See More Post

আমার সেই স্মৃতি ঘেরা গল্প


🌿আমি অঞ্জনা চাকমা।বর্তমানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছি।পড়াশোনার পাশাপাশি খাগড়াছড়ি জেলায় বেসরকারি সংস্থা  "আলো" তে হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি।আমার বাড়ি রাঙ্গামাটির জেলায় বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন সেই দুর্গম পাহাড়ী এলাকা সাজেকে।তবে  পড়াশুনা আর বড় হয়েছি খাগড়াছড়ি জেলায়। 


🌿পাহাড়ের আকাঁ বাঁকা মেঠোপথে হেঁটে চলে এক সহজ সরল জীবন যাপনের মধ্যে দিয়ে আমার বেড়ে উঠা।সেই ছোটবেলা থেকে নতুন কিছু শিখার আর জানার প্রতি আমি অধিক আগ্রহী ছিলাম। অজানাকে জানার জন্য

 অধিক কৌতুহলী ছিলাম । সবসময় অজানাকে জানার জন্য অনেক কৌতূহল  কাজ করতো মনে।


🌿আমাকে দেখে যতটা সহজ মনে হচ্ছে আমার জীবনের গল্পটা ততটা সহজ ছিলো না।সেই দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে বেরিয়ে আসাটা আমার জন্য  অনেক কঠিন ছিলো।জীবন নিয়ে গল্প লেখা খুব সহজ, কিন্তুু গল্পের মতো করে জীবন সাজানো অনেক কঠিন!


🥀আসুন সকলেই একটু সময় দিয়ে

 আমার গল্পটা শুনে যান-


 🌺🌺🌺🌺জীবনের গল্প 🌺🌺🌺🌺🌺🌺

 

যেই মেয়েটি খোলামেলা, 

জোরে হাসে,

একটু বেশি কথা বলে,

সেই মেয়েটি লক্ষী নয় একেবারে।

তবে পাহাড়ি নদীর মতো

স্বচ্ছ ও খরস্রোতা। 

পাহাড় কেটে নিজের রাস্তা 

বানিয়ে নিতে পারে।

যেই মেয়েটা সহজেই হাসে,

কখনো সময় করে শুনে দেখো,

তার গল্পটা হাসির মতো সহজ নয়।


💎আমি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলাম।  আমার বাবা মা জুম চাষ করতো। জুম বলতে পাহাড়ের ঢালু জমিতে ধানের চাষকে বুঝায়। জুমে অনেক ধরনের অর্থকরী ফসল ফলানো হতো।

যেমন-ধান,ভুট্টা, মরিচ, তিল আর নানান প্রকারের শাক সবজি। জুম চাষ ছিলো আমাদের একমাত্র অবলম্বন। বছরে শুধুমাত্র একবার ফসল ফলানো যেতো।

পাচঁ ভাই বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট।সবাই যতটা শাসন করতো তার চেয়ে অনেক বেশি আদর করতো এবং ভালোবাসতো। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও অভাব জিনিসটা বাবা-মা,ভাই -বোন কেউ সহজে বুঝতে দেয় নি। যখন যা চেয়েছি তখনই তা পেয়েছি। এমন কোন বছর যায়নি যে, দাদন( মালামাল ক্রয় বাবদ অগ্রীম টাকা)নিতে হয়নি।আমার পড়াশোনার খরচ যোগাতে বাবা মা আমাদের জুমে উৎপাদিত ফসলের থেকে ন্যায্য মূল্য পেতো না। কারণ,যখনি আমার টাকার প্রয়োজন হতো তখনি মহাজনদের কাছ থেকে অগ্রীম দাদন(মালামাল ক্রয় বাবদ অগ্রীম টাকা) নিয়ে আমার খরচ জোগাতো।


🎗️আমি আজ যেই জায়গায় দাড়িয়ে আছি সেই জায়গায় আসাটা আমার কাছে মহাকাশে বিচরণ করার সমমান ছিলো। কারণ, আমি যেই পরিবার,সমাজ থেকে উঠে আসছি আগে এমন ছিলো না। তখনকার সময়ে মেয়েকে লেখাপড়া শিখানো মানে হচ্ছে অনর্থক টাকা খরচ করানো ছাড়া আর কিছু মনে করতো না।মেয়ে মানুষকে লেখাপড়া শিখিয়ে কি লাভ???

এরা তো বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়িতে থাকবে।তাই তাদের বেশি বেশি পড়াশোনা করিয়ে কি লাভ হবে এমনভাবে বলতো।কিন্তু আমার বাবা মা নিজেরাই পড়ালেখা খুব বেশি না পারলেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলো যে- যতদিন পারবে ততদিন আমাকে স্কুলে পড়াবে, আমার পড়াশোনা সহজে বন্ধ করে দিবে না। তাই নিজের পছন্দের জিনিসটা না খেয়ে,না পড়ে সেই টাকাটা দিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে ছিলো। আজ যে কিছু লিখতে পারতেছি তা একমাত্র আমার বাবা-মার নিঃস্বার্থ ত্যাগের জন্য পারতেছি।তারা যদি আমাকে খরচ না জোগাতো তাহলে এখন পৃথিবীটাকে যেভাবেই দেখতেছি তখন হয়তো ঠিক সেইভাবে দেখার সুযোগ হতো না।তাই আমার বাবা মা হচ্ছেন-আমার জগতে পৃথিবীর অন্যতম❤️শ্রেষ্ঠ বাবা মা❤️


🍂🍂🍂শিক্ষা জীবন🍂🍂🍂


শিক্ষা জীবন শব্দটা শুনতে যতটা মধুর মনে হয়,কিন্তু আমার জন্য সেই মধুর জীবনটা পাওয়া ততটা মধুর ও সহজসাধ্য ছিলো না। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা বটেই, যেখানে একটা স্কুল পর্যন্ত নেই সেখানে শিক্ষা জীবন কল্পনা করি কিভাবে!

⛵আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম ছিলো নৌকা আর পায়ে হেঁটে চলা। এখন যেই জায়গায়  পৌঁছাতে ৩ ঘন্টা সময় লাগে,আগেকার সময়ে লাগতো ৮ ঘন্টা । কখনো নৌকায় আবার কখনো পায়ে হেটে চলাচল করতে হতো।তাই  আমার শিক্ষা জীবনের এক একটা বছর একেকটা গল্প হয়ে দাঁড়াতো আমার মাঝে। তখনকার সময়ে আমাদের এলাকায় সরকারি স্কুল থাকা তো দূরের কথা,বেসরকারি স্কুল পর্যন্ত ছিলো না।

কয়েক পরিবার মিলে একজন প্রাইভেট মাস্টার রাখতো আর আমিও সেখানে স্কুলে যেতাম।তবে বছরে খুব বেশি হলে ৬-৭ মাস  সেই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেতাম। জুম চাষের সময় হলে বাবা মা ভাই বোনদের সাথে আমারও জুমে যেতে হতো।কারণ, তখনকার সময়ের আমাদের জীবনযাত্রার মানটা অন্য রকম ছিলো।তবে আমি অনেক ভাগ্য জোরে অনেক কিছু সুবিধা পেয়েছি।যেটা পাওয়া হয়তো তখনকার সময়ে অনেক কঠিন ছিলো। লেখাপড়ার প্রতি আমারও অনেক আগ্রহ ছিল সেই ছোটবেলা থেকে।তাই কোনদিন স্কুল খামাই করতাম না। স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে কারোর জোর করতে হয়নি। প্রতিদিন নিয়মিত স্কুলে যেতাম।


🌿আমি যখন ক্লাস থ্রি তে উঠি তখন আমার মেজো  দাদা আমাকে এলাকার বাইরে একটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। তখন অন্যের বাড়িতে থাকতো হতো আমাকে। অনেক জায়গা নতুন পরিবেশ আর নতুন অচেনা মানুষদের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে আমার বেশ কয়েক দিন সময় লাগছিলো।অনেক ছোট বয়সে বাবা মা কে ছেড়ে থাকাটা আমার কাছে অনেক কঠিন ছিলো। কারণ, আমরা সবাই জানি যে,সবার ছোট হলে আদর, স্নেহের ভাগটা একটু বেশি হয়।তাই আমিও বাবা মার অতি আদরের ছিলাম।


🌿বাবা মা কে অনেক অনেক মিস করতাম কিন্তু মুখ ফুটে কারোর কাছে প্রকাশ করতাম না। তাই মাঝে মাঝে সবার অজান্তে লুকিয়ে লুকিয়ে  কান্না করতাম।তাছাড়াও এত অল্প বয়সে বাবা মার আদর থেকে দূরে থাকতে কেই বা চায়!

তবুও মেনে নিছিলাম শুধুমাত্র লেখাপড়ার জন্য। 

 একটি বারের জন্যও কোনোদিন বাড়িতে ফিরে যাবো এ কথা বলিনি।কারণ, এটাই জানতাম যে, গ্রামে ফিরে যাওয়া মানে আর পড়ার সুযোগ হবে না।তাই বাবা মার সেই আদর, স্নেহ কে একটু বিসর্জন দিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম।সবার সাথে মিশতে শুরু করলাম।পরে আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। 


🌿আর সেই প্রাইমারি স্কুলের স্যারেরাও আমাকে 

অনেক ভালোবাসতেন।আমিও প্রতিদিন স্কুলের পড়া  ঠিকঠাক মুখস্থ করতাম। আমার ক্লাসের সবাই প্রাইভেট পড়তো, কিন্তু আমার তো আর সেই সুযোগটা হয়নি।তাই নিজে যেভাবেই পারি সেইভাবে পড়তাম।তবে আমার  এখনো মনে আছে যে,ক্লাস থ্রি তে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দেওয়ার সময় সবগুলোর প্রশ্নের উত্তর লিখে দিছিলাম। সবাই ঘন্টা পরার আগে পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে গেছে শুধু আমি লিখতাম আর লিখতাম। কারণ,তখন তো আমি জানতাম না যে, যে কোন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দাও। বললে শুধু যে কোন  পাচঁটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।আর আমাকে  বলে দেওয়ার মতো তো কেউ ছিলো না। তা নিজে যা পারি,যাই বুঝি তা লিখেছিলাম। 


