পার্টনারশিপ ব্যবসায় লস করে ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা।




.....
(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম)
......


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওবারাকাতহু।






আমি মোঃ শফিকুল ইসলাম,
নিজ জেলা গোপালগঞ্জ সদর, এখানেই আমার শৈশব এবং বেড়ে ওঠা, আমি একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, আমরা ছয় ভাই ,ছয় বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট, আমি সব ভাই বোনের খুব আদরের ছোট ভাই ছিলাম।
আমার বড় চার ভাই এবং চার বোনের বিয়ে আমি দেখিনি, আমি যখন একটু একটু বুঝি তখন থেকে দেখি আমার চার ভাই বিয়ে করে আলাদা বাড়ি করে থাকেন, আমি ও, আমার এক ভাই, মা বাবা ,দুই বোন ও দাদি কে নিয়ে ছিল আমাদের পরিবার, (আমার দাদা আমার জন্মের আগেই মারা গিয়েছেন ),
(ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের সংসারে খুব অভাব ছিল, আমার মাকে দেখেছি মানুষের বাড়িতে কাজ করতে, বিনিময় চাউল নিয়ে আসতেন, এবং রান্না করে আমাদের খাওয়াতেন, আমার বাবাকে আমি কোনদিন দেখিনি কোথাও কোন কাজ করতে, কোনদিন একবেলা আটার রুটি খেয়েছি কোনদিন খাইনি এভাবেই চলত আমাদের দিনরাত, আমার বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি ছিল আমাদের গ্রামেই, আমার মাঝে মধ্যে খিদা লাগলে বড় বোনের বাড়িতে যেতাম, বড় বোন জিজ্ঞেস করতো ভাত খাইছিস, আমি বলতাম না, তারপর আমাকে ভাত দিত আমি খেয়ে চলে আসতাম, আমি ছোটবেলায় খুব রাগি ছিলাম, আমি যা চাইতাম সেটা মায়ের কাছ থেকে আদায় করে নিতাম। আমার বাবা ছিলেন একজন সৎ লোক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, কোনদিন দেখিনি এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করতে, এবং গ্রামের সব মানুষ খুব ভালো জানতেন আমার বাবাকে, লোক মুখে শুনেছি আমার দাদার অনেক সম্পত্তি ছিল, এখনো লোকে বলে এটা তোমার দাদার জমি ছিল ,ওইটা তোমার দাদার বাড়ি ছিল? আমার জন্মের পর আমার দাদাকে আমি দেখিনি, আমাদের গ্রামের একটি বাড়িতে একটি পাকা করা কবর রয়েছে ,আমার বাবার মুখে শুনেছি ওটা আমার দাদার কবর, এবং ওই বাড়িটি ছিল আমার দাদার, ওই বাড়িটি আমার বাবা বিক্রি করে দিয়েছেন? এবং ওই গ্রামেই অন্য জায়গায় গিয়ে বাড়ি করেছে।



একদিন পাশের বাড়ির এক মহিলা আমাদের বাড়িতে এসে বলে আমার মাকে নিয়ে শহরে যাবে রোগী দেখার জন্য
, ওই মহিলাকে আমি নানি বলে ডাকতাম, তখন আমি বললাম আমিও যাব, কিন্তু আমার মা আর নানি বলল তোমাকে যেতে হবে না ,আমরা শুধু যাব আর আসবো, আমি বললাম না আমি যাব, তখন আমার মা আর নানি আমাকে না নিয়ে হাঁটা শুরু করেন শহরের দিকে, প্রায় আমাদের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি নদী আছে,
ওই নদীতে নৌকা পার হয়ে শহরে যেতে হয়, আমার মা আর নানী আমাকে না নিয়েই নৌকায় করে নদীর মাছ পথে চলে যান, তখন আমি নদীতে নেমে হেঁটে হেঁটে প্রায় আমার গলা পানি পর্যন্ত চলে যাই, এরপর আমার মা আমাকে দেখে নৌকাওলাকে বলেন নৌকা ঘুরিয়ে আবার এপারে চলে আসেন, পরে আর শহরে যান নেই মা আমাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন, এক কথায় আমি ছিলাম এমন।



























