See More Post

স্বামীর অনুপ্রেরণায় হার না মানা আমার উদ্দ্যোগত্তা হওয়ার গল্পঃ


🙋‍♀️স্বামীর অনুপ্রেরণায় হার না মানা আমার উদ্দ্যোগত্তা হওয়ার গল্পঃ

আমি নাসরিন আক্তার প্রিয়া ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতাম ডাক্তার হওয়ার যেন গরিব মানুষের সেবা করতে পারি। কেননা একদিকে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলাম অন্যদিকে আব্বুর কিডনির সমস্যার কারণে প্রায় ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগতো।এজন্য আব্বু সব সময় বলতেন---আমার ঘরের কেউ যদি ডাক্তার থাকতো তাহলে আমাকে এতো কস্ট করে বার বার ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগতো না আর এতো টাকা ও খরচ হতো না। কিন্তু হটাৎ আমার এইচ এস সি পরীক্ষার ১৫ দিন আগে আব্বু 😭😭মারা যান।যার কারনে আমার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়।
রেজাল্ট খারাপের কারনে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফরম তুলতে যেই নাম্বার দরকার ছিলো আমার তার থেকে ১ পয়েন্ট কম ছিলো। তাই মেডিকেলে পরিক্ষা দিতে পারি নাই।মনে কষ্ট নিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তেজগাঁও কলেজ  অর্নাস এ গনিত বিভাগে ভর্তি হলাম।তখন থেকে টিউশনি করতাম। একসময় শিক্ষতা করতে ভীষণ ভালো লাগতো।বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ফরহাদ নামে একটি ছেলের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক হয়। ও কখনো চাইতো না আমি চাকরি করি।ফরহাদ সব সময় বলতো--তোমাকে বিয়ে করার পর আমি কিন্তু চাকরি করাব না।তুমি ঘর সামলাবে।আমি ও রাজি হয়ে গেলাম।কারন আমি মনে করি একটা মেয়ের জন্য বিয়ের পর সব থেকে আগে সংসার। ও চাইতো না বলে আমি ও চাকরি করব এই চিন্তা বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম।
কিন্তু কিছুদিন পর মেজো ভাই আমাকে  প্রাইমারি স্কুলের চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নিয়ে গেলেন।আমি মন থেকে চাচ্ছিলাম চাকরি যেন হয় অন্যদিকে ওকে দেওয়া  কথাও  রাখতে হবে যে আমি চাকরি করব না। তাই প্রশ্নে 95 পার্সেন্ট কমন আসা সত্বেও সব ভুল দাগিয়ে এসেছিলাম। যার ফল রেজাল্ট ফেল আসলো। দু'বছর পর আমাদের বিয়ে হল। বিয়ের পর দেখলাম ও যে চাকরি করছে তাতে আমাদের সংসার মোটামুটি চলছে কিন্তু এভাবে কি করে চলবে? তারপরও কিছু বলতাম না কারণ বলেছিলাম চাকরি করব না।

🌿গ্রুপে জয়েন হওয়ার সুবর্ণ সুযোগঃএকদিন ফরহাদ এসে আমাকে বললো,আমি তোমাকে" নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন "এর 11 তম ব্যাচে যুক্ত করে দিয়েছি। আমি নিজেও 11 তম ব্যাচে যুক্ত হয়েছি।তুমি গ্রুপের কার্যক্রম গুলো একটু ফলো করো। আমি তখন প্রশ্ন করলাম-- গ্রুপে এড করানোর কারণ কি? আমার এত সময় নেই। প্রতি উত্তরে আমাকে বললেন, এই গ্রুপে জয়েন করানো কারণ হচ্ছে-- গ্রুপ থেকে তুমি অনেক কিছু শিখতে পারবে আগে একটু ফলো করো।

❇️গ্রুপে সময় দেওয়ার পর জীবনের পরিবর্তনঃ

গ্রুপে যত সময় দিচ্ছিলাম ততই নিজের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।যে মানুষকে কেউ কিছু বললেই লেগেটিভ ভেবে নিতো, অন্যের সাথে কথা বলতে পারতো না,অল্পতেই ভেঙে পড়তো,সেই আমি আজ সব কিছুই পজিটিভ ভাবে ভাবি।সহজে হার মানতে চাই না।ভুল হলে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার শুরু করি।আর আমার এই পরিবর্তন গুলো ফরহাদ নিজেও বুঝতে পারলো।
একদিন স্যারের একটি সেশন দেখলাম।যেখানে স্যার বলেছেন---নিজের পরিচয় তৈরি করুন।যেটা হবে আপনার নিজের বলার মতো একটা গল্প।
সেশন টা পড়ার পর নিজেকে নিয়ে আবার ভাবতে শুরু করলাম।কিছু একটা করব।কিন্তু ফরহাদকে বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না কারন ও আগেই বলেছিল,আমাকে দিয়ে চাকরি করাবে না।তারপর আবার স্যারের একটা উক্তি চোখে পড়লো ----স্বপ্ন দেখুন,সাহস করুন
       শুরু করুন,লেগে থাকুন সফলতা আসবেই।

