প্রবাস জীবনে ৭০-৮০ হাজার টাকা ক্ষতি হবার পরে হতাশ হয়ে ফাউন্ডশনে যুক্ত হই।
একটা ভুল সারাজীবনের কান্না
আমার জীবনের গল্প
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্।
কৃতজ্ঞতা সেই মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি যার দয়ায় ও মায়ায় পৃথিবীর বুকে এসেছি।এখনো স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি
শুকরিয়া আদায় করছি, ইসলামের কান্ডারী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর প্রতি।যার উম্মত হিসেবে পৃথিবীতে মুসলিম জাতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারি।লক্ষ কোটি দরুদ পাঠ করছি আমার প্রিয় নবীজি সাঃ এর প্রতি।
আমার রত্নগর্ভা মা,বটবৃক্ষ বাবা।যাদের জন্য পৃথিবীর আলো-বাতাস পেয়ে আজকে আপনাদের সামনে পর্যন্ত আসা।
বাংলার ইতিহাসে রচনা হবে একদিন কিংবদন্তি জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ জাহিদ স্যারের নাম।আমাদের লাখো প্রাণের স্পন্দন প্রিয় মেন্টর, তারুণ্যের শক্তি প্রিয় স্যারের জন্য হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সুস্থতার নেয়ামতে আল্লাহ রাখুন এই প্রার্থনা সবসময়।
আমার মত ক্ষুদ্র মানুষ আপনাদের মাঝে নিজের জীবনকে অল্প পরিসরে তোলার চেষ্টা।
প্রিয় মেন্টর জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার আমাদের প্রবাসীকে

অক্সিজেন

আখ্যা দিয়েছেন। এই সম্মান আমরা কমই পাই।যারা মনে করে প্রবাস মানেই কাড়িকাড়ি টাকা। জীবনটা আসলে মুদ্রার উল্টো পিঠ।
আমার জীবনের গল্প পড়ার অনুরোধ জানিয়ে শুরু করলাম আমার গল্পঃ
আমার জন্ম নরসিংদী জেলার, সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের দড়ি নবীপুর গ্রামে।স্বনামধন্য পরিবারে আমার জন্ম হয়।
একটা ভুলের খেসারত বয়ে বেড়াতে হয় আজীবন। আমার বাবার নেওয়া একটা সিদ্ধান্ত আমাদের জীবন অসহনীয় করে তুলেছিল।তারপরও বাবা নামক বটবৃক্ষ আমার কোনো অভিযোগ অনুযোগ নেই।
আমাদের বংশীয় মর্যাদা এমন ছিল যে,প্রতিবেশী বা দূর দুরান্ত থেকে কেউ আসলে আমাদের বাড়ির নাম বললে চিনত।আমাদের পাশে ওনাদের বাসা এটাও ছিল গর্বের বিষয়।
অথচ এই পরিচয় দিতে একটা সময় আমাদের লজ্জা লাগত


আমরা ৫ভাই ১বোন।
আমরা বড় দুভাই হওয়া পর্যন্ত সংসারে সুখের অন্ত ছিলোনা।সুখ শব্দ চিরস্থায়ী না।
আমরা বাবা এবং মামা রাজনৈতিকভাবে দুদলে বিভক্ত ছিল।
আমার দাদা কাজের সূত্রে নরসিংদী শহরে আর বাবা গ্রামে থাকত।
আমার চাচাত জেঠা কৌশলে আমার বাবাকে বিয়ে করিয়ে দিল আমাদের বাসার কাজের বুয়ার সাথে। উদ্দেশ্য ছিল আমাদের সংসারে গন্ডগোল পাকিয়ে খুনাখুনি পর্যায়ে গেলে আমাদের সম্পত্তি সহজেই আত্মসাৎ করা।
আমরা দুভাই যখন খুব ছোট ৪/৫ বছরের তখন, বাবার সম্পত্তি চাচাত জেঠা কলাকৌশলে লিখিয়ে নেন।আমার মা এসবের কিছুই জানত না।


