নিজের বলার মত একটা গল্প গ্রুপে স্যারের দেওয়া প্রতিটি সেশন মনোযোগ সহকারে অধ্যায়ন করে বুঝতে পারলাম যে ব্যর্থতা থেকেও অনেক কিছু শিখার আছে।
সর্বপ্রথম কর্মজীবনের হাতে খড়ি একটি ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে। স্বল্প বেতনে লম্বা ডিউটি। কিন্তু উপায় নেই গোলাম হোসেন করতেই হবে। কারণ পিঠ দেয়ালে ঠেকা।
মনে পড়ে চাকরির প্রথম দিনটির কথা। কোম্পানির ব্রিফকেস হাতে নিয়ে চারবার বাইরে এসে আবার ঘরে চলে গিয়েছি, কারণ বন্ধুরা দেখলে কি বলবে এই সংকোচে। সে সময়ের অনুভূতি আজকের এই পোস্টে আমি লিখব না, অনেক লম্বা হয়ে যাবে।
মাত্র 7-8 মাস পর হঠাৎ করেই বসের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে চাকুরীটি রিজাইন দিলাম।
অমানিশার কালো অন্ধকারে জীবন আচ্ছন্ন হয়ে গেল। অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে লাগল জীবন। কিছুদিন ব্রেকের পর এক বন্ধুর উৎসাহে নিজেই ঔষধের ব্যবসা শুরু করলাম।
মাত্র 19 00 টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করে মাশাল্লাহ ভালোই ছিলাম। বছর তিনেকের মধ্যে ব্যবসাটি করার মতো মোটামুটি ভালো পুজিও হয়ে গেল আমার।
এক আত্মীয়র শলা পরামর্শে ঔষধের ব্যবসা ছেড়ে গুলিস্তানে দোকান নিলাম প্যান্টের ব্যবসা করার জন্য। আমি প্রথমে অমত থাকলেও, শেষ পর্যন্ত একটা সময়ে রাজি হয়েই গেলাম।
এ ব্যবসা আমি জানতাম না। পুরোপুরি ওই আত্মীয়র উপরেই নির্ভর করা ছাড়া উপায় ছিল না। এই ব্যবসা টার সাথে আমি কোনভাবেই এডজাস্ট হতে পারছিলাম না। কিছুদিন যেতে না যেতেই এখানে শুরু হয়ে গেল ঝামেলা। এখানেও বছর তিনেক ব্যবসা করার পর আর করা সম্ভব হলো না। ঘরে গেলাম শূন্য হাতে। মূলধন ফিনিস। শুরু হলো নিত্য নতুন কাহিনী।
বিভীষিকাময় এক কঠিন অধ্যায় শুরু হলো জীবনের। পথ হারা পথিকের মত দিশেহারা হয়ে জীবনের পথ খুঁজছি। কিছুতেই মিলাতে পারছিনা।
এভাবেই নষ্ট হয়ে গেল জীবনের মূল্যবান বেশ কিছু সময়। তন্দ্রাহীন একরাতে সিদ্ধান্ত নিলাম, বিদেশ চলে যাব। মা বাবাও বড় ভাইকে সিদ্ধান্তটি জানানোর পর তারা সমর্থন দিলো না। এখানে আরেকটু কথা বলে রাখি, দেশে কিছু করতে চাইলে কেউ টাকা দিবে না, তাই বাধ্য হয়ে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। অভিভাবকরা বলল তুই বিদেশ গিয়ে কাজ করতে পারবি না। বিদেশ খুব কঠিন। যাই হোক অবশেষে একটু পাগলামি করেই সিদ্ধান্ত টায় সফল হই।
এতক্ষণ যা লিখলাম তাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো হলো-রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, ধৈর্য সহকারে কোন কাজেলেগে থাকতে না পারা, ঘনঘন কাজ পরিবর্তন করার মন মানসিকতা, পার্টনার নির্বাচন করার অনভিজ্ঞতা,, পার্টনার নিয়ে ব্যবসা করার শর্ত সম্বন্ধে জ্ঞান শূন্যতা,
উপরোক্ত কারণগুলো সম্বন্ধে সজাগ সচেতন হয়ে, দক্ষতা অর্জন করে কেউ ব্যবসা শুরু করলে আশা করি কেহই ব্যর্থ হবেন না।
নিজের বলার মতো একটা গল্প গ্রুপে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করছি। যদিও তারুণ্যের সময়ে পেলে আজ আফসোস করতে হতো না। এমন মহামানবের সান্নিধ্য পেলে চমৎকার জীবন গড়ে তুলতে পারতাম।
বিধাতাই জানে কাকে কিভাবে কখন সুখ ও দুঃখ দিবেন। আগেই যদি সফল হতাম তাহলে হয়ত এই প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ থাকতো না। এই গ্রুপে যুক্ত হয়ে যে ভালোবাসা পাচ্ছি আগেই সফল হলে হয়তো এই ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতাম।
এই প্ল্যাটফর্মের ভাইবোনেরা আমাকে অনুপ্রেরণার উৎস বলে কমেন্টস করে। আমি খুবই আনন্দিত। আমি ৫২ +এ এসে পারলে তারা পারবে না কেন? আমাকে দেখে তারা শক্তি সাহস সঞ্চয় করে ধৈর্য ধারণ করে জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার যদি একটু প্রয়াস পায়, তবেই বা খারাপ কি?
তবে হ্যা, নিজের বলার মত একটা গল্প গ্রুপ ফাউন্ডেশনে যুক্ত হয়ে আমি ও আজ স্বপ্ন দেখার শক্তি ও সাহস পেয়েছি।
যারা আমার এই লেখা টি কষ্ট করে পড়বেন তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। আমি এই প্ল্যাটফর্মের সকল ভাই ও বোনদের সুন্দর জীবন কামনা করে আজ এই পর্যন্তই ।
ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥
আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।