যাক এইবার একটু সাহস নিয়ে ফরহাদকে বললাম,আমি নিজে কিছু করতে চাই যদি তুমি অনুমতি দাও।হটাৎ দেখলাম ও অনেক খুশি।আমি ভয় পেয়ে গেলাম।তখন ও আমাকে বললো ----শুনো আমি চাই তুমি নিজে কিছু কর।তাই আমি চাচ্ছিলাম,তুমি নিজেই আমাকে বিষয়টা বলো।কারন আমি এই গ্রুপ থেকে শিখেছি সবার স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন।
২ দিন পর ফরহাদ ওর অফিসের এক স্যারের থেকে ৩০০০ টাকা ধার করে আমাকে কিছু হিজাব ও খিমার এনে দেয় সেল করার জন্য।নিজের ব্যাবসার জন্য একটা ফেসবুক পেইজ ও খুলে দেয়।যার নাম--------
জাহানারা সুলতান ট্রেডার্স

গ্রুপে সেল পোস্ট দিলে ও সাড়া পাচ্ছিলাম না।কিছুটা ভেঙে পড়লাম।কিন্তু কিছুক্ষন পর স্যারের লেখা পেলাম----সবার আগে নিজেকে ব্রন্ডিং করুন।"প্রচারেই --প্রসার"।সেই পেক্ষিতে গ্রুপে লেগে থাকলাম।যার ফলাফলস্বরূপ  দিন দিন দেখতে লাগলাম ভালোই সেল হচ্ছে।
কিন্তু এক আপুকে বিশ্বাস করে প্রায় ৩৫০০ টাকার খিমার বাকী দিয়েছিলাম।আপু বলেছিল ২ দিন পর টাকা দিবে। কিন্ত পরবর্তীতে আপুকে ফোন দিলে আপু ধরতেন না কিন্তু অনলাইনে থাকতেন।এক সময় আমার নাম্বার ব্লক লিস্টে রাখলেন ।প্রায় ২ মাস পর আপুর টাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।আমি যখন ভেঙে পড়েছিলাম।আমার স্বামী আমার সাপোর্ট হয়ে ছিলেন। গ্রুপে দিনে দিনে নিজের পরিচয় ও সেল বৃদ্ধি  পাচ্ছিলো তাই নতুন কিছু প্রডাক্ট শাড়ি,থ্রি-পিস,গ্রাউন,কসমেটিকস, পাঞ্জাবি, নারকেল ও সুপারি যুক্ত করলাম।
আমি গ্রুপে সময় দিচ্ছিলাম।আর যা সেল হচ্ছিলো সেগুলো বাহিরে ডেলিভারি করার দ্বায়িত্ব পালন করতে লাগলো ফরহাদ।

🌿🌿উদ্দ্যোগত্তা জীবনের সেরা অর্জনঃ
গত রোজায় আমি ও ফরহাদ প্রডাক্ট আনতে ঢাকায় গিয়েছিলাম।যেহেতু রোজার দিন মার্কেটে গিয়ে খুব ক্লান্ত ঠিক সেই সময় এক প্রবাসী ভাই আমাকে ফোন দিলেন।আমাকে ২ টি গ্রাউন এর ছবি দিয়ে বললেন,আপু এই দুইটা আমার আজ বিকেলের ভিতর লাগবে দিতে পারবেন।আমি বললাম ইনশাআল্লাহ ভাই পারব।তখন ভাই বললেন,আপু কুরিয়ারে কিন্তু দিয়েন না।আমি খরচ দিয়ে দিব একটু ঠিকানা দিচ্ছি সেখানে দিয়ে আসেন।উপায় না পেয়ে রাজি হলাম।ঠিকানা অনুযায়ী যাওয়ার পর ভাইয়ের বউ প্রডাক্ট রিসিভ করে বললেন,টাকা ও আপনাদের দিয়ে দিবে বলে চলে গেলেন।
এই দিকে ভাইকে ফোন দিচ্ছি।ভাই ফোন ধরছিলেন না। তখন চিন্তায় পড়ে গেলাম ফরহাদের কাছে আর টাকা নেয় যে ভাড়া দিয়ে বাসায় যাব।এই সময় ফরহাদ আমাকে বললো, টাকা না নিয়ে কেন প্রডাক্ট দিলে।এর আগে ও তুমি ধোকা খেয়েছ?আমি বললাম আমি বিশ্বাস করে দিয়েছি।যাক একটু পর ভাই ফোন ধরলেন।বললেন আপু আমি এখনি টাকা দিচ্ছি।আমার বিকাশে ৫০০০ টাকা দিলেন ভাই।এতো টাকা দেখে আমি ভাইকে আবার ফোন দিলাম।বললাম---ভাই আমি আপনার থেকে ৪০০০ টাকা পাব।আপনি ৫০০০ টাকা ভুলে দিয়েছেন।আমি এখনি বাকি টাকা দিয়ে দিচ্ছি।প্রতি উত্তরে ভাই বললেন,আপু আমি ইচ্ছে করেই ৫০০০ টাকা দিয়েছি।কারন আমি টাকা মেরে দিতে পারতাম কিন্ত আপনি আমাকে বিশ্বাস করেছেন তাছাড়া রোজার দিনে এতো কষ্ট করলেন তাই ভাই হিসেবে এইটা আপনার উপহার।

