অপয়া মেয়েটিকে অনুপ্রেরণায় পরিনত করার কারিগর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার
ইনায়া ইসলাম বৃষ্টি
১১তম ব্যাচ
নিজেকে ব্যর্থ মনে হচ্ছে। নতুন করে শুরু করার সাহস পাচ্ছেন না। নিজেকে নিয়ে অসন্তুষ্ট, তাহলে আমার গল্পটি আপনার জন্যই। আমি যদি পারি, ইনশাআল্লাহ আপনিও পারবেন।
জন্মের ৪ বছর বয়সেই মাকে হারাই। বাবা নতুন করে আবার বিয়ে করে। সৎ মায়ের নিয়মিত অত্যাচার ও অবহেলা সহ্য করেই বড় হতে থাকি আমি। সময়মত খাবার না পেলেও মার গুলো ঠিকই পেয়েছি আমি।
আমার শোচনীয় অবস্থায় খালু তার সাথে ঢাকায় নিয়ে আসে আমায়। আর সৎ মা বাবাকে বোঝায়,আমি একটা অপয়া।
খালা- খালু অনেক বেশি ভালবাসতো আমায়, ঢাকায় ভাল স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়, আলহামদুলিল্লাহ বোর্ড সেরা ছাত্রী হই SSC তে। ভাল কলেজে ভর্তি,উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখলেও বিয়ের পীড়িতে বসতে হয় আমায়।
অত্যন্ত সুন্দর ও ভাল মনের একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলাম। সুখেই দিন কাটছিলো। অতঃপর বাইক এক্সিডেন্টে আমার জীবনের সুখগুলো নষ্ট হয়ে যায়। হাড়িয়ে ফেলি আমার একমাত্র মেয়ের বাবাকে। পরপরই শ্বশুরবাড়ী থেকে বিতাড়িত হই অপয়া খেতাব নিয়ে।
ছোট মেয়েকে নিয়ে সকলের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও কোন আত্মীয় স্বজনের কাছে এতটুকু জায়গা পাইনি আমি।
অতঃপর একটা বাসায় বুয়ার কাজ শুরু করলাম ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেখান থেকে কাজ হারলাম।
আবার শুরু হলো অন্ধকার জীবন। হুট করে আলো হয়ে একটা লেডিস হোস্টেলে চাকরি পাই,থাকা- খাওয়ার সুযোগ পাই। আলহামদুলিল্লাহ কয়েকদিন ভাল চললেও আবারও সেই অপয়া খেতাব নিয়ে চাকরিচ্যুত হই। আমার জন্য হোস্টেলের মেয়েরা চলে যাচ্ছিলো, অপয়ার মুখ দেখবে না বলে।
পরিশেষে খালাতো বোনের বাসায় আশ্রয় নিয়ে একটা NGO জয়েন করি, কিন্তু করোনায় সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। চারিদিক থেকে যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছিলাম,তখনই আলোর মশাল হয়ে আমার জীবনে এসেছিলেন আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার।
রহিমা আক্তার স্বপ্না আপুর মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করে জয়েন হই নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশনে ১১তম ব্যাচে।ভিডিও সেশন,ট্রেনিংগুলো অনেক বেশি কাজে দিয়েছিলো আমায় জীবনে ঘুরে দাড়াতে।
অবশেষে মাত্র ৮ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করি আমার ব্যবসায়িক যাত্রা। যা মূলধন রুপে এখন ১২ লক্ষ টাকায় রূপান্তরিত হয়েছে। প্রিয় প্লাটফর্ম থেকে আমি অমায়িক সারা পেয়েছি আমার ব্যবসায়িক জীবনে। আমার ব্যবসায়ের ৮০% সেলই হয় প্রিয় নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন,উদ্যোক্তা তৈরীর কেন্দ্র প্লাটফর্ম থেকে।
সকলের দোয়া ও ভালবাসায় বর্তমানে আমার মাসিক সেল ১০ লক্ষ টাকার মত।
এখন প্রতিটা সময় এতটা ব্যস্ততায় কাটে যে,অতীতের সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে করারও সময় পাইনা।
আলহামদুলিল্লাহ নিজের একটি শো- রুম দিয়েছি ঢাকা শহরের । নিজস্ব তত্বাবধানে ব্লক,বাটিক প্রিন্ট এর পোশাক তৈরী করছি,যা সারা দেশে পৌছে দিচ্ছি প্রিয় প্লাটফর্মের মাধ্যমেই।
যে যে প্রডাক্ট সমূহ নিয়ে কাজ করছি এখনঃ
অর্জিনাল টাঙ্গাইলের তাঁতের সব প্রডাক্ট কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন আমার থেকে।
এছাড়া বেবী ড্রেস,থ্রিপিস,প্লাজু,শাড়ী,পান্জাবী, হিজাব,বোরকা,খিমার,লুঙ্গী, ঘামচা,গজ কাপড়, প্রিন্টের কাপড়,ওড়না,বেড সিট, সিজলান ফল সহ আরও বেশি কিছু আইটেম।।
এই সব কিছু পাইকারী খুচরা সেল করে থাকি সফলতার সাথেই।
আসলে জীবনে সৎ এবং পজিটিভিটির কোন বিকল্প নেই। এজন্যই হয়তোবা মাত্র ২ বছর ব্যবসায়িক জীবনে এতটা আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি।
শুধু নিজের পরিবারই নয়, আমি চাই আগামি ৫ বছরে মিনিমাম ৫০ জন মানুষের কর্মস্থান করবো ইনশাআল্লাহ। যাদের পরিবার হাসি খুশি স্বচ্ছল হবে সুন্দর মত।
প্রিয় স্যারের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আমি সহ আমার মত হাজারো মেয়ের আইডল হওয়ার জন্য,তাদের জীবন বদলে দেওয়ার জন্য। একজন প্রকৃত ভাল মানুষ তৈরী করে দেওয়ার জন্য।
আজ আমি "ইনায়া ইসলাম বৃষ্টি " একজন সফল উদ্যোক্তা শুধুমাত্র প্রিয় স্যারের জন্যই।