🌻জীবন যুদ্ধে হার মেনে না নেওয়া তনুর গল্প।🌻

 ♥️ জীবনের গল্প ♥️

🌿জীবন মানেই যুদ্ধ।  এই পৃথিবীটা একটা যুদ্ধের ময়দান। আপনি আমি সবাই এখানে সৈনিক। এখানে প্রতিনিয়তই লড়াই করে বাঁচতে হয়।

 🌺আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার জীবনের গল্প সুখ-দুঃখ, হাসি- কান্না শেয়ার করবো। সবাই আপনাদের মূল্যবান সময় থেকে একটু সময় নিয়ে আমার জীবনের গল্পটা পড়বেন এবং ভালোবেসে আমার পাশে থাকবেন।🌺

          জীবনের গল্প এত ছোট নয়,                    একদিনে সে ফুড়িয়ে যাবে।

        হাসতে হবে, কাঁদতে হবে 

           এসব নিয়েই বাঁচতে হবে। 

🌻জীবন যুদ্ধে  হার মেনে না নেওয়া তনুর গল্প।🌻

🌿🌿আমি তনু। মুসলীম পরিবারে জন্ম আমার।একদম অজপাড়া গাঁয়ের মেয়ে আমি। প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম বিদ্যুৎতের দেখা মিলে।হারিকেন জ্বালিয়ে লেখাপড়া করতাম। লেখাপড়া হাতে গুনা দুই একটা পরিবারে ছিল। তাও ক্লাস ফাইভ বা ৮ম শ্রেণীতে উঠলেই বিয়ে দিয়ে দিত। যেখানে দুইমুঠো ভাত যোগার করতে পারতো না,সেখানে আবার পড়ালেখা! চারদিকে শুধু অভাব আর অভাব। আমার বাবা ছিলেন একজন কৃষক। দাদার রেখে যাওয়া সম্পদ আর বাবা নিজে কিছু কেনার পর গ্রামের সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী হিসেবেই মানুষ বাবাকে চিনতো। আমার বাবা খুব শিক্ষিত ছিলোনা কিন্তু জ্ঞানী ছিলো। আমার কাকা ছিলেন একজন মুক্তিযুদ্ধা। সবাই তাকে সম্মান করতো আবার ভয়ও পেত। সংগ্রামের কয়েক বছর পর কাকা একটা দুর্ঘটনায় মারা যায়। আমার বাবা তখন অনেকটাই ভেঙ্গে পড়ে। একসময় গ্রামে বন্যা হয় আমাদের সব ফসল নষ্টহয়ে যায়। গ্রামের মানুষদেরো হাহা কার। বাবা নাকি তখন ঘরে মজুত রাখা সব ধান চাল মানুষদের দিয়ে দেয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বাবা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। পানের বরজ দিলো ঐখান থেকে আমরা মোটামোটি ভালোই চলছি। ভাই বোন সবাই পড়ালেখা করছি। গ্রামে সর্বপ্রথম বড় আপা তখন এস.এস.সি পাশ করে। কয়েক বছর পর আবার একটা ঘুর্ণিঝড় হয়। একরাতে বাবার সব ফসল, পানের বরজ সহ সব মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে যায় এই ঘুর্ণিঝড় নামের ভয়ানক থাবা। বাবা দিশেহারা হয়ে পরে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বিদেশে চলে যাবে। সন্তানদের পড়ালেখা করাতে হবে।

