See More Post

নারিকেল গুড়ের নাড়ু

স্বপ্ন প্রতিটা মানুষের থাকে। ব্যবসা শিক্ষা নিয়ে পড়া লেখা করছিলাম তখন থেকেই উদ্যোক্তা, আত্মকর্মসংস্থান,  ব্যবসা বিষয় গুলো যেন অন্তরে একে যায়। এর পর থেকেই একজন ব্যাংকার হওয়ার পাশাপাশি বিজনেস স্বপ্নটা নিজের মধ্যে চলে আসে। এটা স্বপ্ন না জীবনের একটা লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এসএসসি দেওয়ার আগেই ভাইয়া আমাকে নিয়ে অন্য স্বপ্ন দেখে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করানোর স্বপ্ন দেখে। আমার কাছেও আমার নিজের স্বপ্ন গুলোর থেকে পরবারের স্বপ্নটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তাই ইচ্ছা না থাকা স্বত্বেও রাজি হলাম। এরপর ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্নটা আর বাস্তবে রুপ নিলোনা।  কিন্তু বিজনেস কথাটা যেনো মস্তিষ্কের মধ্যে ঘুরতে থাকে প্রতিদিন। কিন্তু মেয়েরা আর কি বিজনেস করবে।  ফ্যামিলি সাপোর্ট করবে না, সমাজ তো আরও আগেই ধিক্কার জানাবে।  তাই অপেক্ষায় ছিলাম একটা চাকরির চাকরি পাওয়ার পরেই মূলধন যোগাড় করে বিজনেস করবো। কিন্তু স্বল্প মূলধন দিয়েও যে বিজনেস করা যায় তা জানা ছিলোনা। 


~হঠাৎ করেই প্রিয় মেন্টর Iqbal Bahar Zahid এর মূলধন ছাড়া ব্যবসা করার আইডিয়ার ভিডিও গুলো চোখে পড়লো এর পর স্যারের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে নিলাম আর উৎসাহ পেয়ে যুক্ত হলাম প্রিয় পরিবার #নিজের_বলার_মতো_গল্প_ফাইন্ডেশনে। এর পর স্যারের সেশন কে চর্চার মধ্য দিয়ে মাত্র ২১৫ টাকা মূলধন দিয়ে শুরু করলাম #সন্দেশ নিয়ে বিজনেস। আলহামদুলিল্লাহ, ব্যপকভাবে সাড়া পাচ্ছিলাম,🥰  প্রথম মাসের শেষের দিকেই শুরু করি & সেল হয় প্রায় ৪ হাজার টাকার মতো। এর পরের মাসে প্রথম সপ্তাহে ৬০০০+ টাকার সেল দেই। আরও ৪০০০+ অর্ডার হাতে থাকা সত্যেও  সন্দেশ নিয়ে কাজ অফ করে দেই। কারন শীতের মধ্যে নারিকেল পিসা যায় না। তার মধ্যে কোনো লেভার ও পাচ্ছিনা🤦‍♀️ নিজের ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েও ছিলো ঝামেলা। তাই কাজ অফ থাকে কিছু দিন এর পর সেশন চর্চায় নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় বলে উঠলাম আপাতত কোনো কিছু নিয়ে কাজ করছিনা পরবর্তীতে আবার শুরু করবো। এমন কথা শুনার পর Priya Islam  আপু বলে উঠলো উদ্যোক্তা কখনও থেকে থাকেনা, থেমে থাকা উদ্যোক্তার শোভা পায়না অন্য কিছু নিয়ে কাজ শুরু করো। আপুর কথায় যুক্তি আছে 😌 তাই আবারও  গার্মেন্টস আইটেম &কো-ফাউন্ডার হিসেবে  Average64   থেকে  কাজ শুরু করলাম। 