বাবার ২য় বিয়ে ২/৩ মাস ও টিকেনি। আমার নানার অনেক আদরের মেয়ে আমার মা।নানা আমার মাকে নিয়ে যায়। আমার মা ভিতরে ভিতরে নিঃশেষ হয়ে গেছিল।বাবার এমন আচরণ মাকে চুরমার করে দিচ্ছিল।
বাবা ওই মহিলাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসে।মাকে নিয়ে সংসারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা তদবির করে,কিন্তু পণ্ডশ্রম। নানা বাড়ির কেউ দিবেনা আমার মাকে।আমার মামারা সিদ্ধান্ত নেন মাকে অন্যত্র বিয়ে দিবে।মা আমাদের দিকে তাকিয়ে জানিয়ে দেয়,মা কখনোই দ্বিতীয় বিয়ে করবেনা।আমার বাবা এতটা নিকৃষ্ট কাজ করেছে,ওনার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখাও কঠিন।তবুও মায়ের মন সন্তানের মঙ্গলের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিল।
মায়ের জবাবও মামার মনপুত হয়নি।মামা রাগ করে প্রায় ১৭/১৮দিন ঘর থেকে বের হোননাই।যেহেতু কোনোভাবে ই মামাকে রাজি করানো যাচ্ছিল না।মা বাবার হাত ধরে চলে আসে খাগড়াছড়ি।সংগ্রামী জীবন শুরু। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করেন।পরবর্তীতে নিজেই ব্যবসা শুরু করেন।৭/৮বছর চেষ্টা করেও সফলতার মুখ দেখতে পাচ্ছিল না।
আবারও নরসিংদী ফিরে আসা।মামা আমাদের কোনোভাবেই আশ্রয় বা জায়গা দিবেনা। মা বেগতিক হয়ে নিজের ওয়ারিশের অংশ চায়।তারপর থেকে ওখানেই বড় হওয়া।

পরিবেশ পরিস্থিতি খারাপ পথে নিয়ে যায়

আমার এক ভাই অসুস্থতা, অভাবের সংসার নানাবিধ কারণে মারা যায়

।এতকিছুর মধ্যেও মা আমাকে স্কুলে পাঠান।কিন্তু পড়াশোনার রেখে আমি সঙ্গে পড়ে ভুল পথে বাড়াই।বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে ওঠাবসা করা,সন্ত্রাসীদের সাথে চলাফেরা করা।এতে করে আমাদের অর্থের অভাব কমে যাচ্ছিল।অর্থ এমন এক জিনিস যার নাই সে বুঝে।আমি এসব কাজ করি আমার পরিবারের কেউ পছন্দ করেনা।পরিবারের সবাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল,আমাকে বিয়ে করালে হয়তবা আমি ভুল পথ ছেড়ে সংসারী হব।

সংসার জীবন

প্রতিটি নারীই ডালভাত হোক স্বামীর উপার্জনে,স্বামীর চলাফেরায় গর্বিত হতে চায়।আমার সংসার পুরোটাই ছোট ভাই চালাচ্ছিল।এমনকি ঘর থেকে কোথাও গেলেও ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে যেতে হয়।
আমার স্ত্রী আমাকে অনেক বুঝাল,"ডালভাত মরিচ দিয়ে খাব, তবুও তোমার ইনকাম করা জরুরি। তুমি ইনকাম করো।হয় নিজে ইনকাম করবা নাহয় না খেয়ে মারা যাব "।
ভুল পথ থেকে সরে এসেছি। হাতে কোনো টাকা পয়সা ছিলনা।কতদিন রাত না খেয়ে কাটিয়েছি হিসাব নেই।
"জোটে যদি একটি পয়সা
খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার
ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী। "
যতই অভাব থাকুক,অন্য কারো সমস্যা দেখলে চুপ করে বসে থাকতে পারিনা।চেষ্টা করতাম সমস্যার সমাধান করার জন্য।
দেশে থেকে কোনো ভাবেই অর্থের মুখ দেখছিলাম না।পেট চালানোর জন্য মুদির দোকান করে অনেক টাকা পয়সার ঋণে পড়ে গেলাম।২০১৩সালে মা স্ত্রী সহ পরিবারের সকলের চেষ্টায় সিদ্ধান্ত নিলাম প্রবাসে পাড়ি জমাব।দালালের মাধ্যমে যাব মালয়েশিয়ায়। ওইদেশে গিয়ে টাকা দিতে হবে।তাই আমি এককথায় রাজি হয়ে গেলাম মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য। শর্ত হলো আমাকে মালের শিপে করে গোপনে পাঠাবে অবৈধভাবে।।
একদিন হঠাৎ রাতে দালাল ফোন দিল আজকই রাতে যেন চট্টগ্রাম চলে যাই।।হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে স্ত্রী ও মায়ের মুখের দিকে তাকানো যায়না