    🌿🌿যাইহোক বাবা বিদেশে চলে গেলেন। জমি ইজারা,ভাগে ইত্যাদি দিয়ে। বাবা যাওয়ার সময় আমি অনেক কেঁদেছিলাম।তখন অনেক ছোট আমি, বিদেশ কি বুঝতাম না কিন্তু বাবার হাতে ২ টাকার নোট দিয়ে বলেছিলাম আমার জন্য মজা নিয়ে এসো। ১০ বছর পর বাবা দেশে এসে বলল এই নাও তোমার ২ টাকা, কিন্তু তোমার ২ টাকার সুদে আসলে অনেক কিছু নিয়ে আসছি। আমি সবার ছোট ছিলাম তাই বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসতো। আমরা অনেক কষ্ট করে স্কুলে যেতাম। আমাদের গ্রামে কোন স্কুল ছিলনা, এখনো নেই কোন স্কুল বা প্রতিষ্ঠান। আমার বাবার দেওয়া জায়গাতে একটা মসজিদ আর মক্তব করা হলো এখানেই সবাই পড়তো এবং পড়ে। মাধ্যমিকে যখন পড়ি তখন ৪ কিঃমি পায়ে হেটে যেতাম। স্কুলে ছাত্রী হিসেবে ভালই ছিলাম তাই স্যার সাইন্স নিয়ে পড়তে বললেও আমি কমার্সে পড়ার আগ্রহ পোষন করলাম। এস.এস.সি পাশ করে যখন কলেজে কমার্সে ভর্তি হই তখন নেমে আসে আমার জীবনে ভয়াভহ পরিস্থিতি। 

        🌿🌿আমার মা তখন এক্সিডেন্ট হয়। কোমর থেকে পা আলাদা হয়ে ভেঙ্গে গোড়ো হয়ে যায়। ডাক্তার বলল হাঁটার সম্ভাবনা খুবি কম। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কিন্তু সাহস হারায়নি ধৈর্য ধরেছি। দিনরাত এক করে মায়ের সেবা, সংসারের দেখাশোনা,মায়ের প্রসাব পায়খানা পরিস্কার, ব্যায়াম করানো, এর ভিতর আমার কলেজ পড়াশোনা সব একসাথে। দীর্ঘ১১ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আমার মাকে হাঁটাতে সক্ষম হয়েছি। আমার মা এখনো আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। 

   🌿🌿এইচ,এস,সি পরিক্ষার ফরমফিলাপের সময় বাবা টাকা দিয়ে বলেছিল পাশ না করলে টাকা ফেরত দিতে হবে।আমার অন্যবোনেরা তখন সরকারি চাকুরি করে। পরিক্ষা দিলাম কিছুদিন পরেই রেজাল্ট হলো পাশ করলাম। তখন মনের মধ্যে ইচ্ছা জাগলো শহরে পড়াশোনা করবো। বাবাকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করালাম কিন্তু আত্মীয়স্বজনরা বাবাকে বলল মেয়েকে বাইরে দিলে নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু বাবা কারো কথায় শুনেনি শুধু আমাকে বলছে ভালো করে পড়তে হবে। ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ ম্যানেজমেন্টে চান্স পেয়ে ভর্তি হলাম। ক্লাস শুরুহলো হোস্টেলের জন্য আবেদন করে গণহলে সিট পেলাম। এখানেও রাজনীতি সিনিয়র আপুদের মূল্য বেশি। তাছাড়া গ্রাম থেকে আসছি এডজাস্ট করতে পারছিনা। ফাস্টইয়ার রেজাল্ট খারাপ হলো শুরু হলো হতাশা। ২য় বর্ষ  দুই ইয়ার একসাথে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। কিছুদিন পর হলের দুইতলায় ছিট পেলাম। ২বর্ষের পরিক্ষা ভালো হলো। এরমধ্যে আমি একজন কে ভালোবাসতাম, সেও আমাকে অনেক ভালোবাসে। সে তখন জুনিয়র অফিসার হিসেবে ব্যাংকে জব করে।৩য় বর্ষে উঠার পর সে আমাকে বিয়ের কথা বলে কিন্তু আমি বললাম ফ্যামিলিতে জানাবো কিন্তু সে ফ্যামিলির হা-না এইসব ঝামেলায় যেতে রাজি না। কারন তার মা একজন ক্যান্সার একিসাথে ডাইবেটিকস হাইপ্রেসারের রোগী ছিল। 