🍁ভালোলাগার জিনিস নিয়ে কাজ করলে মানুষ কখনও বিরক্ত হয়নাঃ-

  এমন একটা সেশন বোধহয় স্যারের সেশনে পড়েছিলাম 🤔 যদিও আমার ভালোলাগার কোনো কাজ নাই।  হুটকরে ইচ্ছে করলেও ওইকাজ করি আর ইচ্ছে না করলে করতেই পারিনা। কিন্তু সন্দেশ নিয়ে কাজ করতে আমার ভালো লাগতো কারন মিষ্টি জাতীয় খাবার আমার পছন্দ 😋  কাস্টমারের জন্য বানালে নিজেও খেতে পারতাম দু'একটা। সন্দেশ নিয়ে কাজ অফ করে দেওয়ার পর যা নিয়েই কাজ শুরু করেছি আমার কোনো কাজেই মন বসতো না 😔 খুব আলসেমি লাগতো। প্রচার ও করতে পারতাম না আর প্রসার ও হোতো না। এর মধ্যে অনেকেই সন্দেশের জন্য নক দিতো কিন্তু আমি অর্ডার নিতাম না। কারন তো আগেই বলেছি। আর নাড়ু নিয়ে কাজ করবো কিন্তু কর্ম ব্যবস্থার জন্য তা তৈরি করা কিংবা তা নিয়ে পোস্ট করা হয়নি। নিজের কর্মব্যস্ততা কাটিয়ে  আবার শুরু করলাম নিজের তৈরি নাড়ু। নাড়ু খেতে সন্দেশের মতোই শুধু নারিকেল পিসার ঝামেলা নেই। তাই এখন নিজের হাতের নাড়ু নিয়ে চলে এসেছি আমার প্রিয় কাস্টমারদের জন্য।  


~প্রথম দিন নাড়ু বানিয়ে প্রোফাইল স্টোরিতে দিয়েছিলাম রাতে তো ঘুম সারা সকাল চলে যাওয়ার পর ও ম্যাসেঞ্জার চেক করা হয়নি। তাই সন্ধ্যায় যখন মোবাইল হাতে নিলাম-


Sheuly Binte Monsur  এর একটা এসএমএস চোখে পড়লো। প্রিয় বোন আমাদের প্লাটফর্মের ১৬ তম ব্যাচের একজন সদস্য। এর আগেও আপু ২ বার আমার থেকে সন্দেশ নিয়েছিলো। আপু খুবই ভালো মনের,,  একদম নিজের বোনের মতো ভালোবাসে🥰 যে কোনো প্রয়োজনে আপুকে ডাকলেই আপু চলে আসে। যাই হোক আসল গল্পটা বলি--


শিউলিঃ- বোন সন্দেশ দিতে পারবা?


আমিঃ- নাগো আপু সন্দেশ তো এখন বানাতে পারিনা! কেনো?


শিউলিঃ- তোমার ভাইয়ের জন্য কিছু পাঠাতে চাচ্ছি।তোমার   সন্দেশ গুলোর প্রসংশা শুনে উনিও খেতে চাচ্ছে।   সামনে তো এক্সাম বাসায় আসতে পারবে না  পাঠিয়ে দিবো

 

আমিঃ-সরিগো আপু এখন তো নারিকেল বসে যায় পিসা   যায়না তাই অফ। 


কিছুদিন পর আমার স্টোরিতে নাড়ুর পিক দেখে-


শিউলিঃ- নাড়ু বিক্রি করবা? 


আমিঃ- হুম আপু করি তো!


শিউলিঃ- আমি ১/২ কেজি নিতাম। তোমার ভাইয়ার জন্যেই।

 তোমার ভাইকে গিপ্ট করুম😋


আমিঃ-🙄 আমার নাড়ু কি গিপ্ট করবা🤔 আচ্ছা যেদিন   লাগবে বলিও তার আগেই। 


আপুর এসএমএস টা পড়ে কিছুটা হাসলাম।  ভাবলাম বাহ! আমার নাড়ু প্রিয় মানুষদেরকে গিপ্ট ও করা হয়। একা-একা হাসি দেখে ভাবি বলে উঠলো তুই কি পাগল হইছোছ নি একা একা হাসছ😒 তখন আমি ঘটনা বলি আর ভাবিকে বলি ভাইয়া তো এইসব খাবার পছন্দ করে ভাইয়ারে কিনেদে।  কথা বলতে বলতে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হোলো আপুদের বাসায় যাবে আগামীকাল সবাই। হঠাৎ কুবুদ্ধি আসলো মাথায়--


আমিঃ-আম্মু আপুদের বাসায় যাওয়ার সময় তো মিষ্টি নিতে হবে? 

