See More Post

সাহস করে ভর্তি হয়ে গেলাম



আমরা  তিন ভাই বোন। আমি ছিলাম সবার বড় বাবার চাকরির সুবাদে আমার ছোট  বেলা কাটে দেশের  বিভিন্ন জায়গায় । ছোটবেলা থেকে আমার পড়াশোনার প্রতি ছিল অনেক আগ্রহ। এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করার পর আমি অনার্সে ভর্তি হই। যেহেতু পরিবারের বড় মেয়ে ছিলাম তাই আমার সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর আমার বিয়ে হয়ে যায় এরপর এরপর সংসার পড়াশোনা দুটোই একসাথে চলছিল, আমি যখন অনার্স ৪থ  বর্ষ  তখন  হঠাৎ আমার আম্মু এক্সিডেন্ট করলেন আমি খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমি আর আমার হাসবেন্ড হাসপাতালে গেলাম। তখন দেখি ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়েছে হাতের হাড় সব বের হয়ে গেছে আম্মুর অবস্থা খুবই খারাপ, পরে ডাক্তার এসে দেখলো এবং বলল দূত ঢাকা নিয়ে যেতে। দুপুর 2 টায় আমার হাজবেন্ড  ও আমার আব্বু সহ ফেনী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। 


✳️✳️ আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ফোন দিয়ে ঢাকা কোন হসপিটালে নিবো সবার থেকে পরামর্শ চাচ্ছিলাম সবাই বললো ঢাকা পঙ্গু হসপিটাল এ নিয়ে যেতে সেখানে ভাল ডাক্তার পাওয়া যায়।আমাদের তখন ধারণা ছিল না অর্থবেটিক সম্পর্কে  সবার পরামর্শে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।এখানে আমাদের পরিচিত এক ডাক্তার ছিল দূর ভাগ্যবশত সেদিন শুক্রবার হওয়ায় কোনো ভালো ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছিল না ডিউটি ডাক্তার ছাড়া।ওনারা বললেন ভতি  হয়ে যেতে কিছুক্ষণ পরেই ডাক্তার আসবে, কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম না কি সিদ্ধান্ত নেব। পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ভর্তি করালাম কিন্তুু ডাক্তার আসতে দেরী হয়ে গেচে অনেক,  এদিকে আম্মুর অবস্থা খুবই খারাপ হতে লাগলো।


✳️✳️ তখন আমরা একটা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, এবং সেখানে ভর্তি করালাম। এখানে ডাক্তার দেখালাম ডাক্তার বললো  হাতে জোড়া লেগে যেত দুই তিন দিন দেরি হয়ে গেছে তারপর ডাক্তার রিক্স নিয়ে অপারেশন করাতে বললেন। আমরা রাজি হয়ে গেলাম অপারেশন হলো সবাই যেহেতু চাকরিজীবী কয়দিন ছুটি নিবে আমি একাই ছিলাম হসপিটালে। হসপিটাল থেকে এবং ডাক্তার এক্সরে করানোর কথা বলে। তারপর ডাক্তারের কথা অনুযায়ী যথারীতি এক্সরে করাই এবং ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখাই।  ডাক্তার দেখে বললো হাড় পুরোপুরি জোড়া লাগে নাই থেরাপি দিতে হবে। 


✴️✴️সবার মন খারাপ হয়ে গেল। হসপিটালে দশদিন থাকার পরে বাসায় নিয়ে আসলাম।প্রতিদিন  আমি একা নিয়ে যেতাম ঢাকার রাজার বাগ আল-বারাকা হসপিটালে  থেরাপি দেওয়ার জন্য। 


এই ভাবে টানা ২ মাস থেরাপী দেওয়ার পর আবার টেস্ট করার পর ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখানো হলো ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললো হাড়গুলো পুরাপুরি জোড়া লাগে নাই এখনও। তখন মনটা পুরোপুরি ভেঙ্গে গেল। আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম অনেক কষ্টে নিজেকে সামাল দিলাম, কারন আম্মু যদি বুঝতে পারে আম্মুকে কন্টোল করা যাবে না।


 

✳️✳️ দুই মাস আমি একা৷ আম্মুর সেবা যত্ন আম্মুর হাত বাধা নিজে কিছুই  করতে পারতো না।খাওয়া গোসল  থেরাপী দেওয়া সব আমি করে দিতাম। সব আশাই শেষ  তাহলে কি আম্মুকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। আমাদের সবার মন খারাপ হয়ে গেল কি করবো কিছুই বুঝতেছিনা। আরেকটা ডাক্তার দেখালাম ধানমন্ডিতে ডাক্তার ও ঠিক একই কথা বললো। আর কিছুই করার নাই পরে ফেনীতে নিয়ে আসলাম।


