👉গল্পটা বাস্তবে অনেক বড় হলেও ছোট করে উপস্থাপন করার আপ্রান চেষ্টা থাকবে। দয়া করে পুরোটা না পড়ে কেউ কমেন্ট করবেন না।
❤প্রথম ধাপ❤
আমার বাবা পাকিস্তান আমলে ফেনীর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলেম (HSC) পাশ করেন।উনার বন্ধুরা সবাই সরকারি চাকরিতে গেলেও উনার পছন্দ ছিলো ব্যবসা।ফেনীর বর্তমানে গ্রীন টাওয়ারের দক্ষিণ পাশে ছিলো উনার কাপড়ের দোকান। অনেক সাদামাটা এবং বিশ্বাসী লোক ছিলেন আমার বাবা।তাই ব্যবসায়ে কোনদিন হোঁচট খেতে হয়নি বাবাকে।তখন ফেনী থেকে আমাদের বাড়ি যেতে কোন যানবাহন ছিলো না। নদীর পাড় ঘেষা সুরু রাস্তা অথবা ক্ষেত্রের আইল দিয়ে প্রতিদিন বাবা ৬ কিঃমি রাস্তা যাওয়া আসা করতেন। সিনার মাংস আর বড় ইলিশ মাছের ডিম ছিলো বাবার প্রিয় খাবার। বাবার ব্যবসায়িক সফলতায় ভালোই চলছিলো আমাদের ৯ ভাই বোনের পরিবার।পারিবারিক সম্পত্তির সাথে বাবা যোগ করলেন আরো কিছু ফসলি জমি। দয়ালু বাবা মায়ের ছায়াতলে গ্রামের অনেক গরীব পরিবারও আশ্রয় পেতো। বড় দুই ভাই ছিলেন অতিরিক্ত ডানপিঠে তাই পড়ালেখায় বেশিদূর যেতে পারেনি। বড় ভাই চলে গেলেন বাবার সাথে ব্যবসায় আর মেঝো ভাই হয়ে গেলেন পুরোদমে কৃষক। হঠাৎ করে বড় ভাই পড়ে যায় খারাপ আড্ডায় হয়ে উঠেন তৎকালীন টাইগার বাহিনীর ক্যাডার।তখন বাবা মান ইজ্জত বাঁচাতে বড় ভাইকে পাঠান ওমানে। বড় ভাই ওমানে গিয়ে দেশে কোন টাকা পয়সা পাঠাতেন না। যা ইনকাম করতেন আরাম আয়েশে খরচ করতেন। ৯ ভাই বোনের মধ্যে আমার অবস্থান ৫ম আমার বড় ৩ ভাই ১ বোন, আমার ছোট ৩ ভাই ১ বোন। বড় বোনের ইতিমধ্যে বিয়ে হলো, বাকিরা পড়ালেখা করতেছি। আমি ছিলাম ভাবুক আর অতিরিক্ত ডানপিঠে।আমাকে পাঠানো হতো স্কুলে আমি গিয়ে তাল গাছের নিচে বসে থাকতাম। যখন স্কুল ছুটি হতো বাকি ছেলেদের আগে আগে বাড়িতে চলে আসতাম।
মা টের পেয়ে আমাকে মামাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো।মামাদের আধুনিক সম্ভ্রান্ত পরিবারে গিয়ে আমার পড়ালেখার মোড় ঘুরে যায়।এরপর থেকে আমার রোল ১, ২ থেকে কখনো ৩ নাম্বার হয়নি।
১৯৯৫ সালে বাবা হজ্জ্ব করে আসেন এবং তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাড়া দিয়ে দেন। এরপর তিনি ১৯৯৫- ৯৮ পর্যন্ত বিনাবেতনে আমাদের মসজিদে ইমামতি করেন।নিরপেক্ষ এবং কঠোর বিচার, সালিশে বাবার ছিলো অনেক সুনাম।
১৯৯৮ সালে হঠাৎ স্ট্রোক করে বাবা আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
❤২য় ধাপ❤
বাবা মারা যাওয়ার পর বাবার রেখে যাওয়া নগদ অর্থ সব ধীরে ধীরে শেষ হয়ে গেলো।দোকানও বিক্রি করে দিতে হলো।বড় ভাই ৭বছর পর দেশে আসলো। বড় ভাই এবং মেঝো ভাই বিয়ে করলো। পরিবার আরো বড়ো হলো।বড় ভাই আবার ওমানে গিয়ে ভিসা জটিলতায় দেশে ফিরে এলো। শুরু হলো চরম অর্থ সংকট।আমরা সবাই মেঝো ভাইয়ের সাথে সকাল বিকাল কৃষিকাজ করতাম। অনেক সময় ক্লাসে ঢুকার সময় নাকে, মুখে কাঁদা লেগে থাকতো।কিন্তু সবাই ছিলো চরম মেধাবী।কৃষিকাজ করে খাবার দাবার চললেও নগদ অর্থের চরম অভাব ছিলো। কোনো ভালো কিছু রান্না হলে মা পানি এবং তরকারি বাড়িয়ে দিতেন। মাকে দেখে অনেক সময় মনে হতো ভাত দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সংসারে এ অবস্থা দেখে আমার ইমিডিয়েট বড় ভাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেন। যিনি জীবনে কোন ক্লাসে ২য় হননি। SSC তে উনি ৪ বিষয় লেটার সহ স্টার মার্কস পেয়েছিলেন।উনার ঐ সিদ্ধান্তে সবাই খুশী না হলেও কিছুই করার ছিলো না। আমিও সফল ভাবে SSC পাশ করে মামার বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে চলে আসলাম।
ভর্তি হলাম ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে
বিভাগঃ সিভিল ইন্জিনিয়ারিং।
❤৩য় ধাপ❤
আমরা সবাই পড়ালেখা পাশাপাশি পরিবারের স্বচ্ছলতার আনার জন্য আপ্রান চেষ্টা করতে লাগলাম।
আমি মাধ্যমিকের কৃষিবিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে শুরু করলাম ধানক্ষেতে মাছ চাষ,দারুন সফলও হলাম,।ধানের ফলনও ভালো, মাছও দ্রুত বাড়তে লাগলো।আমাদের পুরো পরিবারের মাছের যোগান আমার প্রজেক্ট থেকে হতো।এছাড়া বছরে ২ বার মাছ বিক্রি করেও পয়সা পেতাম।সোনাগাজি সরকারি খামার থেকে ২০০ হাসের বাচ্চা এনে একটা হাসের খামারও শুরু করলাম। আমার ইমিডিয়েট ছোট ভাই SSC পাশ করে ফেনী কলেজে ভর্তি হলো, পাশাপাশি একটি কাপড়ের দোকানে চাকুরি নিলো। কিছু দিন পর একটা ভিসার সন্ধান পেলো, কিছু ধারকর্জ ও গহনা বিক্রি করে ছোট ভাই চলে গেলো UAE তে।
ইতিমধ্যে আমি ৪ বছরের ইন্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করে মাকে জিজ্ঞেস করলাম আমি কি বিএসসি করবো? মা আমাকে বললো তোমার ভাইয়েরা সংসারের জন্য আর কত করবে, তুমিও কিছু করো। মায়ের কথামতো হাঁস,মাছের খামার মাকে বুঝিয়ে দিয়ে পরের দিনই ঢাকা রওনা দিলাম।সাইট ইন্জিনিয়ার হিসাবে জয়েন করলাম Unitech Holding Company তে।
দেড়বছর চাকরি করার পর ১২,০০০ টাকা বেতনে কোম্পানি পরিবর্তন করলাম। ভর্তি হলাম বিএসসি সান্ধ্যকালীন কোর্সে। ইতিমধ্যে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে খবর পেলাম একটা এজেন্সিতে কাতার থেকে ডেলিকেট আসবে। কৌতুহল বসত ইন্টারভিউ দিয়ে সিলেক্টও হয়ে গেলাম। বিএসসির প্রথম সেমিস্টার শেষ না করেই পাড়ি জমালাম কাতারে।
সেই থেকে ১২ বছর যাবত কাতার প্রবাসী। প্রথম দপায় সকল ধারদেনা শোধ করে সাড়ে তিনবছর পরে দেশে গেলাম।নিজের অর্জিত প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করে মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী বড় করে একটা ঘর করলাম।টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রথম দপায় আর বিয়েটা করা হয়নি। ঘরের কাজ দেখে মায়ের খুশি মাখা হাসি নিয়ে
আবারো প্রবাসে ফিরে এলাম।
আসার ৬ মাস পর ২৬/১০/২০১২ ইং তারিখে কাতারে ঈদুল আযহা। সকালে মায়ের সাথে কথা হলো।পরের দিন আমাদের দেশে ঈদ,ঈদের জন্য কেনা গরু মায়ের পছন্দ হয়েছে আরো অনেক কথা। বিকাল বেলা কোম্পানির দেওয়া কুরবানীর মাংস রান্না করতেছি।হঠাৎ একটা ফোন এলো মা আমার চিরবিদায় নিয়েছেন।
আমার জীবনের সবচাইতে কষ্টদায়ক ঘটনাটি হচ্ছে অসময়ে মায়ের বিদায়। মা আজীবন আমাদেরকে নিয়ে কস্ট করেছেন। যখন কস্টের দিন শেষ হয়ে সুখের দিন উঁকি দিচ্ছিলো তখনি মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
এখন আমাদের সকল ভাইয়েরা প্রতিষ্ঠিত। আমারও অনেক কিছু হয়েছে। শুধু একটাই অতৃপ্তি মায়ের জন্য কিছুই করা হয়নি,,,,,,
পরিশেষে গ্রুপের সকল সদস্যদের প্রতি একটাই আহবান,,,,মায়ের জন্য মনের গভীরে লুকিয়ে রাখা সকল ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটান,,,,
স্যার এর শিখানো কথায় প্রাণ খুলে মাকে বলুন,,,,'মা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি'।
স্ট্যাটাস অফ দ্যা ডে -১৮৯
০৯-০৪-২০২
👱 ইয়াকুব খোন্দকার
👨🎓 অষ্টম ব্যাচ
🖋️রেজি.নং: ৫৮০৮
💉 ব্লাড গ্রুপ: O+
🇧🇩 ফেনী জেলা
🇶🇦 কাতার প্রবাসী
📧 mykfeni@gmail.com
ইনশাআল্লাহ ফরিদপুর জেলার বাকি ৮টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চলমান থাকবে। অনেক বেশি ধন্যবাদ Iqbal Bahar Zahid স্যার কে ॥
আমি রান্নাটা ভালো পারি, রান্নাটা নিয়েই পেজ খুলি অনলাইনে কাজ করি। প্রথম অর্ডার আসছিল পিৎজা ডেলিভারির। আলহামদুলিল্লাহ তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ।