জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত খুব মূল্যবান এটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু মানিনা সঠিক সময় এ যখন অনুভব করি তখন সময় বা সুযোগ থাকে না আমাদের হাতে।
আয়েশা সিদ্দিকী মৌসুমী
ব্যাচ-১৩ , রেজিষ্ট্রেশন -৭১৬১৩
জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চার সদস্যের পরিবারে আমি সবার ছোট । বাবা- মা, বড় বোন এবং আমি। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। পরিবারে অভাব এর ছিটে ফোটা ছিল না। কিন্তু অভাব না থাকলেও সুখ জিনিসটা কখনও অনুভব করিনি। মায়ের মুখে শুনেছি কখনো শখ করে কোন খাবার কিনে আনে নি দুই মেয়ের জন্য বাবা ,কখনো শখ করে কোন একটা পোশাক কিনে দেয়নি এমন কি দুইটা ঈদেও নয়। কিন্তু অভাব ও ছিল না কখনোই।
মায়ের মুখে শুনেছি যখন প্রথম শ্রেণীতে পড়ি তখন স্কুল বাসা থেকে প্রায় তিন -কিলো দূরে ছিল। প্রথম শ্রেণীতে পড়া সেই ছোট্ট মেয়েটিকে রাস্তায় একা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে মা। কারন বাসায় সময়মতো বাবার জন্য রান্না করতে হবে। আমাকে একদিন স্কুলে দিয়ে আসতে বললে ও কোনদিন নিয়ে যায়নি বাবা। বলেছে লেখাপড়া করতে হবে না বাগানে পাঠিয়ে দাও পাতা কুড়িয়ে নিয়ে আসুক।
এভাবে চলতে থাকে জীবন। যখন ক্লাস সেভেন -এইট এ পড়ি যে সময় আমার সহপাঠীরা দু'চারটা প্রাইভেট পড়তো, আমি তখন কোন প্রাইভেট না পরে স্কুলে পড়ি সরকারি স্কুলে পড়তাম বলে তেমন কোন বেতনে লাগত না। পরীক্ষা ফি লাগতো সেটা বাবার কাছে চাইতে গেলে বলতো একবার ফেল করলে আর পড়াশুনা করবো না। কিন্তু কোন ক্লাস এ ফেল না করে এভাবে এসএসসি পাস করলাম কোন টিউশন ছাড়াই।
শুরু হয়ে গেল জীবনের সবথেকে কঠিন মুহূর্ত বাবা কোন প্রকার হাত খরচের টাকা আর দেন না। মনের মধ্যে খুব জিদ হতো এসএসসি পাশ করলে একটা চাকরি করব কিন্তু এসএসসি পাশ করে কি আর চাকরি পাওয়া যায় ? অনেক খুজতে থাকলাম। কোন কাজ করতে গেলে অভিজ্ঞতা লাগে ছোট মানুষ তখন মায়ের আদরের মেয়ে কোথাও গিয়ে কি কাজ পাবো।
একটা পার্লার এ এক আন্টির কাছে রিকোয়েস্ট করে বললাম আন্টি আমাকে একটা কাজ দেন। অনেক অনেক রিকোয়েস্ট করার পরে তার এখানে রাখলে এবং বললেন প্রথম তিন মাস বেতন দিবেন না। সে সময় আবেগে জয়েন করলাম কিন্তু আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না আমার ৫০ টাকা রিক্সা ভাড়া লেগে যেত। যা আমার কোথাও থেকে ম্যানেজ করতে না পেরে চাকরি টা ছেড়ে দেয়। এদিকে এসএসসি পাস করলাম ভর্তি হলাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ পড়াশোনা করাতেন মমতাময়ী মা অনেক কষ্ট করে কিন্তু এভাবে আর কত দিন। আমি টুক টাক টিউশনি করতাম পার্লার এ অল্প অভিজ্ঞতা ছিলো বাসায় সেটাই টুকটাক কাজ করতাম অনেক কষ্ট করে পাস করলাম ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ারি। মা আর পারেনা খরচ চালিয়ে উঠতে। একদিন বাসা থেকে বের হলাম কোথায় যাবো জানিনা। রাস্তায় বেড়িয়ে আল্লাহর কাছে কেঁদে বললাম যেখানেই হোক একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিও আল্লাহ এভাবে আর জীবন চালাতে পারছি না। ফোন এ কল আসলো কলেজ থেকে স্যার বললো কলেজ এ আসো একটু দেখা করে যাও। কল করার ৫ মিনিট এ উপস্থিত হলাম গিয়ে শুনি কলেজ এ ভালো রেজাল্ট করায় কলেজ এ আমাকে তারা চাকরির সুযোগ দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ বলে বাসা আসলাম শুরু হলো চাকরির জীবন। বাঁধা ধরার জীবন। চাকরিটা প্রায় এক বছর হয়ে গেল কিন্তু বেতন টা যোগ্যতার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় টানা পোড়া যেন কাটতেই চায় না। এদিকে মা টা আমার বেশ অসুস্থ হয়ে গেছে।
অনেক ভাবতে শুরু করলাম কি করা যায় ? কি করা যায় ? সে থেকে এভাবে অনলাইনে মেয়েদের কাজ করতে দেখতে শুরু করলাম। অনেক সাহস করে মা কে বললাম উদ্যোক্তা হবো কারো থেকে আর্থিক মানসিক সাপোর্ট না পেয়ে ২৫০ টাকা দিয়ে কাঁচামাল কিনে কাজ শুরু করি এবং অনলাইন এ আমার প্রথম দিন এর পোস্ট এই ২৫০ টাকার পণ্য শেল করি । শুরু হয়ে গেলো কাজের জীবন। তার পর থেকে একটা দিন ও থেমে থাকিনি প্রতিটি সেকেন্ড কাজ কাজ আর কাজ করেই যাচ্ছি।
আত্মীয়, প্রতিবেশীর কথা আর কি বলবো এখনও তারা পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে ছোট করে দেখে বিজনেস করছি বলে।
ছোট কাজ এগুলো তাদের চোখ এ। কাজ কে ভালোবেসে কাজ করছি এখন প্রতি মাস এ সেল প্রায় ৬২ + হাজার টাকা।
নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন এ কথা বলার স্কিল বৃদ্ধি পেয়েছে কাজের প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে ও কাজ পাগল করতে শিখিয়েছেন। ৬৪ জেলার মধ্যে নিজেকে পরিচিত করার একটা সুযোগ করে দিয়েছেন এতগুলো দেশের কাছে নিজের কাজ এর পরিচয় এ পরিচয় তৈরির সুযোগ করিয়ে দিয়েছেন এবং বুকে হাত রেখে আমি একজন ভালোমানুষ বলার সাহস তৈরি করে দিয়েছেন।
একটা কথা মনে পরলে চোখ ভিজে যায় আমার কি অপরাধ যে জন্মদাতা বাবা আমার জীবন টা এভাবে এলোমেলো করে দিলো লেখাপড়া খরচ, চিকিৎসা খরচ,খাবার খরচ যাবতীয় খরচ কিছুই দিলোনা কোনদিন এ প্রশ্নের কোন উত্তর আজও পেলাম না এ কথাটা মনে পড়লেই তখন চোখ ভিজে যায়। আর আমার নানা না থাকলে আজকের এই আমি নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এ গল্প লিখতেই পাড়তাম না কারন আমার পড়ালেখার খরচ আমার নানার টাকায়। নানা কে জান্নাত বাসি করুক।
আমি ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ারিং সিভিল এ পড়াশোনা করি।
আমার বিজনেস এর মুলধন ২৫০ টাকা ছিল।
আমি কাজ করছি Ayesha Re Birth Hair oil চুল পড়া বন্ধ করে নতুন চুল গজায় নিরাপদ হেয়ার অয়েল ও Ayesha Re birth beard oil দাড়ি ঘন মসৃণ শক্ত ও নতুন দাড়ি গজায়।
আমার বর্তমান মাসিক ৬২ হাজার + টাকা এবং আমার টোটাল মূলধন এখন প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। আমার নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন এ ৮০% সেল হয়।
জীবন এ সৎ ও পজিটিভ থাকার কোন বিকল্প নেই। টাই আমি সব সময় সৎ ও পজিটিভ থাকার চেষ্টা করি।
আগামী ৫ বছর পরে নিজের কাজ দিয়ে সারা পৃথিবীতে পরিচিত হতে চাই ও সর্বনিম্ন ৫০ জন মানুষের কর্মসংস্থান করতে চাই।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।