মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে ১২৫০ টাকা দিয়ে শুরু উদ্যোক্তা জীবন। বছর শেষ হওয়ার আগেই সেল লাখ টাকা।
লতিফা হেলেন লতা
ব্যাচ : ১৩ রেজি : ৬১৬২০
ঘোড়াশাল, পলাশ, নরসিংদী।
ছোট বেলা থেকেই সুই সুতা দিয়ে ওয়ালমেট, নিজের জামা, ওড়না, পাঞ্জাবি, ফতুয়াতে ডিজাইন করতাম , পুতি কিংবা বেত দিয়ে ব্যাগ তৈরি করতাম। জর্জেট শাড়ীতে কাজ করে ঢাকায় বিক্রিও করেছিলাম। ভোকেশনাল এ ড্রেস মেকিং ও টেইলারিং নিয়ে পড়েছি। হবিগঞ্জ থাকাকালীন সময়ে ২০২০ সালে পাশের বাসার ভাবী আমার হাতের কাজের পাপোষ দেখে বললো, এগুলো তো আপনি বিক্রি করতে পারেন। বলা যায় শুরুটা তখন থেকেই তবে সম্পূর্ণ ভাবে শুরু করি গত বছর এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে। আপনার শিক্ষাকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টায় তখন থেকে একজন উদ্দোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলছি।
আমি SSC পাস। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহনের সময়। তাই প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করি তবে সবচেয়ে বেশি শেখার সুযোগ পেয়েছি এই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার পরে।
প্রথমত আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে শিখেছি, মানুষের সাথে মিশতে শিখেছি, রাগ না করা শিখেছি, বিনয় শিখছি, ধৈর্য্য ধারণ করা শিখেছি, অন্যের বিশ্বাস অর্জন করতে শিখেছি, দ্বায়িত্বের কথা আসলে আমাকে দিন বলতে শিখেছি, ভাল মানুষদের সাথে মিশতে শিখেছি, টিম ওয়ার্ক শিখেছি, কথা বলার জড়তা কিভাবে কাটাতে হয় সেটা শিখেছি।
সর্বোপরি কিভাবে একজন ভাল মানুষ হওয়া যায় তা শিখেছি আর এখনও প্রতিনিয়ত শিখছি।
ছেলেটা আমার প্রতিবন্ধী,বয়স ১৩। ক্লাস ফাইভে পড়ে। দশটা বছরে ছেলেটাকে নিয়ে কত কটু কথা যে শুনেছি মানুষের কাছ থেকে। আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধী সন্তান থাকাকে একপ্রকার পাপ বা অভিশাপ বলে মনে করা হয়। সেগুলো শুনে মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেতাম। মাঝে মাঝে খুব কান্না পেত তবে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
পড়ালেখা শেষ করতে পারি নি বলে ইংরেজি সহ বর্তমান সময়ের সাথে প্রযুক্তিতে অনেকটা পিছিয়েই আছি। এটা এখন এসে মনে হয়, অনেক বড় ভুল করেছিলাম সেসময়ে।
ঘোড়াশালে "মুসা বিন হাকিম কলেজ" থেকে HSC তে ভর্তি হলেও শেষ করতে পারিনি।
১৩৭০০ টাকা মুলধন দিয়ে শুরু করলেও সেই মুলধনটা আমি বাড়াতে পারিনি করোনা কালীন সময়ে অনেক কিছু বুঝে উঠতে না পারার কারণে। যখন গ্রুপে যুক্ত হই তখন অনলাইনে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যেই যুক্ত হই। কিছুদিন পরে উদ্যোক্তা হওয়ার উপায়গুলো জানতে পেরেছি প্লাটফর্ম থেকেই।
মাটির ব্যাংকে নতুন টাকা জমানোর অভ্যাস ছিল আমার, তাই ব্যাংক ভেঙে ১২৫০ টাকা আমার পার্টনারের হাতে তুলে দেই। কুমিল্লার এক আপুর কাছ থেকে খাদি পাঞ্জাবি অর্ডার করি। পাঞ্জাবি আসার তিন চার দিন পর বহু কষ্টে ৩৭৫০ টাকা যোগার করি। সেটা দিয়ে আবার পণ্য কিনি।
হাতের কাজের পাপোষ, হাতের কাজের কাস্টমাইজ খাদি পাঞ্জাবি, বিভিন্ন রকম পাঞ্জাবি, থ্রি পিস, শাড়ি, জুতা, রুটি মেকার, নকশি পিঠা, রসুনের আচার, টমেটোর আচার, পুডিং সহ বিভিন্ন রকম লাড্ডু নিয়ে শুরু হয় আমার ব্যবসা। সিজনাল ব্যবসা হিসেবে আম ও খেজুরের গুড়ও রেখেছিলাম।
২০১৯ সালের শেষের দিকে ১৩৭০০ টাকা নিয়ে সেকেরচর বাবুর হাট থেকে কিছু থ্রি পিস নিয়ে বাসায় বিক্রি শুরু করি। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন যানবাহন বন্ধ থাকায় আমি আর থ্রি পিস কিনতে পারিনি। তখন আমি জানতাম না অনলাইনে পণ্য বিক্রি কর যায়। না জানার কারণে পুঁজিটা বিভিন্ন কাজে খরচ করে ফেলি। ২০২১ সালের পহেলা এপ্রিল নিজের বলার মত একটা গল্প ফাইন্ডেশনে জয়েন করি। বছরখানেক আগের আমার তৈরি চটের পাপোষ আর কয়েকটা থ্রি পিস নিয়ে আবার শুরু করি।
বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি সেল হয় আমার।
মূলধন বলতে স্যার লাখ টাকার মত পণ্য আছে কিন্তু বাড়তি কোন টাকা নেই। একটা পণ্য বিক্রি করে আরেকটা পণ্য কিনি। রিসেলার হিসেবেও কাজ করা যায় বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। কিছু ভাইয়া আপুদের সাথে রিসেলিং করে মূলধনটা আরো একটু বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
আমার ৮০% সেলই হয় এই নিজের বলার মত একটা গল্প ফাইন্ডেশন থেকে। আমি অপেক্ষায় থাকি হাটবারের জন্য। এই দিনটাকে আমি খুব ইনজয় করি। মনে হয় আমি বাস্তবেই হাটে বসে আছি ক্রেতা বিক্রেতার অপেক্ষায়।
আমি এবং আমার পার্টনার খুব ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছি। শত প্রতিকুলতার মাঝেও সত্য বলতে পারি, কাস্টমারের কমিটমেন্ট রক্ষা করে চলি এবং মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে ইসলামিক নীতি ও আদর্শ নিয়ে চলার চেষ্টা করি।
ছোটবেলায় বাবাকে দেখতাম তার ইনকাম থেকে মানুষের লেখাপড়া বা সংসারের খরচের বা মসজিদ মাদ্রাসায় প্রচুর টাকা দান করতেন। আমার পার্টনার ও আমিও আয়ের কিছু অংশ দান করি। দশ বছরের মাঝে আপনাদের সকলের দোয়া ও সহযোগিতা থাকলে, অন্তত ১০০ পরিবারকে যোগ্যতানুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।
আমার কাছের একজন বিধবা মহিলার কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেছি। তাই বিধবা মহিলাদের ভরনপোষনের দ্বায়িত্ব নিতে চাই আগামিতে।