🌿তবে বার্ষিক পরীক্ষার সময় প্রাইভেট না পড়েই ১ নাম্বারের ব্যবধানে আমি রোল ২ হয়ে পাশ করেছিলাম। পরে ক্লাস ফোরে উঠলাম।কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় মায়ের অসুস্থতার কারণে আবার সেই নিজ গ্রামে ফিরে আসতে হলো। গ্রামে এসে  আবার প্রাইভেট স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হলাম।তবে এবারে একটা স্কুল হয়েছে। শিক্ষক ২ জন নিয়োগ করা হয়েছে।তাই  চতুর্থ শ্রেণীর বছরটা সেই স্কুলে পড়লাম। এই স্কুলের স্যারেরাও আমাকে খুব ভালোবাসতেন। স্কুলে ছাত্রীদের মধ্যে আমাকে টিম লিডারের দায়িত্ব দেয়া হলো।স্কুলে সবার সাথে হেসে খেলে,হাসি আর আনন্দের মধ্যে দিয়ে কেটে দিলাম।

এবার এলো বার্ষিক পরীক্ষা। বার্ষিক পরীক্ষার শেষে পরীক্ষার ফলাফলের দিন ঘনিয়ে এলো।আমি সবার থেকে ভালো ফলাফল করলাম।আর সাথে স্কুল থেকে ১ম পুরস্কারও পেয়েছিলাম।সেই  ১ম পুরস্কারটি হচ্ছে - একটি 🔦টর্চলাইট🔦🌻।

পুরস্কারটা যদিও ছোট ছিলো তবে আমার জীবনে এই প্রথম এককভাবে ১ম পুরস্কার পেয়েছিলাম বলে আমি অনেক অনেক  খুশি হয়েছিলাম। 

সেদিন বাড়ির সবাই অনেক খুশি হয়েছিল।সেদিন বড় দাদা আমার স্কুলের স্যারদের আমাদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গেলেন। স্যারেরাও অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আমাদের বাড়িতে গেলেন।


🌿আমাকে নিয়ে অনেক কিছু বললেন সকলেই মিলে।

এভাবেই কয়েকদিন অনেক হাসি আনন্দে কাটালাম।তখন তো চিন্তা কি জিনিস তা ভাবার মতোও চেতনা হয়নি।এবার বাবা মা অনেক চিন্তায় পড়লেন কোথায় পড়াবেন আমাকে! অবশেষে ঠিক হলো এই বছর থেকে বাইরে স্কুলে দিবে।কিন্তু কোথায়,কার বাড়িতে রাখবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। কোন একজনের মাধ্যমে আমাকে রাখার জন্য একটা ঘর পেলেন। ওখানেই গিয়ে থাকতে হবে আমার।বাৎসরিক হিসাব করে টাকার কথা বললেন।

🎗️সর্বশেষ মাকে সাথে করে গেলাম সেখানেই ভর্তি হতে। 

তবে ক্লাস ফাইভে নয়, ডাইরেক্ট ক্লাস সিক্সে ভর্তি হলাম। যেহেতু অন্যের বাড়িতে থাকতে হবে তাই বাবা মা খরচটা কমানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রয়োজনে সারা বছর প্রাইভেটে দিবেন এমনটা বললেন। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হলাম।এভাবেই নিয়মিত স্কুলে আসা-যাওয়ার মধ্যে দিন যাচ্ছিলো। সেই সকাল ৮ টায় স্কুলে গিয়ে বাড়িতে ফিরতাম সন্ধ্যার আগে। দুপুরের খাবারটা সন্ধ্যায় খেয়ে নিতাম। তারপর বাড়ির টুকিটাকি কাজ করে পড়তে বসতাম। কখনো কখনো না খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম।


🌿যদিও  প্রাইভেট পড়ার কথা ছিলো কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ পায়নি। নিয়মিত স্কুলে যেতাম,আর স্যারদের ক্লাসগুলো মনযোগ দিয়ে শুনতাম।

এভাবে করে ক্লাস সিক্সের বার্ষিক পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষা শেষ হলে আবার বাড়িতে চলে এলাম।বাড়িতে এসে মাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য সহযোগিতা করতে লাগলাম। অবশেষে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলো শুনলাম। এবারেও প্রাইভেট না পড়ে ভালো রেজাল্ট করলাম। ১০০ জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে আমার ভর্তিকৃত রোল ৬৮ ছিল। তবে মোটামুটি প্লেজের মধ্যে থাকলাম, রোল ০৭-এ আসলাম। অনেক খুশি হলাম। কিন্তু চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলাম যে, এই বছর কি আবার ভর্তি হতে পারবো???কারন, বাড়ির অবস্থা দিন দিন শোষনীয় হয়ে যাচ্ছে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়তেছে কিন্তু সেই তুলনায় উপার্জন করার উৎস থাকছে না। 


🌿যতই দিন যায় ততই ভাবতে লাগলাম কি হবে আমার।যারা গ্রামের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করে তারা তো সবাই চলে যাচ্ছে। সবাই নতুন করে যার যার স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। আর আমি!  আমি তো এখনো জানি না যে আমার পড়াশোনা হবে কি না?