।
২লাখ ২০হাজার টাকা দিতে হবে মালয়েশিয়া পৌছানোর সাথে সাথে। এত টাকা কিভাবে যোগাড় করব মাথায় কুলচ্ছিল না।আমার সহধর্মিণী আমাকে ভরসা দেয়ঃতুমি যাও,টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
রাতেই রওনা দিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য। ওখানে গিয়ে নৌকায় ওঠার পর মনে হলো আমি বিদেশ যাবনা।মাঝিকে অনেক অনুনয় বিনয় করলাম।আমাকে না নিতে।মাঝিকে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে দিব। তবুও আমাকে যেন না নেয়।
মাঝি অপারগতা জানয়।কেননা,আমাকে ছেড়ে দিলো দালাল পক্ষ মাঝির ক্ষতি করবে।নিরুপায় হয়ে বসে রইলাম। দু ঘন্টা পর নৌকাটি বড় নৌকার সামনে পৌছায়।সেটাতে আরো ৫/৬ঘন্টা।
এভাবে করে টানা ১৫দিন ভাত কি জিনিস চোখে দেখিনি।ভাতের সাধ কেমন জানিনা


।
নৌকা বার বার বদল করে প্রায় ২৭দিন পর থাইল্যান্ড পৌছায়।ইতিমধ্যে গায়ের জামা ছিঁড়ে গেছে। জরাজীর্ণ শরীর নিয়ে পারছিলাম না।প্রতিমুহূর্তে মনে হচ্ছিল আজ মনে হয় শেষ দিন।
থাইল্যান্ড নেমে লবণ দিয়ে এক প্লেট ভাত দিল।এই পরিস্থিতি আমার একার না।প্রায় ৯০০মানুষের একই অবস্থা।
ঐদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম জীবনে বেঁচে থাকলে কাউকে কোনোদিন কষ্ট দিবনা।মনে আঘাত দিবনা

থাইল্যান্ড থেকে হেঁটে, পাহাড় বেয়ে,গাড়িতে বিভিন্নভাবে সপ্তাহখানেক পর মালয়েশিয়া বর্ডারে পৌছাই।
কাটাতার দালালের সাহায্য কাটা হয়।জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে মালয়েশিয়া ঢুকি

মালয়েশিয়া ঢুকার পর এক গাড়ি আসে। ৩/৪জনের জায়গায় একই গাড়িতে ১০/১২জন মানুষ ওঠাইছে।একজনের ওপর আরেকজন৷ বস্তার মত ফেলে রাখছে


