বাবা বাংলাদেশে না থাকাতে, কাউকে নিজ হাতে ইফতারি বিতরণ করতে পারছিলেন না, মনটা খুবই খারাপ লাগছিলো উনার। প্রতিবারই উনি আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী এতিমদের রমজান মাসে স্পেশাল টেক কেয়ার করার চেষ্টা করতো, পারিবারিক সামর্থ্য অনুযায়ী। দূর থেকে যেনো ওনার তৃপ্তি আসছিলো না। ওদিকে ছোট ভাই বোন বাংলাদেশে বাসায়, চিন্তার যেনো কমতি নেই। কিছুক্ষণ পরপরই কল দিতো সব জায়গার পরিস্থিতি জানার জন্য। যেনো উনি বাস্তবেই সামনাসামনি করছেন সব সমাধান, এই রকম কিছু কাজ করছিল ওনার মাঝে। যাইহোক বাবার কথায় একদিন আমার গৃহিণী ইফতারি নিজ হাতে বানিয়ে দেয় --- বিরিয়ানি, পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের ফল, জুশ মসজিদের প্রায় 100 লোকের জন্য। কোম্পানির অনেকগুলো লোকজন ছিলো, আপনারা হয়তো জানেন রমজান মাসে সৌদি আরবে একটা পুরো মাস ব্যাপী মসজিদে মসজিদে ফ্রী ইফতারি আয়োজনের প্রচলন আছে এবং পাশাপাশি বাহিরেও অনেক জনকে ইফতারি দেয়ার ব্যবস্থা হতো। সেই সুবাদে অনেক লোকজন মসজিদে ইফতার করতো। ঐদিন যাওয়ার সময় কোম্পানির লোক সহ সকলে মিলে ইফতারি গুলো গাড়িতে উঠালো এবং মসজিদে দিয়ে দিলো (ওখানকার মসজিদের লোকজনের সাথে আগেই কথা বলা ছিলো)। সেদিন আমি ও আমার বাবাও ছিলাম, সকলকে ইফতার বিতরণ করছিলাম, খুব ভালো একটা অনুভূতি নিজের ভিতর তৈরি হলো। এ যে কি আনন্দ তা ওইদিনই সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারি। অতীতে অনেক দিয়েছি কিন্তু বুঝ হওয়ার পর নিজ হাতে এই প্রথম দিলাম বাবার ইচ্ছা ছিলো তাই।
যারা ঐদিন ইফতারি খেয়েছে তারা দোয়া দিয়েছিলো কিনা আমি দেখিনি, তবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি রুহের দোয়া চলে আসবে। বাসায় আসারপর বাবার বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে খুবই আনন্দিত ছিলো। ঐদিন আবার বাংলাদেশে কিছু এতিম ছেলেপেলেদের বাসায় এনে খাওয়া-দাওয়ার এক বিশাল আয়োজন ছিলো, এটার ব্যবস্থা করেছিলেন আমার মা। আলহামদুলিল্লাহ্ পূর্বের ন্যায় আমি ও আমার পরিবার গত দুটি বছরেও ধারাবাহিকতা রাখার চেষ্টা করেছি। এগুলো আসলে ছিলো বাবার মনিটরিংয়ে পুরনো পরম্পরা।
যখন আমার বয়স 10-12, একদিন বাড়িতে গেলাম তিন দিনের জন্য রমজান মাসে, মাগরিবের আগে আগে অনেক লোকের ভিড় সামনের ঘরে, আমি বুঝতে পারলাম না! যেহেতু গ্রামে থাকতে হতো না, হঠাৎ গিয়েছিলাম পরিবারের সাথে। আম্মুকে জিজ্ঞেস করি কি ব্যাপার? তিনি বললেন সকলকে ইফতারের দাওয়াত দিয়েছি, ইফতারের জন্য অপেক্ষা করছে। তুমি দেখো বড়রা কি করছে? তখন অনেক উপভোগ করেছিলাম, সবাই আমাকে অনেক আদর করেছিলো এবং হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো মাথায়। জানিনা হয়তো তাদের এই দোয়ায়, এই ভালবাসায় এখন পর্যন্ত সুস্থ ও ভালো আছি আল্লাহর রহমতে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক হাদিস রেফার করা যায় কিন্তু আমি আপনাদের সকলের মাঝে এগুলো দিয়ে লেখাগুলো অনেক বড় করতে চাচ্ছি না, আমরা মুসলিমরা সকলেই এই হাদিস সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান রাখি।