অবশেষে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষে একটা খবর আসলো মেজো দাদা আমার থাকার জন্য একজনের বাড়িতে কথা বলছেন। সেখানেই গিয়ে থাকতে হবে আমাকে। পরে কোনরকমে টাকা জোগাড় করে স্কুলে ভর্তি হওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে চলে গেলাম। এবারে আমি নতুন আরেকজনের বাড়িতে আছি। এখান থেকে স্কুলটা একটু কাছে ।তবুও ৩০ মিনিট সময় লাগতো স্কুলে যেতে। এসে স্কুলে ভর্তি হলাম আর নিয়মিত স্কুলে যেতে লাগলাম। আগে যাদের বাড়িতে থাকতাম সেখান থেকে এখানকারটা স্কুলের একটু কাছে। এখানে এসে আমার প্রতিদিনের যেই কাজগুলো থাকে তা হচ্ছে - 


🎗️সকালে ঘুম থেকে উঠামাত্র উঠান ঝাড়ু দেওয়া, কুয়া থেকে পানি আনতে যাওয়া।তারপর গোসল করে সকালের নাস্তা ভাত খেয়ে স্কুলে যাওয়া। সারাদিন স্কুলে কাটাতাম।দুপুরে শুধু নাস্তা করতাম। তখন তো ১৫ টাকার কেক আর ৫ টাকার একটা আইস্ক্রিম হলে চলে। বিকেলে বাসায় এসে দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিতাম।তারপর বিকেলের করণীয় কাজ গুলো ছেড়ে নিতাম।

বিকেলে আবার উঠান ঝাড়ু দিয়ে গোসল করতাম।তারপর হারিকেন পরিস্কার করতাম।কারণ তখন বিদ্যুৎ না থাকায় হারিকেনের আলোতে পড়তে হয়। অনেক সময় হারিকেন পরিস্কার করতে গিয়ে হাত কেটে যেতো।হাত থেকে পরে অনেক হারিকেনের ফটিক ভেঙে ফেলতাম। 


🎗️তবে এটাই আজীবন মনে রাখবো তখন যাদের বাড়িতে থাকতাম সেই বাড়ির মালিক অনেক অনেক ভালো।কোনদিন একটা খারাপ শব্দ বা খারাপ ব্যবহার করেনি আমার সাথে। অনেক ভালোবাসতেন এবং কেয়ার করতেন।এইবার বছরের শেষে বার্ষিক পরীক্ষার আগে কয়েক মাস প্রাইভেট পড়ছিলাম। অবশেষে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলো। মোটামুটি ভালো পরীক্ষা দিলাম।পরীক্ষা শেষ হয়ে আবার বাড়িতে চলে গেলাম।এবার বাড়িতে গিয়ে মন খারাপ। বাড়ির অবস্থা আগের থেকে খারাপ অবস্থা। আমরা যে জুম চাষ করতাম এই বছর সেই ফলনের অবস্থা খুবই খারাপ।ইদুরঁ বন্যা নামক মহামারির কারণে সারাবছরের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে এলাকায় অভাব দেখা দিয়েছে। 


🎗️অনেক চিন্তায় পড়ে গেলাম কি হবে আগামী বছর? পড়াশোনা করার সুযোগ হবে তো? এমনটা সব সময় ভাবতাম। প্রত্যেক বছর পরীক্ষা শেষ মানে শিক্ষা জীবন শেষ এমন প্রশ্ন মনের মধ্যে সব সময় রয়ে যেতো।

কিছু দিন পর পরীক্ষার ফলাফল হলো। খবর পেলাম আমি ৩য় স্থান অর্জন করেছি। যতটুকু খুশি হয়েছি তার থেকে  আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লাম। যতই দিন যায় চিন্তা ভাবনা আরো বাড়তে থাকলো। অবশেষে ভাগ্য সহায় হলো খাগড়াছড়িতে একটি আবাসিক স্কুলের সন্ধান পেলেন আমার মেজো দাদা। আমাকেও সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলেন।আমিও খুশিতে রাজি হলাম। আবার সেই কাচালং নদীর এলাকা ছেড়ে পাড়ি জমালাম খাগড়াছড়িতে। 


🎗️এখানে এসে আরেক নতুন পরিবেশের সংস্পর্শ পেলাম।পেলাম হোস্টেল জীবন। থাকা খাওয়া সম্পূর্ণ অন্যরকম।তবুও মানিয়ে নিয়েছি।কয়েক মাস ক্লাস করার পর অসুস্থ হয়ে পড়লাম। এরপর পহেলা বৈশাখের সময় বাড়িতে চলে যায়।আমার শারীরিক অবস্থা দেখে বাড়িতে কেউ আসতে দিচ্ছে না। সবাই এক কথা বলতো - আগে নিজের জীবনকে বাচাঁও,তারপর পড়ালেখা।আমিও অসুখটা ছাড়ানোর জন্য  যা যা করতে বলছে তা তা করতে শুরু করলাম। পুরো ৬ মাস ক্লাস আর স্কুল ছেড়ে বাড়িতে পড়ে ছিলাম। আমি তো পড়ালেখার আশা ছেড়ে দিছিলাম।মনে মনে একটাই প্লান করছি অসুখটা ছাড়তে পারলে চট্টগ্রামে গার্মেন্টস চাকরি করতে যাবো। বাবা- মা আর আমার মেজো দাদাকেও বলে দিছিলাম যে, আমি আর পড়াশোনা করবো না,আমি গার্মেন্টস চাকরি করতে যাবো।মা আর দাদা শুধু এটাই বললো যে,পরে কিন্তু আমাদেরকে দোষারোপ করতে পারবি না যে -তুমি পড়াশোনা করতে পাও নি। আমি কিছু বলিনি।