আওয়াজ করলেই বেধড়ক মারধর করে।প্রায় ৬ঘন্টা পর পেনাং শহরে পৌছালাম। ওখানে দালাল পেটভরে খাওয়াল। জিজ্ঞেস করলো আমি কোথায় যেতে চাই । বলার পর,জানায় দেশ থেকে অতি দ্রুত টাকা আনার ব্যবস্থা করতে।
দালালদের টাকা দিলে জুয়া খেলে টাকা নষ্ট করে ফেলছে।অন্যদের এমন মারধর করে।এসব দেখে আমি দুবার অজ্ঞান হয়ে গেছি।
দেশে পরিবারকে জানালাম এখানকার পরিস্থিতি। বাড়ির মানুষজন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দালালকে হুমকি দেয়।২৪ঘন্টার মধ্যে যেন আমাকে মুক্ত করে দেয়।
আলহামদুলিল্লাহ্ আমাকে অবশেষে মুক্তি দিল।
দীর্ঘ ৭বছর সুমুন্দির সাথে কাজ করেছি।কত টাকা বেতন তাও জানতাম না।আমি কলুরবলদের মত খেটেই যাচ্ছি বিনিময়ে কোনো বেতন পাচ্ছিলাম না।
জায়গা চেঞ্জ করে অন্যত্র কাজ নেই।কাজের গতি ভালো ছিল হবে মোটামুটি ভালো টাকার জব শুরু হয়।মাঝখানে একবার দেশে ঘুরে গেলাম।আলহামদুলিল্লাহ।বিভিন্ন কন্টাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করলাম।
কিন্তু ২০২০/২১সাল পুরো পৃথিবীর মত আমার জীবনও থমকে গেছিল।চাকরির অবস্থান নড়বড়ে। অন্যের উপকার করতে গিয়ে বহুটাকা নষ্ট হয়েছে।আনুমানিক ৭০/৮০লাখ মানুষজনের কাছে পাই।আজকাল করে কেউই দেয়না।
দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে খুজতেছিলাম জীবন কিভাবে চালাব।প্রিয় মেন্টর জনাব
Iqbal Bahar Zahid স্যার প্রবাসীদের অক্সিজেন খ্যাত বলেন।কিন্তু আমার হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলাম।
বিভিন্ন দেনাদার যখন টাকাপয়সা দিচ্ছিলনা।আমার হাত ও শূন্য।এভাবে ঘরবন্দী হয়ে দেশে সংসার চালাতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম অনলাইন থেকে কিছু শিখে কাজ করব।ঘরবন্দী হয়ে মোবাইলে ঘুরপাক করতাম।হঠাৎ একদিন ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে নরসিংদী সদর উপজেলা এম্বাসাডর
রায়হানুর রহমান ভাইয়ার গল্প সামনে আসে।।
যেহেতু নরসিংদীর সদস্যের গল্প, খুব আগ্রহ নিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখলাম।
যা বুঝলাম তখন,রায়হানুর রহমান যদি আগুনে ২৬/২৭লাখ টাকার লাইব্রেরি আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর দুধ বিক্রি দিয়ে নতুন করে শুরু করতে পারে।আমি কেন পারবনা


??
ফাউন্ডেশনের রেজিষ্ট্রেশন
ফাউন্ডেশনে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয় জানতাম না।অনেকই আমার মত জানেনা।মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে ছিলাম প্রতিটা ভিডিও সেশন,গল্প।বহুদিন পর স্যারের পোস্টে জানতে পারলাম রেজিষ্ট্রেশন করে নিবন্ধিত সদস্য হতে হয় কিভাবে করতে হয় সবকিছু খুঁজে বের করে নিজেই করি রেজিস্ট্রেশন। নরসিংদী জেলা ম্যাসেন্জারে যুক্ত হই নরসিংদির আরেক সদর উপজেলা এম্বাসাডর
Tajrin Chowdury Champa আপুর মাধ্যমে।
সেই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আছি যাদুমিশ্রিত প্রিয় নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে।যুক্ত হয়েছি মালয়েশিয়া টিমের সাথে। প্রতিনিয়ত শিখছি,হৃদয়ে ধারণ করছি ভালোমানুষ হওয়ার ব্রত।
জাগো নরসিংদী মহা সম্মেলনে গোল্ড স্পন্সর হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। বিভিন্ন জেন্টস আইটেম নিয়ে কাজ করছি।তন্মধ্যে প্যান্ট,পান্জাবী অন্যতম।
প্রবাসে থেকেও দেশের জন্য কিছু করা যায় জানতাম না।কেউ বলে দেয়নি।প্রিয় শিক্ষাগুরু জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার প্রতিনিয়ত আমাদের এত সম্মান দিচ্ছেন ভাষায় প্রকাশ করার মত না।
আমি আমার জীবনের বাকি অংশটুকু প্রিয় ফাউন্ডেশনের ভালোমানুষদের সংস্পর্শে থাকতে চাই।আমার উদ্যোগের সঙ্গে থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ রইল।
আমার জীবনের গল্প যারা পড়েছেন সকলের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা।
"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৯১৯Date:- ২৩/০১/২০২৩ইং
মোঃ মনির হোসাইন
ব্যাচ ১৭ তম
রেজিষ্ট্রেশন ৮৩৯২৮
জেলা নরসিংদী
বর্তমান মালয়েসিয়া