3হাজার শ্রমিক একটা ফ্লোরে অনেক মেশিন
রিনা দিদি ফয়সালা করে দিলেন থাকা খাওয়া মাসে 900টাকা নাম তার হুমায়ন, তার সাথে চলে গেলাম ,হুমায়ন ভাই বললেন তোমার সাথে তো কিছু নাই লংগি গামছা এগুলো কিনে নেও বলে একটা মার্কেটের সামনে নিয়ে গেলেন আমি 25টাকা দিয়ে একটা গামছা কিনলাম, লংগি কিনার কথা বলতে বল্লাম পরে কিনবো, হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম তার বাসায়,গিয়ে দেখি সেখানে আরো দুই জন থাকে অনেক টা মেছের মতো, গিয়ে কথা না বাড়িয়ে ক্লান্ত শরীরে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলাম ,ভোর 5টায় ডাকাডাকি শুরু হলো ,এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস আমার কখনো ছিল না তারপর অসুস্থ শরীর।
আসলে আমার নিয়ম জানা ছিল না যারা চাকরি করে খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে রান্না বান্না করে নাস্তা খেয়ে দুপুরের খাবার সাথে করে নিয়ে 8টার মধ্যে ডিউটিতে পৌঁছাতে হয় 3দিন যদি 8টার এক মিনিট লেট হয় একদিন অন উপস্থিত লেখা হয় আবার পুরো মাস ঠিক টাইম মতো উপস্থিত হতে পারলে 200টাকা পুরুস্কার দেয়া হয় ।
হুমায়ন ভাইয়ের সথে চলে গেলাম ডিউটি তে ,গিয়েই দেখা হয়ে গেল রিনা দিদির সাথে কাপালে হাত দিয়ে বল্লেন জ্বর কমে নাই সুপারভাইজার পারভেজ কে ডেকে বললেন ডাক্তার আসলে আমাকে নিয়ে যেনো দেখানো হয়, তাদের কথায় মনে হলো গার্মেনটসের নির্ধারিত ডাক্তার আছে,
কোনও সময় চাকরি করিনি এতো লোক এক সাথে কাজ করে দেখিনি কোনও সময় সব অন্যরকম লাগছে
3হাজার শ্রমিক একটা ফ্লোরে অনেক মেশিন, কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নাই ,সবাই সবার কাজ প্রডাক্টশন নিয়ে ব্যাস্ত, আমাকে একটা মেয়ে অপারেটরের সামনে দেয়া হলো আর ঐ মেয়েটি ঐ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে যার মেশিনের সামনে বসে বিনে পয়সায় কাজ করার মতো অনেক মানুষ আছে ,মেয়েটির নাম শিল্পী ।
আর শিল্প নামের সুন্দরী মেয়েটির সামনে আমাকে দেয়ার উদ্দেশ্যে রিনা দিদির তিনি আমাকে পরীক্ষা করছেন।
আমি মাথা নিচু করে কাজ করে চলছি এদিকে অনেকেই একটু পর পর আমার মেশিনের সামনে ভিড় করছে কেমন ছেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আইছে চাকরি করতে ,তাদের কথা হলো চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ যায় চাকরি করতে আর সে নাকি এসেছে চট্টগ্রাম, এটা ওটা জিজ্ঞেস করে চলে যায় ।
এদিকে রিনা দিদি আমার জন্য সবার কাছ থেকে টাকা কালেকশন করছে এবং শিল্পীর কাছ থেকে একটু পর পর আমার খবর নিচ্ছে ,শিল্পী বলছে তাকে দিয়ে আমার হবে না ,বডি জমে যাচ্ছে, রিনা দিদি তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন একটু মেনেজ করে নেও ঠিক হয়ে যাবে।সন্ধ্যা হয়ে গেল 7টা বেজে গেছে, গার্মেনটস ছুটি রিনা দিদি আসলেন আমার কাছে, বল্লেন তোর জন্য টাকা কালেকশন করেছি 6500টাকা উঠছে এই নে হুমায়ন কে সাথে নিয়ে যা যা লাগে কিনবি আরো কিছু লাগলে আমাকে বলবি।
আমি রিনা দিদি কে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম ।
আমি বললাম দিদি আমি কোনও সাহায্যে নিতে চাই না ,আমার হাত আছে পা আছে, আমি কাজ করে চলতে চাই ছুটির সময় অনেক লোক জরো হয়ে গেছে ।
আমি: রিনা দিদি আপনি গতকাল থেকে আমার জন্য যা করেছেন একজন অচেনা অজানা মানুষের জন্য এটা ই অনেক কিছু যদি একান্তই সহযোগিতা করতে চান আমাকে 500টাক রিন দিয়ে সাহায্যে করতে পারেন আমি বেতন পেয়ে দিয়ে দিবো।
রিনা দিদি বল্লেন তর বেতন 600মেছ ভাড়া 900দিবি কোথা থেকে?
আমি বললাম আপনার মতো দিদি পেয়েছি আল্লাহ্ ভরসা ।
চলে গেলাম ঐ দিনের জন্য মেছে ।মেছে গিয়ে সকালে যা নাস্তা করে গিয়েছিলাম দুপুরে তা রাতে ও তা ই।
মানে মেছে সকালে যা রান্না করা হয় তিন বেলা তা ই খাওয়া হয় এবং খাবারের অবস্থা অত্যন্ত নিন্ম মানের যা আমি একেবারে ই অব্বস্ত না।
কিছু করার নাই এভাবে চলতে হবে, পরের দিন যথা সময়ে উপস্থিত হলাম গার্মেনটসের সবাই আমাকে চিনে রিনা দিদি বলে দিলেন সবাই কে এটা আমার ছোট ভাই
যেই মেশিন মন চায় বসবে যেটা তার ভাল লাগবে সেই কাজ করবে না মন চাইলে করবে না।
আর আমাকে বল্ল যেই মেশিন খালি দেখবি সেই মেশিনে রিজেক্ট কাপড় দিয়ে সেলাই করে মেশিন আয়েত্বে আনবি।আমি রিনা দিদির কথা মতো চলছি যেখানে 2/3বছরের পূরোনো হেল্পাররা মেশিনে বসতে সাহস পায় না সেখানে 4/5দিনে আমার সব মেশিন আয়েত্বে চলে এসেছে ।6তম দিনে একজন ওভার লক মেশিনের অপারেটর ডিউটিতে আসে নাই।রিনা দিদি আমার কাছে আসলেন আমাকে বললেন কিরে মেশিন চালাইতে পারবি ?আমি বললাম আপনি দোয়া করলে পারবো ,রিনা দিদি বল্লেন আয় মেশিন বসিয়ে দিয়ে বল্লেন এইরকম ভাবে করতে হয় ,আমি বসে আল্লাহ্ র নাম নিয়ে শুরু করলাম আর মেশিন থামাতে হয়নি ,পিছনের অপারেটর আমাকে বডি দিয়ে পারছে না পুরো গার্মেনটসে আলোচনা হচ্ছে আমাকে নিয়ে
তাদের সবার বক্তব্য আমি সিনিয়র অপারেটর এখানে অভিনয় করছি আমার কথা কেউ বিশ্বাস করছে না ঐ দিন থেকে আমি আর হেল্পার না সিনিয়র অপারেটর ।
ঐ সময় হেল্পারদের বেতন 600আর সিনিয়র অপারেটরদের বেতন 2500/3000টাকা আমি হেল্পার থেকে অপারেটর হয়ে যাওয়ার কারনে বিশেষ বিবেচনায় বেতন করা হলো1000টাকা উপস্থিত পুরুস্কার এবং ওভার টাইম সহ বেতন পেলাম 1700টাকা তারপর রিনা দিদি কে বল্লাম দেখছেন দিদি বলছিলাম না আল্লাহ্ ব্যাবস্থা করবে ।
সব অপারেটর রা আমাকে কানপড়া দিতে লাগলো আপনি সিনিয়র অপারেটরদের চেয়ে বেশি কাজ করেন এখন আপনার বেতন 1হাজার করছে একমাত্র রিনা দিদির কারনে আর দুই এক বছরে কারো বেতন বারানোর ক্ষমতা নাই আপনি অন্য জায়গায় জয়েন্ট করলে 2500/3000বেতন পাবেন ।
এই বিষয়ে একদিন রিনা দিদির সাথে আলাপ করলাম তিনি আমাকে বললেন দেখ আমি তোকে সহযোগিতা করেছি বলেই তুই আজ অপারেটর এইজন্য আমার অনেক উপর থেকে কথা শুনতে হয়েছে ।