    🎑🎑যাইহোক অবশেষে বিয়েটা করেই ফেললাম। শুরু হলো নতুন জীবন। হোস্টল ত্যাগ করে বাসা নিলাম কয়েক মাস পর আমার আপুকে বললাম বিয়ের কথা আপু বাবা কে বলে দিলো, শুরো হলো নতুন কাহিনী। নিজে নিজে বিয়ে করলে পরিবারে যা হয়। যত ভালো ছেলে আর মেয়েই হোক নিজে বিয়ে করেছো তো মরেছো। সিনেমার গল্পেরমত বাবা তখন ভিলেন। আমার বেলায়ও তাই,বাবা তখন আমার সাথে কথা বলা এমনকি বাড়িতে যাওয়া একদম নিষেধ করে দিলো। অনেকের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। এরপর আমার হাজবেন্ড তখন আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। যদিও সবাই আমার প্রতি অসন্তুষ্ট তবুও আমি নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। আমার শাশুড়ীর অনেক সেবা করা লাগতো, ক্যান্সাররোগী ছিলেন। আমার শশুড় আবার হেলথ অফিসার ছিলো(রিটার্য়াড) কিন্তু আমার সংসারের কাজ, শাশুড়ীর সেবা, ভালো রান্না ইত্যাদি দেখে অনেক ভালোবাসতো। খুব ভালো মানুষ আমিও উনাকে দিয়ে বাবার অভাব কিছু টা পূরন করতে চাইতাম। কিছুদিন পর আমার হাজবেন্ডের বোন বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে একলামশিয়ায় মারা যায়। বাচানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। আপু ছিলো উপজেলার শিক্ষা অফিসার। তার ৩ বছরের এক ছেলে রেখে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলো। এই বাচ্চাকেও এখানে তার নানা নানুর কাছে রাখতো। সন্তান মারা যাওয়াতে আমার শশুড় শাশুড়ী সবাই অসুস্থ হয়ে পরে। তাদের দিনরাত সেবা করে আমি পড়াশোনা ভালো করতে পারছিলাম না। তাছাড়া শশুড় বাড়িতে পড়াশোনা যে কতটা কষ্ট করে করা লাগে তা বলে শেষ করা যাবে না। আর প্রেম করে বিয়ে করলে বাবার বাড়ি থেকে সাপোর্ট না পেলে যে কি যন্ত্রণা পেতে হয় আর কত ধরনের কথা শুনতে হয় তা আর কি বলবো। এতো কষ্টের মাঝেও আমি পড়ালেখা বাদ দিতে চায় নি। বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়তো কিন্তু কথা বলতে পারিনি। মানুষের কাছ থেকে খোজ নিতাম।  তাছাড়া আমার হাজবেন্ডও এক সপ্তাহ পরপর বাসায় আসতো। এদিকে আমার ফাইনাল পরিক্ষা চলে আসে। আমার কথা একটাই আমি পরিক্ষা দিবই। এর ভিতর অনেক কষ্ট করে পরিক্ষা দিলাম।এর মধ্যে আমার দেবর কে বিয়ে করানো হলো। এখন সে নির্বাচন কমিশন অফিসার। আমার পরিক্ষার কিছুদিন পর আমার হাজবেন্ড ঢাকায় বদলি হয়। আমারো রেজাল্ট হয় ভালো একটা পয়েন্ট নিয়ে পাশ করলাম। আমার হাজবেন্ড তখন আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। একদম শুণ্য হাতে একটা বাসায় উঠলাম। ঐ রাতে সে একটা পাতিল কড়াই আর কিছু চাল, ডাল, ডিম, তোশক একটা বেডশিট কিনে নিয়ে আসলো। শুরু হলো আমাদের নতুন সংসার। ভালোই যাচ্ছিলো দিনগুলো এরমধ্যে আমি এমবিএ ভর্তি হই।