🎆এভাবেই গ্রীষ্ম, রমজান ছুটি শেষে কোরবানি ঈদের ছুটি চলে এলো। ছুটির দিনে সবাই বাড়িতে চলে আসলো।আমার হাতে পৌঁছালো দুইটা চিঠি।চিঠিতে লিখা হয়েছে আমি যেন তাড়াতাড়ি ফিরে যায়, সবাই আমাকে খুব মিস করতেছে।আর সবাই নাকি বলতেছে আমার অসুখ ছাড়ানোর জন্য যা টাকা পয়সা লাগে স্কুল থেকে সবাই মিলে বহন করবে।চিঠিটা পড়ে আমার দু'চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসলো।কি বলবো বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তখন বুঝতে পারলাম স্যাররা আর আমার আবাসিক মন্দিরের ধর্মীয় গুরু ভান্তে এতটা ভালোবাসেন আমায়,যা আগে জানতাম না।

তাই মনে মনে সংকল্প করলাম যে,আমি আবার সেই বিদ্যাপিঠে ফিরে যাবো,আবার পড়াশোনা করবো,পরীক্ষা দিবো।ওনাদের আদর,স্নেহকে আমি আবার জাগ্রত  করবো।আমার প্রতি ওনাদের যে আশীর্বাদ তা কখনো মিথ্যে নয়।আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে অন্তত ওনাদের জন্য হলেও।


🎗️তাই ছুটি শেষে চলে গেলাম সেই আগের জায়গায়,সেই আবাসিক মন্দিরে। নতুন করে পড়াশোনা শুরু করলাম। ৮ম শ্রণীতে পরীক্ষা দিয়ে খুব ভালো ফলাফল করতে না পারলেও মোটামুটি পাস করলাম।পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলাম।নবম শ্রেণিতে মন দিয়ে পড়াশোনা করলাম।অনেক স্যারের সহযোগিতা নিলাম।এবারে পরীক্ষা দিয়ে সবার থেকে ভালো রেজাল্ট করলাম। 


🎗️নবম শ্রেণিতে উঠে আবাসিক মন্দির থেকে উঠলাম। আবাসিক মন্দিরে থাকা খাওয়ার সমস্যার কারণে একটু ঘন ঘন অসুস্থ হতাম।তাই বাধ্য হয়ে আবাসিক মন্দির ছাড়তে হলো।আমাদের স্কুলের এক স্যারের বাসায় উঠলাম।কারণ,স্যার কয়েকজন ছেলেমেয়েকে নিজের বাসায় রাখতেন।আমিও ওনাদের সাথে যোগ হলাম।এখানে থেকে ওনার থেকে  প্রাইভেটও পড়তে শুরু করলাম।আমরা ৩ বান্ধবী এক রুমে থাকতাম। 


🎗️মোটামুটি ভালোই যাচ্ছিলো।দশম শ্রেণিতে নির্বাচনী পরীক্ষা দিলাম।এবার এলো ফরম ফিলাপের সময়। আমার বাবা মার কাছে টাকা না থাকায় আমার দুলাভাই ফরম ফিলাপের পুরো টাকাটাই দিলেন। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এসএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম।পরীক্ষা শেষ হলে আবার চলে আসলাম আমার নিজের বাড়িতে। বাড়িতে এসে বাবা মা কে কাজে সহযোগিতা করার পাশাপাশি আমার দিদির শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যেতাম।সেখানেই দিদি আর দুলাভাইকেও নানান কাজে সহযোগিতা করতাম।


🎗️এভাবেই চলছিল সবকিছু । অবশেষে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলো। জানতে পারলাম আমি আমাদের স্কুল থেকে ভালো ফলাফল করলাম।সেদিন বুঝতে পারলাম-মানুষ শুধু দুঃখে কান্না করে না,অতি আনন্দ থেকেও কান্না করে।আমিও অনেক অনেক কান্না করলাম।বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে,  আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে এই প্রথম আমি এসএসসি পাস করলাম। বাবা মা আর ভগবানের অশেষ কৃপায় অনেক সাধনার পরে জীবনে প্রথম কঠিন একটি ধাপ পার করলাম বলে বাবা মায়েরও আনন্দের সীমা থাকলো না। পুরো এলাকাতেই আমাকে লোকজন প্রসংশা করতে লাগলো।


🎗️পাস করার কয়েকদিন পরে এবার আসলো কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়। কি করবো এখন! বাবা মার সম্বল বলতে তো আর কিছু নেই। যতদিন সামর্থ্য ছিলো খরচ জুগিয়েছেন।এখন বাবা মাও অসহায় হয়ে পড়েছে।তাই দুলাভাই আশ্বাস দিলেন উনি আমাকে কলেজে ভর্তির জন্য  টাকা দিবেন।দুলাভাইকে সাথে নিয়ে কলেজে ভর্তি হতে গেলাম।ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হলো।এখন চিন্তা হলো থাকা- খাওয়া নিয়ে। কোথায় থাকবো, কার কাছে থাকবো? কোথায় পাবো টাকা? 