তবে এটা ঠিক এখানে তোর বেতন আর সহজে বাড়বে না।আমি তোর কোন দিন খারাপ চাইবো না ,তুই অন্য যায়গাতে দেখতে পারছ, আমার দোয়া সবসময় থাকবে তোর প্রতি ।
টেস্ট করার জন্য অন্য জায়গায় ইন্টারভিউ দিলাম বেতন হলো 3হাজার ওভারটাইম অন্যান্য সুবিধা সহ 5হাজার পেতাম।বেতন পেয়ে দিদির জন্য মিষ্টি নিয়ে গিয়ে আর দিদিকে পাইনি আর দেখা হয়নি উপকারি দিদির সাথে ।
পরে অন্য গার্মেনটসে আমার কাজ চলছে মেছ ছেড়ে নিজে বাসা নিবো তখন ফ্যামিলি বাসা কাকে বলে আর ব্যাচেলর বাসা কাকে বলে জানতাম না।
বাসা খুঁজি বাড়ি ওয়ালা জিজ্ঞেস করে ফ্যামিলি না ব্যাচেলর, কিছু না বুঝে বল্লাম ব্যাচেলর, বাড়ি ওয়ালা ব্যাচেলর ভাড়া দেই না ,আরেক বাড়ি জিজ্ঞেস করতে বল্লাম ফ্যামিলি রুম দেখালো ভাড়া ফাইনাল করে 1তারিখে উঠলাম এখন বাড়ি ওয়ালা বলে আপনার ফ্যামিলি কোথায়, হায় হায় এখন বুঝতে পারলাম আসলে যার বউ আছে তারা হলো ফ্যামিলি এখন কি করি ,ভাবছি আংকেল কে কি বলি,বল্লাম আংকেল আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে কয়েক মাসের মধ্যে ই বউ নিয়ে আসবো ।বাড়ি ওয়ালা না তা হবে না এরকম আগে একজনের সাথে হয়েছিল হারামজাদা আমার মেয়ে কে নিয়ে পালিয়েছে, আমার আরো মেয়ে আছে ।
ফ্যামিলি ছাড়া এই বাড়িতে একদিন ও থাকতে পারবানা ।আবার পরলাম মহা বিপদে কি করি ,ঐ দিকে মেছ ছেড়ে চলে এসেছি ।
রাত্রটা গেটের বাহিরে মসার কামর খেয়ে নির্ঘুম কাটাতে হল।
পরের দিন ব্যাচেলর ব্যাচেলর বলে বাসা খুঁজে বাহির করে বেশি ভাড়ায় বাসা ঠিক করে বাসায় উঠি।
নতুন যেখানে ডিউটি করতাম সেখানে ও প্রায় 3হাজার শ্রমিক ছিল, মালিক ছিল মহিলা, মালিক থেকে শুরু করে প্রতিটি শ্রমিক আমাকে এক নামে চিনতো।আমার কাজের ফিনিশিং অনেক ভাল ছিল, স্যাম্পল ম্যান প্রতিটি স্যাম্পল আমাকে দিয়ে করাতো।
এদিকে আমার বাড়ি থেকে পুরো বাংলাদেশ খুজাখুজি শুরু করেছে পত্রিকায় হরানো বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ।
আমার মা যত কবিরাজ আছে লেংটা বাবা, জিন্ধা বাবা সব জায়গায় গিয়েছে।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 214
Date:- 04/05/2020
মোঃ জামান
সপ্তম ব্যাচ
নারায়ণগঞ্জ
সদস্য নং2224
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার