আমি সৌদি ইউটিউবে স্যারের ভিডিও দেখে যুক্ত হই ফাউন্ডশনে।










জন্ম পারিবারিক বৃত্তান্ত পরিবারে।আমি ইসমাইল নুর ১৯৮৮ জন্ম উপজেলা পিরোজপুর, থানা মঠবাড়িয়া গ্রাম সবুজ নগর দরিদ্র পরিবারে। আমরা চার ভাই বোন তিন ভাই এক বোন। আমার মা একজন আদর্শ মা ও গৃহিণী। আমার বাবা ছিলেন একজন গরিব কৃষক শ্রমিক। আমার শৈশব কেটেছে আমাদের বাড়িতে সবার মত আমারও শৈশব অনেক সুন্দর কেটেছে যখন বুঝতে শিখেছি প্রাইমারি স্কুলে সবুজ নগর পড়াশোনা করতে থাকি আর খেলাধুলা করে খুব ভালোই কাটলো শৈশব কাল। অনেক সুন্দর একটি পরিবার ছিল আমাদের সাজানো গোছানো সংসার।

এবার বলি আমার মায়ের কথা আমার মা একজন সৎ ও ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। কোনদিন কারোর ক্ষতি করতে দেখি নাই। তিনি সব সময় সত্য কথা বলেন এবং উচিত কথা বলতেন। আমার মাকে পাড়া-প্রতিবেশী খুব ভালোবাসতো এবং যাদের খাবার নেই তাদেরকে খাবার দিত অসহায় মানুষকে এবং কোরআন ও হাদিস পড়ে তালিম দিতেন। তারপর আমার মা অসুস্থ এবং আমার মা এক বোনকে জন্ম দেয় কিন্তু বোন দুনিয়াতে আসে মরা।
বোনকে দাফন দিলাম বাবা মাকে নিয়ে হসপিটালে গেল একদিন পরে মা বললেন ইসমাইল নূর ভাই আবু কালাম কোথায়? আমার বাবা বললেন তয় তারা বাড়িতে আছে ওদেরকে নিয়ে আসা হবে মা বললেন আমি নামাজ পড়বো, আমার নামাজ যাচ্ছে। বাবা বললেন তুমি তো অসুস্থ এখন নামাজ পড়তে পারবা না কিছুক্ষণ পর আমি নামাজ পড়বো আমার নামাজ যাচ্ছে বাবা আবারো বললেন অসুস্থ এ অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে না। মা নামাজ বলতে বলতে দুনিয়া থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন মা,
মাকে হারিয়ে বুঝতে পেরেছি যে সাংসারিক জীবন কত কষ্টের।

২০০২ মহরমের ১০ তারিখ তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি আমার ছোট ভাই পরে ক্লাস ২ তে। আমার মেজো খালা ছোট ভাইকে নিয়ে গেলেন তাদের বাড়িতে। ওখানে থাকবে লেখাপড়া করবে। এখন বাড়িতে আমার বাবারও মন ভালো না আমারও মন ভালো না। কিছুদিন এভাবে চললে কে পাক করবে একদিন পাক করি তিন দিন খায় কোনদিন সবজিতে হলুদ হয় বেশি নয়তো মরিচ বেশি হয়। আমি পাক করা জানতাম না।এভাবে আর কতদিন চলবে? তারপর আমার চাচা বলেন আমার খালা বাবাকে বললো একটা বিয়ে করো এভাবে সংসার চলবে না।বাবা একটু রাজি হলে এদিকে আমার খালা কিছুদিন পর বলল তোমার ভাই আমার এখানে থাকে খায় এবং লেখাপড়া করে তার টাকা দিতে হবে বাবা বললেন কোথায় টাকা পাব আমি ভাবলাম কি করা যায় এদিকে আমিও লেখাপড়া করি কিন্তু অনেক কষ্টে একটা পাঞ্জামি এবং একটা টুপিতে বছর চলে যেত।তারপরও পুরনো কিনতে হতো নতুন কেনার সামর্থ্য ছিল না এদিকে ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া টাকা দিতে হবে কিছুদিন পর বাবা বিয়ে করল কিছুদিন ভালোই গেল।তারপর শুরু হলো কষ্টের জীবন বাবা নতুন মায়ের বাবার বাড়ি বেড়াতে যেত দশ দিন বা ১২ দিন ঘরে আমি থাকতাম আগের মতই অবস্থা কি পাকাবো কি খাব না আমি মাদ্রাসায় যাব না পাক করব না পড়াশোনার কি হবে? এভাবে কাটতে থাকে আমার দিন তারপর একদিন আমার খালা ফোন দিয়ে বলল ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার পয়সা টাকা দিতে হবে আমি বললাম হ্যাঁ দেব বাবার কাছে জানালাম। বাবা বলল আমার কাছে তো নাই কিভাবে দেব এদিকে আমার মামার কাছ থেকে মামা টাকা চাচ্ছেন।এখন ভাবছি কি করা যায় আমি লেখাপড়া করলে আমার ভাইয়ের লেখাপড়া হয় না ভাই করলে আমার হয়না যেহেতু আমি বড় আমারই ছেড়ে যেতে হবে মায়ের আশা পূরণ হবে। মায়ের আশা ছিল দাখিল পর্যন্ত দুই ভাইকে লেখাপড়া করাবে।তাই আমি ছেড়ে দিলাম। ভাইকে লেখাপড়া করাবো দাখিল পাশ করাবো এই প্রতিজ্ঞা নিলাম।

ঋণের টাকা দিয়ে শুরু হলো কর্মজীবন। কি করবো ভাবছি হঠাৎ একটা মাথায় বুদ্ধি এলো আমাদের পুরানো একটা জাহি জাল ছিল অনেকে বলে ক্ষেপরা জাল। ওই জালটা কেটে লোহা বের করে বাজারে নিয়ে গেলাম ৩০০ টাকার মত বিক্রি করলাম। তারপরে চিন্তাভাবনা করলাম কবুতরের ব্যবসা করব। ছোট বাজার থেকে কিনে বড় বাজারে বিক্রি করব।তাই চলে গেলাম বাজারে কিছু কবুতর কিনে আনলাম বিক্রি করতে নিয়ে গেলাম কিছু লাভ হল কিছু দিন ভালোই কাটলো। তারপরে ভাবলাম যে বিক্রি করব না বাচ্চা উৎপাদন করব। হঠাৎ কিছু কবুতর অসুখে মারা গেল। আমার মন খারাপ হয়ে গেল কিছু ছিল কম দামে বিক্রি করেছি। কিছুদিন পর টাকা পয়সা শেষ ভাবছি কি করা যায় কিভাবে টাকা পয়সা ইনকাম করা যায়? এক বন্ধুর কাছে গেলাম তার কাছে সবকিছু খুলে বললাম সে বলল আমি তো রিস্কা চালায় তুই যদি চাও আমি একটা রিক্সা ভাড়া করে দেব গেরেজ থেকে। আমি বললাম পারবো কি চালাতে?
বন্ধু বলল আমি শিখিয়ে দেব। আমি বললাম ঠিক আছে বন্ধু বলল আচ্ছা কালকে আসিস বাজারে সেখানে গেরেজ থেকে এনে দেবো রিক্সা। পরের দিন চলে গেলাম বন্ধুর কাছে, বন্ধু মালিকে বলল একটা রিক্সা লাগবে। মালিক বলল কি করবে বন্ধু বলল আমার ভাই চালাবে। মালিক বলল পারবে তো ছোট মানুষ।বন্ধু বললো পারবে মালিক বলল সবকিছু তোমার ভাঙ্গলে খারাপ হলে দিতে হবে। বন্ধু বলে আচ্ছা ঠিক আছে মালিক বলল আমি ইসমাইল কে চিনি না আমি চিনি তোমাকে। বন্ধু কথায় নিয়ে আসলাম রিক্সা। বন্ধু বললে খালি চালা পরে এক এক জন নিয়ে চালাবি এখন দুজন নিয়ে চালাবি না।পরে চালু হলে পরে দুই জন নিয়ে চালাবি। আমিও তাই করলাম এক একজন করে যাত্রী নিতাম। কিছুদিন পরে দুইজন নিয়া চালালাম কিছু টাকা জমা হল ভাবলাম আমি ঢাকাতে যাব ঢাকা আমার মামা থাকে। মামার কাছে গিয়ে সবকিছু খুলে বললাম।মামা বলল আমি কি করবো? এখন আমার মন খারাপ হয়ে গেল।পরবর্তীতে একটা ঠিকানা নিয়ে প্রতিবেশি মামার কাছে গেলাম তার কাছে গিয়ে সব কিছু বললাম সে বলল আচ্ছা কি করা যায় দেখি।রাত্রে আমার মামা প্রতিবেশি মামাকে ফোন দিয়ে বলল আপনার ওখানে ইসমাইল নুর গেছে। সে বলল হ্যাঁ ও তো কাজ করতে আসছে। আমার মামা বলল ওকে কালকের পাঠায়ে দিয়েন ওর জন্য চাকরি ঠিক করেছি। পরের দিন সকালে প্রতিবেশী মামা বললেন তোমার মামা তোমাকে যেতে বলেছে। তোমার জন্য চাকরি ঠিক করেছে। আমি যাব চলে গেলাম মামার বাসায়। মামা বললেন চাকরি ঠিক করেছি আমার সাথে কালকের যাবে আমি বললাম ঠিক আছে। মামা চাকরি করতেন গার্মেন্সে আমাকে নিয়ে গেলেন সুপারভাইজার আমাকে দেখে বললেন তুমি তো ছোট কি করা যায় সুপারভাইজার কিছুক্ষণ ভাবলেন পরে বললেন তুমি তো এসিনের ভাগিনা।আচ্ছা কাজ কর দেখা যাক আমার মামার নাম ছিল এসিন। কিছুদিন কাজ করলাম বেতন পেলাম মামা বললেন কাজ শিখতে হবে আমি বললাম আচ্ছা। কিছুদিন পর কাজ শিখলাম কিছু বেতন বাড়ালো। আমি ভাবলাম অন্য অফিসে ইন্টারভিউ দেব। অন্য অফিসে ইন্টারভিউ দিলাম বেতন বলল ডবল। মামার অনুমতিতে অন্য অফিসে চলে গেলাম টঙ্গী স্টেশন রোড। সেখানে অফিসে চাকরি করি কিছুদিন পর বেতন পেলাম। ভাবলাম কিছু টাকা জমাতে হবে ইসলামী ব্যাংকে কিছু টাকা জমানো শুরু করলাম ভাবলাম বিদেশ যাব। এরপরে কিছু টাকা জমিয়ে আর কিছু টাকা ঋন নিয়ে চলে গেলাম দুবাই বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন এর কাজে কিছুদিন পরে বলল কোম্পানি ইরাক যাবে লোক নিবে না। খরচ দেবে বলল সেখানে লেবার কোট নাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নাই আল্লাহ আল্লাহ করি আর কাজ করি আলহামদুলিল্লাহ কিছুদিন পর ঋণ শেষ হলো আমার ছোট ভাই ও দাখিল পাস করল আমার মায়ের আশা পূরণ হল আমার টেনশন কমে গেল কিছু টাকা জমা হল কিছুদিন পরে কোম্পানি দেশে পাঠায় দিল মা বাবা বলল বিয়ে কর। বিয়ে করে ফেললাম একটা দোকান নিলাম ব্যবসা করব। কিছুদিন ভালোই গেল পরে পুজি শেষ হয়ে গেল হতাশা হয়ে গেলাম,
আমার একটাসন্তান হলো সবাই খুশি হলো।ভাবলাম সৌদি আবার যাবো।