   🍒🍒কিছুদিন যাওয়ার পর আমি অনুভব করলাম আমি মা হতে চলেছি। এই আনন্দে আমরা দুজনেই খুব খুশি। বারডেম হসপিটালে গাইনী ডাক্তারের শরনাপন্য হলাম। ডাক্তার জার্নি করা ভারি কাজ নিষেধ দিলো আরো কিছু নিয়ম দিলো ঔষধ দিলো। কিন্তুু দিন যতই যাচ্ছে আমার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে দিলাম। কেমন জানি আমার মাঝে একটা পরিবর্তন চলে আসলো আমি নিজেও বুঝতে পারছিলাম না। যখন ৬ মাসের প্রেগন্যান্ট আমি তখন আমার চিকনগুনিয়া রোগ হয়।আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পরি। এরমধ্যে আমার হাজবেন্ডেরো একি রোগ দুজনেই অসুস্থ। আমি বরং উল্টা তার সেবা করতাম। তাকে ডাক্তার ঔষধ দিছে বাট আমাকে কোন ঔষধ দেয়নি। সে কিছুটা সুস্হ পরে আমাকে আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো তখন আমার ডায়াবেটিস ধরা পরলো। আমি মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরি। তার মাকে সে প্রায়ই  দেখতে যেতো। হঠাৎ  খবর আসলো তার মা মানে আমার শাশুড়ী মারা গেছে। আমি বেশি অসুস্থ থাকায় সে আমাকে নিয়ে যায় নি। বাসায় আসার পর আমার সাথে তেমন কোন কথা বলতো না। এদিকে আমারো বাড়ির জন্য খুব খারাপ লাগতো মনে হতো আমি যদি মারা যায় তাহলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবে না কারণ আমি বাবাকে অনেক কষ্ট দিছি। সব মিলিয়ে আমার অবস্থা খুবি খারাপ,বাচ্চারো ইমপ্রোভ হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যার পোড়াতন নাম পি.জি হসপিটাল ঐখানে তিনবার দেখানোর পর পরের বার ডাক্তার আমাকে ভর্তি রাখলো। বলল আপনার যেকোন সময় খারাপ অবস্থা হতে পারে তাই ভর্তি রাখছি। একসপ্তাহ পর ডাক্তার ডিসিশন নিলো আমার সিজার লাগবে। আর আমার হাজবেন্ড অফিস করেই হাসপাতালে আবার সকালে বাসায় গিয়ে রেডি হয়েই অফিসে। আবার সে একটা আয়া ঠিক করে রাখলো সারাক্ষণ যাতে আমার দেখাশোনা করে তবে হাসপাতালের আয়া তো একবার আসলে আরেকবার ডেকেও পাওয়া যায় না। বাড়িতে বোনদের কাছে ফোন দিলাম তখন সেজোবোন স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে আসলো ঐদিনি সিজার হলো। সিজারের পর আমার নাকি অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিলো আমি কিছুই বলতে পারিনা। পরদিন বাচ্চাকে NICU তে রাখা হলো।