See More Post

আমি তখন নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে দ্বাদশের ছাত্রী

আমি এ গ্রুপে একজন নবাগতা, নবজাতকও বলতে পারেন।
গতকাল আপনাদের সাথে আমার জীবন সংগ্রামের কিয়দাংশ শেয়ার করেছি। আপনাদের অনুপ্রেরণায় আজও কিছু লিখার তাগিদ অনুভব করছি। বিশেষ করে এই গ্রুপের সর্বজন শ্রদ্ধেয় জনাব মোঃ বদরুজ্জামান (৭ম ব্যাচ, রেজিঃ নং ২০৭১) ভাইয়ের পাচক হওয়ার গল্প পড়ে একটু লিখতে ইচ্ছে করল। তাই জন্যে ভাইকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ।
আজ আমি আমার জীবনের উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করব, যা কিনা আমার জীবনের সমগ্র সাফল্য জুড়ে জড়িয়ে আছে। ধৈর্য ধরে যদি আমার এ লেখা কেউ পড়েন, সেটাই হবে আমার লেখার সার্থকতা ও অনুপ্রেরণা।
# ঠেকে শেখা-১
১৯৯১ সাল। আমি '৯২-এর এসএসসি পরীক্ষার্থী। টেস্ট পরীক্ষার মাত্র ৫ দিন আগে আমার বাবা বার্ধক্যজনিত কারণে গত হন। বাবার মৃত্যুর ঠিক ১৩ দিন পর আমাদের পরিবারের সবচেয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি, আমার মেজো ভাই সৌদি আরবে পাড়ি জমান-সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার জন্য। কিন্তু সে যাত্রায় তার ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি মোটেও। তার কাজ পড়ে মরুভূমির এক তেলের পাম্পে। সেখানে তাকে একা থাকতে হত। মালিক সপ্তাহান্তে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে আসতেন। সেখানে তখন দিনে প্রচণ্ড গরম আর রাতে তার বিপরীত। তার উপর বিষধর সাপের উপদ্রব। তিনি সেখানে তিন মাস চাকরি করে বেতন না নিয়েই জেদ্দায় পালিয়ে আসে। আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন-পিছলে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে যায়। তখন সংসারের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব এসে পড়ে আমার ইমিডিয়েট বড় বোনের উপর। এর আগে মা-ই সংসারের যাবতীয় কাজ করতেন। আমার মা ছিলেন খুবই পরিশ্রমী আর পরিচ্ছন্ন (অন্তরে বাহিরে) একজন মহিলা। মাকে নিয়ে লিখতে গেলে আজকের লেখার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। মা সম্পর্কে আরেক দিন লিখব, ইনশাআল্লাহ্। পূর্বের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ইতোমধ্যে
আমার আরেক ভাই জন্ডিসে খুব খারাপভাবে আক্রান্ত হন। তখন আমার এসএসসি পরীক্ষা চলে। উল্লেখ্য যে, তখন আমাদেরকে অনেক দূরের সেন্টারে গিয়ে বাসা ভাড়া করে, সেখানে থেকে পরীক্ষা দিতে হত। সমস্যা হল, ভাড়া বাসায় আমার সাথে থাকবে কে? আমার বোনকে তো সংসার আর মাকে দেখতে হবে। আমার এক মামাত বোনকে (অবিবাহিতা) বলে রাজি করানো হল। দুইজনের অপরিপক্ক চারটি হাত দিয়ে আমাদের নতুন ভাড়া বাসা সুন্দরভাবেই গুছালাম। আপা রান্না করত। তরকারিতে লবণ কম, কখনও বা বেশি পড়ে যেত। ভাত কখনও জাউ, কখনও বা চালকে ভাত ভেবে নিতাম। উল্লেখ যে, বিয়ের আগে কখনই আমি খাবার আগে কিংবা পরে নিজের প্লেটটা পর্যন্ত ধুয়ে খেতাম না। পরিবারের সবচেয়ে ছোট হওয়ার কারণে সকল সুবিধাই আমি ভোগ করতাম। বকার মত বললে, ফাঁকিবাজও বলতে পারেন। সেই আমি অপরিণত বয়সেই সংসার গুছিয়েছি।