আম্মুঃ- হুম তা তো হবেই। কেনো?

আমিঃ- মিষ্টি তো সবাই নেই তুমি মিষ্টি না নিয়ে আমার  সন্দেশ নিয়ে যাও😒

আম্মুঃ- নাহ! আর কাজ কাম নাই। 

আমিঃ-ভাইয়া! নিলে কি হইছে আমিনা তোমাদের ট্রিট দেই😒

ভাইয়াঃ-আগে আগেকটা ট্রিট দে,তারপর ভাবনা চিন্তা করে দেখবো🥱

আমিঃ-কালকে না দিলাম😒 এখন তো আর টাকা নাই🥺

ভাইয়াঃ-আচ্ছা থাক কান্দিস না ২ কেজি করে নিছ। 


পরের দিন শিউলি আপুর জন্য নারিকেল/গুড়ের নাড়ু বানানোর পর ভাইয়ার জন্যেও বানালাম। এবার নারিকেল/চিনি নাড়ু কি ভাবে বানায়🤔 সেই চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সন্দেশ নাড়ু যাই বলেন পাক কম বেশি আসলে নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হওয়া নাড়ুর ফুর দিয়েও বিজিনেস করা যায়। আমি নারিকেলের জর্দা বলে ভাইয়াকে তার থেকে একটু খানি দেই। ভাইয়া হেসে উড়িয়ে দিলেও খেয়ে বলে এগুলা তো সন্দেশের মতো🙄 আমি বোল্লাম না এই গুলা নারিকেলের জর্দা।নিচে জর্দার পিক দেওয়া থাকবে সবাক দেখে নিবেন😁 হুম আমি সেই গুলাও ভাইয়ার কাছে বিক্রি করে দেই😝 খাওয়ার পর টেস্ট একদম একই পেলো ভাইয়া তাই টাকাও দিয়ে দিলো। এই রকম কিন্তু কাস্টমারদের সাথে করিনা 😒 একটু মজার চলে ফ্যামিলিতেই করলাম আরকি। 


~এই ভাবেই মজার চলে আর ভালোবাসার টানে চলছে আমার বিজনেস🥰  এই আইডিয়া গুলো প্রিয় প্লাটফর্ম থেকেই নেওয়া। আবার ও ধন্যবাদ আর ভালোবাসা প্রিয় মেন্টর,,  প্রিয় লক্ষ্মীপুর আর প্রিয় পরিবারের সকলের প্রতি🥰


~ধন্যবাদ আপনাদের মূল্যবান সময় নিয়ে আমার অগোছালো লিখাটা পড়ার জন্য 😊


কাজ করছি,,


নারিকেল/গুড়ের নাড়ু

ক্ষীরের সন্দেশ

মধু

গার্মেন্টস আইটেম প্রোডাক্ট 



📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯৩

Date:- ০৭/১২/২০২১ইং

🙋‍♀️আফরোজা ইরিন সাবি

🍂কমিউনিটি ভলান্টিয়ার

🍂ব্যাচঃ-১৫ 

🍂রেজিষ্ট্রেশনঃ-৬৮০৭৬ 

🍂ফাউন্ডারঃ- বিজনেস লাভার 

🍂পেশাঃ- স্টুডেন্ট 

🍂জন্মঃ- রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর

ফরিদপুর জেলা টিম কর্তৃক আয়োজিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি -২০২৪

ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥

পর্দাশীল ঘরোয়া নারী- সফল উদ্যোক্তা

আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।