🌷 আমার ৬ হাজার টাকা দিয়ে উদ্দোক্তা হওয়ার গল্প 🌷

 এইচ এস সি পাস করার পর থেকেই সব সময় ভাবতাম নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবো।নিজে কিছু একটা করবো।কারণ আমার কোন কিছুর প্রয়োজন হলে ফ্যামিলির কারো কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে লজ্জা লাগতো নিজেকে অনেক ছোট মনে হতো।তাই অনেক জায়গায় জবের জন্য এপ্লাই করতে থাকি প্রাইমারি তে পরীক্ষা দেই,পুলিশে পরীক্ষা দেই সব কিছু ঠিক থাকার পরে ও ভাইভার পরে ফিরে আসতে হয় কারণ বড় অংকের টাকা দিয়ে জব করার হিচ্ছা বা সামর্থ নেই।ব্র্যাক অফিসে পরীক্ষা দেই পাস করার পরে ও ভাইভা তে গিয়ে শুনতে হয় বাসা অফিসের কাছে না থাকার কারণে জব হবে না।এর পর থেকে জবের জন্য এপ্লাই করা বন্ধ করে দেই।কারণ জবের জন্য এপ্লাই করা থেকে শুরু করে পরীক্ষা দেওয়া পর্যন্ত অনেক কষ্ট আর পরিশ্রম লুকিয়ে ছিল। তাই জবের আশা ছেড়ে দেই। 

  ✍️সেলাই এর কাজ শিখা শুরু করে দেই।হটাৎ একটা কোম্পানি থেকে কল আসে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য।সেখানে সিভি দেওয়া ছিল।ইন্টারভিউ দেওয়ার পরে আল্লাহর রহমতে জব টা হয়েছিল।ফ্যামিলির বাধা থাকার পরে ও অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে দুই বছর জব টা করি।সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ডিউটি থাকার কারণে ফ্যামিলি তে কারো মত ছিলো না আমি জবটা করি।শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ফ্যামিলির বাধার কারণে জানিয়ে দেই যে আমি আর জব করবো না।

 ✍️ যখন জব টা ছেড়ে দেওয়ার কথা চলছিল তখন হতাশ হয়ে যাই। শুধু ভাবতাম আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।তখন মাথায় আসে আমি উদ্যোগক্তা হবো ঘরে বসে কিছু একটা করবো। কিন্তু কি করবো তা মাথায় আসছিলো না।তখন থেকেই ইউটিউবে উদ্যোগক্তা বিষয়ে ভিডিও দেখতাম হঠাৎ আমার চোখের সামনে আমাদের সবার প্রিয় ইকবাল বাহার জাহিদ স্যার এর একটা ভিডিও চলে আসে স্যার এর ভিডিও দেখে স্যার এর কথা গুলো অনেক ভালো লাগতো।সব সময় শুধু স্যার এর ভিডিও দেখতাম ভিডিও এর মাধ্যমে নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন এর সন্ধান পাই।তখন ২য় ব্যাচ প্রায় শেষ এর দিখে ছিল।আমি ৩য় ব্যাচ থেকে ক্লাস করি স্যার এর প্রতি দিন এর সেশন গুলো পড়তাম।অনেক ভালো লাগতো অনেক কিছু জানতে পারি শিখতে পারি।৩য় ব্যাচ শেষ হবার প্রায় তিন মাস পরে আমি জব টা ছেড়ে দেই।

__________আমার চিন্তা ভাবনা জব ছেড়ে দিয়ে কি করবো

✍️জব ছেড়ে দেওয়ার পরে কি নিয়ে কাজ শুরু করবো আর লোকে কি ভাববে সেই কথা ভাবতে ভাবতে অনেক সময় নষ্ট করি।কোন কিছু শুরু করতে পারছিলাম না।আবার স্যার এর ভিডিও গুলো দেখা শুরু করি।স্যার সব সময় বলতেন মানুষ কি বলবে এই চিন্তা বাদ দিতে হবে।আর যে কাজ টাই শুরু করি ভালোবেসে করতে হবে। পরে মাথায় আসলো আমি তো সেলাই এর কাজ ভালো পারি তাইলে বেবি ড্রেস নিয়ে কাজ শুরু করবো।তার পরে বেবি ড্রেস তৈরি করার জন্য ব্যাগ,ট্যাগ,কাপড় যা যা প্রয়োজন সব কিছু ঢাকা থেকে ভাইয়ার মাধ্যমে কিনে আনি।পহেলা বৈশাখ এর জন্য কিছু বেবি ড্রেস ও তৈরি করি।ড্রেস গুলো তৈরি করার পরে চলে আসে অনেক বড় বাধা করোনার জন্য পহেলা বৈশাখ পালন করা হবে না।ড্রেস গুলো সেল করতে পারিনি।তাই কিছু দিন পরে ড্রেস গুলো পরিচিত কয়েক জন কে গিফট করে দেই।আবার হতাশ হয়ে যাই সেই কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।যা যা কিনা হয়েছে সব কিছু এখনো পরে আছে।