বাচ্চার জন্ডিস থেরাপি দেওয়া হচ্ছে। বার বার আমার আর বাবুর ব্লাড পরিক্ষা করা হচ্ছে। বাবুর ব্লাড পরিক্ষা আমার সহ্য হচ্ছিলো না। আমি আমার হাজবেন্ড কে বললাম আমি আর ১দিনও থাকবো না  বাসায় নিয়ে চলো। আমার বোন বাড়িতে চলে গেলো পরদিন আমরা রিলিজ নিলাম। আমার হাজবেন্ড সব গুছিয়ে আমাকে বলল একটা ভাঙ্গা সিএনজি ঠিক করছি বাট আমি কিছুই বললাম না,ভাবলাম বাসায় যাওয়া আগে। নিচে নেমে দেখলাম একটা প্রাইভেট কার তখন বললাম তুমি না বলছো সিএনজি সে তখন হেসে বলল আমার সোনামনি জীবনে প্রথম গাড়িতে উঠবে সেটা স্পেশাল না হলে হয়। বাসায় আসলাম একটা কাজের বোয়া ঠিক করলাম ১মাস কাজ করে চলে গেলো। এদিকে বাবু সারারাত কান্না করে কোনভাবেই সামলাতে পারিনা। দিনের বেলায় কোলে ঘুমায়। তার আব্বু রাখলে আমি ২,৩ বেলার রান্না একসাথে করে ফ্রিজে রাখি। কয়েকদিন পর আবারো একটা কাজের লোক রাখি সেও ৩ মাস করে চলে যায় তার ছেলে অসুস্থ বলে। এদিকে আমার এমবিএ ফাইনাল পরিক্ষা  সামনে। আমার হাজবেন্ড বলল পরিক্ষা কিভাবে দিবে? কে রাখবে বাচ্চা,পরিক্ষা দিতে হবে না। কিন্তুু আমার একটাই টার্গেট যতকষ্ট হোক আমি পরিক্ষা দিবো। সংসারের কাজ আর একাএকা বাচ্চার দেখাশোনা ইত্যাদি নাজেহাল অবস্থা আমার। তারপরও বাচ্চা কোলে নিয়েই পড়তাম। পরিক্ষার কয়েকদিন আগে কত মানুষের হাতে পায়ে ধরছি বাচ্চাটা রাখবে আমার সাথে থাকবে যেকয়দিন পরিক্ষা দেই। কেউ রাজি হলো না। হতাশ হয়ে গেলাম তারপরও হাল ছাড়িনি। পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ময়মনসিংহ গিয়ে বান্ধবীর সাথে একটা বাসায় উঠলাম। ঐখানে একটা কাজের বোয়া ছিলো তাকে বললাম ৪ঘন্টা বাচ্চা রাখবে তাকে ৪০০ টাকা দিবো সে রাজি হলো। ১ম পরিক্ষা দিয়ে বাসায় আসলাম বাচ্চা গেইটে আমাকে দেখে মনে হচ্ছিলো সে গেইট ভেঙ্গে আমার কোলে আসবে। তার এই দৃশ্য আর কান্না দেখে আমিও তাকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে দিলাম। ৪ঘন্টায় বাচ্চা কাঁদছে বলে বোয়া চলে গেলো। পরদিন আর আসলোনা কাজে।তখন সবাই আমাকে দোষারূপ করতে লাগলো। আমি সব শুনেও চুপ থাকতাম। 