✳ তারপর আমার খালাতো বোনের জামাই ডাক্তার ছিল।  তিনি একটা ডাক্তার খোঁজ  দিলেন চট্টগ্রামে যথারীতি আম্মুকে নিয়ে চট্টগ্রামেও ডাক্তার কে দেখালাম তার কতগুলো টেস্ট দিল এবং টেস্টগুলো করালাম। ডাক্তার রিপোর্ট গুলো দেখে বললেন ভুল অপারেশন হয়েছে আবার অপারেশন করতে হবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হলে তবে 100% সফল হবে কিনা কোন কোন নিশ্চয়তা নেই ।


 


 ✳️ আম্মাকে  চট্টগ্রামে আমার এক বোনের বাসায়   নিয়ে গেলাম। সবাই মিলে ডিসিশন নিলাম আবার রিস্ক অপারেশন করাবো, পরদিন চট্টগ্রামের একটা প্রাইভেট হসপিটালে ভর্তি করালাম। পর দিনই এই ডাক্তার  অপারেশন করলো।অপারেশন চললো টানা তিনঘন্টা হঠাৎ ডাক্তার বের হয়ে বললেন রোগী অবস্থা খুবই খারাপ   এখনই আরো রক্ত প্রয়োজন যদিও তিন ব্যাগ রক্ত আগে সংগ্রহ করা হয়েছিল এখন হঠাৎ করে রক্ত লাগবে সব জায়গায় খোঁজ নেয়া হলো কিন্তু রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই  চারো দিকে ফোন করছিলাম তখন আমার এক ভাই শুনে তাড়াতাড়ি  হসপিটালে আসলো এবং আম্মুর জন্য   রক্ত দিলো,যা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না।


 ✳️ অপারেশন শেষ হল কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বের হয়ে বলল অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।আমি  মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। সারারাত আম্মুকে অবজারভেশনে রাখা হলো, আমি আমার husband  সারারাত ওটি রুমের সামনে সারারাত বসে রইলাম। যেন রাতটা কাটতে চায় না মনে মনে শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম আল্লাহ যেন আমার আম্মুকে সুস্হ করে দেয়।ঠিক ফজরের আযানের সময় ভেতর থেকে একটা নার্স এসে বলল লোপা কে  ওনাকে রোগী  ডাকছে আমি তাড়াতাড়ি ভিতরে গেলাম আম্মু একটু কথা বলেছে আমাকে বললো পানি খাবে।কিন্তু নার্স পানি দিতে না করলো।৫ মিনিট থাকার পর নার্স আমাকে বের হয়ে যেতে বললো।একটু দেখার পর নিজের মাঝে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এলো। নার্স জানালো সকাল সাড়ে আটটার দিকে কেবিনে দিবে।


✳️ সকালে আম্মুকে কেবিনে দিল,কিছু খাওয়াতে বললো। আম্মু ইনজেকশন দেওয়া হতো অনেক পাওয়ারফুল  যাতে ব্যাথা  না হয়।এদিকে রাতে আম্মু সারারাত ঘুমাতে পারতো না। 


 

✳️ ১/২দিন পর এই ডাক্তার এসে দেখে যাইতো। এই বারেও টানা ১৩  দিন হাসপাতালে ছিলাম আমি একা। এইদিকে দিনের বেলায় সবাই এলে ও রাতে আমি একা থাকতাম হাসপাতালে।এইদিকে ঘুম না যেতে না যেতেই আমার শরীরটা একদম ক্লান্ত হয়ে গেছিলো মনে হয় যেন আর পারছিলাম না। আল্লাহ কাছে দুই হাত তোলো বলছিলাম আল্লাহ তুমি আমাকে একটু শক্তি দাও আমি যেন সুস্হ থাকি আম্মু সেবা করতে পারি।নিজেকে বললাম আমি পারবো আমাকে পারতে হবে। ১৩ দিন শেষে ডাক্তার আবার এক্সরে সহ কতগুলো টেষ্ট দিল।ডাক্তার রিপোর্ট দেখলো এবং বললো আলহামদুলিল্লাহ রিপোর্ট ভালো, আম্মু আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।আমরা আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলাম।

আম্মু কে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিলে আসলাম।

আম্মু মোটামুটি সুস্হ হলো।আম্মুকে ফেনীতে নিয়ে আসলাম।


✳️এদিকে আমার অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার ।  আমিতো ভয় পেয়ে গেলাম কিভাবে পরীক্ষা দিবো। আমার তো পরীক্ষার প্রিপারেশন নেই। বাসায় এসে রাতদিন পড়াশোনা শুরু করে দিলাম।কিছু দিনের মধ্যেই মোটামুটি ভালো একটা প্রস্তুতি নিলাম পরীক্ষা দিলাম।রেজাল্ট বের হলো একটু জন্য First ক্লাস মিস হলো।মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। আমার husband বললো তুমি তো আম্মুকে নিয়ে এতো কষ্ট করেছো, তারপর কয়দিন পরে যা করছো অনেক ভালো।