 ✍️কিছু দিন যাওয়ার পরে আবার মাথায় আসে রেশমি সুতার চুড়ি আর গহনা নিয়ে কাজ শুরু করবো তারপর চুড়ি তৈরি করার জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিছু কিনে এনে অনেক গুলো চুড়ি আর আংটি তৈরি করি।পরিচিতি কম থাকার কারণে অনলাইনে সেল করতে পারিনি।পরিচিত কয়েক টা শপে সেল করার চেষ্টা করছি।সবাই পছন্দ করতো  কিন্তু নিতে চায়নি কারণ করোনার সময় নাকি সেল করতে পারবে না।আসে পাশের মানুষের কাছে যাই সেল করছি পারিশ্রমিক টা উঠে আসতো না।(রেশমি সুতার চুড়ি আর গহনা যারা তৈরি করে শুধু তারাই বুঝতে পারবে কতটা ধৈর্য নিয়ে নিখুঁত ভাবে কাজটা করতে হয়)।এমন প্রাইস বলতো অনেক খারাপ লাগতো।শুধু ভাবতাম কেউ যদি পরিশ্রম এর মূল্যায়ন টা না বুঝে তাইলে কাজ করে আর কি করবো তার পরে সেই কাজ টা ও বাদ দিয়ে দিলাম।লেগে থাকতে পারি নি।আমার সব থেকে বড় সমস্যা টা ছিল কোন কিছু নিয়ে শুরু করতে পারলেও লেগে থাকতে পারতাম না। 

এরপর থেকে থেকে সব সময় শুধু ডিপ্রেশনে থাকতাম।রাতে ঘুমাতে পারতাম না।ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমাতাম।কিছু দিন পরে আমার ফোন টা ও নষ্ট হয়ে যায়।তার পর অনেক দিন ফেসবুক,গ্রুপ সব কিছু থেকে আনএক্টিভ ছিলাম।প্রায় ৩মাস পরে নিজের টাকায় ফোন কিনে আমি আবার সব কিছু তে এক্টিভ হই।

নতুন ভাবে শুরু করি আমার উদ্যোগক্তা জীবন। 

মাত্র ৬০০০ টাকা দিয়ে কিছু দেশি থ্রি পিছ কিনে শুরু করি আমার নতুন পথ চলা। আমার অনেক হিচ্ছা ছিল নিজের টাকা জমিয়ে আমি আমার উদ্যোগ শুরু করবো।নিজের টাকা দিয়েই উদ্যোগ শুরু করেছি আলহামদুলিল্লাহ।প্রিয় স্যার এর একটা কথা আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করে

 "স্বপ্ন দেখুন,

  সাহস করুন, 

  শুরু করুন এবং

   লেগে থাকুন সাফল্য আসবেই"।  

   আমিও স্বপ্ন দেখেছি,সাহস করেছি,শুরু করেছি কিন্তু  লেগে থাকতে পারতাম না।জুন মাসে সিলেট বিভাগের মেগা মিট আপে স্যার এর কথা গুলো কাছ থেকে শুনার পর থেকে নিয়মিত লেগে আছি।নিয়মিত এক্টিভ থাকার ফল পাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ।যখনই পিছিয়ে যাই স্যার এর ভিডিও গুলো দেখি।সামনে এগিয়ে   চলার অনুপ্রেরণা পাই।

✍️আমি এখন কাজ করছি শ্রীমঙ্গল এর ফ্রেশ চা পাতা,মনিপুরী পণ্য,দেশী থ্রী পিচ আর খাঁটি মধু নিয়ে।

✍️জীবনে বড় ও সফল হবার জন্য  সৎ ও পজিটিভ থাকার কোন বিকল্প নেই।সব সময় নিজেকে সৎ ও পজিটিভ রাখার চেষ্টা করছি।যত সমস্যা আর বাধা আসে না কেন জীবনে সৎ ও পজিটিভ থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।আমি নিজেকে একজন ভালো মানুষ মনে করি।কারণ আমি কাউকে খারাপ পণ্য দেই না।কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করি না।একজন উদ্যোগক্তার সব থেকে বড় মুলধন হচ্ছে সততা ও কমিটমেন্ট।

✍️কিছু দিন আগেও অনেকেই আমাকে পাত্তা দিত না।অনেকেই বলতো আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমি কোন কিছু করতে পারবো না।এখন তাদের মধ্যে কয়েক জন বলে আমাকে দিয়ে কিছু হবে। আমি কিছু একটা করে দেখাতে পারবো।সফল হতে পারবো।আর যারা ভাবে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না।তাদেরকে আমি কিছু বলি না শুধু তাদের কথা শুনে যাচ্ছি এখন। তাদের কথার জবাব একদিন আমি আমার কাজের মাধ্যমে দিব ইনশাআল্লাহ। 

✍️এখন আমার একটাই লক্ষ্য নিজেকে একজন সফল উদ্যোগক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে  তুলতে  চাই, এবং অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করে সমাজে অবদান রাখতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।আমি যেন আমার লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।

✍️সব শেষে নতুন উদ্যোগক্তা দের বলতে চাই লোকে কি বলবে,কি নিয়ে কাজ শুরু করবো এই সব ভেবে আমার মতো সময় নষ্ট না করে যে কাজ টা করতে ভালো লাগবে তা নিয়েই কাজ শুরু করে দিবেন এবং ভালোবেসে লেগে থাকবেন।তাইলে সফল হবেন ইনশাআল্লাহ।ভালোবেসে প্রিয় প্লাটফর্ম এর সাথেই থাকুন। 

ধন্যবাদ সবাই কে।আমার জন্য দোয়া করবেন। আর আমার লেখায় কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি তে দেখবেন। 

👉বিঃদ্রঃ এতক্ষন ভালোবেশে আমার এই অগুচলো কথা গুলো পড়ার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।সবার সুসাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কল্যাণ কামনা করছি।

_________________________________________________

📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৭০৬

Date:- ২৬/১২/২০২১ ইং

🌷রুবা আক্তার 

🌷জেলাঃ  মৌলভীবাজার 

🌷উপজেলাঃ  শ্রীমংগল 

🌷ব্যাচঃ ৩য়

🌷রেজিঃ ১১৩৩৮

🌺আমার পেইজ 👉

https://www.facebook.com/Rubas-collection-রকমারি-পণ্য-100322578758619/

🌺ভালবেসে সবাই আমার পেইজটি তে ঘুরে আসার আমন্ত্রণ রইলো।