#ঠেকে শেখা-২
আমি তখন নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে দ্বাদশের ছাত্রী। প্রতিদিন ৭/৮ কি.মি রাস্তা কখনও পায়ে হেঁটে, ২টা নদী পাড় হয়ে, রিক্সা কিংবা বেবীতে (সিএনজি-এর পুরাতন ভার্সন) তারপর আবার রিক্সা করে কলেজে আসা যাওয়া করতে হত। ইতোমধ্যে জণ্ডিসাক্রান্ত ভাইটি সুস্থ হয়ে ভাগ্যান্বষণে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। আমার সেই বোনটিরও বিয়ে হয়ে যায়। অন্য বড় ভাইয়েরা যার যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। সঙ্গত কারণেই মা-মেয়ের সংসারটি পরিচালনার দায়িত্ব এসে পরে ফাঁকিবাজ এই আমার উপর। বাড়িতে তখন বিল্ডিং তৈরির কাজ চলছিল। ভাই চলে যাওয়ায়, অসম্পূর্ন কাজ সম্পূর্ণ করার দায়িত্বটাও আমার উপরই বর্তায়। তখনই রাজমিস্ত্রিদের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ তদারকি করতে গিয়ে শিখেছি কোনটা টাগার আর কোনটা শলা। কয় টাগার বালিতে কতখানি সিমেন্ট দিলে গাঁথনি মজবুত হয় তা-ও জেনেছি। বাজারে গিয়ে বুঝতে পেরেছি, এক কেজি কেনার চেয়ে পাঁচ কেজি একসাথে কিনলে দামে সাশ্রয় হয়। কোন মাছের সাথে কোন তরকারি ভালো যায়, তখনই আমার জানা হয়। আর এ ও বুঝেছি, ভালো জিনিস অল্প হলেও ভালো। সেই সাথে অনুভব করেছি, আমানত খেয়ানত না করলে বিশ্বস্ত হওয়া যায়। তাই নিজেকে স্বচ্ছ রাখার জন্য গোপনে একটা হিসাবের খাতাও খুলেছিলাম- যা আজও আমার সংগ্রহে আছে। কারণ, আয়-ব্যয়ের সকল খাত তো আমার পক্ষে মনে রাথা সম্ভব নয়, তাই। যদিও ভাইয়েরা কোনদিনই আমার কাছে টাকার হিসেব চায়নি। তারপরও মনে হয়েছে, যদি কোনদিন তাদের মনে হয় যে, আমি তাদের টাকার যথেচ্ছ ব্যবহার করেছি। তাই ধনিয়াপাতা কিনলেও আমি তা খাতায় লিখে রাখতাম। প্রথমবার মেজো ভাই যখন দেশে আসে, তখন স্বপ্রণোদিত হয়ে আমি তার প্রেরিত ও আমার দ্বারা খরচকৃত টাকার হিসেব দিতে চাইলে খুব রাগ করেন তিনি। তারপর আর হিসেব দেইনি ঠিক, তবে আগের মতই লিখে রেখেছি সব (যদি কোন দিনের জন্য...)।
#ঠেকে শেখা-৩
সবে মাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছি। স্যারেরা পুরো ক্লাসে ইংরেজিতে লেকচার দিত। কিছু বুঝতাম কিন্তু অনেকটাই বুঝতাম না। ক্লাসে আমার চেয়ে যারা ভালো বুঝত, তারা একটু ভাব নিয়ে থাকত। আমাদের সাথে একজন প্রফেসরের মেয়ে পড়ত। আমার সাথেই রোজ ভার্সিটিতে (সরকারি হরেগঙ্গা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জ) যেত। কিন্তু ও কোনদিন বলেনি যে, ওর বাবা তার এক কলিগের কাছ থেকে মেয়ের জন্য নোট সংগ্রহ করে রেখেছে। একদিন ওর খাতার ভিতর একটা নোট দেখে আমি ফটোকপি করতে চাইলাম। কিন্তু ও আমাকে সেটি দিল না! সেদিন খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। তার পরপরই ভাইকে বলে বিদেশ থেকে একটি ওয়াকম্যান (ছোট টেপ রেকর্ডার) আনাই। ক্লাসে লুকিয়ে লুকিয়ে স্যারদের লেকচার রেকর্ড করে নিয়ে এসে বাসায় বসে বইয়ের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ে বুঝতে থাকি। আর চুপিচুপি কয়েকদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করে স্যারদের লেকচার দেখি। সে সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে একজন প্রফেসার ছিলেন, জনাব নজরুল ইসলাম। শুনেছি স্যার নাকি অন্য ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ান না। একদিন ক্লাস শেষে স্যারকে আমার সমস্যার কথা বলি। স্যার সব শুনে আমাকে তার পুরান ঢাকার লক্ষ্ণীবাজারের ব্যাচে পড়ার অনুমতি দেন (আমার সেই নোট না-দেওয়া বান্ধবীও আমার সুপারিশে নজরুল স্যারের ব্যাচে পড়ার অনুমতি লাভ করেছিল)। উল্লেখ যে, হরেগঙ্গা কলেজে ঐ বছর থেকেই অনার্স কোর্স চালু হয়েছিল। আমরা তার ১ম ব্যাচ। কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকগণই তখন আমাদের ক্লাস চালিয়ে নিত। তাই তাদের কাছে প্রাইভেট পড়তে ভরসা পাইনি-শুধু সুনির্মল স্যার ছাড়া। কিন্তু তিনি প্রাইভেট পড়াতেন না।
#ঠেকে শেখা-৪
২০০১ সালে আমার প্রথম কম্পিউটারে হাতেখড়ি। ৩০০০/- টাকার বিনিময়ে কম্পিউটার অন, অফ, মাউস ধরা, মিনিট ধরে ইংরেজি ও বাংলা টাইপিং শেখা, লেখার ফ্রন্ট আর ইটালিক-বোল্ট শিখতে শিখতেই তিন মাস শেষ। তবে তারা অবশ্য আমাকে একটি স্বাক্ষর ছাড়া সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। সেটা এখনও আমার হেফাজতে রয়েছে। তখন নিজের বাসায় কম্পিউটার ছিল না। ২০০৯ সালে এক রাতে হঠাৎ আমার সাহেব বাসায় একটি ডেক্সটপ নিয়ে মুচকি হেসে ঘরে প্রবেশ করে। সেদিন আমি মনে মনে সত্যিই খুব বেশি খুশি হয়েছিলাম।কারণ, কিছুদিন পর আমার বিএড ফাইনাল পরীক্ষা। কলেজ সেমিস্টারে অনেক কষ্টে মুখস্থ করে আইসিটি পরীক্ষা দিয়েছি। সাহেব আমাকে দিয়ে কম্পিউটার ওপেন করে শুভ উদ্বোধন করতে চাইল। কিন্তু আমি আমার অর্জিত বিদ্যা ভুলে যাওয়ায় লজ্জাবোধ করছিলাম। কারণ, যেটুকু শিখেছিলাম সেই শিক্ষাটাও বাধ্যক্যজনিত কারণে (২০০১-২০০৯) অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছিল। যাকে বলে, অনাচর্চায় বিদ্যা হ্রাস। ও বুঝতে পেরে আমাকে হাতে কলমে কিছুটা শিখিয়ে পরীক্ষার বৈতরণি পার হতে সাহায্য করেছিল।
@ ২০১৩ সাল। আমি তখন এমএড প্রশিক্ষনার্থী। ফাইনাল পরীক্ষা আসন্ন। প্রেগন্যান্সির কারণে গবেষণার প্রোপোজাল তৈরি (কম্পোজ ও পাওয়ার পয়েন্টে স্লাইড), টিটিসি, ঢাকা ও IER, ঢাবি-তে গবেষণার জন্য লাইব্রেরি ওয়ার্ক, ফিল্ড থেকে ডাটা কালেকশন ও উপাত্ত বিশ্লেষণের মত কঠিন কাজগুলো করতে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল। হাতে লেখা তথ্য-উপাত্ত দোকানে টাইপ করতে দিয়ে আসলে গবেষণার গাইড লাইন অনুযায়ী ওরা তা করতে পারত না। বানানে প্রচুর ভুল করত আর লেখার ফ্রন্ট, লাইন/প্যারা স্পেস, ইনটেন্ট কিছুই ঠিক থাকত না। কিন্তু গবেষণাপত্রে এসব ভুল হলে তত্বাবধায়ক তা অনুমোদন করবে না। সে সময় দোকানে বসে থেকে কাজটি করাও আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। অনেকক্ষণ বসে থাকলে পা ফুলে যেত। আমার সাহেবকে সকাল থেকে রাত অবধি অফিসে থাকতে হত বলে ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও সে আমাকে সাহায্য করতে পারত না। তাছাড়া ওরা ওদের অফিসিয়াল সকল ডকুমেন্ট ইংরেজিতে টাইপ করে। বাংলা যুক্তাক্ষর টাইপ করা খুবই ঝামেলার ব্যাপার। অবশেষে, আমি আমার তত্বাবধায়কের থেকে মোবাইলে নির্দেশনা নিয়ে গবেষণা প্রোপোজালের জন্য পাওয়ার পয়েন্টে স্লাইড তৈরি করি। আর কম্পোজের কাজে আমি নিজেই হাত দিলাম। নির্দিষ্ট সময়েই ১৫৩ পৃষ্ঠার গবেষণাপত্রটি সম্পন্ন করে ফেললাম। তারপর ২০১৮ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গবেষণাটি করি, সেটাও সম্পূর্ণ নিজ হাতে সম্পন্ন করেছি। আলহামদুলিল্লাহ্। আমার তত্বাবধায়ক মানসম্মত গবেষণাপত্র হিসেবে স্বীকৃতিও দিলেন। কষ্টে সাধিত স্বীয় কাজের স্বীকৃতি যে কত আনন্দের, তা বলে বুঝানো যায় না।
@ পরবর্তীতে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্রণালয়ের "বাড়ি বসে বড়লোক" আউটসোর্সিং বিষয়ক প্রশিক্ষণে উপজেলায় প্রথম হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও ইউএনও স্যার কর্তৃক পুরস্কৃত হই। জেলা পর্যায়ে হই সেরা দশের একজন।
@ পিটিআই -এ অনুষ্ঠিত ১২ দিনের আইসিটি প্রশিক্ষণেও সেরার তকমাটি আমার থলিতেই আসে। আলহামদুলিল্লাহ্।
@ এখন পাওয়ার পয়েন্টে কন্টেন তৈরি করা থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের যাবতীয় তথ্য মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড ও এক্সেলের মাধ্যমে প্রস্তুত, সংরক্ষণ এবং ই-মেইলের মাধ্যমে তথ্য প্রেরণের কাজসমূহ আমি নিজেই সম্পন্ন করে থাকি।
আসলে কোন কিছুতে লেগে থাকলে, সৌভাগ্য ভেগে যায় না। যখন দেখে কম্পিউটার শিখেছি, অল্প দিনেই তা ভুলে গিয়েছি। আর যখন ঠেকে শিখেছি, সেটা আজও দক্ষতার সাথে কাজে লাগাতে পারছি। আমি এখনও কোন কিছু করতে চাইলে আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়েই ভালো করার চেষ্টা করি।

📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- 216
Date:- 06/05/2020
ফারহানা নাসরীন
ব্যাচ: দশম
রেজি নং ১৫৫৯১
জেলা: নারায়ণগঞ্জ
বর্তমান অবস্থান: ঢাকা
ব্লাড গ্রুপ: o+

ফরিদপুর জেলা টিম কর্তৃক আয়োজিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি -২০২৪

ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥

পর্দাশীল ঘরোয়া নারী- সফল উদ্যোক্তা

আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।