দিদি আর দুলাভাইয়ের কাছেও টাকা নেই। দুলাভাই অনেক জনের কাছ থেকে  টাকা জোগাড় করতে চাইলেন, কিন্তু পান নি।


🏆তাই অবশেষে দিদিকে বললেন,তোমার গলার চেইন টা দাও, ও টা বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে আবাতত চালিয়ে নিয়ে যাক।জীবনে  বেঁচে থাকলে স্বর্ণের অভাব হবে না।

আর ও যদি একদিন মানুষ হয় তাহলে ও নিজেই তোমাকে চেইন বানিয়ে দিবে।দিদি কোন কথা বলেনি।চুপচাপ নিজের গলার চেইন খুলে দিলেন। জীবনে সেই মুহূর্তটাকে কোনদিন ভুলব না। সেইদিন দেখেছি কতটুকু ভালোবাসলে এত বড় ত্যাগ স্বীকার করা যায়!  যে স্বর্ণকে নারীর অলংকার বলা হয়। এমন  নারী  কমই দেখা যায় যে  স্বর্ণ পছন্দ করে না। 


🙏তার জন্য আমি আমার দিদি আর দুলাভাইয়ের কাছে আজীবন ঋণী হয়ে থাকবো।যেই ঋণ কখনো শোধ করার নয়। তাই ভগবানের কাছে শুধু এটাই চায় তারা যেন সব সময় ভালো এবং সুস্থ থাকেন।


🎗️কলেজে কয়েক মাস যাওয়ার পরে আবার  কঠিন সংগ্রাম শুরু হলো। বাড়ি থেকে আমার খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছে।  আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। 

তখন দুলাভাই আমাদের এলাকায় একটা প্রকল্পের চাকরিতে সুপারিশ করলেন। পড়াশোনা পাশাপাশি চাকরি করা অনেক কঠিন।তবুও মেনে নিয়েছি। সেই এইস,এস,সি থেকেই আজ অব্দিই  নিজের টাকায় পড়াশোনাটা চালিয়ে যাচ্ছি। আরো বহুদূর এগিয়ে যেতে চাই। সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে একজন ভালো মানুষ  হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাই সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।


🌻🌻🌻🌻কর্মজীবন  জীবন 🌻🌻🌻🌻


🍀কর্মজীবন সে তো এক নতুন অভিজ্ঞতা। কখনো ভাবিনি এতো তাড়াতাড়ি কর্মজীবনে পা বাড়াতে হবে। কলেজ জীবনের আমেজ শেষ না হওয়ার আগে আমাকে জীবন যুদ্ধে নামতে হলো।কারণ,এছাড়া আর কোন পথ ছিলো না। সবে মাত্র এইচ,এস,সি  ১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে চাকরির কথা!কখনো চিন্তা করিনি এত অল্প বয়সে চাকরি জীবনে পা বাড়াতে হবে।একদিন ফোন আসলো, ফোনে দুলাভাই বলছেন বিদেশী প্রকল্পে চাকরি করবে কি না???

আমি তো কি বলবো বুঝে উঠতে পারিনি,কারণ তখনোও আমি চাকরির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সবেই তো কলেজে ভর্তি হলাম। নতুন ক্যাম্পাস,নতুন আমেজে মেতে ছিলাম। কলেজ জীবন মানে বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে হেসে খেলে কলেজে আসা- যাওয়া আর কলেজ জীবনকে উপভোগ করা।কিন্তু ভাগ্য আমার বদ্ধ যে মানান!


🌿তাই প্রথমে রাজি হয়নি,বলছিলাম আমি তো ইংরেজি পারিনা।কিভাবে চাকরি করবো???

দুলাভাই রেগে গেলেন- বললেন কত মানুষ আছে চাকরির হায় হায় করতেছে।আর তুমি!

আমি আর কিছু বলতে পারিনি।পরে দুলাভাই ফোন কেটে দিলেন।বিকেলে আবার দিদি ফোন করলেন,বললেন তোমার দুলাভাই রাগ করছে।তুমি চাকরিটা নিতে চাচ্ছো না কেন???

এরপর থেকে নাকি আর কোন খরচ চালাতে পারবে না।কি করবে নিজেই সিদ্ধান্ত নাও।

আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। কি করবো এখন???

