🌷কষ্টেভরা জীবনের গল্প🌷🌹

🌹আসসালামু আলাইকুম 🌹

🥀সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহ তায়ালার জন্য ‍যিনি মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতরূপে সৃষ্টি করেছেন। এবং আমরা ইসলামের আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। অসংখ্য দুরূদ সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর। যিনি গোটা পৃথিবীর রহমত হয়ে দুনিয়াতে আগমন করেছেন এবং হেদায়াতের আলোকবর্তিকা বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা রহম করুন আমাদের সকলের প্রিয় মেন্টর প্রিয় মানুষ জনাব ইকবাল বাহার জাহিদ স্যারের প্রতি। যিনি মানব সেবাই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, যার মাধ্যমে অসংখ্য অসংখ্য পরিবারে হাসি ফুটেছে, ফুটছে এবং ফুটবে ইনশাআল্লাহ।

☘️প্রতিটি জীবন একটি ইতিহাস। তবে কিছু কিছু জীবন অশ্রুসিক্ত, যন্ত্রণাদগ্ধ, নাটকের চেয়েও নাটকীয়। তেমনি এক বাস্তব জীবনী নিয়ে আজ আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করি একটু সময় দিয়ে গল্পটি পড়ে চির কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করবেন।

আমি যখন ছোটঃ-

বর্ষার সময় আমাদের ঘরে পানি উঠে      মা বড় ভাই ও আমি চোকিতে সুয়ে বাবা ঘরের বাহিরে নৌকার উপরে। 

রাতে মা ঘুম ভেংগে গেলে দেখে আমার পায়ের কাছে সাপ।

মা বলল সাপ কামরাচ্ছে না কারন নাকি বর্ষার পানির কারনে তারাও নাকি অসহায় থাকে একটু সুকনো জায়গা চায়।

আমার বয়স যখন ৫ কি ৬ বছর তখন আমার ছোট বোনের জন্ম হয়।

এ সময় অন্য রকম একটি ঘটনা ঘটে। 

এ সময়  আমাদের ১০ টিনের একটি ছাপরা ছিল  মা বলত যখন আমার জন্ম হয়নি তখন নাকি বাড়িতে টংক  তুলে থাকত। আমি কিছুটা আচ করতে পারতাম।

বর্ষাকালে আমাদের প্রায় সময় না খেয়ে কাটিয়ে দিত হত কেননা তখন কোনো কাজ বাবার ছিল না। 

তাই বাবা ভাড়াতে একটা নৌকা নেন মানুষ পারাপারের জন্য। 

বাবা নৌকার হাল দরত আমি সামনে থেকে বোইঠা মারতাম।

দিন শেষে দেখতাম নৌকার মালিকে ভাড়া দিয়ে সামান্য কিছু পেতাম হাতে ফোস্কা পড়ে যেতো।

 আর অধিকাংশ মানুষ নৌকায় উঠলে টাকা দিত না। এই অল্প টাকা দিয়ে ১ সের চাল, ২০০ গ্রাম ডাল,  কিছু মসলা কিনে রাতের খেতাম।

(আমাদের গ্রামটা হুরা সাগরের সাথেই এজন্য বিল বেয়ে অতি সহজেই আমাদের গ্রামে পানি প্রবেশ করত।)  

আমাদের পাশের বাড়ি একটা বিয়ে হইতেছিল আমি আর আমার ছোট বোন ঔবাড়িতে বার বার যেতাম আর আসতাম যদি একবার বলে আদম আয় কিছু খা, পাশের বাড়ির অনেক বন্ধু রাও ছিল কিন্তু কেউ বলতা না।

আমি ভাবতাম লোকো খারাপ ভাববে তাই ছোট বোনকে নিয়ে ঘরের মধ্যে থাকতাম কিন্তু পোলাও গোস্তোর গ্রান বার বার টানতো।

খুব কান্না পেতো আমাকে না হয় না দিল ছোট বোনটাকে যদি দিত।

আমার বোন বলত ভাই আমাদের কষ্ট কি শেষ হবে না?? আমরা কবে বড় হব? এমন হাজার প্রশ্ন করতো আমার ছোট্ট বোনটি।