    🍒🍒এরপরদিন বান্ধবীর বোনের বাসার কাজের মহিলাকে বললাম উনি রাজি হলো। পরিক্ষার একটু আগে এসে উনি বাচ্চার খাবার ডায়পার আর বাচ্চাকে নিয়ে ঐ বাসায় চলে যেতো। ঐ বাসায় আরো ২ টা বাচ্চা ছিলো ৬-৯ বছরের। তারা খুব আদর করতো বাবু দেখতে কিউট ছিলো। এইভাবে বাচ্চা আর নিজের সাথে যুদ্ধ করে পরিক্ষা শেষ করলাম। কিছুদিন পর হঠাৎ খবর আসলো আমার বাবা ব্রেইনস্টোক করেছে। আমি খবর শুনেই বাচ্চা নিয়ে চলে গেলাম বাড়িতে। ৪ বছর পর বাড়ি আসলাম। সবাইকে বললাম বাবাকে ঢাকা নিতে হবে। সবাই রাজি হলো কিন্তুু বাবা ঢাকা আসবেনা। কিছুটা জোরকরে ঢাকা নিয়ে আসা হলো। আমি আমার বাচ্চাকে আমার বোনের কাছে রেখে চলে আসলাম বাবার সাথে ঢাকা মেডিকেলে। ৭দিন ৭রাত একাধারে বাবার চিকিৎসা, ডাক্তারের কাছে রিপোর্ট নিয়ে দৌড়াদৌড়ি, বাবা ক্যান্টিনের খাবার খেতে পারেনা, পুরান ঢাকা থেকে খাবার নিয়ে আসা, থেরাপি দিতে নেওয়া এইসব আমি করতাম। আর আমার ভাইকে শুধু বাবাকে টয়লেটে নেওয়া,গোসল আর বাবার পাশে বসে থাকার জন্য বলছি।কারন বাবা তখনো আমার সাথে কথা বলতো না। এরভেতর বাবা অনেক কথায় মনে করতে পারতো না। স্মৃতিশক্তি কিছুটা লোপ পেয়েছে। কিন্তু আমি আড়ালে অনেক কাঁদতাম যদি বাবা আমাকে ভুলে যায়! ৭দিন যেতেই বাড়ি থেকে ফোন আসলো আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পরেছে। ছুটে গেলাম বাড়িতে, পরদিন বাবাকেও রিলিজ দিলো নিয়ে আসলো ভাই। বাবা তখন অনেকটা সুস্থ, ডাক্তার বলছে নিয়মিত ঔষধ আর ব্যায়াম করাতে হবে। বাড়িতে আনার পর সবি আমি টাইম মতো করাতাম। এরমধ্যে আমার হাজবেন্ড ফোন দিচ্ছে বাসায় যেতাম বাট আমি রাজি হইনি।  এতদিন পর বাবাকে কাছে পেয়েছি আর বাবা কথা বলবে না আমি চলে যাবো কষ্ট নিয়ে এটা মেনে নিতে পারছি না। আমার মেয়ের তখন ১১মাস বয়স। কথা বলতে পারে,যারাই বাবাকে দেখতে আসে আমার মেয়েকে বলে নানা ভাইকে ডাকো বেশি বেশি তাহলেই নানা আদর করবে, কথা না বলে থাকতে পারবে না। আমার মেয়েও সারাক্ষণ নানা ভাই আর ছোট মামা। মেয়ের টলটল কথা আর মায়াবি চেহারা আমার বাবার সব অহংকার রাগ মাটির সাথে মিশিয়ে দিছে। একদিন দুপুরে বাবা খেয়ে শুয়ে আছে আমার মেয়ে তখন ঐবিছানয় গিয়ে বাবার ঔষধ চশমা নিয়ে খেলছে। বাবাকে কমলা খাইয়ে দিচ্ছে, চশমা চোখে দিয়ে দিচ্ছে। এভাবে কখন যে নানা-নাতির ভাব হয়ে গেলো আল্লাহর অশেষ রহমত নাজিল হলো। আমি এসব দেখে মনে মনে ভীষণ খুশি যা বলে প্রকাশ করতে পারবো না। বাবা আমার মেয়ে নিয়ে সারাক্ষণ আনন্দে মেতে থাকতো। ধীরে ধীরে অনেকটা সুস্থ হতে লাগলো। এরমধ্যে আমার এমবিএ রেজাল্ট হলো। আমার হাজবেন্ড আমাকে রেজাল্ট পাঠালো। আমিও বাবাকে নিঃসংকোচে বলে ফেললাম বাবা আমি এমবিএ ফাস্টক্লাস পেয়েছি। আজ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েছি বলেই কেঁদে দিলাম। বাবাও তখন তার চোখ মুছতে মুছতে বললো এমনটাই চেয়েছিলাম "মা"। ঐদিনটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন কারন ৪ বছর পর বাবা আমাকে "মা" বলে ডেকেছিলো। 😃😃

