See More Post

এমনও দিন গেছে আমাদের হাঁড়িতে ভাত ছিল না

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আসসালামু আলাইকুম
সকল প্রশংসা আল্লাহর। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি আমাদের প্রিয় মেন্টরের প্রতি যিনি অনেক সুন্দর একটা প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন ।
আমার নিজের জীবনের গল্প:
আমার নিজ জেলা মাদারীপুর ,আমি বর্তমানে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর অবস্থান করছি।
আমার বাবা ছিলেন একজন টাইলস কন্টাক্টর এবং আমার মা গৃহিণী।
আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হাজারীবাগ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছি, নবম-দশম রায়ের বাজার হাই স্কুল থেকে, এবং কলেজ লাইফ শেষ করেছি ঢাকা স্টেট কলেজ থেকে ,এর পাশাপাশি আমি ডিপ্লোমা এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (NIET) থেকে।
আমরা তিন বোন এবং এক ভাই। আমাদের এই ছয় সদস্যের পরিবারটি খুব সুন্দর ভাবে ছিল।
আমার মা বাবার সব সময় ইচ্ছে যে আমরা ভাই বোন জীবনে বড় কিছু করব এবং ভালো একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করব।
এর জন্য প্রতিনিয়ত তাঁরা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আমাদের ভাইবোনদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছে। অনেকেই অনেক কথা বলেছে ,"মেয়েদের এত লেখাপড়া করিয়ে কি হবে ?"
কিন্তু আমার বাবা-মা তাদের কথা শুনে থেমে যায়নি, মা-বাবা বলেছে আমাদের সকল স্বপ্ন ওদের মধ্যে দিয়েই পূরণ হবে ।আমরা যতটুক পড়ালেখা করার সুযোগ পাইনি ওদের তার থেকে বেশি সুযোগ করে দিব পড়ালেখার জন্য। গড়ে তুলবো একজন ভালো মানুষ হিসেবে।
আমার আত্মীয়-স্বজন সকলেই গ্রামে বসবাস করে। আমার বাবা ছিলেন তার পরিবারের সাত ভাই বোনের মধ্যে বড়।পরিবারের সকল দায়িত্ব আমার বাবার উপরে ছিল।
হঠাৎ করে আমার বাবা ২০১৮ জানুয়ারি মাসে ইন্তেকাল করেন।
এলোমেলো হয়ে যায় আমাদের সুন্দর পরিবার। ওই মুহূর্তে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মত কোন লোক ছিলনা। যতই আপন থাকুক না কেন আপনি খারাপ সময়ে মানুষ চিনতে পারবেন। বুঝতে পারবেন কে আপনার পাশে রয়েছে।
আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমার মা এবং আমরা ভাইবোনেরাই একে অপরের সঙ্গী হিসেবে আছি।বাবা মারা যাওয়ার পরে আমরা গাজীপুরের দিকে চলে যাই,ওইখানে আমাদের কিছু জমি ক্রয় করা ছিল ।তাই আম্মু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওখানে চলে যাওয়ার।কারণ আমাদের লেখাপড়া এখনো শেষ হয়নি, গ্রামে চলে গেলে আমাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে তাই।পরে প্রয়োজনের তাগিদে ঢাকায় চলে আসা।
আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাদের লেখাপড়া শেষ করার জন্য চেষ্টা চালিয়েছে। বাবা থাকা অবস্থায় আমরা ৫ রুম এর একটা ফ্লাটে থাকতাম, খাবারের ও কখনো অভাব হয়নি। কিন্তু পরে শুধুমাত্র একটি রুমে ও আমরা থেকেছি, আর খাবার সেটা তো নাই বললাম। ভাগ্যে এক বেলা খাবার জুটলে সেটাই অনেক ছিল। আমার মা কখনো রুম থেকে বের হতো না ,বাসে উঠলেই অসুস্থ হয়ে যেত ,আজ সেই মা-ই বাবা মারা যাওয়ার পরবর্তীতে টাইলসের কন্টাক্টর হিসেবে নিজে কাজ করে গেছে। সকালে বের হতো রাতে বাসায় আসতো। সারাদিন না খেয়ে কাজ করে যেতো। একজন মা কতটা কষ্ট করে তা তখন বুঝার বাকি ছিল না।
