See More Post

সফল বুদ্ধিমতী ভদ্রমহিলা

আসসালামুয়ালাইকুম আমার নাম ফারজানা খানম জিতু অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন আমার নামের অর্থ কি আমি যতটুকু জানি ফারজানা নামের আরবি অর্থ মেধাবী, বুদ্ধিমতী, জ্ঞানী।।

খানম শব্দের অর্থ ভদ্রমহিলা।

জিতু শব্দটি হিন্দি। শব্দের অর্থ সফলতা।।।

তাহলে আমার নামের অর্থটা আমি এভাবেও বলতে পারি সফল বুদ্ধিমতী ভদ্রমহিলা।।।

 সত্যি কথা বলতে আজকের আগে আমি নিজেও কখনো এভাবে আমার নামের অর্থ সাজিয়ে ভাবি নি।।

 আজকে ভাবলাম।

 আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম।।

 শেয়ার করার একটা কারন কি জানেন, প্রায়ই আমাকে শুনতে হয় জিতু নামটা ভালো না। জিতু নামটা কোন অর্থ নেই। গতকালকেও কোন একটা কারনে আমার নামটা নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ করেছেন আমার পরিচিত কয়েকজন। যার একটা পর্যায়ে আমার কষ্ট লেগেছে।।

 যাই হোক আমি জানি আমার নামটা কেন জিতু।

 আমি যখন আমার মায়ের গর্ভে তখন আমার বাবার জীবনে নেমে এসেছিল অনেক কষ্ট।। 

ফরিদপুর জেলার নিউমার্কেটে আমার বাবার বেশ বড় দোকান ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আমার বাবা তার আপনজনদের থেকে কষ্ট পান। 

একথা আমার বাবা-মায়ের মুখে শোনা নয়।।

 এ কথাগুলো শুনেছি আমার বাবার চাচা-চাচি,আমার বাবার ফুপু,তাই গ্রামের লোকজনের মুখে।। 

আমার বাবার ফুপু,  চাচা-চাচিকে আমি অনেক ভালোবাসতাম। যদিও তাদের সঙ্গে খুব বেশি সময় আমার পার করা হয়নি।। কিন্তু তাদের মায়া-মমতা আমাকে খুবই আকৃষ্ট করে।। 

আল্লাহ তাদের জান্নাতবাসি করুন।।। 

তাদের মুখ থেকে শুনেছি আমার বাবা নয় বছর বয়স থেকে দাদার সংসারের বোঝা বইতে শুরু করেন।।। বিশাল জমিদার ছিলেন আমার দাদার পরিবার।

 কিন্তু আমার দাদা জমি বিক্রি করেছেন আর খেয়েছেন।। তাই তার সংসারের বোঝা পরে আমার বাবার ঘারে।। 

সংসারে তার বড় এক ভাই এক বোন আর তার ছোট ছিলেন ৭ জন ছোট ভাই বোন।। 

সকল ভাই বোনদের কেউ পড়ালেখা শিখিয়েছেন। নিজে খুব বেশী দূর পড়ালেখা করতে পারেননি। কোনো রকমে নিজের স্বাক্ষর টা করতে পারেন।।। সেই ভাইয়েরাই আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। সুধীজন সেজে বসে আছেন।। 

❤️আসলে সম্মান জিনিসটা অর্জন করতে হয় টাকা দিয়ে কেনা যায় না ❤️

আমার বাবার দোকানটা ছিল তার বড় ভাইয়ের সাথে। যদিও শুধু নামটাই তার বড় ভাইয়ের সাথে যুক্ত ছিল। কিন্তু টাকা,কাজকর্ম সব কিছুই আমার বাবার ছিল। আমার বাবা পড়ালেখা জানতেন না বিধায় চাচা নামে ব্যাংক একাউন্ট সহ কাগজপত্রগুলো তৈরি করেছিলেন।। টেন্ডারের কাজ করতে হতো। সরকারি অফিসের কিছু কাজ থাকত। যেগুলোর কাগজপত্র আমার বাবা ভালো বুঝতেন না। তাই তার বিপত্তি।।

 অগাধ অন্ধ বিশ্বাস থাকলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠকতে হয়, তেমনই হয়েছে।।।। আমার বাবার সরলতার সুযোগে কোন মুহূর্তে তার দোকানটা তার বড় ভাই বিক্রি করে সমস্ত টাকা নিয়ে চলে গেছেন আমার বাবা সেটা বুঝতেও পারেননি।।। একটা পয়সাও আমার বাবাকে দেননি।।।

👉 একদিন আমার বাবার চাচা আমাকে বলেছিলেন তোর বাপ পাগলের মত দাদা-দাদী আর চাচার পায়ে ধরে কান্না করেছিল,তারা তাও একটা পয়সাও দেয় নি।।

 আমি তখন মায়ের গর্ভে।। একটা গর্ভবতী মহিলা আমার মা।। কতটা কষ্ট করেছেন তখন।।। 

আমার নানার বাড়িতে বাবা-মা থাকতে শুরু করেন। বাবা-মা অনেক কষ্ট করেছেন।

 কিন্তু আমার বাবা উদ্যমী সাহসী এক মানুষ তিনি  কঠিন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন খুব অল্প সময়ে।।। 

তার দোকান বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরে শুনেছি সে নাকি পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ সহায়-সম্বলহীন এক মানুষ হয়ে পড়েছিলেন।। 

যখন আমাদেরকে নিয়ে মার্কেটে যেতে মা বাবা তখন আমার মা অনেকবার আমাকে বলেছেন ঐ সিঁড়ির নিচে আমার বাবা মেশিন নিয়ে বসে সেলাই করতেন।। শুধু আমার মা নয় ওই মার্কেটের আমার বাবার বন্ধুরা- আত্মীয়রা আমাকে দেখাতেন, 

♥️এখানে তোর বাবা বসে বসে সেলাই করত।। অনেক কষ্ট করেছে তোর বাবা।♥️

 আমার বাবা সেই জায়গা থেকে কয়েক মাসের ব্যবধানে ঘুরে দাড়ান।। আমার নানা নানী আমার বাবার পাশে দাঁড়ান।।।

 ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক নাম্বার গেটের পাশেই বিশাল বড় সাইনবোর্ড উঠে যায় 

🎁জিতু মাষ্টার টেইলার্স🎁 

যদিও তখন পর্যন্ত আমার জন্মই হয়নি আমার বাবা নাকি কষ্টে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাত দিন পরিশ্রম করতেন।। আর পাশে অতন্দ্র প্রহরী হয়েছিলেন সবসময় আমার মা।।।

 আমার মা আমাকে বলেছেন, আমার বাবা  আমার জন্মের আগেই যখন নাম ঠিক করেন।

 🌱আমার বাবা নাকি বলেছিলেন ছেলে হোক আর মেয়ে হোক বাড়ি থেকে জিদ করে চলে এসেছি,এ ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছি সন্তান যেই আসুক তার নাম জিতু হবে ♥️

তাই নামের সাইনবোর্ড তৈরি হয়ে যায়। 

তৈরি হয়ে যায় আমার বাবার দোকানের ক্যাশমেমো।।

 ছোট্ট ছোট্ট করে বেশ বড় পর্যায়ে দোকানটা একসময় দাঁড়ায়। 

আমি যদি এরকম ঘটনা দেখতে চাই হাজারো ঘটনা চলে আসবে।। 

কিন্তু আজ এই ঘটনাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করার একটাই কারণ হচ্ছে,, আমার বাবা আর আমার মা আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।।

, 🌱আমার বাবা মা  শিক্ষিত নন।

 🌱আমার বাবা সামাজিকতা এতটা বোঝেনা।

🌱 আমার বাবা পরিবারকে কিভাবে সময় দিতে হয় সেটাও বোঝেন না।

 🌱আমার বাবা অনেক কিছুতেই একঘেয়ে।

♥️আমার মা আমাকে সবসময়ই বলেন তোর বাবা আর যাই করুক সৎ ইনকামের টাকা দিয়ে তোদেরকে মানুষ করেছে ♥️

অনেক সম্মান করি♥️ ভালোবাসি অনেক বাবা-মা কে

 এখন বুঝতে পারি দিন যত যাচ্ছে বাবার প্রতি ততটাই সম্মান বাড়ছে।।

 যখন নিজে কষ্ট করে ইনকাম করি তখন বুঝতে পারি আমার বাবাও ঠিক কতটা কষ্ট করেছে।।। 

যখন অনেক ঝড়ের পরে ভাবি আর বুঝে উঠে দাঁড়াতে পারবো না। সত্যি তখন চিন্তা করি বাবা কতটা কষ্ট পেয়েছিল যখন তার ভাইয়েরা তার সঙ্গে এমন করে ছিলো। যখন শূন্য হাতে তিনি নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করেছেন।। 

♥️বাবা একটা পরিবারের মাথার ছাদ, আর মা হচ্ছে সেই ছাদের খুঁটি♥️

সবার জীবনে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়- চাকরি বা ব্যবসা ক্ষেত্রে  আইডল থাকেন।

 থাকেন অনেক মেন্টর।

 আমার কাছে আমার মা বাবা পৃথিবীর সেরা মেন্টর।। সেরা শিক্ষক।। তারাই আমার আইডল।। 

আমাদেরকে অঢেল টাকা পয়সায় মাঝে বড় করতে পারেননি।। কিন্তু ভালোবাসার কমতি নাই।

🌹🌹

পরিবার একটা মানুষের প্রথম বিদ্যালয়। আমরা সেই বিদ্যালয়ের সুশিক্ষকের কাছ থেকে সুশিক্ষা অর্জন করতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ

হয়তো ভাগ্যের পরিহাসে নিজের জীবনে তৈরি হয়েছে না বলা অনেক কথা। হয়তো বাবা মার জন্য মন থেকে ঠিক যতটুকু করতে চাই ততটুকু পারি না।

 তারপরও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সব সময় দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমার বাবা-মাকে সুস্থ রাখেন। ভাল রাখেন। 

বাবা-মা একটা সন্তানের নাম দেন অনেক আশা করে।

না জেনে না শুনে কেউ যখন মন্তব্য করে সেই নামটা ভালো না খারাপ।।

 তখন একটু কষ্ট লাগতেই পারে।। একবারও কি আমরা ভেবে দেখি কারও নাম নিয়ে  এরকম কথা বলার আগে তার নামের পিছনে কি কাহিনী রয়েছে???


📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭৪০

Date:- ১০/০২/২০২২ইং

🧕ফারজানা খানম জিতু 

✨✨ ক্যান্টনমেন্ট থানা অ্যাম্বাসেডর

🏅রেজিস্ট্রেশন নাম্বার 13816

🎖️ব্যাচ নাম্বার 10 

🏘️জিলাঃফরিদপুর। 

🏩বর্তমান মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট থানা গুলশান জোন।।।

ব্যবসায় পেজ

Rose Petals 

...................  &

Hasnahena

ফরিদপুর জেলা টিম কর্তৃক আয়োজিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি -২০২৪

ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥

পর্দাশীল ঘরোয়া নারী- সফল উদ্যোক্তা

আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।