সেই দিন আমি টাকা টাকে  বড় করে দেখি নাই কিন্তু এই যে সম্মান,বিশ্বাস পেলাম সেটি মনে হচ্ছিলো আমার উদ্দ্যোগত্তা জীবনের সেরা অর্জন।

এ পর্যন্ত যারাই আমার কাছ থেকে প্রডাক্ট নিয়েছেন, সবাই কেন জানি আগেই অগ্রিম প্রেমেন্ট করে দেন।হয়তো বিশ্বাস করে বলেই।আলহামদুলিল্লাহ রমজান মাসের শেষ ৭ দিন অর্থাৎ "নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন " এর অনলাইন হাট বারে ২০,০০০টাকা সেল হয়।যদি এই সেল হওয়াকে একজন উদ্দ্যোগত্তা জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প হয় তবে  বলব হ্যাঁ আমার ও নিজের বলার মত একটি গল্প আছে।ঈদের পর গ্রুপে আর ও বেশি সময় দিতে লাগলাম।লেগে থাকার সফলতা হিসেবে পেলাম,বেশ কয়েকবার স্ট্যাটাস অফ দা ডে হওয়ার সুযোগ, টপ টুয়েন্টিতে নিজের জায়গা করে নেওয়া ও হাট মনিটরিং টিমের একজন মেম্বার হওয়ার সুযোগ। আলহামদুলিল্লাহ শুকরিয়া আল্লাহর দরবারে।

আজ আমার পরিচয়, নিজের উদ্দ্যোগত্তা জীবনের সাফল্য সব কিছুর পিছনে রয়েছে আমার স্বামী ফরহাদ চৌধুরীর অনুপ্রেরণা ও সার্পোট।আজ আমার পাশে ও না থাকলে আমি কখনো এতদুর আসতে পারতাম না।সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।

❇️অনেক আপুর উদ্দ্যোগত্তা হওয়ার পিছনে বড় বাধা তাদের স্বামীঃ

এই গ্রুপের এমন কিছু আপু আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তাদের সবার একেই কথা আপু তুমি কি করে গ্রুপে এতো সময় দিচ্ছ।ভাইয়া তোমাকে কিভাবে সার্পোট করে।যদি ও আমি আপুদের নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।আমি আমার জায়গা থেকে যতটুকু পাচ্ছি আপুদের পাশে আছি।সব সময় আপুদের বলি সবার আগে সংসার। আপুদের উদ্দ্যোগত্তা হতে উৎসাহ দেওয়ার চেস্টা করি।কারন কোন অর্জনই সহজ না বাধা আসবেই।

👉👉ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি----সব গ্রুপ এক না।আপনেরা কয়েকদিন গ্রুপের কার্যক্রম গুলো দেখুন।দেখবেন আপনেরা নিজেরাই গ্রুপের প্রেমে পড়ে যাবেন।আপনারা আপনাদের স্ত্রীদের পাশে থাকুন,তাদের সার্পোট করুন দেখবেন আপনার সাথে সাথে আপনার স্ত্রী ও সংসারে সাহায্য করছে।সবার নিজ নিজ গল্প থাকার প্রয়োজন।
👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇👇

আমার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটি কষ্ট করে পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন,নিরাপদে থাকুন।

স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৫৫৯
Date:- ২৬/০৬/২০২১
--------------------ধন্যবাদান্তে
--------------------আমি নাসরিন আক্তার প্রিয়া
--------------------কমিউনিটি ভলেন্টিয়ার
---------------------টপ টুয়েন্টি ক্লাবের সদস্য
---------------------হাট মনিটরিং টিম মেম্বার
---------------------ব্যাচঃ১১
---------------------রেজিষ্ট্রেশনঃ৩২৯২৫
---------------------জেলাঃলক্ষিপুর
---------------------বর্তমান অবস্থানঃ চাঁদপুর
---------------------পেজঃ জাহানারা সুলতান ট্রেডার্স

ফরিদপুর জেলা টিম কর্তৃক আয়োজিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি -২০২৪

ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥

পর্দাশীল ঘরোয়া নারী- সফল উদ্যোক্তা

আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।