এ সময় মা বাড়িতে থাকত না। কারন মা অন্যের বাড়িতে সুতার কাজ করত।

বাবার দিন মুজুরির টাকা দিয়ে দিন এনে দিন খেতাম , কাজ না থাকলে সেদিন না খেয়ে থাকতাম,। 

মা আমাদের দুই ভাইয়ের পড়ার খরজ চালাতে পারত না। 

তাই ভাই পড়া লেখা না করে অন্যদের সাথে কাজে যেত কিন্তু কোন টাকা পেত না।  যার সাথেই যেত কাজ করিয়ে নিত দুপুরে ভাইকে একটা কলা রুটি দিয়ে তারা হোটেলে গিয়ে ভালো ভালো খাবার খেত। 

 আমরা সারা বছরে কখন ভালো খাবার খেতে পারতাম না। 

ভালো কিছুর মধ্যে হাটের দিনে আব্বা পাংগাশ মাছ আনতো।

ভাই এক সময় পারলুম বা লুংগি তৌড়ির কাজ শিখে গেল।

মা অন্যের বাসায়  সুতার কাজ করত ।  সকালে মা ঘুম থেকে তুলে আমাকে বলত তালা বাটি দুয়ে মক্তবে যে এর পর মক্তব থেকে এসে খেয়ে আবার বড় ভাইয়ের জন্য খাবার নিয়ে যেতাম, সেখান থেকে এসে স্কুলে ,  স্কুলে থেকে এসে আবার ভাত রান্না করে বরতা ছানা দিয়ে রেদে ভাইযের জন্য নিয়ে যেতাম। 

শিক্ষাঃ-

৫ম শ্রেনি পাস করে আবার মাদ্রাসায় ৫ম শ্রেতেই ভর্তি হলাম কারন মাদ্রাসায় মিজান নামে একটা বই আছে সেটা না পারলে নাকি কোন কিছুই পারব না।  এ সময় আরো কষ্ট হয়ে যেত। 

সকালে মক্তব, থেকে এসে ১২ কি. মি. পার করে ভাইয়ের খাবার  আবার সেখান থেকে মাদ্রাসায় ৬ কিলো. মাদ্রাসায় থেকে এসে আবার বিকেলে ভাইযের জন্য রান্না করে ১২ কি. মি.  যেতে ইচ্চা করত না। আবার রাতে পড়া।

আমার গ্রামের ছেলেরা যখন খেলা নিয়ে ব্যস্ত আমি তখন রান্না নিয়ে ব্যস্ত। অন্যরা যখন আলিফ লায়লা দেখত আমি তখন ১২ কিলোমিটার দুরে। আমার পড়তে বসতে বসতে ইশার নামাজ পর হতো।

নিজ থেকে ছোট থেকেই নামাজ পড়তাম।  এখান থেকেই মাদ্রাসায় পড়ার আগ্রহ ছিল। 

আমার বাবা মা অশিক্ষিত হওয়ার কারনে বুঝত না কোথায় কিভাবে পড়াতে হবে। 

মাদ্রাসায় আমার সাথে আরো অনেকেই পড়েছ৷ কিন্তু এ লাইনে থাকে নি।

আমার রেজাল বড়াবড়ই ১০ মধ্যে থাকত।

এর পর তাবলিগে নিজ থেকে সময় দেয়া, অন্যান্য দ্বীনি কাজে সময় দেয়া থেকে সব করতাম।

আমার উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম কে জানা।

আলহামদুলিল্লাহ এখন এলাকার সবার কাছেই গ্রহন যোগ্যতা পেছে। 

কোন ধর্মীয় কিছু হলে আগে আমাকে বলে।

আমার মা অনেক কষ্ট করেছেন সে আর কাজ করতে পারে না। 

মাঝে মাঝে বলে চোখে কম দেখে।

তবুও আমার পড়া লেখার খরচ চালানোর জন্য জোড় করেই করত। 

২০১৫ সালে দাখিল পরিক্ষার পর স্বাভাবিক ভাবে কয়েক মাস সময় বসে থাকতে হতো আমি বসে না থেকে টানা ১৫,২০ দিন অন্যের খেতে ধান কাটার কাজ করে সেই টাকা দিয়ে কারিয়ানা প্রশিক্ষণ করি।  আলিম ১ম বর্ষ পযন্ত পড়ে মা বলল আমি আর তোমার পড়া লেখার খরচ দিতে পারব না( যতিও আগে থেকেই বলত) দিতে পারছি না। 

