See More Post

আমাদের সকলের নিজের বলার মত একটা গল্প থাকা দরকার প্রিয় মেন্টর নিয়মিত শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
আসসালামু আলাইকুম।
আমি প্রথমেই শুকরিয়া জানাতে চাই মহান আল্লাহ পাকের দরবারে, যিনি এমন পরিস্থিতির মাঝে আমাকে সুস্থ রেখেছেন এবং আপনাদের মাঝে কিছু লেখার তৌফিক দান করেছেন। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমাদের সকলের প্রিয় স্যার মেন্টর ও অভিভাবক লক্ষ লক্ষ তরুণ প্রজন্মের আইকন আমার প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর প্রতি যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশন। যে ফাউন্ডেশনের কারণে আমরা স্বপ্ন দেখি নিজের বলার মত গল্প তৈরি স্বপ্ন দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার এবং স্বপ্ন দেখি নিজের পরিচিতি তৈরি করার।
আমি আফরিন সুলতানা চট্টগ্রামের মেয়ে। একজন ছোট উদ্যোক্তা। বর্তমানে কাজ করছি মেয়েদের থ্রি পিস, কসমেটিকস ও সাতক্ষীরার বিখ্যাত গাওয়া ঘি নিয়ে। কারো বউ বা কারো মেয়ে এটা আমাদের পরিচয় হতে পারে না। আমাদের সকলের নিজের বলার মত একটা গল্প থাকা দরকার আর এই শিক্ষাটা আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার আমাদের নিয়মিত শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।
আজ আমি আপনাদের আমার সে গল্প শেয়ার করব,,,,,,
মধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে জন্ম আমার । ৪ ভাই বোনের মধ্যে আমি আমার বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান। আমার বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী এবং এলাকার চেয়ারম্যান। আব্বু আমাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসেন, কারন আমি নাকি আমার আব্বুর জন্য অনেক বেশি ভাগ্যবতী। আমার জন্ম হওয়ার পর নাকি আমার আব্বু চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তাই সেই তথাকথিত ভাগ্যবতীর হওয়ার কারনে আব্বু আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসে তাছাড়া বাবারা মেয়েদেরকে ছেলেদের চাইতে একটু বেশি ভালোবাসে তা আমরা সকলেই জানি।
পড়ালেখায় আমি খুব ভালো ছিলাম। সব সময় স্কুল ফার্স্ট হতাম। যেহেতু আব্বুর আর্থিক অবস্থা খুব ভাল ছিল তাই উদ্যাক্তা হওয়ার বা কিছু করার কখনো সু্যোগ পায়নি। যদিও আমার খুব ইচ্ছে ছিল আব্বুর মত ব্যবসায়ী হব বড় হয়ে। মাঝে মাঝে আব্বুর সাথে ইটের ভাটায়, মাছের প্রজেক্টে যেতাম চেষ্টা করতাম আব্বু কিভাবে ইটের ভাটার এত এত শ্রমিককে হ্যান্ডেল করে সেটা শিখার। তবে আমার মা এসব মোটেও পছন্দ করতেন না। তার মতে মেয়েমানুষ ঘরের বাইরে যাওয়া দরকার নাই। তখন আমি নিজেকে নিজে একটা কথা বার বার প্রশ্ন করি,,,
মেয়ারা কি শুধু বালিশ সেলাই করার জন্য জন্ম গ্রহণ করেছে??
মেয়েরা কি শুধু অন্যের ঘরে ভাত রান্না করার জন্য জন্ম গ্রহণ করেছে?
মেয়েরা কি শুধু ঘর পরিস্কার জন্য জন্ম গ্রহণ করেছে??