✳️ এরপর ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে  মাস্টার্সে First ক্লাস পেলাম।এরপর আমি প্রথম সন্তানের মা হলাম।ওকে যখন ওটি রুমে আমার স্পর্শ দিল মুখের সাথে তখন মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ একজন নারীর জন্য মা হাওয়া।মাতৃত্বের তৃপ্তি অনুভব করলাম।মনে হলো সবচেয়ে সুখী  মানুষ আমি।


✳️ আমার ছেলের বয়স যখন ৬ মাস তখন আমি ভর্তি হয়ে গেলাম টিচার্স ট্রেনিংয়ে আমার husband বললো তুমি পারবা অনেক হোমওয়ার্ক থাকে, উপকরণ তৈরী করা। আমি বললাম চেষ্টা করে দেখি না।সাহস করে ভর্তি হয়ে গেলাম । যদি ও ছোট বাচ্চা ও ঘুমালে আমি পড়তে যেতাম সব রেডী করতাম।এইভাবে অনেক কষ্ট করে শেষ  করলাম। আল্লাহর রহমতে First ক্লাস পেলাম।


✳️✳️এরপর আসলে প্রথম দিকে চাকরি জন্য অনেক প্রিপারেশান নিয়ে পড়াশোনা আবেদন করলে ও বাচ্চা দেখবে কে সেই চিন্তা ছিল মাথায়। দুটো বাচ্চা সামলানো, সংসার এই সব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। মাঝে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে ও কোন কিছুই আর ধরে রাখতে পারিনি।


🌺🌺এই প্লাটফর্মে কিভাবে যুক্ত হলাম ঃ


আমি আগে থেকে স্যারের ফলোয়ার ছিলাম,কিন্তুু আমি গত  ১ মাস আগে হঠাৎ  স্যারের নিজের বলা মতো গল্প ফাউন্ডেশন রেজিস্ট্রেশন লিংকটা আমার  চোখে পড়ে। আমি লিংকে গিয়ে কিছু না বুঝে  রেজিস্ট্রেশন  করে ফেললাম। পরে জেলা প্রতিনিধির একজন ভাইয়া আমাকে জেলা মেসেঞ্জারে যুক্ত হাওয়ার জন্য সহযোগিতা করেন।এবং সেশন চর্চা  ক্লাসে যুক্ত হতে বলেন ।


 🌹🌹সেই ১৬ তম ব্যাচের প্রথম দিন থেকে   প্রতিদিন  অংশগ্রহণ করেছি সবাই এতো আন্তরিক, মনে হলো একটা নতুন পরিবার ফেলাম।এর মধ্যে হঠাৎ আমার আম্মু আবার অসুস্থ হয়ে গেলো। হঠাৎ অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা নিয়ে গেল।  আমি একটা আপু ও ভাইয়াকে জানালাম। আপু আমাকে এতো মানসিক সান্তনা দিলেন ফোনে।ওনাদের মাধ্যমে সবাই জানলো।এরপর থেকে সব  আপু ভাইয়ারা আমার আম্মুর খোঁজ নিয়েছেন এবং আমাকে এতো মানসিক সাপোর্ট দিয়েছেন  ফোনে মেসেজে এবং সেশন চর্চা ক্লাসে এমন ভাবে সবাই আমার আম্মুর জন্য মোনাজাত করে  দোয়া করলেন,  সত্যি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।


🌺🌺 সত্যি আমি এই প্লাটফর্মে যুক্ত না হলে হয়তো এমন ভালো ভাই বোন পেতাম না।নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন স্যারের প্রতিদিন সেশনে চর্চা ক্লাসে অংশগ্রহণ করে প্রতিনিহিত শিক্ষা গ্রহণ করছি।আশা করি স্যারের এই শিক্ষা গ্রহণ করে আজীবন এই প্লাটফর্ম থাকতে চাই এবং আমি আমার ভবিষ্যতে কিছু করতে চাই। সবাই আমার পাশে থাকবেন আমাকে সহযোগিতা করবেন। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে আমার লেখাটা পড়ার জন্য পড়ার জন্য। 



📌"স্ট্যাটাস অব দ্যা ডে"- ৬৮৭

Date:- ০১/১২/২০২১ইং

এমিনা জান্নাত লোপা 

জেলা -ফেনী

উপজেলা - পরশুরাম 

ব্যাচ- ১৬ তম

রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার --76297

ফরিদপুর জেলা টিম কর্তৃক আয়োজিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচি -২০২৪

ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥

পর্দাশীল ঘরোয়া নারী- সফল উদ্যোক্তা

আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।