তুমি যে ভাবে পার পড়া লেখা কর। 

আমি নামাজ পড়ে পড়ে দোয়া করতাম আর চোখের পানি ফেলতাম  ৩ কি.মি. দুরে ৫০০ টাকার বিনিময়ে ৭ দিন করে পড়াতাম। 

।টুকটাক চলে যেত খরচ   । 

আলিম পাস করে কি করব কোথায়  পড়ব এই নিয়ে চিন্তায় পরে গেলা সবাই  মাদ্রাসা বাদ দিয়ে কলেজে যাচ্ছে হুজুরদের সাথে পরামর্শ করে মাদ্রাসা ও কলেজ দুটোতেই ভর্তি হলাম।

কিন্তু খরচ চালানো কোন উপায় নেই । 

আল্লাহ তায়ালা কাছে চোখের পানি ফেলে ফেলে কাদতাম  আল্লাহ তুমিই রিজিকের মালিক একটা ব্যবস্থা করে দাও।

আল্লাহ তায়ালা  আমাদের সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের পাশেই একটা মসজিদে চাকুরির ব্যবস্তা করে দিলেন খুবই আল্প বেতনে।

 সবাই যেখানে মেসে থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ করতে থাকছে আমি সেখানে মসজিদে চাকুরির করার সুভাদে থাকা খাওয়া পরে কিছু টাকা পাচ্ছি।

আলহামদুলিল্লাহ।

বাবা মরণব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্তঃ

আলহামদুলিল্লাহ ভালোই কাটছে দিন গুলো   হঠাৎ করে  অতি যত্নসহকারে মসজিদের দায়িত্ব পালন করছি বাড়িতেও কিছু দেই। 

হঠায় করে খবর এলো বাবার শরীর খারাপ। পেট ব্যাথা। বাড়িতে গেলে অনেকে বলত বাবার জন্ডিস হয়েছে। জন্ডিসের চিকিৎসা করলাম কোন লাভ হলো না। যে যেখানেই যেতে বলত সেখানেই যেতাম। বাবাকে অনেক ভালোবাসি।  টানাটানির সংসার তবুও বাবা হাটে গেলে ২ টাকার তানা নই হলেও আনত।

আব্বা পেটে প্রচুর বেথা। 

অশেষে  সিরাজগঞ্জ শহরে নিয়ে আসলাম  টাকা নেই ৫ হাজার টাকা ছিল সেটা দিয়ে ডাক্তার দেলাম ও টেস্ট করলাম ১৫ টেস্টে কোন সমস্যা নেই  একটা থেকে বলল বাবাব পেটে টিউমার হয়েছে ৩ টি।

 ২ দিন পর যেতে বলল  বলল ২ জন ডা. ভালো করে দেখে ছিটিসক্যান দিল ১০০০০ টাকা লাগবে কোথায় পাব । মার কিছু জমানে টাকা  ছিল তা দিয়ে টেস্ট করে জানালো বাবা ক্যান্সারের উপশর্গের কথা বলল।

আর আমাদেরকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলল। 

এবার যে আমাদের উপরে বাঁশ  পরে গেল। 

গরিব মানুষের এতো বড় রোগ।

কি করব কোন উপায় নেই চিকিৎসা তো করতেই হবে বড় ভাইয়ে কিছু টাকা ছিল সেটা দিয়ে চাচাতো এক ভাইয়ের সাহায্যে  মৃত নাসিম সাহেবে লোকের মাধ্যমে ঢাকা ক্যান্সার হসপিটালের ডা. বিদ্যুৎ সারের সহযোগিতা  বক্ষব্যধী ও ক্যন্সার হসপিটালে যাই। 