ছোটবেলায় খুব বেশি বকবক করতাম বলে আব্বু বলতেন আমাকে আইনজীবী বানাবেন। আমাকে যেন ল নিয়ে পড়ালেখা করি।স্কুল ফাস্ট ছিলাম বলে, সবাই চাইতেন আমি যেন সাইন্স নিয়ে পড়ালেখা করি। কিন্তু আমি চাইতাম আব্বুর মত ব্যবসায়ীর হতে, যাতে আমিও আব্বুর মত কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি তাই আমি পড়ালেখা করেছি কমার্স নিয়ে। ইচ্ছে ছিল কমার্স সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করব। কিন্তু তা আর হলো না। এসএসসি কমপ্লিট করে যখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজম্যান্ট নিয়ে পড়ালেখা শুরু করলাম, আমার বিয়ে হয়ে গেল। ভেবেছিলাম স্বপ্ন মনে হয় স্বপ্নই থেকে যাবে। আমার আর ব্যবসায়ী হওয়া হবে না। কিন্তু না, বিয়ের এক বছরের মধ্যে আমি আমার হাসবেন্ড এর সহযোগিতায় আবার পড়ালেখা শুরু করলাম। মনের মধ্যে আবার কিছু একটা করার ইচ্ছা জেগে উঠলো।
2017 সালের দিকে তখন অনলাইন ব্যবসা এখনকার মতন বেশি জমজমাট ছিল না। তখন আমি আমার এক ভাইয়ের সহযোগিতায় একটা পেজ খুলি এবং শুরু করি অনলাইন ব্যবসা।
আমার হাজব্যান্ড অনেক বেশি সাপোর্ট করত আমাকে। ভালই চলছিল ব্যবসা। কিছু অসাবধানতার কারনে হঠাৎ আমার ব্যবসাটা থমকে গেল। আমার ছেলেকে যে দেখাশোনা করত,মানে আমার হেল্পিং হ্যান্ড যে মেয়েটা ছিল, ও চলে গেল চাকরি ছেড়ে। ছেলেকে সময় দেওয়া, সংসার সামলানো, পড়ালেখা সব কিছুর ভিড়ে থমকে গেল আমার অনলাইন ব্যবসা। ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলেও আমি কিন্তু থেমে থাকেনি, আমার এক আত্বীয় বিভিন্ন হ্যান্ডিক্রাপ্টের কাজ শিখাত। আমিও শিখার জন্য চলে গেলাম আপুর কাছে। ছেলেকে নিয়ে প্রতিদিন আপুর বাসায় গিয়ে বিভিন্ন রকম পুতির কাজ, নেট ফুলের কাজ, ক্লে এর কাজ শিখেছি।
আমার যেহেতু কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল অনেক বেশি, হঠাৎ একদিন আমার আংকেল আমাকে এই গ্রুপের সন্ধান দিলো। এই গ্রুপে জয়েন করার পর সাজেশন গুলো ফলো করার পর মনে হল এটা আমার কাছে শুধু একটা গ্রুপ নয়, আমি যেন পানির তলদেশ থেকে মুক্তার সন্ধান পেলাম।
পেয়েছি নিজের স্বপ্ন গুলোকে কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেই শিক্ষা
পেয়েছি কিভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায় সেই শিক্ষা
পেয়েছি কিভাবে শত চাপ সামলিয়ে নিজের স্বপ্ন কে বাস্তবে রূপ দিতে হয়
শিখেছি কিভাবে একজন মেয়ে হয়েও বিশ্ব জয় করা যায় সেই শিক্ষা
পেয়েছি কিভাবে মানুষের সাথে মিলেমিশে কাজ করা যায় সেই শিক্ষা
পেয়েছি কিভাবে নিজের সত্যিকারের ব্র্যান্ডিং করা যায় সেই শিক্ষা
পেয়েছি কিভাবে অন্যের জন্য কাজ করে নিজে শান্তি অনুভব কর যায় সেই শিক্ষা
সর্বপোরি কিভাবে একজন মানুষ শত সমস্যা থাকার পরও সহজে সেই সমস্যা থেকে কেটে উঠতে পারে সেই শিক্ষাটা এখান থেকে পেয়েছি।
তাই নিয়ম অনুসারে গ্রুপে রেজিস্ট্রেশন করে ফাউন্ডেশনের আজীবনের গর্বিত সদস্য হয়ে যাই আর রেজিস্ট্রেশন করতে আমাকে সাহায্য করেছে আসাদুজ্জামান ভাইয়া। রেজিস্ট্রেশন করার পর স্যারের প্রতিটা পোস্ট আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। এটা করতাম অনুধাবন করার। স্যারের একেকটা সেশন আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। একসময় মনে করতাম আমাকে বোধহয় কারো বউ হয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে হবে।স্যারের সাজেশন গুলো পড়ার পর বুঝলাম আসলে এটা আমার পরিচয় নয়। স্যারের একটা উক্তি ছিল,যেটা হল
""নিজের পরিচয় শুধুমাত্র নিজের কাজ।