শুধু বলবো মনের তৃপ্তি আসল তৃপ্তি,
এটাই আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন,
রেখে যাওয়া কিছু স্মৃতি।
দাগ রেখে যাবো সকলের মনিকোঠায়।
এইসব শিক্ষা পেয়েছি পরিবারের কাছ থেকে, আমি অনেক গর্বিত আমার পরিবার নিয়ে। পরিবারের অবর্তমানে নিজেই, অনেকের অজান্তে অনেক মানবিক কাজ করে যাচ্ছি, যা হয়তো সকলের মাঝে শেয়ার করছি না। হ্যাঁ তবে একরকম দশটি ঘটনার মাঝে, মাঝের একটা দুটো ঘটনা শেয়ার না করলেই নয়। এরই ধারাবাহিকতায় কিছু কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করেই ফেললাম।
গত দুই বছর যা দেখলাম মানবিক কাজ গুলোর সেরা উদাহরণ আমাদের এই প্রাণপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ও স্যারের শিক্ষা, দেখুন না গত বৎসর এই নিজের বলার মতো একটা গল্প প্ল্যাটফর্ম বিশেষ অবদান রেখে গেছেন রমজান মাসে 64 জেলায় গরীব এতিম প্রতিবেশীদের একবেলা ইফতারি করিয়ে, এবারেও কমতি হবে না ইনশাআল্লাহ।
এরই ধারাবাহিকতায় ঐদিন স্যার এই প্লাটফর্মে সকলকে ডাক দিয়েছেন, অসহায় প্রতিবেশী/এতিম/আত্মীয়দের জন্য ইফতার উপহার" দেয়ার জন্য।
স্যারের পোস্ট লিংকটি কেউ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে ক্লিক করে দেখতে পারেন।
এরই সুবাদে প্রত্যেকটি জেলায় শুরু হয়ে গেছে ইফতার সামগ্রী বিতরণ এর কাজ।
আসলে এই মহৎ চিন্তা ভাবনা, মহৎ লোকেদেরই সাজে, আমরাও এর বাইরে নয়। আমরা ঐসব ইতিহাসের সাক্ষী। আজ আমরা এ প্লাটফর্মে সকলেই একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
আমরাও চাই এই সকল মানবিক কাজ গুলোর সাথে নিজেকে যুক্ত রেখে মৃত্যুর পরও দাগ রেখে যেতে।
বাবা-মায়ের শিক্ষা ও বর্তমানে প্রতিনিয়ত স্যার থেকে যা শিখছি, সেই শিক্ষাগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারছিনা। খুঁজছিলাম কিভাবে, কি করা যায়? মনে করেছিলাম এবার হয়তো করনায় আমরা কিছুই করতে পারবোনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এবারতো আর তা সম্ভব নয় - এইটা আসলে আমাকে অনেক পীড়া দিচ্ছিলো। কিন্তু স্যারের ডাকটাই অন্তরে বড় উদ্দীপনা ও আশার জায়গা তৈরি করে দিলো। বরাবরই আমি কারোর জন্য কিছু করতে পারলে নিজে গর্বিত ও আনন্দিত হই। আমার বাবা আজ বিছানায় বন্ধী এবং করনার কারণে পরিবারের কেউই অসহায় আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের কাছে যেতে পারবে না। চিন্তা করে রেখেছি - ওনাদের যদি কিছু দিতেই হয় নিজের বলার মতো একটা প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে দিবো, সেটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন ও মানবিক কাজের সফলতা। এই রমজান মাসটিকে ঘিরে এই অনেক সমস্যায় থাকা আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী হয়তো অপেক্ষমান।
আমি জানি আমাদের নিজের বলার মতো একটা গল্প প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা প্রিয় মেন্টর প্রিয় শিক্ষক জনাব ইকবাল বাহার স্যারের ডাকে সকল গর্বিত অতন্দ্র প্রহরীরা অপেক্ষা করছে ভলেন্টিয়ারিং এর জন্য। এটা আমাদের জন্য বিশাল পাওয়া ও গর্বের ব্যাপার। গতবার কিছু টাকা পরিবারের মাধ্যমে দান করেছিলাম, গরীব আত্মীয়-স্বজনদের। পাশাপাশি যাকাত সবাইকে না দিয়ে, একজনকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। নিজের সকল পারিপার্শ্বিকতা মিলিয়ে। তবে সব সময় একরকম হয়ে উঠে না। কিন্তু এইবার মনে মনে প্ল্যানিং করেছি গত বছর যাদেরকে পরিবারের মাধ্যমে দিয়েছিলাম, তাদেরকে এইবার হয়তো সাহায্য সহযোগিতা করতে পারবোনা। কারণ একটাই করণা! কিন্তু স্যারের পোস্ট এর কারণে মনটা পুরোটাই হালকা অনুভব হচ্ছে।
যখন দিনে আনে দিনে খায় প্রোগ্রাম ডাক দিয়েছিলো, এ প্ল্যাটফর্মের স্যারের অনুপ্রেরণায়, পারিবারিকভাবে এবং নিজের স্বচ্ছলতা থেকে আলহামদুলিল্লাহ মানবিক কাজে, আর্থিকভাবে অংশগ্রহণ করে নিজেকে গর্বিত মনে করেছি।
পৃথিবীর বড় রহস্যময় সময় এখন, কোন দিকে টানে এখনো আমরা কেউ বলতে পারছিনা, তাই মৃত্যুর আগে নিজের নাম টুকু রেখে যেতে চাই সকলের মাঝে। সকলের সাথে হাত মিলিয়ে, নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব যারা অত্যন্ত সমস্যায় জর্জরিত তাদের সকলকে অন্তত একবেলা ইফতারি করানোর জন্য সকলেই স্যারের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষায়।
নিজের বলার মতো একটা গল্প প্লাটফর্মে নিজেকে আরো একবার প্রমান করবো আল্লাহর রহমতে আমরা মানবিক কাজেও সেরা। আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে, ঠিক ততটুকু না দিলেও, অল্প করে হলেও এই কাজগুলো থেকে পিছপা হবোনা ইনশাআল্লাহ। এইটা আমার কাছে অনেক বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য মনে হয়।
আমার বাবা বলেছিলো কারো থেকে কিছু খেলেই বড় হয়ে যাওয়া যায় না, তবে কাউকে কিছু দিলেই, নিজের মন থেকে বড়ত্ব না-করলেও, আলাদা একটা মৃদু বাতাস অন্তরে বয়।
জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত দুঃখিত মন দূরে যেতে চাইলেও, বিপদে হাত বাড়ানো থেকে দূরে থাকা যায়না। এটাই মানবিক কাজের ব্যক্তিত্বের প্রমাণ।
লিখতে লিখতে কোথায় যেনো হারিয়ে যাচ্ছি। আসলে মানবিক কাজের যে এত মজার মজার অনুভূতি আছে। তা যতক্ষণ লিখি ততক্ষণ চলতে থাকবে। আজ আমরা হয়তো করোনাই বন্ধী, তারপরও ভাবছি না। কারণ আমার কাছে বন্ধী ভাবটাই যেনো আসছে না, এই বিশাল প্লাটফর্মে যুক্ত থেকে।
আমার লেখার শুরুতে যদি কারো মন ব্যথিত হয়, সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।
মানবিক কাজের জন্য সবচাইতে বড় উদাহরণ প্রাণপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম নিজের বলার মতো একটা গল্প।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 208-28/04/2020)
ধন্যবাদ
মোঃ ইফতেখার আলম মজুমদার
কান্ট্রি এম্বাসেডর
সৌদি আরবিয়া
রেজিস্ট্রেশন নাম্বার 1378
চট্টগ্রাম ব্যবসা
রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ
জেলা ফেনী
মোবাইল নাম্বার: +966570373567