৩ বার যাওয়ার পর আরো কিছু টেস্ট দেয় বোডের মাধ্যমে আমাদের জানানো হয় ৬ টা কেম থেরাপি দিতে হবে।  মুল ঔষধ টা তারা ফ্রি দিবে কিন্তু আনুসংগিক ওষুধ কিনতে হবে আমাদের। 

২১ দিন পর পর কেমো দিবে  মাঝ খানে  রক্তের কিছু পরিক্ষা দিত সেগুলো নিয় ঢাকাতে দেখাতে হতো আবার বাড়িতে আসতে হতো। কারন ঢাকায় তেমন থাকার কেউ ছিল না।

  প্রতি বার ঢাকা গেলে ১০ হাজার করে টাকা লাগত।এভাবে ৬ টা কেম থেরাপি শেষ করে আবার রক্ত পরিক্ষা দিলে বোড থেকে বলে  আপনার বাবার সমস্যা কমরা কথা কিন্তু এটা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমাকে আরো জানানো হয় বোড থেকে অন্য একটা ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দেন  সেখানে ২ দিন পর দেখাতে পারি বাবাকে দেখে বলেন এই টেস্ট গুলো করতে  বাবাব নাকি অপারেশন করতে হবে। 

প্রায় ২০ হাজার টাকার টেস্ট ছিল। 

আমি আর বাবা বাহিয়ে এসে বসি কি করব এখন অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছি তেমন কিছু নেই যে বিক্রি করে বাবার চিকিৎসা করব।

আমাদের আরো জানানো হয় অপারেশনের পর আবার রেডিও থেরাপি দিতে হবে। 

তাই কিছু না বুঝে বাবাকে নি বাড়ি চলে আসি। চিকিৎসা এখন বন্ধ  প্রতি দিন অনেক টাকার ঔষধ লাগে  যা সমর্থের বাহিরে ১ দিন ঔষুধ খেলে ৩ দিন না খেয়ে থাকতে হয়।

এই চিন্তায় ও দিকে মার শরীর ও খারাপ হয়ে গেছে ডায়াবেটিস, পেশার, চোখে কম দেখা। 

আমার বাবা মার বয়স কিন্তু খুব বেশি না।  বাবা বয়স ৬৫-৭০ হবে।

আর্থিক ভাবে যত টুকু পেয়েছি সেটা হলো মসজিদে সভাপতি ১০ হাজার টাকা দিয়েছে।  এক জায়গা থেকে ১০ হাজার পেয়েছিলাম চিকিৎসা চলা কালিন তাছারা কোন সাহায্য বা ভালো দুটা কথা সুনতে পাইনি।

চোক্ষু লজ্জার ভয়ে কখন কারো কাছে কিছু চাইতে পারিনি।😰😰😰

এখন বাবার ঔষধের জন্য অনেক গুলো টিউশনি করি।

আর নিজের বলার মত গল্প ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ব্যবসার করছি খাটি বিভিন্ন ফুলের মধু,  খাটি সরিষার তেল, কালো জিরার তেল, লাল চিনি, খেজুরের জোলা গুড় ও হালুয়া  নিয়ে। 

আমিও চাই না কারো কাছে হাত পাত্তে আমি চাই আমার পণ্য নিয়ে আমার পাশে যারা থাকবেন তাদের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ ইনশাআল্লাহ। 

সবাই আমার বাবার জন্য দোওয়া করবেন যেন বাবাকে আল্লাহ তায়ালা পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করেন এবং আমার পরিবারকে যেন আমি আর্থিকভাবে একটি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি সেই তৌফিক তিনি দান করেন।

যারা মূল্যবান সময় দিয়ে আমার গল্পটি পড়েছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি। 

📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০৪

Date:- ২৩/১২/২০২১ইং       

🔰মো: আদম আলি 

🔰ব্যাচঃ ১০ম

🔰রেজিঃ ২০৮৯২

🔰রক্তের গ্রুপঃ এ+

🔰জেলাঃ সিরাজগঞ্জ 

🔰সদস্যঃ নিজের বলার মত একটি গল্প ফাউন্ডেশন

🔰মোবাঃ   01989067724/01760148564