   🇧🇩🇧🇩এরপর থেকে আমার বাবা ভাই মা আমার বোনেরা সবাই আমার মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসে। বাবা এই অসুস্থতার মাঝেও মেয়েকে কাধে নিয়ে সারাগ্রাম ঘুরে বেড়ায়। এর কিছুদিন পর ঈদ আমার হাজবেন্ডকে দাওয়াত দেওয়া হলো। সেও কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে চলে আসলো। সবার বাসায় বেড়ালাম এরপর নিজের বাসায় আসলাম কিন্তু আমার বাবা মেয়ের জন্য কাঁধে ভাইয়াও থাকতে পারে না। এদিকে আমার মেয়ে অসুস্থ। কিছুদিন পর আবার গেলাম অনেকদিন থাকলাম  আবার আসলাম এভাবে আজ পর্যন্ত ভালোই আছি। এখন আমার বাবা আমার চাইতে আমার মেয়ের খোঁজ বেশি নেয়।

   🌿হারজিৎ চিরদিন থাকবে, 

তবুও এগিয়ে যেতে হবে।।

   বাধাঁ বিঘ্ন না পেড়িয়ে,

       বড় হয়েছে কে কবে...।।🌿

🌿🌿সবমিলিয়ে ভালোই যাচ্ছে দিন। কিন্তু আমার একটাই আশা আমি জব করবো। বাট আমার হাজবেন্ড আমাকে জব করতে দিবেনা কারণ আমার সন্তানকে কে দেখবে? কাজের বোয়ার কাছে তার সন্তান থাকলে বাচ্চা কাজের বোয়ার শিক্ষা নিবে। আমার চাকুরির টাকা নাকি কাজের বোয়া, রিক্সাওয়ালা,আর প্রসাধনি কিনতেই ফুড়িয়ে যাবে। মাঝখান থেকে সন্তান কষ্ট পাবে নষ্ট হবে। আর সন্তান যদি মানুষ না হয় তাহলে আমার চাকুরি, নাম,যশ, খ্যাতি এইসব আমার অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। এইসব শুনে চাকুরির চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিলাম। কিন্তু মনে মনে কষ্ট পেতাম আমি কিছুই করতে পারলাম না এত পড়ালেখা করে। আমার নিজের কোন পরিচয় নেই।কাওকে সাহায্য করলেও স্বামীর থেকে নিতে হয়। ইউটিউবে দেখি উদ্যোগক্তার গল্প মনের মধ্যে তখন ঝড় তুলে আমিও যদি কিছু করতে পারতাম। তখন একদিন দেখলাম আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব "ইকবাল বাহার জাহিদ" "স্যারের কিছু ভিডিও" তখন ফেইসবুকে দেখলাম ১৬ তম ব্যাচের রেজিস্ট্রেশন চলছে। কিন্তু কিভাবে করবো কিভাবে করবো বুঝতেছি না। তখন একজনের কমেন্টে বললাম আমি রেজিষ্ট্রেশন করতে চাই। তখন ঢাকা জোনের Benzir Rahman নামে এক ভাই আমাকে বলল আমার সব তথ্য দিলে উনি রেজিষ্ট্রেশন করে দিবে। আমি দিলাম একঘন্টা পর আমাকে জানালো রেজিষ্ট্রেশন হয়েছে। কিন্তু আমি আমার জেলার কাওকে খুঁজে পাইনা অনেকেরে বলছি আমাকে কিশোরগঞ্জ জেলায় এড করে দিতে তখন আরেক ভাই Tarek hasan, চুয়াডাঙ্গা থেকে আমাকে এড করে দিছে। তারপর একদিন এক ছেলেকে বললাম আমাকে কমিনিটি ভলান্টিয়ার এর লিংক দাও।আমি কিশোরগঞ্জের কাউকে চিনি না। তখন সে দুবাই প্রবাসী হাসিবুল হাসান আর কমিনিটি ভলান্টিয়ার রেজিষ্ট্রেশন টিম মেম্বার জাহিদ হাসান ভাইয়ের লিংক দিলো। এদের সাথে যোগাযোগ করলাম এরপর থেকে সব সমস্যা এদের থেকে সমাধান নেই। এখন আমার ইচ্ছা "নিজের বলারমতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন " থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘরে বসে বিজনেস করে যে লভ্যাংশ পাবো তা গরীব, এতিম শিক্ষা বঞ্চিত পথ শিশু, চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। আমার হাজবেন্ড এই প্লাটফর্মের সকলের ভালো মানুষ হওয়ার অঙ্গিকার দেখে সে আমাকে  অনুমতি দিলো আর বললো তুমি এখন এটা করতে পারো তবে সবকিছুর আগে তোমার সংসার এবং বাচ্চা। আল-হামদুলিল্লাহ আমি এখন সবার দোয়ায় অনেক ভালো আছি। সবাই ভালোবেসে আমার পাশে থাকবেন।

🌹 আমাদের প্রিয় মেন্টর জনাব, ইকবাল বাহার জাহিদ "স্যারের, এর কথার সাথে সুর মিলিয়ে শুধু একটি কথায় বলব, সমস্যা জীবনে থাকবেই, আপনি যদি শত চেষ্টা করেও সমাধান না করতে পারেন তাহলে সময়ের উপর ছেড়ে দেন, সময়ই সব সমাধান করে দিবে। সবার জন্য শুভ কামনা। 🌹

📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৯৪

Date:- ০৮/১২/২০২১ইং

শেখ তানভীন সুলতানা (তনু)

👉👉  নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন। 

🎋🎋ব্যাচঃ ১৬, রেজিঃ৭৭২৭০। 

♦️♦️নিজ জেলাঃ কিশোরগঞ্জ। 

🗺️🗺️বর্তমান অবস্থানঃ খুলনা শহর।