তাই টাকা ঋণ করে জমি বন্ধক রেখে চলে এলাম সৌদি আরবে দালালের কথা ছয় নয় কিছুই মিলে না দালাল বলছে ফ্রি ভিসা। এ দেশে কোন ফ্রি ভিসা নাই।কি করবো মাথা ঠান্ডা করে কাজ করি আর ভাবি ঋণ শোধ করতে হবে রাত্রে ঘুম আসেনা।

একটু একটু ইউটিউব দেখি।এভাবে দেখতে দেখতে নিজের বলার মত গল্প স্যারের ইউটিউব ভিডিও গুলো দেখি।
একদিন না দেখলে মনে হয় কি যেন হারিয়ে ফেলেছি। এরপর একদিন স্যারের youtube চ্যানেল সাবসক্রাইব করি। অন্য কোন গান সিনেমা নাটক কিছুই দেখি না। অনেক কিছু শিখেছি আরো শিখতে চাই ভালো মানুষ হতে চাই।স্যারের দেয়া প্রতিটি সেশন মনযোগ দিয়ে পড়ি। পিরোজপুর জেলা ও সৌদিআরব টিমের প্রতিদিনের সেশন চর্চা মিটআপে যুক্ত থাকি। যুক্ত আছি ২০ তম ব্যাচে। স্যারের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা মন থেকে দোয়া করি।

বিশেষ করে আমাদের পিরোজপুর জেলার সুপার একটিভ ভলান্টিয়ার, জেলা এম্বাসেডর এবং মডারেটর , G M Shakil ভাইয়া, এবং বরিশাল বিভাগের মডারেটর আমাদের পিরোজপুর জেলার সবার প্রিয় ভাই A M Saiful Islam ভাইয়া,সবার জন্য আমার মন থেকে দোয়া এবং ভালোবাসা রইলো।


Date:- ০৯/০১/২০২৩ইং










