আমার বাবা একজন কৃষক বাবা একাই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন
জীবনের পথ চলা কতটা কঠিন তা সবাই বুঝতে পারে না, তারাই বুঝতে পারে যারা সেই জীবন এর সাথে যুদ্ধ করে সব সময় সফলতার পথ খুঁজে সেই সব যুদ্ধা গুলো বেশি থাকে মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। আমিও সেই এমন একটি যুদ্ধা।
পরিবারের সবচেয়ে ছোট আমি আমার পাঁচ বোন আর এক ভাই, আমার বাবা একজন কৃষক বাবা একাই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তখন আমরা দুই ভাই ছোট। তবে বাবার স্বপ্ন ছিল আমাদের অনেক লেখা পড়া করাবে।মা-বাবা কেউ তেমন লেখা - পড়া,করেনি তবে আমাদের লেখা পড়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন সবসময়। নিজের চেষ্টায় কোনো কোচিং নয় নিজে যতটুকু পারি ওভাবেই ক্লাস ৮ পর্যন্ত যায়। দুই ভায়ের পড়াশোনার খরচ বের করতে একটু হিমশিম খেতে হয় তবে হাল ছাড় হয়নি স্বপ্ন দেখতাম অনেক লেখা পড়া করে বড় হবো। জে এস সি পরীক্ষার সময় আমার জীবনে আরেকটি বড় বাধা চলে আসে,, গণিত পরীক্ষায় ফেল করে ফেলি, নিজের চেষ্টায় লেখা পড়া করতাম সবটা বুঝতে পারিনি।
তবে চলার পথে হোচট খেলে সেখানেই পড়ে থাকলোতো হবেনা। রাত দিন পরিশ্রম করতে লাগলাম মনের মাঝে আশা ছিল আমি পারবো।পরের বছর পাস করি। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় কোনো কোচিং করার মতো ব্যাবস্থা ছিলনা,, অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই। বাবার সাথে কাজে সাহায্য করে তারপর স্কুলে যায়।।এস এস সি পরীক্ষার আগে আমার চাচাতো ভাই একটু সময় দেয় তার সাহায্য নিয়েই আল্লার রহমতে ভালো রেজাল্ট করি ৪.১১ জিপিএ। দূরে কোনো কলেজে ভর্তি হওয়ার মত সুযোগ ছিলনা, তাই কাছেই একটা কলেজে ভর্তি হলাম ঐদিকে পড়াশোনার খরচ বাড়তে থাকলো অন্য দিকে পরিবারের টেনশন। বাজে খরচ থেকে দূরে থাকতাম,, মনকে সাত্বানা দিতাম অনেক কিছু দিয়ে এমন বয়সে অনেক শখ জাগতো মনে সব মাটিচাপা দিতাম একটি কথা বলে আগে সফল হই তার পর সব শখ পূরণ করতে পারবো। দিন রাত পরিশ্রম করে টেস্ট পরীক্ষায় ২য় স্থান অর্জন করি খুশি হয়ে অধ্যাপক আমাদের ১ম ২য় ৩য় স্থান অর্জনকারীদের জন্য ফরম পূরণ এর টাকা কিছু কমিয়ে দেয়। সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে আরও পরিশ্রম করতে লাগলাম ফাইনালে ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় আমার এই ফলাফল ছিল কলেজের মধ্যে ১ম।
স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দিকে পরিবার থেকে আর পড়াশোনার খরচ দোওয়া সম্ভব হচ্ছেনা,, ভর্তি কোচিং করবো পরিকল্পনা তখনি বাবার অসুখ বেশি পরিবারের সব দায়িত্ব দেওয়া হল আমার উপর তখনি বুঝতে পারি বাবা কতটা কষ্ট করে এ পর্যন্ত আমাদের নিয়ে এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন আর দেখে শেষ করতে পারলাম না। শুরু করলাম একটি টিউশনি যা দিয়ে পড়া লেখার খরচ কিছুটা চলতো। আমাদের জেলা ময়মনসিংহ এর আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এ অনার্স এর আবেদন করলে প্রথম মেধা তালিকায় স্থান হয়, ভর্তি হয় ক্লাস করতে পারিনা মেসে থাকার অনেক খরচ ১ম বর্ষ এর ফলাফল ভালো হয় তবুও কেননা যুদ্ধ করা এখনি ছেড়ে দেয়নি ১ম বিভাগ পেয়ছি এখন ২য় বর্ষ চলছে। হাল ছাড়তে আমি রাজি নই আর সেই আত্নবিশ্বাসী আরও বাড়িয়ে দিল স্যার এর এই প্লাটফর্ম অনুপ্রেরণা আরও বাড়িয়ে দিল, এখন বাবাকে অনেকটা সাহায্য করতে পারি সব কাজে।
আর আপনাদের কাছে দোয়া চাই যেন এভাবেই জীবন যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারি।স্বপ্ন আছে সফল একটা ব্যাবসায়ী হতে। পরিস্থিতি আমাকে যুদ্ধ করতে শিখিয়েছে।
সবাই যদি পরিশ্রম করি মনের মাঝে সাহস রাখি তাহলে সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
সবাইকে ধন্যবাদ।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 214
Date:- 04/05/2020
মিজারুল ইসলাম
কমিউনিটি ভলান্টিয়ার
৯ম ব্যাচ
রেজিষ্ট্রেশন :৯৬৪৬
ময়মনসিংহ জেলা