কারো বউ কারো জামাই কারো বোন বা কারো চাচা/মামা এর পরিচয় নয়। ""
এই কথাটা শুনে আমি খুব উৎসাহিত হয়ে ছিলাম এবং আমি যে এক সময় চিন্তা করতাম মেয়েদের জন্ম কি শুধুই অন্যের গোলামি করা??? সেই উত্তর টা স্যার এর এই উক্তি থেকে পেয়ে গেলাম আর চিন্তা করলাম আসলেই তো, আমি কেন অন্যের পরিচয়ে সারাটা জীবন কাটাব?কেন অন্যের পরিচয়ে মানুষ আমাকে চিনবে???
আমি কি শুধুমাত্র কারো বউ কারো মা বা কারো বোন?
আসলে আমার স্বামীও চাইতেন আমি কিছু একটা করি। আমার নিজের একটা পরিচয় তৈরি হোক।
গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর দেখতাম প্রতিনিয়ত কত কত আপুরা উদ্যোক্তা হয়েছেন এবং হচ্ছেন। সবাই নিজের পরিচয় তৈরি করার কাজে ব্যস্ত। আমি তাদের লেখাগুলো খুব মন দিয়ে পড়তাম এবং উৎসাহ পেতাম।
আর আমাদের #নিজের_বলার_মত_একটি_গল্প_ফাউন্ডেশন থেকে শিক্ষা নিয়ে সাহস করে আমি আবার শুরু করলাম আমার সেই আগের ব্যবসাটা।
কারন স্যার এর শ্লোগান,,
"স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
শুরু করুন
এবং
লেগে থাকুন "
এই শ্লোগানকে অন্তরে গেথে আমি আবার শুরু করলাম।
আমি চিন্তা করলাম যদি আমার মত আরো দশটা মেয়ে নিজের সংসার ও বাচ্চা সামলিয়ে ব্যবসা করতে পারে আমি কেন পারব না??? পারব ইনশাআল্লাহ। ইচ্ছা শক্তি নিয়ে আবার শুরু করে দিলাম। অনেক বাধা বিপত্তি এসেছে এবং এখনও আসছে। আমি থেমে থাকিনি, লেগে থেকেছি। কারন আমার পরিচয় তৈরি করতে হবে। নিজের পরিচয়। যেখানে মানুষ আমাকে চিনবে শুধু আমাকে।
কারো মা বা কারো বউ পরিচয় নয় নিজের প্রতিষ্ঠানের পরিচয় আমি পরিচিত হতে চাই। যে পরিচয় সন্তানরা আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করবে।
❤️আমি চির কৃতজ্ঞ আমাদের প্রিয় স্যারের কাছে সবসময় কারণ তার সহযোগিতায় আজ আমি আবার স্বপ্ন দেখছি নিজের পরিচয় তৈরি করার। আমার খুব ইচ্ছে যেদিন আমি প্রথম শোরুম উদ্বোধন করব সেদিন আমি স্যারকে দিয়ে উদ্বোধন করাব ইনশাআল্লাহ। সবাই দোয়া করবেন, যেন সফল উদ্যাক্তা হতে পারি।
নিজের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার যে শিক্ষাটা আমি আমার স্যার জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ এর কাছ থেকে পেয়েছি তার জন্য স্যালুট জানাই স্যার কে।
আবারো ধন্যবাদ জানাই প্রিয় মেন্টর কে যিনি অন্যের জন্য কাজ করার মাধ্যমে নিজের জন্য শান্তি খুজে পাওয়ার শিক্ষা ও নিজের স্বপ্ন কে বাস্তবে রূপ দেওয়ার শিক্ষা আমাদের নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছেন।
সর্বশেষ বলতে চাই যার জন্ম না হলে আমাদের এই ফাউন্ডেশনের জন্ম হত না আর এই ফাউন্ডেশনের জন্ম না হলে এত লক্ষ লক্ষ স্বপ্নবাজ তরুণ তরুণী একত্রিত হয়ে তাদের স্বপ্নের বীজ রোপণ করার সুযোগ পেত না।
স্যার এর শিক্ষা বেচে থাকুক যুগ যুগ ধরে আমাদের মাঝে।
আমি
_______________________________________
আফরিন সুলতানা
ব্যাচঃ ৯ম
রেজিষ্ট্রেশনঃ ৯৩০৯
উপজেলাঃ লোহাগড়া
জেলাঃ চট্টগ্রাম

ফরিদপুর জেলা টিম কর্তৃক আয়োজিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি -২০২৪

ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥

পর্দাশীল ঘরোয়া নারী- সফল উদ্যোক্তা

আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।