সবদিক চিন্তা করে পরে রাজি হয়ে গেলাম।কারণ, এখন তো আর বাবা-মার আগের মতো কাজ করতে পারেনা, দিন দিন বয়স্ক  হয়ে যাচ্ছে । তাছাড়া আমরা এখন যৌথ পরিবার।তাই পরিবার চলতে মাঝে মাঝে হিমসিম খেতে হয়।


🌿এবার এলো চাকরির জন্য প্রস্তুতি। চাকরির আবেদনপত্র কিভাবে লিখতে হয় তা তো জানতামই না।তাই একজন বড় ভাইয়ের সাহায্য নিলাম।উনি আবেদন পত্রটা নিজের হাতে লিখে দিলেন। তারপর জমা দিতে গেলাম। আবেদনপত্র জমা দিতে গিয়েও  আরেক মহা ঝামেলায় পড়লাম কাকে দিতে হবে,কার কাছে দিতে হবে কোন কিছু জানতাম না।


🌿তবে ভাগ্য আমার সহায়ক ছিলো আর সুপারিশ তো ছিলো বটেই। যেদিন চাকরির আবেদনপত্র জমা দিতে গেলাম সেদিন বললো বিকেল ৩ টায় অফিসে  এসো। কাগজপত্র জমা দিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম।বিকেল ৩টায় একজন বড় বোনকে সাথে নিয়ে আবার সেই অফিসে গেলাম।অফিসে গিয়ে আমাকে হলরুমে বসতে বললেন, তাই সেখানে বসে আরো অন্যান্য সকল প্রার্থীদের সাথে পরিচয় হলাম। কিছুক্ষণ পরে সবাই চলে আসলেন এবং সবার পরিচয় নিয়ে নিলেন। অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হলো এবং অবশেষে বেতন কত টাকা তা জানিয়ে দেয়া হলো।তবে তখনই আমি বুঝে উঠতে পারিনি যে আমার চাকরি হইছে। 


🌿পরে যেই দিদিটা আমার সাথে গেছে উনাকে বললাম- আচ্ছা দিদি আমার কি চাকরি হইছে???

উনি বললেন,হ্যাঁ।তা না হলে কি বেতন কত বলে দিতো???আমার এমন অবস্থা যে কিভাবে চাকরি হলো তাও ভালোভাবে বুঝতে পারলাম না !!!

পরে অনেক আনন্দ নিয়ে বাসায় ফিরলাম।কারণ,জীবনে প্রথম চাকরিতে আবেদন করলাম আর তাও এতো সহজে হয় কি ভাবে???

🌿সকালে দরখাস্ত জমা দিয়ে আসলাম, আর  বিকালে  জানতে পারলাম চাকরি কনফার্ম। চাকরিতে জয়েন দিয়ে  পরে আস্তে আস্তে কাজে নামলাম। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু দেখলাম,শিখলাম এবং জানতে পারলাম। নানান মানুষের সাথে পরিচয় হতে লাগলাম। কাছ থেকে দেখতে লাগলাম মানুষের জীবনযাত্রার মান একেক এলাকায় একেক রকম।এভাবেই করে ৬ মাসের প্রকল্প শেষ হলে আবার এইচ,এস,সি পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষা দিয়ে আবার আরকেটা প্রকল্পে জয়েন করলাম। 


🌿তবে এখন আগের থেকে একটু বুঝার মতো ক্ষমতা হয়েছে। এখন আর বাবা মার কাছ থেকে টাকা না নিয়ে নিজের খরচে পড়াশোনাটা চালাতে লাগলাম। নিজে যখন টাকা উপার্জন করতে শুরু করলাম তখন বুঝতে পারলাম টাকা উপার্জন করাটা কতোটা কঠিন। কতোটা উদারতা নিয়ে এতদিন বাবা মা আমাকে খরচ চালিয়েছেন। নিজে নিজে উপলব্ধি করতে লাগতাম টাকা উপার্জন করাটাই কতোটা কষ্টকর।


🌿তাই এখন বাবা মার কাছে টাকার জন্য হাত পাততেও বিবেক নাড়া দেয়। এভাবেই একটার পরে নতুন আরেকটা প্রকল্পে কাজ করতে লাগলাম।মাঝখানে যে সময়ে প্রকল্পের কাজ থাকতো না তখন কলেজে নিয়মিত ক্লাস করি, ভালোভাবে পরীক্ষা দিই। 

আর যেই অফিসে চাকরি নিছিলাম সেই অফিসের  নির্বাহী পরিচালক স্যার অত্যন্ত আন্তরিক। আমার দূর সম্পর্কের কাকা। তবে নিজের মেয়ের মতো করে খুব ভালোবাসতেন,সার্বিক সহযোগিতা করেছেন এবং কি এখনো করে যাচ্ছেন। ওনার সহযোগিতা না পেলে হয়তো এতদূর হতো না।তাই ওনার কাছেও আমি আজীবন কৃতজ্ঞ।


🌿মোটামুটি পড়াশোনা আর চাকরি দুটোই চালিয়ে নিতাম। আগের থেকে এখন অনেক দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছি।সারাজীবন বাবা মা,ভাই বোনেরা আমাকে সাপোর্ট দিয়ে আসছেন। এখন আমার দেওয়ার পালা।যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।এখন আগের জায়গা থেকে একটু রাস্তায় পাশে জায়গা কিনে বাবা মার জন্য একটা ছোট্ট বাড়ি করে দিয়েছি। আজীবন বাবা মার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে জীবনের  বাকি সময়টুকু পাড় করতে চাই। 