আমি ও চেষ্টা করেছি কিছু করার যাতে ,ভাল না থাকলে ও বেঁচে থাকতে পারি।প্রতিটা দিন বেঁচে থাকার জন্য জীবনের সাথে লড়াই করতে হয়েছে।
বিভিন্ন জায়গায় কাজ খুঁজেছি।যখন কোন কাজ পেয়েছি চেষ্টা করেছি ওইটাই করার। ।বিভিন্ন সুপার শপে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করেছি, টিউশনি, হাতের কাজ,বিভিন্ন কোম্পানির ইভেন্টে কাজ করেছি।
সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকে ও কাজ করেছি।
আমার মনে আছে, আমার জীবনের প্রথম কাজ ছিল সেলসম্যান হিসেবে। ১০ টাকার জন্য ও বহুদূর পায়ে হেঁটে কাজ করতে গিয়েছি, গাড়িতে না উঠে। ভাবতাম ১০টাকা ও অনেক কিছু।
আসলে ওই সময়টাতে ১ টাকা ও কোটি টাকা ছিল আমার কাছে।আমি প্রথম যখন কাজ করতে গিয়েছিলাম "স্বপ্ন" সুপারশপে তখন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯:৩০ টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোরবানির ঈদের একদিন আগে জয়েন করেছিলাম।তখন ডিউটি শেষে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিল ।কারণ আমি কখনো এর আগে কাজ করিনি, তার উপর এতটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে। হাজার মানুষ একটি সুপার শপে আসা-যাওয়া করতো তাদের সামনে সারাদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম। তার একদিন পরেই কুরবানীর ঈদ ছিল। আমি নতুন জয়েন করেছিলাম তাই শুধুমাত্র ঈদের দিন আমাকে ছুটি দিয়েছিল,একদিনের জন্য । কুরবানীর ঈদের পরদিন থেকে,আমি আবার ডিউটি করেছি।মনে হয়েছিল দ্বিতীয় দিন থেকে আর যাব না ।কিন্তু ভাবলাম যদি না যাই,তাহলে এর থেকে বেশি কষ্ট হয়ে যাবে বেঁচে থাকতে। বেঁচে থাকার চিন্তায় ঈদ আনন্দ বলে কিছু ছিল না ।ছিল শুধু কিভাবে বেঁচে থাকবো এই চিন্তা।এভাবেই আস্তে আস্তে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট কাজ করা শুরু করলাম। কারন একটা মেয়ে হিসেবে সম্মানের সাথে কাজ পাওয়া কঠিন। বেঁচে থাকতে হবে এটা ভেবেই কাজ করা শুরু কারণ-
এমনও দিন গেছে আমাদের হাঁড়িতে ভাত ছিল না।
বাজার করার মত ও টাকা ছিল না।
সারাদিন ও না খেয়ে থাকতে হয়েছে।
আর তা দেখার মত কেউ ছিলনা তাই যেভাবে বেঁচে থাকা যায়,সেভাবেই চেষ্টা করেছি জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ।
তবে আমার সবসময় ইচ্ছে ছিল ভালো কিছু করার ।
আমি এরমধ্যে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে আইটি বিভাগ কাজ করেছি। আমার তখন মনে হয়েছিল আসলে অন্যের চাকরিতে কোন স্বাধীনতা নেই, নিজের মত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই বরং প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় যাওয়া এবং কাজ শেষ করে আবার নির্দিষ্ট সময় বাসায় আসা এ পর্যন্তই ।
আমি ডিপ্লোমা থাকা অবস্থায় ফ্রী সময়টুকু বিভিন্ন কোর্স করেছি যেমন -জাতীয় মহিলা সংস্থা থেকে বিউটিফিকেশন, ইন্টেরিয়র এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট,বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এবং ৩৬০ ঘন্টার কম্পিউটার বেসিক কোর্স করেছি।
এই কোর্স গুলো যখন আমি করেছি তখন অনেকেই বলতো, আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পরে কেন উদ্যোগক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি!?এত টাকা দিয়ে পড়ে,উদ্যোক্তা হবো!
আমি তাদের একটা কথাই বলতাম- "আমার ইচ্ছা নিজ উদ্যোগে কিছু করা,আর নিজের মনের যা ভাল লাগে, প্রতিটি মানুষের ও উচিৎ ওই কাজ করা।"
কিন্তু আমি সঠিক দিক নির্দেশনার কারণে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছিলাম না ।
সাহস করতে পারছিলামনা এগিয়ে যাওয়ার।
তখন আমি নিজের বলার মত একটা গল্প প্লাটফর্মে আবারো সময় দিতে শুরু করলাম ।আমি এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছিলাম আরো আগে তখন স্যারের একটি ভিডিও আমার খুব ভালো লেগেছিল। ফেসবুক চালাতে গিয়েই আমি এই প্ল্যাটফর্মের সন্ধান পাই।
পরবর্তীতে চাকরি থাকা অবস্থায় আমি ভাবলাম আসলে কি করা উচিৎ ।আমার জীবনে একজন ভালো মানুষ হিসেবে আমি নিজেকে তুলে ধরতে চাই। আমারও একটি গল্প তৈরি করতে চাই ।ভাবতে ভাবতে আমাদের প্রিয় স্যারের সেশন গুলোর কথা মনে পড়লো যে
"স্বপ্ন দেখুন
সাহস করুন
লেগে থাকুন সাফল্য আসবেই।"
আমার স্বপ্ন রয়েছে স্যারের অনুপ্রেরণা পেয়ে আমি সাহস করলাম এখন লেগে আছি ইনশাল্লাহ আমারও সফলতা আসবে।
স্যারের প্রতিটি সেশনই খুব চমৎকার ভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। স্যার এ কথাও বলে থাকে যে,
"বৃষ্টি পরে সবার জন্য কিন্তু ভিজে কেউ কেউ।"
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব, আলহামদুলিল্লাহ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সব সময় পাশে থেকেছে প্রিয় মেন্টর স্যারের তৈরি করা ফাউন্ডেশনের ভাই বোনরা।
।এই প্লাটফর্মে আমি সময় দিতে শুরু করি নিজেকে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি সেশন ক্লাসে যুক্ত হই, সেশন গুলো নিজের মধ্যে ধারণ করি, শেখার চেষ্টা করি বিষয়গুলো। এখন আমার মধ্যে সেই সাহসটা রয়েছে এগিয়ে যাওয়ার নিজেকে সামনের দিকে বাড়ানো আমি এখন বলতে পারব -"আমি একজন ভাল মানুষ " এবং আমি আমার মা বাবার স্বপ্ন পূরণ করছি।
আমি এই প্ল্যাটফর্মকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই।
এই প্লাটফর্মে শুধু শিক্ষা নয়, বাস্তবের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিটি মন্ত্র মনে হয় এখানে পাওয়া যায়।
ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে শেষ করছি প্রিয় মেন্টরের প্রতি যিনি টানা ৯০ দিন বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং আমাদের পজিটিভ ভাবে মনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছেন এখন আমার নিজের বলার মত একটা গল্প রয়েছে।
ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি জীবনে সফল হতে পারি।

📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৩১
Date:- ২৬/০১/২০২২ইং
🍁 নাম-পিংকি আক্তার 🍁
ব্যাচ: ১১তম
জেলা: মাদারীপুর
বর্তমান অবস্থান: ঢাকা
রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ২৬৫৯৯
আমি কাজ করছি ড্রেস নিয়ে ।
স্বত্বাধিকার- Tanzin Collection

ফরিদপুর জেলা টিম কর্তৃক আয়োজিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি -২০২৪

ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥

পর্দাশীল ঘরোয়া নারী- সফল উদ্যোক্তা

আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।