উত্থান-পতনের কাব্যিক ইনিংস !
আবু হানিফা সজীব
৩য় ব্যাচ- রেজিঃ নং ২৯৬০
নিজ জেলা সাতক্ষীরা, বর্তমান অবস্থান খুলনা।
ফাউন্ডেশন এ দায়িত্ব পালন করছি : ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর ।
ব্যক্তিগত জীবনে ভালো ছাত্র থাকায় পড়ালেখা নিয়ে কোন ভোগান্তি পোহানো
লাগেনি। আলহামদুলিল্লাহ কৃতিত্বের সাথে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করেছি সাথে মাদ্রাসা থেকে হাদিস বিষয়ে কামিল (স্নাতকোত্তর) শেষ করেছি।
কয়েকবার অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল কিন্তু বাবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং আত্ম বিশ্বাসী হওয়ায় থেমে যেতে হয়নি।
পড়ালেখার সুবাদে ২০১৫ সাল থেকে খুলনাতে অবস্থান করায় এবং নিজ গ্রাম সুন্দরবন এলাকায় হওয়াতে মধু নিয়ে চিন্তা করি।
২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ২০ কেজি মধু নিয়ে আসি গ্রাম থেকে,তখন সেগুলো বিক্রয় করতে ১ মাস ১২দিন সময় লেগেছিল। এজন্য এটি নিয়মিত করার প্লান করি। আলহামদুলিল্লাহ,সেটি চলমান থাকায় মোটামুটি একটা লাভ হচ্ছিল।
একটা সময় এটা প্রফেশনালী করার চিন্তা করি। বলে নেওয়া ভালো,শুরুতেই আমার মূলধন ছিল মাত্র ১৫০০ টাকা যেটা টিউশনি থেকে বাঁচিয়ে রেখে জমিয়েছিলাম তারপর সেই টা দিয়েই শুরু করা আমার স্বপ্নের বিজনেস।
এমন চিন্তাধারা থেকে এক সময় প্রিয় নিজের বলার মত একটা গল্প ফাইন্ডেশনে সাথে পরিচিত হয়, সেখান থেকে প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের টানা ৯০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষ করি, এখান থেকেই মূলত উদ্দীপনা পেয়েছিলাম। সবকিছু সুন্দরভাবে চলছিল কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় ভীষণ ভাবে আটকে গেছিলাম। করোনার শুরুতেই গ্রামে চলে যেতে হয়েছিল ফলে নানামুখী সমস্যা থাকায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৫মাস গ্রামে অবস্থান করায় কোন পরিকল্পনা কাজে আসতেছিল না। উপায়ান্তর না পেয়ে করোনার প্রভাব কিছুটা কমে গেলে ২০২০ এর শেষের দিকে পুনরায় খুলনা চলে আসি। ১বছর ৯মাস ওয়ালটন এর একটা শোরুমে চাকরী করলাম। কিন্তু, মন সব সময় তাড়া করে কিভাবে আবার ব্যবসাটা শুরু করা যায়। অনেক চিন্তা ভাবনা করে চাকরিটা ছেড়ে দিলাম।
পুনরায় নতুন করে যাত্রা শুরু করলাম। অনেক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আলোকে সুন্দরবন পিওর মার্ট নামকরণে অর্গানিক পন্যের সমন্বয়ে নতুন মাত্রা যোগ করলাম। আর এত কিছুর পরও নিজেকে সময় দিয়ে, সাহস ও শক্তি সঞ্চারের মাধ্যমে প্রিয় ফউন্ডেশনের
কল্যাণে প্রিয় মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি কারণ স্যার আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে লেগে থাকতে হয়, কিভাবে হেরে যাওয়ার পর পুনরায় উঠে দাঁড়াতে হয়।
স্যারের এই অমূল্য বানী “স্বপ্ন দেখুন,সাহস করুন, শুরু করুন এবং লেগে থাকুন , সাফল্য আসবেই” আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। আমরা গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমি একজন ভালো মানুষ, আমি কাউকে ঠকাই না, কাউকে খারাপ/ভেজাল পন্য দেই না,কাউকে কথা দিয়ে কথা রাখি।
মানুষ যেহেতু, কিছু কষ্ট বা দুঃখের কথা তো অবশ্যই আছে,কিন্তু জীবনে বড় হতে গেলে সব কষ্ট মনে রাখতে হয়না। এসব ভূলে এখন জীবনের লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলতে চাই। জীবনের কয়েকটি ভূল সিদ্ধান্তে মাঝে মাঝে পিছিয়ে গিয়েছি,আবার ঘূরে দাড়িয়েছি, নিজেকে নতুন রূপে তৈরি করেছি। মধুর এলাকার মানুষ হওয়াতে শুরুতে শুধুমাত্র সুন্দরবনের মধু নিয়ে শুরু করেছিলাম ।
বর্তমানে কয়েকটি অর্গানিক পন্যের সমন্বয়ে- সুন্দরবনের খাঁটি মধু, গরুর দুধের খাঁটি গাওয়া ঘি, ঘানি ভাঙ্গা সরিষার তেল, হোমমেড নারিকেল তেল,কালোজিরা তেল,হানি-নাট,সামুদ্রিক সকল মাছ,এবং বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কোরিয়ান ব্রান্ড এর কসমেটিক আইটেম,কমফোর্ট সহ নানান পন্য। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে দীর্ঘ ৫ বছরেরও অধিক সময় লেগে আছি নিজের স্বপ্নের পিছনে। বর্তমানে আমি সহ আরো ৪জন কো-ফাউন্ডার (দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী মোস্তাফিজুর রহমান,মাহফুজুর রহমান,ইমরান হোসাইন এবং মারুফ বিল্লাহ) কে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে কোটি টাকা প্লাস প্রোজেক্ট প্লান বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছি ইনশাআল্লাহ।
বর্তমানে আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন পিওর মার্ট এর মাসিক সেল ৩,০০,০০০/= মাত্র এবং চক্রাকার মূলধন ৫,০০,০০০/= এর অধিক।
আমার সেলের ক্রেতার ৭০% প্রিয় নিজের বলার মত একটা গল্প ফাইন্ডেশনের গর্বিত সদস্যগন। ক্ষণস্থায়ী এ জীবনে সৎ ও পজেটিভিটির কোন বিকল্প নেই।
সততা ও কর্মনিষ্ঠাই আমাকে মহান করে তুলবে এ বিশ্বাস আমি রাখি।
কাস্টমারের সেটিসফেকশন কোন কমপ্রোমাইস করিনা। হয়তো এ কারণেই কাস্টমারের কাছে সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়েছি। ইনশাআল্লাহ,আগামী ৫ বছরে আমি নিজেকে একজন সফল ও ব্রান্ডিং পর্যায়ে দেখতে চাই। আমাদের একটা বৃহৎ সুপার শপ এবং কয়েকটি মিল কারখানা থাকবে,কয়েক‘শ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই, দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বড় একটা ভূমিকা রাখতে চাই।
ফাউন্ডারঃ সুন্দরবন পিওর মার্ট।