🌹🌹🌹অনুভূতি 🌹🌹🌹


🎀ভালোবাসার প্লাটফর্মে প্রথম পা রাখি আমার শুভাকাঙ্খী, ভালো বন্ধু Arpan Chakma দাদার মাধ্যমে। উনি আমাকে প্রথমে প্লাটফর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা /অবগত করেন। উনি নিজেই রেজিষ্ট্রেশন করে দেন এবং প্রথম পরিচিতি পোস্টটাতেও উনি সাহায্য করেন।

পাশাপাশি প্রিয় প্লাটফর্মের বড় ভাই-বোনেরাও অনেক আন্তরিকতার  সাথে পাশে ছিলেন। সময় উৎসাহ দিয়েছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন। 


🥀যেদিন থেকে নিজের বলার মতো একটা গল্প  প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি সেদিন থেকে মনের মধ্যে সব সময় আগ্রহ জাগত যে যদি কখনো সুযোগ হয় এখান থেকে অনেক কিছু শিখে নেবো। আসল কথা হচ্ছে-প্রাণের ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম গুলো আমার খুব ভালো লাগতো। এটাই একমাত্র প্লাটফর্ম যেখানে প্রতিদিন ভালো মানুষের চর্চা করা হয়।উদ্যােক্তা জীবন থেকে শুরু করে জীবনের সকল দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সমস্ত  কার্যক্রমগুলো রয়েছে সবগুলো আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে।


 🥀তাই প্রাণের প্লাটফর্মে সংযুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করতেছি।এখানে এসে যতজনের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়েছি তা কোনদিন ভুলার নয়।এই প্লাটফর্মে না আসলে বুঝতেই পারতাম না যে, ভালো মানুষ কারে কয়!

সবচেয়ে যেটা বেশি অর্জন করেছি সেটা হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাস না থাকলে কোন কিছু করা যায় না।আমরা যখনি বিশ্বাস অর্জন করবো তখনি কিছু একটা করা সম্ভব হয়ে উঠবে। আজ অবদি আমার কিছুই নেই। তবে আমি অতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আজ না হোক,কাল না হোক,৫ বছর পরে তো কিছু একটা হবে। শুধু দরকার লেগের থাকার সক্ষমতা।


🥀প্রাণের প্লাটফর্ম আমার মনের সাথে এমনভাবে মিশে গেছে যতদিন বেঁচে থাকবো আজীবন লেগেই থাকবো। প্রতিদিনের সেশনচর্চা ক্লাস আমার কাছে  পেশা তো নয় নেশায় পরিণত হয়েছে।সেশনচর্চা ক্লাস একদিন মিস মানে অনেক কিছু মিস করলাম,হারিয়ে পেললাম এটা মনের মধ্যে সবসময় ঘুরপাক খেতে থাকে।আর এটাও সত্যি যে,শুধু ব্যবসায় বা  উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আমি এই প্লাটফর্মে যুক্ত হয়নি। স্যারের দেয়া শিক্ষা ও উপদেশ গুলো নিয়ে একজন ভালো মানুষ এবং সৎ চিন্তাসম্পন্ন একজন পজিটিভ মানুষ হতে পেরেছি এটাই আমার সর্বশ্রেষ্ঠ পাওয়া।


🌹প্রিয় স্যার🌹

 আমার অভাব ছিল অধিক জ্ঞানের,

অজানা ছিল প্রচুর তথ্য, 

আপনার সান্নিধ্যে এসে,

ভ্রান্ত ধারণাগুলি হয়েছে ধ্রুব সত্য। 

ভেসে গেছিলাম আমি গভীর সমুদ্রে, 

খুঁজে পাইনি কোনো নদীর কূল;

আমার দেখা এক অনন্যতম অসাধারণ শিক্ষক 

আর কেউ নয় আপনি স্যার শুধু আপনি।

ধন্যবাদ শব্দটাও খুব ছোটো শব্দ স্যার

আপনাকে সম্মানিত করার জন্য,

আপনি আমাদেরকে জীবনের 

একজন ভালো মানুষ হতে শিখাচ্ছেন।

আর দেখাচ্ছেন স্বপ্ন বুকে নিয়ে বেঁচে থাকার পথ ।


🌹স্যার আপনার এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইল। সব সময় সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন  🌹


🥀আর যারা এতক্ষণ ধরে অনেক ধৈর্য্য সহকারে আমার গল্পটি পড়লেন আপনাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি🙏


ধন্যবাদ সবাইকে 🌹


📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮৪

Date:- ২৮/১১/২০২১ ইং

🙋‍♀️ অঞ্জনা চাকমা 

🌼🌼🌼ব্যাচঃ ১১

✅✅✅✅রেজি.নংঃ ৩০০৮৯

♦️♦️♦️♦️♦️♦️ব্লাড গ্রুপঃ ও+

🏡🏡🏡🏡🏡🏡🏡উপজেলাঃ পানছড়ি

🌿🌿🌿🌿🌿🌿🌿🇧🇩জেলাঃ খাগড়াছড়ি।

ফরিদপুর জেলা টিম কর্তৃক আয়োজিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি -২০২৪

ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥

পর্দাশীল ঘরোয়া নারী- সফল উদ্যোক্তা

আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।