পার্টনারশিপে ব্যবসা করি। সর্বপ্রথম ঢাকায় যে ভাইয়ের কাছে এসেছিলাম ওই ভাইয়া একদিন ডাকলেন আমাকে, বললেন আস একসঙ্গে ব্যবসা করি পার্টনারে, আমি হ্যাঁ বলে দেই কোন কিছু না বুঝেই, কারন আমার ব্যবসা করার খুব ইচ্ছা ছিল , কোন লিখিত বা স্ট্যাম্প ছাড়াই হাতে টাকা দেয় ৩ লক্ষ, একটি মেশিন কিনা হয় পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে, এবং ওই বড় ভাইয়ার কারখানাতে মেশিন সেট করা হয়, এরপর আমাকে বলেন চাকরি ছেড়ে চলে আসতে, আমি ওনার কথায় চাকরি ছেড়ে দেই, এবং মেশিনের কাছে আসি, এরপর দেখি ওই ভাইয়া কাজের কোন হিসাব দেন না টাকা পয়সার কোন হিসাব দেন না এবং গরমিল শুরু করেছেন, তখন আমি বলি আমি আপনার সাথে বিজনেস করবো না হয় টাকা দেন না হলে মেশিন দেন, তিনি কোনটাই দিতে অস্বীকৃতি জানান, এরপর থানা পুলিশ এবং বিচার সালিশ করে কিছু টাকা উঠায়,, এরপর পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যাই, অনেকদিন শহরে থাকার সুবাদে কৃষি নির্ভর গ্রামে আমি কোন কাজ করা সম্ভব হইনি আবার নারায়ণগঞ্জে একটি নতুন চাকরির সন্ধান পাই এবং জয়েন্ট করি বেতন বর্তমান বাইশ হাজার প্লাস।
















আমাকে শহরে হাসপাতাল নিয়ে একটি রুমের মধ্যে আটকে রাখা হলো, আমি হলাম গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে সর্বপ্রথম কোভিড ১৯ রুগি
পলিথিনের ভিতর করে আমাকে খাবার দেওয়া হতো, এবং আমাকে ১৫ দিন আটকে রাখে, এর মধ্যে আরো চারবার টেস্ট করা হয়, তিনবার নেগেটিভ রেজাল্ট আশায় আমাকে ১৫ দিন পর মুক্তি দেয়।


অতীতের সকল ভুল গুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ও নিজের বলার মতো গল্প ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলে আবারও শুরু করে দেই স্বপ্নের উদ্যোক্তা জীবন ৷ অতীতে আমার সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে আমি বিজনেসের প্রতিটি পদে পদে ভুল করেছি ৷ এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই শিখেছি কিভাবে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হয় এবং ঘুরে দাঁড়াতে হয় ৷ তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই চাকরি না ছেড়ে , চাকরির পাশাপাশি কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায় ৷ স্যার সবসময় একটা কথা বলেন ৷ উদ্যোক্তা জীবনে রিস্ক নিতে হবে ৷ তবে সেই রিস্ক টা নিতে হবে ক্যালকুলেটিভ ভাবে ৷ তাই আমিও ক্যালকুলেটিভ ভাবেই রিস্ক টা নিয়েছি ৷ চাকরির পাশাপাশি উদ্যোগ শুরু করেছি ৷ ফাউন্ডেশন থেকে শিক্ষা নিয়ে চাকরির পাশাপাশি আমি এখন ব্যবসা করছি আলহামদুলিল্লাহ্ , উদ্যোক্তা জীবনের প্রথম অবস্থায় তেমন কোন সাড়া পায়নি ৷ তবে আমি হাল ছাড়িনি | ফাউন্ডেশন থেকে শিখেছি কিভাবে উদ্যোক্তা জীবনে লেগে থাকতে হয় ৷ একজনের কাছে গিয়ে যদি সেল না হতো তাহলে ১০ জনের কাছে যেতাম এবং দশজনের কাছে গিয়ে যদি সেল না হতো তাহলে পরের দিন আরো ২০জনের কাছে ৩০ জনের কাছে যেতাম তাতেও যদি পন্য বিক্রি না হতো তখন ভেঙ্গে পরতাম ৷ মনে মনে ভাবতাম আমাকে দিয়ে হবে না ৷ কিন্তু পরেক ক্ষনই আবার স্যারের সেশন পড়ে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ৫০ ,১০০জনের কাছে যেতাম এভাবেই প্রতিদিন নাম্বার বাড়ানোর মাধ্যমে তিল তিল করে আমি গড়ে তুলেছি , আমার বিজনেসের নেটওয়ার্ক এখন আর আমাকে বেশি কষ্ট করতে হয় না ৷ আমার কাস্টমাররা আমার কাছে এসে প্রোডাক্ট নিয়ে যায় ৷ সত্যি বলতে এই ফাউন্ডেশন না থাকলে আমি কখনোই উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার সাহস পেতাম না ৷ স্যারের সেশনের এই পজিটিভিটি চর্চার মাধ্যমে আমি আবার উদ্যোক্তা জীবনে ফিরে আসতে সাহস করতে পেয়েছি ৷ অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রিয় স্যারের প্রতি ৷ আমাদের সঠিক গাইডলাইন দিয়ে উদ্যোগে লেগে থাকার সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে উদ্যোক্তা জীবন সফল করার জন্য ৷ আমার একটি পেজ রয়েছে "JS fashion'' নামে। আমি মূলত কাজ করি গার্মেন্টস এক্সেসরিজ আইটেম নিয়ে, লেবেল, বাটন, হ্যান্ডটেক, ইত্যাদি এবং কেমিক্যালের খালি ড্রাম ও প্লাসটিকর দড়ি নিয়ে। অফলাই ও অনলাইন দুই ভাবেই ব্যবসা ভালো হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ্ । এর পাশাপাশি আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য নকশি কাঁথা ,থ্রি পিস, বেডশিট নিয়ে ও ব্যবসা করছি। সকলে আমার ও আমার উদ্যোগের জন্য দোয়া করবেন ।


নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে যে ভাবে যুক্ত হলাম।আমার অফিস সহকারী জহিরুল নামের এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের খোঁজ পাই। আমাকে রেজিস্ট্রেশন করতে সহযোগিতা করেছেন
১ ইনাইয়া ইসলাম বৃষ্টি আপু। ২ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
জেলা মেসেঞ্জারে যুক্ত করেছেন ।মোঃ সবুজ রাজ ভাই,
ভাইয়া ও আপু প্রতি রইল অনেক কৃতজ্ঞতা।এই ফাউন্ডেশনে এসে আমি শিখতে পেরেছি পার্টনারশিপের বিজনেস করার নিয়ম। এখানে এসে আমার কথা বলার জরতা কেটেছে এখন আমি দু চার পাঁচ জন মানুষের সামনে বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারি। পেয়েছি একটি ভালবাসার পরিবার। যে কোন প্রবলেমে ফাউন্ডেশন এর ভাই-বোনদের সাথে আলোচনা করা যায়। বিভিন্ন অফলাইন এবং অনলাইন মিটাপ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারছি।


নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সকল দায়িত্বশীল ও আজীবন গর্বিত সদস্য প্রিয় ভাই-বোনদের প্রতি। যাদের সহযোগিতায় আজকে আমি অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পেরেছি। সকলের প্রতি অনেক ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার গল্পটি মনযোগে সহকারে পড়ার জন্য
📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৯৬৮
Date:- ২৩ /১০/২০২৩ইং
ধন্যবাদতে
আমি মোঃ শফিকুল ইসলাম
ব্যাচ নাম্বার : ১৯
রেজিস্ট্রিশন : ১০৮২৬৩
নিজ জেলা গোপালগঞ্জ সদর
বর্তমান অবস্থান নারায়ণগঞ্জ সদর।