তাজরিন চৌধুরী চম্পা
ব্যাচঃ ১৪, রেজিষ্ট্রেশন নংঃ৫৬০১৩
উপজেলা এম্বাসেডর নরসিংদী সদর।
পেজ লিংকঃ https://www.facebook.com/PakushiFood
আমি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মেয়ে। এসএসসির পরপর বিয়ে হয়ে যায়। জীবনের ১২টা বছর কাটিয়েছি সংসারে ডুবে থেকে।পুরো পৃথিবীটাই মনে হত আমার সংসারের মধ্যে। হঠাৎ ১৯শে জুন ২০১৮ সালে কালো ঝড় আমার সাজানো সংসার তছনছ করে দিয়ে গেছে। আমার স্বামী ৪৩ বছর বয়সে স্ট্রোক করে মারা যান। জন্ম মৃত্যু সবই সৃষ্টির নিয়ম। আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারি। মাত্র ২০০০০৳ রেখে মারা যান তিনি। যা তার কিছু পাওনাদারদের দিয়ে খরচ হয়ে যায় ।
শুরু হলো আমার দু সন্তান নিয়ে টিকে থাকার লড়াই। একে তো শারীরিকভাবে অসুস্থ (AVN)। তার ওপর কোনো ভারী/অফিসিয়াল কাজ করতে পারবো না আমি। আমার নামাজ,রান্নাবান্না সহ যাবতীয় কাজ চেয়ারে বসে করতে হয়।তার মৃত্যুতে আমি আরো নিথর হয়ে যাচ্ছিলাম। দমবন্ধ লাগত আমার।একটু মনটা ভালো রাখার জন্য পাশেই একটা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা পেশায় ঢুকি।নিজেকে ব্যস্ত রাখার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম।
এরপরই আলোকবর্তিকা রুপে পাই " ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার ও নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তা তৈরীর কেন্দ্র প্লাটফর্মটি।
রেজিষ্ট্রেশন করে জয়েন হই প্লাটফর্মে ১৩ তম ব্যাচে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইউটিউবে স্যারের ভিডিওগুলো শুনতাম। একেকটা সেশন মনে হয় এটা আমার জন্য লেখা। যখনই মনে হতো আমি হেরে যাব,আর পারবোনা সামনে আগাতে।তখনই স্যারের সেশন আমাকে নতুন আশা সঞ্চার করেছে।
নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশনে ১৬টা স্কিলস এর মাধ্যমে আমি ফাউন্ডেশন থেকে অনেক উপকৃত হয়েছি।আমার জীবন বদলে যাওয়ার পিছনে ফাউন্ডেশন আমার অক্সিজেনের মত হয়ে গেছে। আমি শুধু ফাউন্ডেশন থেকে নিয়েই যাচ্ছি। বিনিময়ে দেওয়ার মত কিছুই নেই আমার কাছে।
পড়ালেখার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমি পড়ালেখাটা চালিয়ে যাইনি।আমার জীবনে আমার শাশুড়ী আশীর্বাদ। ওনি আমার জীবনে ঢাল হয়ে আছেন সবসময়। জীবনে এত ঘাত-প্রতিঘাত দেখেছি যে, অতীত স্মৃতি ভেসে আসলেও আমি ভয় পাই।আমার পায়ের চিকিৎসা যদি যথাসময়ে করতে পারতাম তাহলে আজকের আমি আরো বেশী কিছু করতে পারতাম।এটা আমার প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে।যা কিনা আমার জীবনের চূড়ান্ত ভুল।
পড়াশোনা ফাঁকিবাজির কারণে ডিগ্রি পর্যন্ত পড়েছি।
মাত্র ৫০০টাকার কম মূলধন নিয়ে উদ্যোগ শুরু করেছি এপ্রিল ২০২১সাল থেকে যা আজ প্রায় ৫০০০০৳ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
আমার উদ্যোগ বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া খাবার নিয়ে। ব্যস্ত জীবনে সবাই শহর কেন্দ্রিক। মায়ের হাতের স্বাদ নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
তাই আমি কাজ করছিঃ
নকশী পিঠা,ঝিনুক পিঠা,ভাজা পুলি পিঠা,রসুন আচার,জন্মদিনের কেক,রসমালাই, পুডিং, পুরি,সিঙারা,ভেজিটেবল রোল,হালিম মিক্সড পাউডার, গরুর ভুড়ি রেডি টু কুক,নারকেল নাড়ু,গাজর নাড়ু সহ বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে।
আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরুই হয়েছে প্লাটফর্ম থেকে।আমার প্রায় ৮০%সেল হয় নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে।
জীবনে সৎ থাকতে হবে এ শিক্ষা আমার মা আমাদের দিয়েছে। গর্বিত আমার মরহুমা মায়ের প্রতি।তাঁর শিক্ষা পেয়েছি বলেই আমি গর্ব করে বলতে পারি আমি ভালোমানুষ। আমার জানামতে আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাইনা। কারণ একদিন ইহকাল ছাড়তে হবে।এমনভাবেই বাঁচার চেষ্টা করি,যেন পরিচিতরা আমার জন্য দু ফোঁটা অশ্রু ফেলে আমার জন্য।
সুস্থতার নেয়ামত পেলে আগামী ৫বছরে আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান পাকুসিকে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চাই। সুন্দর রেস্টুরেন্ট হবে। যেখানে আমার মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ পাবে অনেকে। অন্তত কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী করতে পারব।
ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥
আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।